Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কুহেলিকা (Kuhelika)

এদিকে জাহাঙ্গীরের মাতা হাওড়া স্টেশনে পঁহুছিয়া জাহাঙ্গীর ও চম্পাকে দেখিতে না পাইয়া এবং হারুণের কাছে সমস্ত শুনিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িলেন। ভূণীর মুখে কে যেন কালি ঢালিয়া দিল।

হারুণ কিন্তু যে ভয় করিতেছিল, তাহার কিছুই হইল না। কেহ তাহাদের গাড়ি সার্চ করিল না। হারুণ দেখিল, প্ল্যাটফর্ম মিলিটারি পুলিশে ও গোরায় ছাইয়া ফেলিয়াছে। কয়েকজন যুবককে ধরিয়া তাহারা প্রিজনার-ভ্যানে পুরিল, তাহাও সে দেখিল। ভয়ে তাহার মুখ কাগজের মতো সাদা হইয়া গেল।

সে দেখিল ধৃত বন্দিদের মধ্যে জাহাঙ্গীর নাই। সে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিল।

হারুণ জাহাঙ্গীরের মাতাকে জাহাঙ্গীরের উপদেশ মতোই সব কথা বলিয়াছিল। সে যে বিপ্লবীদলের, সে কথা সে গোপন করিয়া গেল।

দেওয়ান সাহেব ভ্রু-কুঞ্চিত করিয়া কী চিন্তা করিতে লাগিলেন। জিনিসপত্র গাড়িতে উঠাইয়া দিয়া দেওয়ান সাহেব বলিলেন, ‘আমি পুলিশ-কমিশনার সাহেবের কাছে যাচ্ছি। যেমন করে হোক ওর কিনারা করে তবে জলগ্রহণ করব।’

জাহাঙ্গীরের মাতা সাশ্রুনেত্রে দেওয়ান সাহেবের দিকে তাকাইয়া থাকিলেন। কিছু বলিতে পারিলেন না।

মাঝে মাঝে কেবল হারুণের উন্মাদিনী মাতা কাঁদিয়া উঠিতে লাগিলেন, ‘মিনা! মিনা কোথায় গেল আমার? সে আর ফিরবে না। আবার পালিয়ে গেল!’

এত আনন্দের মাঝে সহসা যেন ঝড় উঠিয়া সমস্ত লন্ডভন্ড হইয়া গেল।

জাহাঙ্গীরের মাতা কাঁদিলেন না। ঝড় উঠিবার পূর্বে প্রকৃতি যেমন শান্ত গম্ভীর মূর্তি ধারণ করে – তেমনি বিষাদ-ঘন মূর্তি লইয়া বাড়িতে আসিয়া উঠিলেন।

কাহারও মুখে কথাটি নাই। জাহাঙ্গীরের মাতা আদর করিয়া হারুণদের সকলকে বাড়িতে উঠাইয়া সকলের ব্যবস্থা করিতে লাগিলেন। মুখরা মোমি এবং মোবারক পর্যন্ত কথাটি কহিতে সাহস পাইল না।

দ্বিপ্রহরে দেওয়ান সাহেব ফিরিয়া আসিলেন। তাঁহার মুখ চোখ দেখিয়া জাহাঙ্গীরের মাতা ভয় খাইয়া গেলেন। তাঁহার মাথা ঘুরিতে লাগিল। কোনো রকমে দেয়াল ধরিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, ‘দেওয়ান সাহেব! আমার খোকা?’

দেওয়ান শান্ত গম্ভীর স্বরে বলিলেন, ‘বিপ্লবীদের সাথে সে ধরা পড়েছে! হতভাগ্য!…’ তিনি আর বলিতে পারিলেন না। তাহার কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া গেল!

জাহাঙ্গীরের মাতা সকালে উঠিয়াই সমস্ত সংবাদপত্র আনাইয়া পড়িয়াছিলেন। এই দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশে যে ভীষণ ওলট-পালট হইয়া গিয়াছে – তাহাও তিনি জানিতে পারিয়াছেন সংবাদপত্র পড়িয়াই।

শত শত যুবক কারারুদ্ধ হইয়াছে। সেই ভীষণ জার্মান ষড়যন্ত্র প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। সারা দেশ ব্যাপিয়া পুলিশ জাল ফেলিয়াছে! –

কাজেই দেওয়ান সাহেবের এই সংবাদ তিনি বজ্রাহতের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিয়া মূর্ছিত হইয়া পড়িয়া গেলেন। দাসী-বাঁদিরা যে যেখানে ছিল ছুটিয়া আসিল!…

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *