Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কী করে অন্য কোথাও || Shamsur Rahman

কী করে অন্য কোথাও || Shamsur Rahman

কী চমৎকার এই রাত। ভিড় এড়িয়ে, অনেকগুলো
কনফেকশনারি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, অষুধের দোকান আর
রেস্তোরাঁ পেরিয়ে একা একা পথ হাঁটতে
লাগছিল ভালো। আলোর চ্যাঁচামেচিতে উচ্চকিত রাস্তার
ধার ঘেঁষে আমার চলা। কখন যে
ছায়াচ্ছন্ন, পরিচ্ছন্ন চওড়া গলিতে ঢুকে পড়েছি, ঠাওর
হয়নি, কোনো কোনো বাড়ির ফুলের গন্ধে বাতাস ঈষৎ
মাতাল, আকাশ ধানমণ্ডির লেকে ঝুঁকে
দেখছে নিজের মুখ, আর্ত ইতিহাসের আবছা আদল। ঝিনুক
খুঁজতে এখানে আসে না কেউ। ঢিল ছুঁড়ে ছোট ছোট
ঢেউ দ্যাখে কখনো ঘুরে-বেড়ানো বালক। কী যেন
খুঁজতে খুঁজতে হাওয়ার ঠোকর-খাওয়া কিছু পালক
কুড়িয়ে নিই আলগোছে। কী দ্রুত বুড়িয়ে
যাচ্ছি, তবুও আজকাল বুকের ভেতর মদির
আগুন, পলাশ রাঙানো ফাল্গুন, আত্মাকে
চমকিয়ে-দেয়া স্বপ্নপোষ্য, গানে-পাওয়া কোকিল।

ঘামে ভেজা কার্তা হ্যাঙারে ঝুলিয়ে জড়িয়ে
ধরি বিশ্রামের আঙুরলতা। কোথাও একটি কথা নেই,
কপালে হাত বুলিয়ে দেয় না কেউ,
মাথার ওপর শ্বেতবসনা হুরির মতো সিলিং ফ্যান
নাচছে ঘুর্ণিনাচ! রক্তচাপ তেজী না-লেখা কবিতার কণাসমূহ
রাগী বেজীর দাঁতে বিদ্ধ হচ্ছে ক্রমাগত। সাপের ফণা
সেগুলো পুনরুদ্ধারের স্পৃহায় বিকশিত।
এই চমৎকার রাতে তোমাকে মনের চোখে দেখতে পাই
বলে আমাকে সারাক্ষণ
এক গুঞ্জরণ ঘিরে রাখে; তুমি ভালোবাসো আমাকে-
এই ভাবনা পালতোলা জলযান হয়ে
আমার হৃদয়ের নির্জনতম নদীর বুক চিরে চলমান।

চোখের সামনে ভেসে ওঠে মোগল আমলের
বুলবুলের গজলছাওয়া গুলবাগ; সেখানে তোমার
আয়ত চোখের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দেয়া চাওয়া,
ত্রস্ত ভঙ্গিতে ছুটে যাওয়া ফোয়ারার কাছে। ঝাউগাছে
হাওয়ার ঝলক। করে যেন তুমি আর আমি
পূর্ণিমা চাঁদের নিচে হেঁটে বেড়িয়েছিলাম হাতে হাত ধরে।
হঠাৎ দুজনের মাঝখানে
এসে দাঁড়ায় স্বপ্নভঙ্গের ঢ্যাঙা ছায়া।
কার ঘাড় ধাক্কা খেয়ে প্রবেশ করছি দুঃস্বপ্নে?
মাংস আর ত্বকহীন কতিপয় আঙুল
সাঁড়াশির মতো বসে যাচ্ছে গলায়, হঠাৎ এক ঝটকায়
সরিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস
নিতে চাই, কে যেন লোহার নখে ছিঁড়ে খুঁড়ে
বের করে আনছে দপ্‌ দপানো কলজে। বাতাসে
তোমার কণ্ঠস্বর একবার বেজে উঠে
দুমড়ে-মুচড়ে কোথায় হারিয়ে যায়। তার পেছনে
ছুটতে ছুটতে এমন পথে পৌঁছে যাই,
যার কোনো আরম্ভ নেই, শেষও নেই। কিছু প্রতিধ্বনি
কেবল মাথা কোটে শ্যাওলা ঢাকা প্রাচীনতায়।
বন্ধ দরজা থেকে বন্ধ দরজায় দৌড়ে গিয়ে ক্রমাগত
কড়া নাড়ি শব্দহীন। সাড়া দেবে কে?
কে খুলে দেবে কপাট
এই বেগানার জন্য, যার সারা শরীরে ঝুলছে জলপায়রা
আর দোয়েলের গলিত নাড়ি-ভুঁড়ি আর শত শত মৃত চোখ?
ওরা কয়েকজন আমার ঘরে হুড়মুড়িয়ে
ঢুকে শোনালো সুবচন-
‘এই দুনিয়া সরাইখানা,
আজ আছো তো কাল নেই। তোমার পাপের ঘড়া
কানায় কানায় উঠেছে ভরে। এবারে
কপাল পুড়বে তোমার’।

আমাকে ওরা শোনালো কবরের কথা,
থুতু ছিটোতে ছিটোতে বললো গোর-আজাবের কথা, মাটির
নিচের কিলবিল-করা
পোকা-মাকড়দের কথা। একটানা ঘ্যানর ঘ্যানর
বলে গেল মৃত্যুর কথা, মৃত্যুর কথা, মৃত্যুর কথা। এটা
ওদের বোধের বাইরে, যে তোমার স্পর্শ পেয়েছে,
পেয়েছে তোমার বুকজোড়া সপ্তবর্ণ ভালোবাসা
সে কেন মৃত্যুর পাঁচালি শুনতে চাইবে।

আমার পরিমাপহীন গুনাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে
ওরা বললো, ‘তোমার ঠাঁই হবে
হাবিয়া দোজখে’।
এক ঝাঁক মৌমাছি,
সোনালি মাতাল, ওদের গঞ্জনা গুঞ্জরণে ডুবিয়ে
শুনিয়ে গেল তোমার মধ্যরাত্রির মেঘময় কথা, ভোরবেলার
শিশিরস্নিগ্ধ কথা আমার কানে কানে। মনে পড়লো
তোমার ঠোঁট, যার মধু শতাব্দীর পর শতাব্দী
পান করলেও নিঃশেষিত হবে না। ভাবি,
যে দেখেছে সন্তের পুণ্যের মতো তোমার কালো গভীর চোখ
আর জ্যোৎস্নাপ্লাবিত ঝর্ণাধারার মতো
হাসি, অনিন্দ্য মুখের আদল, মৃত্যুর পরে
সে কী করে বেহেশত ছাড়া অন্য কোথাও যাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress