কুসুম কোরক – পর্ব- 4
সময়-সকাল।
স্থান-বাগান।
সকাল হতেই একদল শিশু কলকল করতে করতে বাগানে ঢুকে পড়ল। চৌকিদার হৈ হৈ করে উঠল। কচি কাচা রা কলকলিয়ে বলতে লাগল। -ও মালী দাদু, আমরা সবাই নাচ করবো। আমাদের টগর, বেল ফুল চাই। তুমি আমাদের ফুল তুলে দেবে?
মালী- নাচ করতে ফুল লাগে নাকি? যাও যাও হবে না । টগর, বেলী ওরা রাগ করবে।
বেলী খিলখিল করে হেসে উঠল। তার পর মালীকে
বলল- মালী ভাই, ওদের যেতে দিও না। আমার কাছে আসতে বলো।
মালী কচিকাচাদের বলল- যাও, তোমাদের ডাকছে।
বেলী- কি গো, আমাকে দরকার?কি করবে ফুল দিয়ে?
কচিকাচা- এ মা,তুমি জান না বুঝি?আমরা মালা গেঁথে গলায় পড়ে নাচ করি।
বেলী- মালা না পড়ে নাচ হয় না?
কচিকাচা- হবে না কেন? তবে তোমার মালা পড়লে আমাকে সুন্দর দেখায়। তাই তো নাচ টাও ভাল হয়। আমি মালা পড়লে দারুণ নাচি।
বেলী- কি নাচ করবে?
কচিকাচা- “শরৎ রানী ” নৃত্য নাট্য করবো স্কুলে। তুমি যাবে?
বেলী- আমি তো বাগান ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না। বাগানে একদিন নাচ দেখিও। তখন তোমাদের নাচ দেখবো।
কচিকাচা- ঠিক আছে। আমরা সবাই তোমাদের মালা গলায় পড়ে নাচ দেখাবো।
বেলী- শুধু গলার মালার ফুল চাই?
কচিকাচা- না গো, আমরা হাতে মালা পড়ি। মাথায় মালা পড়ি। আর গলায় মালা পড়ি। তবে আমাদের সুন্দর দেখায়।
বেলী- শরৎ রাণী?সেটা আবার কি?
কচিকাচা- ‘ওমা!তুমি কিচ্ছু জানো না ?শরৎ কাল সব চেয়ে সুন্দর। তাই শরৎ কাল কে ঋতুর রাণী বলে। শরৎ কালের আকাশ নীল। শরৎকালে ঘাসে শিশির ভরে থাকে।
বেলী- শরৎকালে কি কি ফুল ফোটে? তা জানো?
কচিকাচা- শিউলি, কাশফুল, টগর, মালতী, পদ্ম ফুল, পলাশ ফুল। আরো অনেক ফুল ফোটে।
বেলী- শরৎ যদি রাণী হয় তবে ঋতুরাজ কে বলো তো?
কচিকাচা- আমরা জানি। ঋতুরাজ হল বসন্ত কাল।
বেলী- বলো তো গ্রীষ্মের ফুল কি কি ?
কচিকাচা- কি আবার?তুমি ফোটো। জুঁই, চাঁপা, টগর, আরও কত কি ফোটে।
বেলী- বর্ষায় কি কি ফুল ফোটে?
কচিকাচা- যুথিকা, কেতকী, কদম, দোপাটী ফোটে।
বেলী- বসন্ত কালে কোন কোন ফুল ফোটে?
কচিকাচা- আমরা বইয়ে সব পড়েছি। বসন্ত কালে অশোক, পলাশ, গন্ধরাজ ফোটে। আমাদের দেরী হয়ে যাবে গো।
বেলী- ও মালী ভাই, ওদের কোঁচর ভরে বেল ফুল দিয়ে দাও। ওরা খুব ভাল ছেলে মেয়ে।
মালী- সে কি? গাছ শূণ্য করে দিয়ে দেব?
বেলী- সন্ধ্যা বেলায় আবার কুঁড়ি গুলো ফুটবে। আর তোমার ঐ বামুনদের ছেলেদের দিয়ে বেলীর চাষ করাও। সবাই যাতে আমার গন্ধ পায়। ওদের জন্যই তো আমি।
শিউলি- তোমরা কে গো?
কচিকাচা- আমরা এ গাঁয়ের ছোট ছেলেমেয়ে। ফুল নিতে এসেছি গো। আমরা শরৎ রাণী নৃত্য নাট্য করবো।
শিউলি- তাই নাকি?
কচিকাচা- হ্যাঁ গো।
শিউলি- আমি শরৎ কালে ফুটি। তোমাদের জন্য টুপ টাপ করে নিচে পড়ি তোমাদের জন্য। আমার বোটার রং দিয়ে শাড়ি রং করতে পারবে। যত ইচ্ছে নিয়ে শিউলি ফুল কুড়িয়ে নাও। রোজ নিয়ে যেও।
মালতী- আমার কথা কি তোমরা ভুলে গেলে? আমি মালতী, শরৎ কালেই ফুটি গো।
কচিকাচা- যাই গো।
কচিকাচারা নাচতে নাচতে গান ধরলো-
আমরা নাচ করি আনন্দে
পড়া করি হেসে খেলে
বেড়াই ঘুড়ে নেচে গেয়ে
আমরা নাচ করি আনন্দে।