Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাউকে দেখতে পেলাম না || Shamsur Rahman

কাউকে দেখতে পেলাম না || Shamsur Rahman

মজুরের ঘামের ফোঁটার মতো সকালবেলার আলো
চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে আমার ঘরে। টেবিলে
আর কে, নারায়ণের আত্মকথা ‘আমার দিনগুলি’
যেটি গত রাতে পড়ে শেষ করেছি।
আমার কবিতা খাতা
একটি অসমাপ্ত কবিতা
বুকে ধারণ করে
প্রতীক্ষায় আছে আমার কলমের
আঁচড়ের। কবিতাটি লতিয়ে উঠেছে
তোমাকে ঘিরে। কি আশ্চর্য, আজকাল
আমার প্রায় প্রতিটি কবিতা জুড়ে
তোমারই আসা-যাওয়া।

মেঝেতে যমজ স্যান্ডেল অপেক্ষমাণ
আমার পায়ের জন্যে। জানলার লাগোয়া
নারকেল গাছে একটি কি দুটি পাখি,
মাঝে মাঝে গানে সাজায় প্রতিবেশ।
রাস্তার ওপারে হতে চলেছে একটি বাড়ির
ইট, বালি, কুপিয়ে-তোলা মাটি, লোহার শিকময়
উঠোনে কয়েকজন নারী পুরুষ, যারা
একটু পরেই পুরোদমে লেগে যাবে ইট ভাঙার কাজে।
তিনটি গাছ এখনো দাঁড়ানো সেখানে,
কে জানে কখন পড়বে মুখ থুবড়ে
বৃক্ষ ঘাতকের কুঠারের দাপটে।
কয়েকজন ছেলেমেয়ে ইউনিফর্ম পরে
রওয়ানা হয়েছে মর্নিং ইস্কুলে,
যেন ভাসমান এক বাহারি বাগান।

পাড়ার সেই মেয়েমানুষ, যার মাথায় ছিট,
গান গায়, ওর গানে নদীর ঢেউ, শূন্য নৌকা,
আর ধানের শীষের দুলুনি, কখনো কখনো
ওর সুরে সর্বস্ব-হারানো বিলাপ। গ্রীষ্মের সকালে
হাওয়া, হঠাৎ কিছু পাওয়ার খুশি চায়ের চুমুকে,
গত রাতের স্বপ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া। মনে পড়ে,
কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছিলাম, দাঁড়িয়ে আছি
সামন্ত যুগের গোধূলিকালীন এক রাজবাড়ির সিংদরজায়।
জানতাম তুমি আছো সেই বাড়ির রহস্যময়
কোনো প্রকোষ্ঠে। কণ্ঠস্বর যদ্দূর সম্ভব
উচ্চগ্রামে চড়িয়ে ডাকলাম তোমাকে,
তুমি এলে না। ভিক্ষুক এলেও তো মানুষ
একবার দরজা খুলে দ্যাখে।
স্বপ্নের ভেতরেই আমার ভীষণ মন খারাপ।
আমি কি পাগলা মেহের আলীর মতো
সেই আধভাঙা রাজবাড়ির
চারপাশে ক্রমাগত চক্কর কাটতে লাগলাম?
নাকি দীর্ঘশ্বাস হয়ে মিলিয়ে গেলাম নিশান্তের
হাওয়ায়?
সকালবেলা আমার ভারি ভালো লাগার কথা,
অথচ আমার মন আজ সীসার মতো ভারী।
এক ধরনের দার্শনিকতা আমাকে খামচে-খুমচে,
ঘাড় ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিধ্বনিময়
প্রকাণ্ড সব গুহায়। রাতের স্বপ্নটিকে
তুড়ি মেরে উড়িয়ে মনোভার কমাবার
চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম।
ভাবনার হার ধরে অন্য মোড়ে
নিয়ে গেলাম ভুলিয়ে ভালিয়ে।
সেই মুহূর্তে নিজেকে ভাবতে দিলাম,
তুমি বসে আছো শুধু আমারই প্রতীক্ষায়,
কায়মনোবাক্যে আমারই কথা ভাবছো, একথা ভাবতেই
আমার সমগ্র সত্তা কদম ফুল,
ভাবতে ভালো লাগছে, তুমি আমার জন্যে
ফুঃ বলে তুচ্ছ করতে পারো যা কিছু কাঙ্ক্ষণীয়।
আর আনন্দে ডগমগ সারা ঘর।
এই বিভ্রান্ত যুগে তোমার অনুপস্থিতিকেই
উপস্থিতি বলে জেনেছি!
হঠাৎ একটা বিকট অট্রহাসিতে আমার ঘর থরথর,
যেমন ভূমিকম্পে হয়। কিন্তু সেই ঠা ঠা হাসিকে
অনুসরণ করে টাল সামলে
কাছে পিঠে কাউকে দেখতে পেলাম না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *