Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাগজের নৌকা || Roma Gupta

কাগজের নৌকা || Roma Gupta

ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল বিদিশার। বীরভূম থেকে চলে এলো শ্বশুরবাড়ি চন্দননগর। কালকে বৌভাত। বাড়িময় আত্মীয় স্বজন। জমিদার বাড়ি। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। রাজকীয় ব্যবস্থা।

বৌভাতের দিন সকাল থেকেই সানাই বাজছে।ব্যান্ড পার্টির বানাও মাঝে মাঝে ‌শোনা যাচ্ছে। বিদিশা সেজে বসে আছে। তাকে পরিবেষ্টিত করে কত মহিলা। একজন বললো, কী সুন্দর সানাই বাজছে ! এবার নাকি নতুন শিল্পী এসেছে। দোশলাইয়ের খোল ভাঁজ করে সানাই বাজাতে পারে। সবাই শুধু আপ্লুত। শিল্পীকে দেখতে ভীর। এমন শিল্পীর কথা শুনে বিদিশার অতীত জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। তাদের গ্ৰামের নিতাই তো এরকম সানাই বাজায়। এই তল্লাটে ওই তো একমাত্র বাজায় জানি। কতদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। বিদিশা নিজেও জমিদারের মেয়ে। তাদের গ্ৰাম কোপাই নদীর ধারে। কত লোক লস্কর খাটে। বাড়ির মুহুরি দীনুকাকুর ছেলে, নিতাই দেশলাইয়ের খোল ভাঁজ করে সুন্দর সানাই বাজাতো। পড়াশুনায় তেমন মন ছিলোনা। দীনু কাকুর সঙ্গে একবার তাদের বাড়ি এসেছিল। তার সানাই বাজানো শুনে সবাই মুগ্ধ। তখনই নিতাইয়ের সঙ্গে বিদিশার আলাপ। ঘনিষ্ঠতার হয়। কোপাই নদীর একটা খালের মত জলাধার বিদিশা দের বাড়ির পাশ দিয়ে গিয়েছে। খালের ওপারে নিতাইয়ের বাড়ি। বিদিশা, নিতাই সাঁতার কেটে এপার ওপার করতো। কখনো কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দিতো ওপার থেকে , আনন্দে খেলা চলতো কার নৌকা ঠিকমত এপারে এসে পৌঁছাচ্ছে। ঘনিষ্ঠতা বাড়লে নৌকার ভাঁজে চিঠি চালাচালি হতো। নৌকার দুই কিনারে সুতো বেঁধে খালের ধারে ঝোঁপে বেঁধে রেখে দিতো। ভাসিয়ে দেওয়া নৌকা দেখলেই যে যার মত সুতো টেনে কাগজের নৌকা কাছে নিয়ে আসতো এবং বার্তা প্রেরণ করতো। কাগজের নৌকা ক্রমে প্রেমের ডিঙায় পরিণত হয়।

খালের পাশে বড় উঠোনে বিদিশাদের বাড়ির ধান নিড়ানো, ধান ঝারার কাজ চলে। একদিন ধান ভানার মাসির চোখে বিষয়টা পড়ে। বেশ কয়েকদিন নজর করে চিঠির কথা জমিদার গিন্নির কানে দেয়। জমিদার গিন্নি সত্যতা দেখে বিদিশার ঘাটে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতদিন ধরে নিতাইয়ের সঙ্গে খেলা,সানাই শোনা, সানাই বাজানো শেখার চেষ্টা করা সব বন্ধ। শুধু তাই নয়, তাঁদের এতদিনের বিশ্বস্ত দীনুকাকাকেও এড়িয়ে চলতে শুরু করে গিন্নি। হঠাৎ এমন পরিস্থিতি দীনুকাকা বুঝতে পারেনা। একদিন শরীর ভালো না থাকায় ছেলেকে নিয়ে যায় জমিদার বাড়িতে, কাজে সাহায্য করতে। এতে জমিদ গিন্নি কৌশল ছেলেকে এ বাড়িতে নিয়ে আসছে মনে করে যথেচ্ছ অপমান করে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেয়। কড়া ভাষায় জানিয়ে দেয় এই বাড়ি মুখো যেন কোনোদিন না হয়।

গিন্নির চিৎকারে জমিদার তারিণী জোয়ারদার ছুটে আসেন এবং সামনাসামনি সব শুনে তিনিও দীপুকে বিদায় দেন, দীনুকাকার কোনো কথাই শুনতে চান না। বাবার কাজ চলে যাও নিতাইয়ের খুব খারাপ লাগে। সংসারে অনটন দেখা দেয়। নিতাই পড়াশুনা ছেড়ে সানাই বাজিয়ে অর্থ আয়ের দিকে মন দেয়। বাড়ির বোন-ভাই আছে , তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই আপ্রাণ চেষ্টা করে একটা নামকরা ব্যান্ড পার্টির দলে সানাই বাজানোর কাজ পায়।

গ্ৰামে এখন সে প্রায় থাকেই না, দূরে দূরে প্রোগ্ৰাম করতে চলে যায়। সে এখন অন বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে গরিবদের ধনী লোকেরা হেয় চোখে দেখে। তাদের বাড়ির মেয়ের দিকে তাকানো অপরাধ। সেইকারণে তার বাবার চাকরি চলে গেছে।

বিদিশার বৌভাতের দিন রাতে সানাই বাজছে , তার পাশে একটু দূরে বৌয়ের তথা বিদিশার বসার সিংহাসন। নিতাইকে দেখেই বিদিশার বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করে।

এদিকে নিতাইয়ের চোখ পড়তেই বিদিশাকে দেখে সে চিনতে পারে, তার বুকেও ছ্যাৎ করে ওঠে। বিদিশার অপরূপ সাজে দেখে মুগ্ধ হয়। কিন্তু পরক্ষণেই তাকানো অপরাধ মনে করে চোখ নামিয়ে নেয়। মনে ভাবে এখানে তাদের গ্ৰামের লোকজন এবং বিদিশার বাবা তারিণী জোয়ারদার এসেছেন। তাই সে মন দিয়ে সানাই বাজাতে পারেনা। জল খাওয়ার নাম করে তার মালিককে বলে, লোকের ভীড়ে মন চঞ্চল হচ্ছে, বাজাতে অসুবিধা হচ্ছে। অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতে। মালিক বাড়ির লোকের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে। বৌভাত শেষে খুব ভোর না হতেই রওনা দেয় হুগলি নদীর তীরে নৌকা ধরতে। ওদিকে বিদিশা শেষবারের মত তার ছেলেবেলার প্রেমিককে দেখে স্মৃতি আঁকড়ে রাত কাটালো কোনোমতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *