Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাব্যজিজ্ঞাসা || Subhash Mukhopadhyay

কাব্যজিজ্ঞাসা || Subhash Mukhopadhyay

সেদিনকার শাণিত ধার হারিয়েছি
হৃদয়ে শুধু স্মৃতির ভার, ভিড় শুধু
ঘুরে বেড়াই পাড়ায় আপন খুশিমতো
লঘু মেঘের মতন তনু মেলে যদি |
জন্মে আর জীবনে আর তৃপ্তি নেই
মরণে মধু সমাপ্তির ক্ষীণ আশা
সকলি মানি অলীক এই গ্রহলোকে
ইন্দ্রিয়ের ধাঁধায় বাঁধা শরীর মন |

নিরুদ্দেশে আকাশে বৃথা খুঁজি বাসা
আলোর কোনো চিহ্ন নেই চরাচরে
দিনের ভাঙা সেতুর শেষে পরপারে
সূর্য গেল,— মুখর ফের পান্থনীড় |


নিজেই নিজের ছায়ার পাশে
চমকালে মিছে, নিজেকে চিনে
নামাও বল্গা পিপাসু ঘাসে,
রুক্ষ মাটিতে, মেঘলা দিনে |
শুধুই ধূম্র ইচ্ছাধীনে
কতকাল মেঘ আকাশে ভাসে ?
তাই বিষণ্ণ তোমাকে দেখে
হঠাৎ পেলাম ইশারা কোনো
হালকা-স্বভাব হৃদয় থেকে—
হে দিগ্ ভ্রাম্ত, আজকে শোনো
তোমাকে সঁপেছি শরীর, মনও
সেদিন চোখের মুকুরে রেখে |
ঘরছাড়া মন তোমার, কবে
চকিতে নিখোঁজ পালাবে মাঠে
তাই শঙ্কিত হৃদয় | তবে
দয়ালু বিধিও সঙ্গে হাঁটে ;
যদি কিছুকাল যুগলে কাটে
ঘরমুখো মন হবেই হবে |
হে দিগ্ ভ্রান্ত, আমি তো বুঝি—
তোমার জটিল হারানো পথে
বাতি যে ধরব, সেটুকু পুঁজি
আলেয়ার নেই | আমার মতে
এসো আজ এই জটিল পথে
ঠিকানা বদ্ লে প্রণয় খুঁজি |


ভেঙেছে সংসার-স্বর্গ ; কন্টকিত স্বপ্নের বিছানা,
পাঠাল নিষ্ঠুর সূর্য গলিত মৃত্যুর পরোয়ানা
আমাদের মোমের টুপিতে ;
ক্রমেই সংক্ষিপ্ত হয় আকাশের সুনীল বিষয়,
উদার সমুদ্র ডাকে –
ঢেউয়ের ইশারা গিলি অন্ধকার গলির রোয়াকে,
হাতে হ্রস্ব জীবনের জরিপের ফিতে |
চড়ানো দৃশ্যের মধ্যে কিছু নিয়ে কাব্যের জগৎ
রচনা করার ইচ্ছা ছিল বটে, ভেঙেছি শপথ—
বৃত্তি আজ একান্ত বিবাদী,
মনে মনে উড্ডীন আকাশে বাসা বাঁধি,
কেবলি নিষ্ফল বাদ্য ছিদ্রময় ঢাকে,
পুরনো অভ্যাসবশে চিরুনির পণ্ডশ্রম টাকে |
তবুও তোমার কাছে ঋণী
একদা আমার এই একচক্ষু হৃদয়-হরিণী,
তোমার উষ্ণতা দিল বাষ্পময় আমাকে শরীর
উচ্ছল পর্বতগাত্রে, ধর্ম তাই উদ্দাম নদীর ;
তবুও তুষারচক্রে পিঠে একি জরাগ্রস্ত কুঁজ—
দূরে দেয় হাতছানি সংঘবদ্ধ মাঠের সবুজ,
ছত্রভঙ্গ রৌদ্র হয় ফিকে
উদ্যত সঙিন দিকে দিকে |


জাগুন জাগুন পাড়ায় আগুন
. বাড়ে হুহু
মগজে প্রভূত দম্ভ তবু তো
. আহা উহু |
মনের মহল দিচ্ছে টহল
. মিঠে কুহু
এখনো জাগুন পাড়ায় আগুন
. বাড়ে হুহু |


ভাঙল চিবুক-ঠেকানো হাতের নিদ্রা—
বাগানে শুক্ নো কঙ্কালসার বৃক্ষ
খিড়কির পথে পালাবে কি কলাবিৎরা ?
— গ্রামে ও নগরে ভিড় করে দুর্ভিক্ষ |
হৃদয়বিহীন সময়ের দুর্বৃত্ত
তোমার আমার মধ্যে দাঁড়াল আজ যে,
দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেয় আজ ভীরু চিত্ত
কাপুরুষ ভয় আনব না মোটে গ্রাহ্যে |
বুঝেছি দগ্ধ জীবনের দৃষ্টান্তে—
প্রাণ বাঁচানোর নেইকো সহজ পন্থা,
বজ্রমুঠিতে শৃঙ্খল হবে ভাঙতে,
আমাদের ফাঁকা ভাঁড়ার প্রেমের হন্তা |

বিদায় ! অলীক স্বপ্নের প্রজাপুঞ্জ !
বিদায় ! চাঁদের নিরুদ্দিষ্ট কুঞ্জ |


বাতাস পিঠে চাবুক হানে
আকাশ আনে বজ্র
শান্তি কবে ফুঁকছে শিঙে—
বেজায় ঢিমে কান তো !
শহরে গ্রামে নিকটে দূরে
নানান সুরে শুনছি—
পেয়েছি তার খানিক রস,
খানিক অস্পষ্ট :
একলা নই, মিলিত হাত
আজ আঘাত হানবে |
মুক্তিদাতা মজুর চাষা—
নতুন আশা সামনে |
চলো না কবি মিছিলে মিশি—
অসৎ ঋষিসঙ্গ
পতনে পত করেছে ঢালু,
গড়েছে বালুসৌধ |
আমরা দেব বোবাকে ধ্বনি,
খোঁড়াকে দ্রুত ছন্দ
লক্ষ বুকে রয়েছে খনি,
কুঁড়িতে ঢাকা গন্ধ |

আমরা নই প্রলয়-ঝড়ে অন্ধ ||

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *