কুসুম কোরক – পর্ব -2
পবন চলে গেল। যাবার সময় বেলীর গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। বেলীর মত খোলা মেলা থাকতে পারেনা গোলাপ। তাহলে গোলাপের পাপড়ি খসে পড়বে। তাই তো গোলাপের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে না।
গোলাপ বলল- মালী ভাই, তোমার বেলী আসছে গো।
মালী বলল- কে আসছে?কই দেখছি না তো ।
গোলাপ- গন্ধ পাচ্ছো না?
মালী- হ্যাঁ,বেলীর গন্ধ পাচ্ছি। বেলী ই আসছে।
মালী খুশি হয়ে ছুটলো বেলীর দিকে। বেলীর হাতে হাত রাখলো। বেলী ও খিল খিল করে হাসছে।
বেলী বলল- কি গো মালী ভাই, আজ সূর্য মামা একবার দেখা দিয়ে লুকিয়ে পড়লো কেন?
মালী – ঐ গোলাপ তো সূর্য দেখলে মূর্ছা যায়।
বেলী- আমার তো সূর্য মামাকে না দেখলে ভাল লাগে না ।
মালী- তাই তো তোমায় ভালোবাসি।তুমিও সূর্য মামাকে চাও, আমিও চাই। মেঘলা দিন ভাল লাগে না।
বেলী – মেঘের ও দরকার আছে। মেঘ না হলে বৃষ্টি হবে কি করে?
মালী- ঠিক বলেছ । নদী, নালা, পুকুর, মাঠ, ঘাট ক্ষেত খামার বৃষ্টির জল চায় । তা না হলে তোমরা ই বাবাঁচবে কি করে?
বেলী- ঠিক বলেছ । মেঘে ও চাই, আবার সূর্যি মামাকে ও চাই । সূর্যিমামা এলে বাগান ঝলমল করে।
মালী- বেলী দিদি, তুমি বড় ভাল মেয়ে। তুমি এলে দূর থেকেই বুঝতে পারি। তুমি তো বাগান আলো করে থাকো।
বেলী- কি করে বোঝ আমি এসেছি?
মালী- তোমার সুগন্ধে টের পাই, যে তুমি এসেছো।
বেলী- আস্তে বলো , গোলাপ শুনতে পাবে।
মালী- শুনতে পাবে না,আমি কলাপাতা দিয়ে মুড়েদিয়েছি । সারাদিন গোলাপের জন্য খাটতে খাটতে মরে গেলাম। গোলাপ রানী হয়েছেন, তার কথা না শুনে পারি?
বেলী- মালী ভাই কি এত খাটুনি? কি করো?
মালী- আর বলো না!যত্ন করতে হয় ওকে। তোমাদের মতো অল্পে তুষ্ট হয় না। একটু এদিক ওদিক হলেই মূর্ছা যায়। বড় কোমল শরীর গোলাপের।
বেলী- বাব্বা!এত বায়না। আমার কোন ঝামেলা নেই। রোদ বৃষ্টিতে কাহিল হই না । আদারে বাদারে ও থাকতে পারি। তিন চার দিন জল না খেয়ে ও চলে যায়।
মালী- জানো, গোলাপের ধারে কাছে ও কেউ যেতে পারবে না । তাই তো কাঁটা লাগিয়ে রেখেছে। ওর যত্ন করতে আমার কত রক্ত ঝড়েছে।
বেলী- আহা!মালী ভাই, আমরা তোমায় কত কষ্ট দিই। তবুও তুমি আমাদের কত ভালোবাসো।
মালী- তোমাদের যত্ন করা তো আমার কাজ। একটু আগেই পবন ভাই এসেছিল। গোলাপের কাছে কতো ধমক খেল।
বেলী- কেন গো?কি করছে পবন ভাই?
মালী- পবন ভাই নাকি তোমার গুন গায়।
(খিল্ খিল করে হেসে উঠল বেলী)
বেলী- গোলাপ ঠিক ই বলেছে।
একটা কাঠঠোকরা পাখি কাঠ গোলাপ গাছে বসলো। গাছে বসেই কাঠঠোকরা পাখিটা ওর শক্ত ঠোঁট দিয়ে গাছ টা গর্ত করতে লাগল।
মালী- বলো তো বেলী দিদি, পাখিটা কি করছে?
বেলী- কি আবার করছে ।গাছটাকে শেষ করছে।তুমি ওকে তাড়াও।পাখিটা খুব দুষ্টু। রোজ অমন করে।
মালী- কাঠঠোকরা গাছের পোকা খুঁটে খাচ্ছে। তাতে গাছটা অনেক দিন বাঁচবে। না হলে পোকা গুলো গাছটা শেষ করে দিত।
বেলী- তাই নাকি?আমরা সবাই যদি একে অপরের উপকার করি, তাহলে বেশ হয় । তাই না গো?
মালী- চৌকিদার আসার সময় হলো।
বেলী- চৌকিদার কে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
মালী- কি কথা?
বেলী- রাতে কি কি ফুল ফোটে?
মালী- রাতে সাদা ফুল ফোটে। তুমিও তো রাতেই ফোটো। টগর, শিউলি, কাহিনী,জুঁই,গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা সবাই রাতে ফোটে। যুথী ফোটে ভোরে।
বেলী- দিনের বেলায় কে কে ফোটে?
মালী- জবা, দোপাটি, গাঁদা সব রঙীন ফুল দিনে ফোটে। সূর্যমুখী ফোটে সূর্য ওঠার সময় । সারাদিন সূর্যের দিকে মুখ করে ঘোরে। পূব থেকে পশ্চিমে। সূর্য অস্ত গেলে সূর্যমুখীর মাথা ঝুঁকে পড়ে।
বেলী- ও মা!তাই নাকি! সূর্যমুখী কি সূর্যের কেনা দাসী?
মালী- যা বলেছ। যাই অনেক কাজ পড়ে আছে।
বেলী- ঠিক বলেছ। এবার আমিও যাই। সূর্যি মামার এবার যাবার পালা। এখন চামেলী, মালতীর আসার সময় হয়ে গেছে।
ঝাঁঝড়ি হাতে নিয়ে মালী গাছে গাছে জল দিতে শুরু করলো।