কুড়ানি
আমি কুড়ানি গো ।
ফুটপাতে,পার্কে যত্রতত্র আমার ঘোরাফেরা,বসবাস।
সমাজের অবক্ষয়ের চুড়ান্ত নজির আমি– আমার মতো আরোও শত শত নাম- গোত্র পরিচয়হীন শিশুরা।
তোমাদের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট ডাস্টবিন থেকে কুড়োই জঠরের জ্বালা কমাতে।
কখনো ,পথচারীরা দয়া করে আধখাওয়া পাউরুটি,বিস্কুট ছুঁড়ে দেয়। হুড়োহুড়ি পড়ে যায় চিল–শকুনের মতো কে কার আগে কুড়িয়ে আনবে।
মাথার উপরে ওই নীল আকাশটা ,পায়ের নীচে শক্ত ফুটপাত,আর ,একপাল বেওয়ারিশ কুকুর আমাদের সাথী।
কুকুরদের সাথে খুব ভাব আমার।
আমি কে? কি নাম?কে আমার বাবা,মা?
ওফ্ ওসব কথা আমি কি জানি ছাই।
কে যে গতরের সুখ মিটিয়ে এখানে আমাকে কবে ফেলে গেছে সেকথা জিজ্ঞেস করো ওই আকাশকে। জিজ্ঞেস করো ফুটপাত আর বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে,ওরাই তো সেদিন অবাক চোখে দেখেছিলো,মানুষ নামক দু’পেয়ে জীব কতো নিষ্ঠুর হতে পারে।
কুকুরগুলো চারপেয়ে হলেও আমার মতো অনেককে ওরাই খাবার মুখে করে এনে খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে।
আমাকে হয়তো কোন কুকুরী মা তার বুকের দুধও খাইয়েছিলো,আবছা মতো মনে পড়ছে।
ওই কুড়িয়ে খাই বলেইতো আমি কুড়ানি গো।
একটা ছোট্ট ছেলে সেদিন কেক একটু খেয়েই ছুঁড়ে ফেলতে আমি গুটিগুটি এগোতেই বলে ওঠে,এমা! ছিঃ, তুই কুড়িয়ে খাচ্ছিস কেনরে?
আমি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি–,আমি তো রোজ কুড়িয়েই খাই,কেউ তো দেয়না,খুব খিদে পায় যে।
ছোট্ট ছেলের বুঝি তাই শুনে কষ্ট হলো,স্কুল ব্যাগ খুলে পুরো কেকের প্যাকেটটাই আমাকে দিয়ে বললে ,আজ এটাই খাবি,আমি এদিকে এলে মাঝে মাঝে তোকে দিয়ে যাবো খাবার।
সেদিন,ওই দেবদূতের মতো ছেলেটি যতোক্ষণ না চোখের আড়াল হয়,তাকিয়েই ছিলাম।
ভগবানকে তো চোখে দেখিনি,সেদিন দেখে চোখ জলে আর মন আনন্দে ভরে উঠলো গো কুড়ানির।