কুসুম কোরক – প্রথম পর্ব
সকালের দৃশ্য। মেঘলা আকাশ।
মালীর ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে দেখলো হলুদ শাড়ি পড়ে কে যেন নাচ করছে। ভাল করে ঢোখ মুছে নিল মালী। দেখল এক রুপবতী কন্যা নাচ করছে বাগানে।কখনও তার রং হলুদ, কখনও কালো।কখনও গোলাপী কখনও লাল রং। উঠে বসল মালী। এগিয়ে গেল সে দিকে। মনে ভাবল–কি সুন্দর! নানা রং ছড়িয়ে নাচছে সুন্দরী। নানান রং ছড়িয়ে নাচছে সুন্দরী। এবার তার শ্বেত বসন।
মালী বলল- হ্যাঁ গো মেয়ে তুমি কে?এই বাগানে নাচ করছ যে?
ঘোমটা খুলে নর্তকী মালী কে বলল-সে কি গো মালী ,তুমি আমাকে চিনতে পরছো না!!আমি গোলাপ। এই বাগানের রাণী আমি।
মালী বলল-রাণী সাহেবা, তোমার গন্ধেই আমি তোমাকে চিনেছি । তোমার এ রং রুপ আগেতো কখনও দেখিনি। তাই তোমায় চিনতে পারিনি।
গোলাপ বলল- না চেনার কি আছে?এই বাগানে আমার মতো আরও সুন্দর কেউ আছে নাকি?
মালী বলল – তোমার মতো সুন্দর! না না ,আর কেউ নেই । তোমার টক টকে লাল রং টা খুব সুন্দর। তোমার হাসিটা ও সুন্দর।
গোলাপ বলল- গাছের হাসি কি বল তো?
মালী বলল- গাছের হাসি হল তার ফুল।
গোলাপ বলল- এ বাগানে সব থেকে সুন্দর কে বলো তো ?
মালী বলল- অত বলতে পারবো না। তাহলে বেলী, রজনীগন্ধা, জুই, গন্ধরাজ-ওরা সবাই রাগ করবে।
গোলাপ- করুক গে রাগ। আমি হলাম বাগানের রাণী । আমার সাথে অন্যের তুলা?
মালী বলল- তুলা কি গো গোলাপ দিদি ?বালিশের তুলা?
গোলাপ- দুর, কিসের সাথে কি ? এ তুলা সেই তুলা না । বালিশের তুলা না। তুলা হল, তুলনা ।বেলী, জুই ওরা কি সুন্দর!ওদের ঐ এক সাদা রং। তবে গন্ধরাজ কে আমি ভালবাসি ।
মালী বলল- তাই বল, রজনী গন্ধা ও গন্ধরাজ কে ভালোবাসে।
মালী বলল- আবার তোমার ঐ এক কথা । গন্ধরাজ আমার নানা রং দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। মেঘ সরে গেল। মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ল বাগানে। গোলাপ চোখ ঢাকলো ।
গোলাপ বলল- মালী ভাই, আমি সূর্যের তাপ সইতে পারছি না।
মালী বলল- সূর্য তোমাকে জ্বালাতন করছে। দাঁড়াও তোমাকে ঢেকে দিচ্ছি।
গোলাপ- সূর্যের কি দোষ বলো? যত দোষ ঐ মেঘের। মেঘ কেন সরে গেল?
মালী বলল- সূর্য মামার ও দোষ আছে। কেন এত তাপ দেয় ? একটু কম তাপ দিলে কি হয় না ?
গোলাপ- না গো মালী ভাই । সূর্য না থাকলে আমরা বাঁচতাম না । গাছ মাটির থেকে যেমন রস নেয় । তেমন ই সূর্যের আলোর থেকেও খাবার খাবার তৈরি হয় ।সূর্য না উঠলে আমরা খাবার পেতাম না।
মালী বলল- তাই তো ! গাছ আমাদের ফল ফুল দেয়। সেই ফুল দিয়ে কত রকমের ওষুধ তৈরি হয় । আর ফল খেয়ে আমাদের শরীর ভাল থাকে।
গোলাপ বলল- বাব্বা, এত ও তুমি জান!
মালী বলল- জানবো না? সেই গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। অক্সিজেন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। তাই একটা গাছ কাটলে আর একটা গাছ লাগাই।
গোলাপ- সেই চারা গুলো একদিন মস্ত গাছ হয়ে যায়। ছায়া দেয় আমাদের । সেই ছায়ায় তুমি মাঝে মাঝেই ঢেকে রাখো।
মালী- তবে, তুমি যে বললে যতো দোষ মেঘের। তা ঠিক নয়। মেঘ না থাকলে বৃষ্টি হবে কি করে? তখনই মেঘ সূর্যিমামাকে ঢেকে দিল। গোলাপ মুখ তুললো । আর তখনই দমকা বাতাস বাগানে এল।
গোলাপ বলল- ও পবন ভাই, তুমি আমাকে ভালোবাস না ?
মালী বলল- তুমি কার সাথে কথা বলছো?
গোলাপ- দেখছো না পবন ভাই এসেছে । গাছ পালা দুলছে। ও পবন ভাই, -আমি তো ঝড়ে পড়ব। তোমার গতি থামাও।
মালী- ভয় পেয়ো না,আমি তোমায় ঢেকে দেব।
(মালী কলাপাতা দিয়ে ঢেকে ফেলল গোলাপ কে। )
থেমে গেল পবন। পবন বলল- কি হল গোলাপ ?তোমার জন্য কি আমি চলাফেরা করতে পারব না?
গোলাপ- পবন ভাই, তুমি জানো আমার শরীর কোমল। আমার কাছে একটু আস্তে আস্তে এসো । অমন দমকা ছুটে এসো না ।
পবন – তুমিই শুধু অমন বলো । বেলী,চামেলী ,রজনী গন্ধা আমায় দেখে খুশি হয়।
গোলাপ- তা তো হবেই। তুমি তো ওদের গুন গেয়ে বেড়াও। চারদিকে ওদের গন্ধ ছড়িয়ে বেড়াও।
পবন- তোমার গন্ধ ছড়াই না? তবে তুমি তো আমায় দেখে মূর্ছা যাও!এবার চলি গোলাপ।
পবন চলে গেল। চারদিকে বেলীর গন্ধ ছড়ালো। রাগ হলো গোলাপের। বেলীর কি দোষ আছে? না । বেলীর মতো খোলামেলা থাকতে পারে না গোলাপ। পবন এলে শরীর ঢাকতে হয়। নইলে তো পাপড়ি খসে পড়বে। তাই তো গোলাপের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে না।