Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কুঞ্জপুকুরের কাণ্ড || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 4

কুঞ্জপুকুরের কাণ্ড || Shirshendu Mukhopadhyay

হরিবল্লভ রায়ের বাড়িতে ডাকাত

রাত্রিবেলা হরিবল্লভ রায়ের বাড়িতে ডাকাত পড়ল। রাত বারোটা নাগাদ ভীম দাস তার দলবল নিয়ে দরজা ভেঙে যখন বাড়িতে ঢুকল, তখন তাকে দেখে সকলেই থ। গলায় গাঁদা ফুলের মালা, মাথাভর্তি আবির, কপালে সিঁদুরের টিপ। হুহুঙ্কারে চারদিক প্রকম্পিত করে লুটপাট সেরে চলে যাওয়ার সময় হরিবল্লভ রায়কে বলল, “বউনিটা সেরে গেলাম।”

মহিম ঘোষের বাড়িতে ঢুকল চোর, তাঁর বড় ছেলে জানলার শিক ভাঙার শব্দ পেয়ে উঠে টর্চ জ্বেলে দেখতে পেল, জানলায় গৌরহরি দাঁড়িয়ে।

তাকে দেখে জিভ কেটে বলল, “ইস, কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম বুঝি? অনেককালের অনভ্যাস তো, তাই হাতটা সড়গড় নেই। জানলার শিক কাটতে গিয়ে শব্দ করে ফেলেছি। তবে ভাববেন না, কয়েকদিন একটু প্র্যাকটিস করলেই হাত সড়গড় হয়ে যাবে। তখন গেরস্তও নিশ্চিন্তে ঘুমোবে, হস্তশিল্পীরাও নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে।”

হরিপদ সাহার পাশের বাড়িতেই থাকে তার ভায়রাভাই নবকুমার দাস। দুই ভায়রাভাইয়ে বহুকালের ঝগড়া। হরিপদর জমি নাকি খানিকটা বেদখল করে বসে আছে নবকুমার। নিশুতরাতে জটেশ্বর গিয়ে হরিপদর জানলায় হানা দিল। বলল, “বউনিতে রেট কম করে দিয়েছি। দুটি হাজার টাকা ফেলুন, আপনার ভায়রার কাটামুণ্ডু আপনার সদর দরজায় রেখে যাব।” শুনে হরিপদ মূর্ছা যায় আর কি!

গাঁয়ে এইসব সাঙ্ঘাতিক-সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটায় সকলেই উদ্বিগ্ন। সকালবেলাতেই সবাই শুকনো মুখে শশী গাঙ্গুলির বাড়িতে এসে জড়ো হয়েছেন। ক্ষীণ আশা, যদি শশীবাবু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন, তা হলে এখনও কুঞ্জপুকুরের ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার নয়।

নন্দ কবিরাজ সারারাত ঘুমোননি। বসে বসে ভেবেছেন। বাড়িতে সারারাত বাবলুর জন্য কান্নাকাটি চলেছে। সকালবেলায় মনঃস্থির করে ফেলেছেন তিনি। হাতটা সরিয়েই ফেলবেন। পাপ যা হওয়ার হবে, কিন্তু নাতিটা তো রক্ষা পাবে। আর শশীবাবুর জন্য ওষুধটাও তিনি একটু হাতটান করেই করবেন। দুটো-একটা গাছগাছড়া নাহয় বাদই দেবেন। মনটা অবশ্য সায় দিচ্ছে না, কিন্তু মায়ায় বড় দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

চুরিটুরি জীবনে করেননি। তাঁর হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপছিল। “দুর্গা” বলে সকালেই বেরিয়ে পড়লেন তিনি। কিন্তু শশীবাবুর বাড়িতে এসে দেখেন, সাতসকালেই গাঁয়ের মাতব্বররা এসে জুটে গেছেন সেখানে। রাতে যেসব রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে গেছে, তাই নিয়েই তুমুল আলোচনা হচ্ছে। হরিবল্লভ রায় বলছিলেন, এর একটা বিহিত না করতে পারলে আমাকে সাত পুরুষের ভিটে ছাড়তে হবে।

মহিম ঘোষ বললেন, “আমারও ওই কথা। এই বলে রাখছি, একটা ব্যবস্থা না হলে কুঞ্জপুকুরে আর গেরস্তর বাস থাকবে না।”

সবাই কথা থামিয়ে নন্দ কবিরাজের দিকে উদ্বিগ্ন মুখে তাকাল। হরিবল্লভ বললেন, “ও নন্দ, শশীবাবুকে এবার যদি চাঙ্গা করে তুলতে না পারে, তা হলে সমূহ সর্বনাশ। গুণ্ডা-বদমাশরা যে একেবারে কেত্তন করতে শুরু করল!”

নন্দ কবিরাজ গম্ভীর মুখে বললেন, “দেখছি, কী করা যায়!” শশীবাবুর ঘরে ঢুকে নন্দ কবিরাজ থ’ হয়ে গেলেন। শশী গাঙ্গুলির খাটের পাশেই একটা টেবিলে হাটা রাখা ছিল, এখন সেটা নেই।

ভেতরে-ভেতরে ঘাবড়ে গেলেও মুখটা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে তিনি শশীবাবুর নাড়ি ধরে বসে রইলেন। নাড়ি রোজকার মতোই ক্ষীণ। শশীবাবু সাড়া দিচ্ছেন না।

একটা পাঁচন খাইয়ে দিয়ে নন্দ কবিরাজ ক্ষান্তমণিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তা হাঁ গো ক্ষান্তমণি, বলি শশীবাবুর হাতটা কই? সেটা তো দেখছি না? চুরি হয়ে যায়নি তো?”

“না কবরেজমশাই, সেটা আমি লোহার আলমারিতে তুলে রেখেছি। আমাদের কাজের মেয়ে, রাসু কোত্থেকে শুনে এসেছে, আজ নাকি হাতটা চুরি করতে আসবে ভীম দাস আর গৌরহরি। তাই তুলে রেখেছি।”

“তা ভালই করেছ। কোন আলমারিতে রাখলে?”

“ওই তো, বাবার মাথার কাছেই আলমারি।”

“চাবিটা কোথায় রেখেছ?”

“এই তো আমার আঁচলে”, বলে ক্ষান্তমণি আঁচলে বাঁধা চাবিটা দেখাল।

নন্দ কবিরাজ হাঁ-হাঁ করে উঠলেন, “না, না, কাজটা ঠিক হচ্ছে, চাবি তোমার কাছে রাখলে তোমারই বিপদ। ভীম দাস এলে কি সহজে ছাড়বে? গলায় খাঁড়া চেপে ধরে চাবি কেড়ে নেবে। তার চেয়ে চাবিটা বরং আর কারও কাছে পাচার করে দাও। বাড়িতে রেখো না।”

“তার দরকার নেই কবরেজমশাই, আজ সবাই আমাদের বাড়ি পাহারা দেবে। সদাশিব দারোগা নিজেও থাকবে।”

নন্দ কবিরাজ একটু হাসলেন, “ওদের তো চেনো না ক্ষান্তমণি, তাই বলছ। গাঁয়ের লোক আর সদাশিব মিলে কিছুই করতে পারবে না। তারা সব বোমা, বন্দুক নিয়ে আসবে। গাঁয়ের ক’টা লোকের ওসব আছে? দিনু দাসের আর হরিবল্লভ রায়ের দু’ খানা গাদা বন্দুক ছাড়া আর কী আছে বলল! আর সদাশিব! ছছাঃ। তার যা অবস্থা, তাতে আজকাল ইঁদুরও তাকে ভয় পায় না।”

ক্ষান্তমণি সভয়ে বলল, “ তা হলে কী হবে কবরেজমশাই?”

“হাতটাকে যেমন করেই হোক রক্ষা করতে হবে। চাবিটা অন্য জায়গায় থাকলে ডাকাতরা চট করে নিয়ে যেতে পারবে না। লোহার আলমারি ভাঙতে হবে। কিন্তু এ তো বেশ মজবুত আলমারি দেখছি। ভাঙা সহজ কাজ নয়।

“চাবিটা তা হলে আপনিই নিয়ে যান কবরেজমশাই।”

“না, না, আমি কেন?” বলে নন্দ কবিরাজ একটু আপত্তি প্রকাশ করলেন। তারপর যেন অনিচ্ছের সঙ্গেই বললেন, “আচ্ছা, দাও। কাউকে-না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে।”

চাবিটা নিতে গিয়ে হাতটা থরথর করে কাঁপছিল তাঁর। গলা শুকিয়ে আসছে। বললেন, “ক্ষান্তমণি, আমার শরীরটা ভাল নেই। নাতির জন্য ভেবে-ভেবে মাথাটাই খারাপ হওয়ার জোগাড়! আমাকে পাতিলেবুর রস দিয়ে এক গেলাস জল দাও

“এই দিই।” বলে ক্ষান্তমণি প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল। নন্দ কবিরাজ তাড়াতাড়ি উঠে আলমারিটা খুলে ফেললেন। দিনের বেলা, চারদিকে মানুষজন। যে-কেউ দেখে ফেলতে পারে। হাতটাও বড্ড কাঁপছে। কিন্তু উপায়ই বা কী? একাজটা না করলে তাঁর নাতির প্রাণরক্ষা হয় না। আলমারির ওপর-তাকে হাতটা রাখা ছিল। চট করে বের করে এনে চাঁদরের তলায় লুকিয়ে ফেললেন, তিনি। তারপর আলমারিটা বন্ধ করে যেই ফিরেছেন অমনই তাঁর সর্বাঙ্গে যেন একটা বরফের হিমশীতল স্পর্শ খেলে গেল। কেননা তাঁর মনে হল, শশীবাবু যেন এতক্ষণ ঘাড় তুলে তাঁকে দেখছিলেন। তিনি ফিরে তাকানো-মাত্র শশীবাবু যেন মাথাটা বালিশে ফেলে চোখ বুজে ফেললেন।

নন্দ কবিরাজের হাত-পা এত কাঁপতে লাগল যে, তাঁর মনে হল, এবার মূছ যাবেন। হাতটাও তাঁর শিথিল মুঠো থেকে আর একটু হলেই পড়ে যাচ্ছিল।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দম নিলেন তিনি, যা দেখেছেন তা কি ভুল দেখেছেন? দেখেছেন বলাও ভুল। চোখের কোণ দিয়ে যেন আবছা মনে হল, শশীবাবু তাঁকে দেখছেন। ভুলও হতে পারে। মানুষ যখন আতঙ্কে থাকে, তখন কত ভুলভাল অনুমান করে।

সাহসে ভর করে তিনি আবার শশীবাবুর কাছে এসে বসলেন। নাড়িটা আবার পরীক্ষা করলেন, এখনও নাড়ি ক্ষীণ। তাঁর অভিজ্ঞতা বলে, এই অবস্থায় রোগীর বাহ্যচৈতন্য থাকার কথা নয়। তা হলে ভুলই দেখেছেন।

ক্ষান্তমণি যখন লেবুর জল এনে দিল, তখন বাস্তবিকই তাঁর শরীর খারাপ লাগছে, তেষ্টায় বুকটা কাঠ। ঢকঢক করে জলটা খেয়ে নিয়ে উঠে পড়লেন।

বাড়িতে ফিরেই নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে–হাতটা আর চাবিটা নিজের লোহার আলমারিতে তুলে রেখে চাবি ট্যাঁকে খুঁজে ফেললেন। কাজটা বেশ বুদ্ধির সঙ্গেই করেছেন। হাতটা যে চুরি গেছে, তা ক্ষান্তমণি বুঝতেই পারবে না কিছুদিন। চাবি তাঁর কাছে, সুতরাং আলমারি খোলার উপায় নেই।

যারা শশীবাবুর জন্য ওষুধের গাছগাছড়া আনতে গিয়েছিল, তারা সবাই এসে গাছগাছড়া সবই দিয়ে গেছে। নন্দ কবিরাজ সারাদিন ধরে সেইসব গাছগাছড়া সেদ্ধ করতে লাগলেন। কোনওটা রস করলেন হামানদিস্তায়। কোনওটাবা পুড়িয়ে ভস্ম করতে হল। শক্ত কাজ। তবে দুটো জিনিস ব্যবহার করলেন না। নাতির মুখ চেয়ে একাজ তাঁকে করতেই হবে।

ক্রমে রাত হল। চারদিক নিশুতি হয়ে গেল। এমন সময় জানলায় ঠকঠক শুনে, গিয়ে পাল্লাটা খুললেন।

“কে?”

“অধমের নাম দিনু বিশ্বেস। হস্তান্তরটা হয়ে যাক।”

“দিচ্ছি। কিন্তু আগে বলো, হাতটা নিয়ে তুমি কী করবে?”

দিনু একটু হেসে বলল, “আজ্ঞে, হাত জোগাবে ভাত।”

“তার মানে?”

“গরিব মানুষদের তো ওই একটাই চিন্তা, না কি বলুন। হাতটি পেলে আমার ভাতের জোগাড় হবে।”

“তুমি কি এই হাত কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানো?”

“আজ্ঞে, শিখে নেব।”

“শিখে নেবে? শশীবাবু কাউকে তো বিদ্যেটা শেখাননি।”

“আজ্ঞে না। তবু চেষ্টা করতে দোষ কী?”

“তুমি পাজি লোক। যদি বিদ্যেটা ধরে ফেলো, তা হলে এই হাতকে তো পাপের কাজেই লাগাবে।”

“কী বলেন কবরেজমশাই!”

“ভুল বলছি?”

দিনু খুবই লাজুক গলায় বলল, “যতসব চোর-ডাকাতদের দেখেন, তারা হল ভারি নিচু নজরের মানুষ। আমি আজ্ঞে তাদের মতো নই। হাতটি কাজে লাগাতে পারলে এই অধম দিনু বিশ্বেস দেখবেন, গাঁয়ের সব দুঃখ ঘুচিয়ে দেবে। শশীকতা হাতখানা পেয়ে এতকাল চোর-ডাকাত ঠ্যাঙানো আর ম্যাজিক দেখানো ছাড়া আর কী করেছে বলুন তো! মানুষের দুঃখ ঘুচিয়েছে? হাতটাকে ঠিকমতো কাজে লাগালে কত কী করা যেত! একটা পুকুর খোঁড়া যেত, তাতে গাঁয়ের জলকষ্ট দূর হত। টাকা-পয়সা রোজগারের কাজে হাতটাকে লাগালে এ-গাঁয়ে আজ একটাও গরিব থাকত না। তারপর ধরুন, এই হাতটাকে লাগিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি, হাসপাতালের ব্যবস্থা, কত কী কার ছিল! আমি বলি, শশীকতার হাতে পড়েই হাতটার এই দুরবস্থা! এবার উপযুক্ত হাতে পড়ে হাতটা কী খেল দেখায় তাই দেখবেন?”

“তা বাপু, তুমি গতকাল আমাকে মন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছিলে। কথাটা একটু খোলসা করে বলবে?”

দিনু খুবই লজ্জিত গলায় বলল, “গরিবের আস্পদ্দাটা যদি না ধরেন তো বলি, আমি এই কুঞ্জপুকুর আর তার সঙ্গে দশ বারোটা গাঁ নিয়ে একটা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। একেবারে রামরাজ্য যাকে বলে। কোথাও কোনও অশান্তি-ঝঞ্ঝাট থাকবে না, কোনও অবিচার-অনাচার খুঁজেও পাবেন না। সুখ একেবারে উপচে পড়বে। তা সেই কথা ভেবেই মন্ত্রী হওয়ার কথাটা বলা!”

“তা তুমিই রাজা হবে নাকি?”

একটু আমতা-আমতা করে দিনু বলল, “হওয়ার ইচ্ছে তেমন ছিল না, বুঝলেন! রাজা হওয়ার অনেক ঝকমারি। চারদিক সামলে চলতে গেলে নাওয়া-খাওয়া অবধি ভুলতে হয়। কিন্তু পাঁচজনে ধরে পড়েছে, তাই অনিচ্ছের সঙ্গেই হতে হচ্ছে আজ্ঞে। হস্তান্তরটা কি এইবেলা সেরে ফেলবেন? চারদিকে রাত-পাহারা বসেছে, বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে ভরসা হয় না। কাদের যেন পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি।”

“আগে বলো, আমার নাতি কেমন আছে?”

“আজ্ঞে, ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে। তবু বলি, সে এত ফুর্তিতে আছে যে, বাড়ি ফেরার মোটেই ইচ্ছে নেই। আমারও তাকে বড্ড পছন্দ। আহা, যেন দেবশিশু। আমাকে ‘কাকা বলে ডাকছে।”

“সে কি বাড়ির জন্য কান্নাকাটি করছে না?”

“কান্না! কী যে বলেন কবরেজমশাই! আমরা যত তাকে দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি। কান্না তার ত্রিসীমানায় নেই।”

“তুমি কি জানো যে, তুমি অতি পাষণ্ড?”

“লজ্জা দেবেন না কবরেজমশাই। ভাল পাষণ্ড হতে হলেও এলেম চাই, বুকের জোর চাই। আমি বড্ড নরম মনের মানুষ। পাষণ্ড হতে পারলে কষে পায়ের ওপর পা তুলে জীবন কাটাতে পারতুম। তা আর দেরি করাটা কিন্তু ঠিক হবে না। একটু হাত চালিয়ে হাতটা আমার হাতে হস্তান্তর করে ফেলুন। হাতটা বেহাত হয়ে গেলে আমাদের আর কিছু করার হাত থাকবে না। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়তে হবে। এই হাত নিয়ে কারও সঙ্গে হাতাহাতি হোক তা আমি মোটেই চাই না।”

কবরেজমশাই অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে আলমারি খুলে হাতটা বের করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। একটা মস্ত বড় বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যাচ্ছে। পাপও হচ্ছে। কিন্তু বাবলুকে বাঁচাতে হলে এ ছাড়া আর উপায়ই বা কী? এর পরও আরও পাপ কাজ করতে হবে। শশীবাবুকে সঠিক ওষুধ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া! নন্দ কবিরাজের বুক ঠেলে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। নরকে পচতে হবে। নরক জায়গাটা কতদূর খারাপ, কে জানে!

জানলা দিয়ে হাতটা বাড়াতেই দিনু খপ করে সেটা প্রায় কেড়ে নিয়ে নিল। অমায়িক গলায় বলল, “মন্ত্রী আপনিই হচ্ছেন ধরে নিন। আরও দু-চারজন উমেদার আছে বটে, কিন্তু আপনার দাবিই জোরালো।”

কবরেজমশাই বললেন, “রক্ষে করো বাপু, আমার মন্ত্রী হওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই।”

“আজ্ঞে, আপনি অনেংটা আমারই মতো। কোনও কিছুতেই লোভ নেই। তবে পরের যদি ভাল হয়, দেশের যদি উপকার হয়, তা হলে নাহয় অনিচ্ছের সঙ্গেই হলেন। যেমন আমি। পাঁচজনে ধরে না পড়লে আমিই কি রাজা হতে চেয়েছিলুম! যাক গে, একটু ভেবে দেখবেন প্রস্তাবটা।”

“তোমার সঙ্গে কথা বললেও পাপ হয়, এখন বিদেয় হও।”

“যে আজ্ঞে। আপনার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দু দণ্ড কথা বললেও বিস্তর জ্ঞান হয় মশাই। পেন্নাম হই।”

বেঁটে ছায়ামূর্তিটা জানলা থেকে মিলিয়ে যেতেই কবরেজমশাই জানলা বন্ধ করে নিজের চেয়ারখানায় এসে চুপচাপ বসে রইলেন। বুকটা বড় ধুকপুক করছে। সকালবেলায় দৃশ্যটা কি ভুল দেখলেন? শশীখুড়ো যে ঘাড় তুলে মুখ ফিরিয়ে চেয়েছিলেন–সেটা কি একান্তই মনগড়া? মনগড়া হলেও তাঁর কেমন যেন গা-ছমছম করছে। ভয় হচ্ছে। হাতখানা বেহাত হয়ে গেল, সেটাও একটা মস্ত বিশ্বাসঘাতকতা হল। বুড়ো বয়সে এসে এ কী চক্করে পড়ে গেলেন তিনি?

ডাইনি-পুকুরের ধারে অন্ধকারে একটা ঝোঁপের আড়ালে ঝিকু অপেক্ষা করছিল। দিনুকে দেখে বেরিয়ে এসে সঙ্গ ধরে বলল, “পেলে জিনিসটা?”

“দেখ ঝিকু, সব ব্যাপারে নাক গলানোটা আমি পছন্দ করি না। তুই আমার কোটাল, কোটাল থাকবে কোটালের মতো। রাজা-গজার সঙ্গে সমানে-সমানে অত মাখামাখি কিসের! ইয়ার-বন্ধু নাকি?”

‘ঝিকু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “রাগ করো কেন দাদা? যখন রাজা হবে, তখন তো দোবেলা সেলাম ঠুকতেই হবে। এখনও

তো হওনি, তাই ক’দিন একটু মেলামেশা করে নিচ্ছি।”

“ট্রেনিং থাকা ভাল। নইলে বেয়াদবি অভ্যেস হয়ে গেলে তখনও হয়তো ফাজলামি করে বসবি।”

জিভ কেটে ঝিকু বলল, “না, না। সেটা খুব খেয়াল থাকবে।”

দু’জনে নীরবে হাঁটল কিছুক্ষণ, তারপর ঝিকু হঠাৎ বলল, “যদি অপরাধ না নাও, তা হলে একটা কথা বলি।”

“কী কথা?”

“বলছিলাম কি, তুমি দরটা বড্ড কম নিলে। অত সস্তায় বাচ্চাটাকে বিক্রি করা তোমার ঠিক হয়নি। মাত্র দুশো টাকা অমন ফুটফুটে ছেলের দাম হয়? হেসেখেলে দু হাজার তো হবেই।”

গম্ভীর হয়ে দিনু বলল, “এইজন্যই তো আমি রাজা, আর তুই কোটাল। সংস্কৃতে একটা কথা আছে জানিস? বিপদে পড়লে পণ্ডিতেরা অর্ধেক ত্যাগ করে। একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এখন যদি আমি দোরে-দোরে ঘুরে দর বাড়ানোর চেষ্টা করি, তা হলে

আমার তখন ঘাড় থেকে জিনিসটা নামানোর দরকার ছিল, তাই বেদেদের কাছে বেচে দিলাম। তারা গতকালই এ-তল্লাট ছেড়ে চলে গেছে।”

কুঞ্জপুকুর থেকে মাইলটাক দূরে জঙ্গলের মধ্যে একটা পোড়া বাড়ি। ধ্বংসস্তূপই বলা যায়। সাপখোপের আস্তানা। ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই দু’খানা ঘর আজও পড়ো-পড়ো হয়ে কোনওক্রমে টিকে আছে। এখানেই দিনুর আস্তানা। কাছাকাছি লোকবসতি নেই।

ঝিকু বলল, “দেখ দিনুদাদা, তোমার নজরটা কিন্তু তেমন উঁচু নয়। তুমি বলছ, রাজা হলে এই পোড়ো বাড়িটাকেই রাজবাড়ি করবে, এটা আমার মোটেই ভাল ঠেকছে না।”

“তুই বোকা। এই বাড়িটা এমন সুন্দর করে আবার তৈরি করব যে, দেখে লোকের তাক লেগে যাবে। কিন্তু আজ আর কথা নয়। তুই ঘুমোগে, আজ রাতে আমার জরুরি কাজ আছে।”

ঝিকু পাশের ঘরে ঘুমোতে গেল। কিছুক্ষণ পর যখন তার নাক ডাকতে শুরু করল, তখন দিনু হাতখানা চাঁদরের তলা থেকে বের করে মোমবাতির আলোয় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখল ভাল করে। এটা আসল হাতটাই বটে! সন্দেহের কোনও কারণ নেই।

দিনু শতরঞ্চির ওপর বসে হাতটা মুঠো করে ঘরে ধ্যানস্থ হল, আন উনো এফেন… আন উনো এফেম… আন উনো এফেনড্রাম… না, হচ্ছে না। আন উনো এটেনখাম… নাঃ, ওটাও নয়….

ধৈর্যশীল দিনু সারারাত ধরে চেষ্টা করতে লাগল। শশীবুড়ো অনেকটা এরকমই কী যে বলত, আন উনো. আন উনো এফ এন ডো… আন উনো….

প্রায় ভোরের দিকে দিনু ঢুলতে-ঢুলতে হঠাৎ চমকে উঠল। কী হল? হাতটা কি একটু নড়ে উঠল নাকি? নাকি মনের ভুল? ঘুম ছুটে গেল দিনুর। হাতটা চেপে ধরে সে মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। আন উনো এফ এন ডার… আন উনো এফ এন ড্রো…

দিনুকে প্রায় চমকে দিয়ে হঠাৎ তার হাতের মধ্যে হাতটা নেতানো ভাব থেকে চড়াক করে লাফিয়ে উঠল। পাঁচটা আঙুল টান-টান হয়ে উঠল প্রথমে। তারপর আঙুলগুলো বারবার মুঠো হয়ে খুলে যেতে লাগল। জেগেছে! হাতটা জেগেছে!

দিনু প্রথমটায় হোঃ হোঃ করে খানিকটা হেসে নিল। সারা জীবনের যত স্বাদ-আহ্লাদ সব এবার পূর্ণ হওয়ার মুখে। আর চিন্তা নেই। এখন সে সত্যিই রাজা।

হাতটা শূন্যে উঠে গেল। তারপর ছটফট করতে লাগল। দিনু হাতটার দিকে চেয়ে বলল, “এবার তোর আসল খেল শুরু। শশীকতা তোকে কাজেই লাগাতে পারেনি। আহাম্মকের হাতে পড়ে তোর বড্ড হেনস্থাই হচ্ছিল রে! এবার আসল লোকের হাতে এসে পড়েছিস। যা বাবা, প্রথমে একটু হালকা কাজ দিয়েই শুরু কর। হাটগঞ্জের মতি ময়রার দোকানে খুব ভোরবেলা জিলিপি ভাজে, আর হিংয়ের কচুরি। এক চাঙারি জিলিপি আর এক চ্যাঙাড়ি কচুরি নিয়ে আয় তো।”

হাতটা শোঁ করে বেরিয়ে গেল। তারপর পাঁচ মিনিট যেতে-না-যেতেই পাঁচ আঙুলের ফাঁসে দুটো চ্যাঙাড়ি ঝুলিয়ে ফিরে এল।

“ও ঝিকু, ওঠ, ওঠ। দেখ এসে কাণ্ড! মার দিয়া কেল্লা।”

হাতটা শূন্যে ভাসছিল। দিনু সেটিকে ধরে কম্বলের নিচে চাপা দিয়ে রেখে বলল, “একটু জিরিয়ে নাও বাবা। এর পর মেলা মেহনত আছে।”

ঝিকু ঘুম থেকে উঠে জিলিপি আর কচুরির আয়োজন দেখে অবাক! “এ কী কাণ্ড গো দিনুদাদা?”

“কেল্লা মেরে দিয়েছি। কোটালের চাকরি তোর পাকা। এখন আয়, জিলিপি আর কচুরি খা।”

ঝিকুর চোখ চকচক করতে লাগল। বলল, “সত্যি? তা বেতনটা কত দেবে বলো তো?”

“আহা, আগেই বেতনের কথা তুলিস কেন? আগে কাজকর্ম দেখি, তারপর ঠিক হবে। ধর গে, মাসে দু-তিন হাজার তো হবেই।”

“বটে!”

“তার ওপর উপরি আছে। সেও কম নয়। তার ওপর কোটালের কত বড় সম্মান।”

“কিন্তু কোটাল কাকে বলে তাই তো এখনও জানা হল না!”

“জানা আর শক্ত কী? দু’দিন রোস, তারপর সভাপণ্ডিতের কাছে জেনে নিবি।”

“সভাপণ্ডিত! সে আবার কে?”

“রাজাদের ওসব থাকে। তারা তো লেখাপড়া করে না, তাদের হয়ে ওই পণ্ডিতেরা লেখাপড়া করে। রাজার যখন যা জানার, তা ওদের কাছ থেকে জেনে নেয়।”

“এ তো খুব ভাল ব্যবস্থা গো দিনুদাদা।”

দিনের বেলা হাতটাকে বেশি ব্যবহার করাটা যুক্তিযুক্ত মনে হল না দিনুর। পাঁচজনের চোখে পড়ক এটা সে চায় না। সারাটা দিন সে তাই চুপচাপ রইল। সন্ধের পর ঝিকুকে একটা কাজের ছুতোয় বাইরে পাঠিয়ে সে হাতটাকে বের করে বলল, “শোনো বাপু, আপাতত শক্ত কাজ দিচ্ছি না। আজ বউনির দিন। আমার কাছে খবর আছে, সুলতানগঞ্জের জমিদার নব মল্লিকের পাতালঘরে এক কলসি মোহর আছে। চট করে গিয়ে কলসিটা নিয়ে এসো তো।”

হাতটা চলে গেল। আধঘণ্টা পরে কলসি নিয়ে ফিরে এল। আহ্লাদে দিনুর চোখে জল এসে গেল। মোহরগুলো ঢেলে গুনে দেখল সে। প্রায় দুই হাজার মোহর। বিরাট ব্যাপার। তবু এও কিছু নয়। এ তো সবে নেমন্তন্ন বাড়িতে পাতে নুন পড়ার মতো। আসল ভোজ এখনও বিস্তর বাকি।

ঝিকু ফিরে এসে মোহর দেখে মুছা যায় আর কি! তোতলাতে তোতলাতে বলল, “এই ভাঙা বাড়িতে মোহর?’ ডাকাত পড়বে যে!”

দিনু বিজ্ঞের হাসি হেসে বলল, “আসুক ডাকাত, আসুক চোর, চিন্তার কিছুই নাই রে মোর। ভয় পাসনে।”

ঝিকুকে ভয় পেতে নিষেধ করলেও, দিনুর মন থেকে একটা ভয়ের ভাব যাচ্ছে না। শশীকতা এখনও বেঁচে আছেন। শশীকতার বেঁচে থাকাটাই দুশ্চিন্তার কারণ। পথের কাঁটা। শশীকতা যদি তেড়ে ফুড়ে ওঠেন তা হলে কোন কলকাঠি নেড়ে ফের হাতটাকে বশ করে ফেলবেন, তার ঠিক কী?”

খুনখারাপি দিনু করতে চায় না বটে, কিন্তু পথ নিষ্কণ্টক করতে গেলে দু-চারটে লাশ ফেলতেই হয়। উপায় কী? অনেক ভেবেচিন্তে সে মধ্যরাতে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলল। হাতটাকে বলল, “বাপু হে, একটু সহজ কাজই দিচ্ছি। আজ রাতেই শশী গাঙ্গুলিকে খুন করে আসতে হবে। কাজ শক্ত নয়, কারণ তাঁর প্রাণটি গলার কাছে এসে আটকে আছে। কষ্টও পাচ্ছেন। তা, তুমি বাপু ওই গলাটিই বেশ শক্ত করে চেপে ধরবে। প্রাণটি বেরিয়ে গেলে তবে ছাড়বে। আর শোনো, শশীকতার গলায় কালো সুতোয় বাঁধা একটু ধুকধুকি আছে, হাতে আছে বগলামুখী কবচ। তাকে যে খুন করতে পেরেছ তার প্রমাণ হিসেবে ও দুটো নিয়ে এসো।”

হাত চলে গেল। ঘণ্টাখানেক পরে কবচ আর ধুকধুকি নিয়ে। ফিরে এল।

দিনুর মনটা একটু খারাপ হল। একসময়ে শশীকতার নুন খেয়েছে। তবে ব্যাপারটা গায়ে মাখল না। এরকম আরও কত জনাকে নিকেশ করতে হবে, কে জানে! রাজা হওয়ার পথে বাগড়া দেওয়ার লোকের কী অভাব?

সকালেই দিনু বাড়িটা মেরামত করার জন্য মিস্তিরি লাগিয়ে দিল। কার বাড়ি, কী বৃত্তান্ত কিছুই জানা নেই। বাড়ি তৈরি হলেই হয়তো ওয়ারিশন এসে হাজির হয়ে বাড়ি দাবি করে বসবে। তবে চিন্তা নেই, দাবি করলে তারও ব্যবস্থা হয়ে যাবে। হাত যখন হাতে আছে, তখন চিন্তা কী?

ঝিকু সকালে কোথায় বেরিয়েছিল, ফিরে এসে খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, “ও দিনুদাদা, কুঞ্জপুকুরে খুব কান্নাকাটি পড়ে গেছে। ভোররাতে শশীকতা মারা গেছেন।”

“বলিস কী?”

“মা কালীর দিব্যি। গাঁ সুষ্ঠু লোক কাঁদছে আর বলছে, এবার গাঁয়ের বাস তুলে দিতে হবে।”

দিনু একটু হেসে বলল, “না, না, কারও ভয় নেই। যদি দিনু রাজাকে ঠিকমতো খাজনা দেয় এবং মেনে চলে, তা হলে কারও কোনও ভয় নেই। ভীম দাস, গৌরহরি, জটেশ্বর, সবাইকে আমি ঢিট করে দেব।”

“বটে!”

“তবে আর বলছি কী? যা, গিয়ে কুঞ্জপুকুরে কথাটা প্রচার করে আয়।”

ঝিকু রওনা হয়ে পড়ছিল। দিনু ডেকে বলল, “ওরে, ওরকম ছেঁড়াখোঁড়া পোশাকে গেলে তোর কথার দামই কেউ দেবে না। দাঁড়া, ভাল পোশাক পরে যা। আর কী বলছি, তাও শিখে যা।”

“ভাল পোশাক পাব কোথায়?”

ভাল পোশাকের অবশ্য অভাব হল না। দিনুর ফরমাশে হাত গিয়ে কোথা থেকে ঝলমলে পোশাক নিয়ে এল। একটা ঘোড়াও জোগাড় হয়ে গেল। মায় কোমরে একটা তলোয়ার অবধি।

ঝিকু গিয়ে যখন কুঞ্জপুকুরে ঘোড়া দাবড়িয়ে ঢুকল, তখন লোকে অবাক, জরির পোশাক পরা ঘোড়সওয়ার তারা কখনও দেখেনি।

ঝিকু ঘোড়ায় বসেই চিঙ্কর করে ঘোষণা করল, “আমি দিনুরাজার কোটাল ঝিকু। আপনারা মন দিয়ে শুনুন! এখন থেকে যাঁরা দিনুরাজাকে নিয়মিত খাজনা দেবেন, তাঁদের কোনও ক্ষতি হবে না। দিনুরাজা তাঁদের রক্ষা করবেন। কুঞ্জপুকুর এবং আশপাশের দশখানা গাঁ নিয়ে আপাতত দিনুরাজা তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাজ্যের পরিধি আরও বাড়বে। রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। কিন্তু বেয়াদবি করলে বিপদ হবে, আগেই বলে দিচ্ছি।”

লোকে এই ঘোষণা শুনে থ’ হয়ে গেল।

শুধু অবাক হলেন না কবরেজমশাই। তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। দিনু বিশ্বের যে হাতটাকে কাজে লাগিয়ে ফেলেছে, তাতে আর সন্দেহ নেই। এর জন্য তিনিও পাপের ভাগী।

ঝিকু ঘোষণা করল, “কুঞ্জপুকুরের উত্তর দিকে এক মাইল দূরে দিনুরাজার প্রাসাদ তৈরি হচ্ছে। রাজামশাই এখন সেখানেই তাঁবুতে অবস্থান করছেন। যাঁরা দেখা করতে যাবেন, পাঁচ টাকা নজরানা নিয়ে যাবেন। আর কয়েকদিন বাদেই তাঁর দরবারও শুরু হবে। মামলা-মকদ্দমার বিচার এখন থেকে তিনিই করবেন।”

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress