Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বৃষ্টি তখনও ঝরছে

বাইরে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি তখনও ঝরছে।

তবে বর্ষণ প্রবল নয়—ঝিরঝিরে বর্ষণ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কালো। এলোমেলো জলে হাওয়া বইছে। গাড়িতে উঠে বললাম, আমাকে নামিয়ে দিয়ে যা কিরীটী।

আর কৃষ্ণা হয়ত ওদিকে আমাদের জন্য গরম খিচুড়ি করে অপেক্ষা করছে। হীরা সিং, কোঠি চল।

আমি আর প্রতিবাদ করলাম না।

গাড়ি কিরীটীর গৃহের দিকেই চলল।

কিরীটী।

উ? তুই কি সত্যিই মনে ভাবিস কী? ঐ মুক্তোগুলোর সন্ধান করতে পারবি? সেগুলো হয়ত এতদিনে কোন্ সুদূরে পাচার হয়ে গিয়েছে!

সম্ভব নয়।

কেন?

প্রথমতঃ ঐ মুক্তোগুলোর দাম একমাত্র সাচ্চা জহুরীর কাছেই—সবাই ওর মূল্য বুঝবে; দ্বিতীয়ত, যে মুক্তোগুলো সরিয়েছে সে ভাল করেই জানে জোসেফের প্রাণ ছিল ঐ মুক্তোগুলো এবং সে রীতিমত একজন জুয়েলার হিসাবে পরিচিত ব্যক্তি—তার অর্থও আছে, কাজেই সে এত সহজে ব্যাপারটা হজম করে নেবে না হয়ত; তৃতীয়ত, ঐ মুক্তো ক্রয়ের জন্য উপযুক্ত খরিদ্দার চাই–

কিন্তু ধর, সে যদি সিঙ্গাপুরেই ওর খরিদ্দার পেয়ে গিয়ে থাকে?

পেলেও সে মুক্তোগুলো ঐ সিঙ্গাপুরে বসেই বেচা-কেনার সাহস পাবে না। কাজেই তাকে সিঙ্গাপুর ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবেই এবং সেদিক দিয়ে ভারতবর্ষের মত জায়গাই হচ্ছে

সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত স্থান।

তাহলে মুক্তো-চোর বর্তমানে নিশ্চয়ই এখানেই এসেছে তোর ধারণা?

নিঃসন্দেহে।

কিন্তু ইউরোপেও তো সে যেতে পারে?

পারে, কিন্তু সেখানে বিক্রি করার চাইতে এখানে তার আরও সুবিধে হবে। তাছাড়া এই ব্যাপারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট আর একটা বিশেষ ব্যাপার তুই ভুলে যাচ্ছিস কেন সুব্রত?

কি?

সেই কালো পাখীটা!

কালো পাখী?

হ্যাঁ রে, সেই ময়না পাখীটা!

তোর কি ধারণা তাহলে সত্যিসত্যিই ঐ কালো পাখীটার সঙ্গে জোসেফের মুক্তোগুলো চুরি হওয়ার কোন যোগাযোগ আছে?

কেবলমাত্র ধারণা নয় সুব্রত, আমি বলতে পারি এখন একেবারে স্থিরনিশ্চিত।

সত্যি?

হ্যাঁ, যার প্রথম পর্বের মুক্তোর মালাটি চুরি—দ্বিতীয় পর্বে মা’থিনের ভৃত্য রঘুনাথনের অকস্মাৎ নিরুদ্দেশ ও সেই সঙ্গে কালো পাখীটা-তৃতীয় পর্বে উভয়ের ভারতে আগমন –চতুর্থ পর্বেহতভাগ্য চিড়িয়া-ব্যবসায়ী ইউসুফ মিঞার অজ্ঞাতে অগ্নিতে হস্তপ্রসারণ—পঞ্চম পর্বে তার নৃশংস মৃত্যু ও সেই সঙ্গে পুনরায় কালো পাখীটির নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া—সব ঘটনাগুলোই যদি বিচার করিস তো দেখবি একের অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং যা আমাদের চক্ষুকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে বলে দিচ্ছে মুক্তোগুলো সিঙ্গাপুর থেকে ভারতবর্ষেই এসেছিল।

তারপর?

তারপরের ব্যাপারটি অবশ্যই কিছুটা জটিল।

জটিল কেন?

জটিল হচ্ছে, ওই ঘটনার সঙ্গে ডি’সিলভা কেমন করে জড়িত হয়ে পড়ল! তারপর যে স্যুট-পরিহিত লোকটি—দেখতে বেঁটে, গায়ের রং ফর্সা, চেপ্টা নাক, ছোট ছোট চোখ, পুরু ঠোঁট, বছর চল্লিশ বয়স—যার বর্ণনা শুনে ভারতীয় বলে মনে হয় না, ময়নাটা কিনতে ইউসুফের দোকানে এসেছিল দিনসাতেকের মধ্যেই—সে লোকটি কে? সে অবশ্যই ময়নাটার খোঁজ পেয়েছিল, কেমন করে পেল?

হয়ত ডি’সিলভার কাছে শুনেছিল সে।

না।

কেন?

তাই আমার ধারণা। সে কোনক্রমে জানতে পারে ব্যাপারটা। তাই ময়নাটা হাতাবার জন্য দু হাজার টাকা পর্যন্ত দর তুলে একটা চান্স নিয়েছিল মাত্র, তাতে যখন হল না সে চলে গেল। অবশ্যই সে চোখের আড়ালে গেলেও ময়নাটার লোভ ছাড়তে পারেনি এবং সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

তুই কি তবে বলতে চাস কিরীটী, সেই লোকটাই—

আমার অনুমান যদি মিথ্যা না হয় তো সুব্রত সে-ই ইউসুফের হত্যাকারী ও ময়না-চোর।

তাহলে ডি’সিলভা বা যে লোকটি ময়না বেচেছিল তারা কি–

না, তারা ময়নাটার সত্যিকারের দাম জানত না, কল্পনাও করতে পারেনি।

ডি’সিলভার সঙ্গে যে লোকটি ময়না বেচতে এসেছিল সে কি রঘুনাথন?

সম্ভবতঃ নয়।

তবে কে?

সে এক তৃতীয় ব্যক্তি। হয়ত—

কী?

ইউসুফের মত তাকেও বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে ওই ময়নাটার জন্যই।

বলিস কি!

হ্যাঁ–ময়নাটা চুরি পর্যন্তই তার শেষ কীর্তি। তারপরেই তাকে লোভের দণ্ড দিতে হয়েছে। আমি তোর কথাটা ঠিক বুঝতে পারছি না এখনও। তাছাড়া তুই ধারণাই বা করছিস কি করে রঘুনাথন নিহত হয়েছে?

ঐ মুক্তোগুলো অভিশপ্ত রে।

অভিশপ্ত-মানে?

মানে সেই মুক্তোই রঘুনাথনের মৃত্যুর কারণ বলে।

মুক্তোগুলো!

হ্যাঁ-কিন্তু আর না, বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। কৃষ্ণার টেম্পারের মারকারী কলমটা হয়ত এখন শেষ উর্ব সীমানায় আরোহণ করেছে আমাদের বিলম্বের জন্য, চল।

গাড়ি এসে ঐ সময় দোরগোড়ায় থামল।

বৃষ্টি তখনও ঝিরঝির করে অবিশ্রান্ত পড়ছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *