Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

শেষ অধ‍্যায় (পর্ব – ৪)

রাজমাতা আপনি এখানে? এসময়ে? আপনার পুত্র অর্জুনই তো নিরস্ত্র বসুসেনকে কথিত ধর্মযুদ্ধে অনৈতিক ভাবে বধ করেছেন, অথচ সেই বসুসেনকেই আপনি নিজের অঙ্কে ধারন করে আছেন, এর গূঢ়ার্থ আমাদের অজ্ঞাত। বসুসেনকে আশৈশব আমি প্রতিপালন করেছি তাই বসুসেন সকলের কাছে পরিচিত রাধেয় নামে। আজীবন অর্জুনকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বি ভেবে এসেছে চিরদিন অস্বীকার করেছে অর্জুনের শ্রেষ্ঠত্ব, রাজকূলে না জন্মানোয় প্রতিটি পদে ঘৃণা অবহেলা আর কটুক্তি সহ‍্য করতে হয়েছে তাকে। দূর্যোধন অঙ্গরাজ‍্য দান করলেও প্রকৃত রাজা বা ক্ষত্রিয় বংশজ স্বীকৃতি পায় নি কোনদিন। তাই ক্ষত্রিয় কন‍্যার পাণিগ্রহন করতে পারেনি, ভ্রশালী দূর্যোধনের সারথি কন‍্যা সুপ্রিয়া দূর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতির সখি। যেকোন ক্ষত্রিয় কুমারের চেয়ে সর্বগুণান্বিত হওয়া সত্বেও স্বয়ম্বর সভায় দ্রৌপদী কর্তৃক চরম লাঞ্ছিত হতে হলো তাকে। অথচ এখন আপনি তার নিষ্প্রাণ শরীরের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছেন।
তীব্র শ্লেষের সাথে কথাগুলি বলে রাধা কর্ণের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
ভ্রুশালী ও সুপ্রিয়া কর্ণের পায়ের কাছে বসে হাহাকার করছেন, অধিরথ একপাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে অশ্রুমোচন করছেন।
কুন্তি তখনও ক্রন্দনরতা। রাধার শ্লেষাত্মক কথায় শুধু চোখ মেলে চাইলেন তার দিকে। হয়তো কিছু বলতে চাইলেন তিনি কিন্তু কোন শব্দ স্ফুরিত হলো না তার মুখে। তিনি আবার মুখ নত করে অপলক চেয়ে রইলেন কর্ণের দিকে।
আর কোন গোপনীয়তা নয় যা এতদিন অপ্রকাশিত ছিল আজ এইক্ষণে সকলের কাছে প্রকাশিত হোক, শ্রীকৃষ্ণের জলদগম্ভীর স্বরে উপস্থিত সকলেই বিস্মিত। কি সেই গোপন কথা যা সকলের অজ্ঞাত। কর্ণের সাথে কুন্তির কি এমন সম্পর্ক যা গোপনীয়তার আড়ালে রাখতে হয়েছিল?
কুন্তি আকুল ভাবে তাকালেন শ্রীকষ্ণের দিকে, অব‍্যক্ত শব্দে নিবেদন করলেন তার অসহায়তার কথা। শ্রীকৃষ্ণ সবই জানেন, কুন্তির না বলা কথাও তিনি বুঝে নিলেন অনায়াসে! তিনি এগিয়ে এলেন কুন্তির কাছে হাত রাখলেন তাঁর মস্তকে যেন অভয় দিচ্ছেন তারপর অধিরথের দিকে বললেন, আপনি ব‍্যক্ত করুন কিভাবে আপনি কর্ণকে পেয়েছিলেন।
সূচিপতনের শব্দও যেন শোনা যাবে, অধিরথ কেঁপে উঠলেন অজানা আশঙ্কায় বসুসেন তাদের আত্মজ নয় তারা পালক মাত্র এই গূঢ় কথা তিনি কি করে বলেন কর্ণের মৃত শরীরকে সামনে রেখে? তার জীবিতকালে যে সত্য ঘূনাক্ষরেও জানতে দেন নি আজ সেই সত‍্য প্রকাশের মুখে, আর কেউ না জানলেও অবশ‍্যই বাসুদেব কৃষ্ণ জানেন, তিনি না বললেও এই সত‍্য বাসুদেবই প্রকাশ করবেন। কারন স্থান কাল ও পরিস্থিতি আজ সকলকে সত‍্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কর্ণ কে? কি তাঁর পরিচয়? আজ সেই গোপনীয়তা উন্মোচিত হতে চলেছে।
অধিরথ বললেন হে বাসুদেব আপনি সব জানেন, মৃত্যুর পরেও যদি বসুসেন তাঁর প্রাপ‍্য সম্মান ফিরে পান আমাদের চেয়ে সুখী আর কেউ হবে না, তাই অকপটে বলছি বসুসেন আমাদের পালক পুত্র মাত্র।
না •• রাধা চিৎকার করে উঠলেন, বসুসেন আমার পুত্র আশৈশব আমিই ওকে মাতৃস্নেহে মানুষ করেছি।
— তবু সত‍্য সত‍্যই, তুমি ওকে গর্ভে ধারণ করো নি, অধিরথ মাথা নিচু করে বললেন।
যেন বজ্রপাত হলো, দূর্যোধন যুধিষ্ঠির সহ সকলেই চমকে উঠলেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন মাতা কুন্তি আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, যে কথা আপনি এতকাল বলতে চেয়েও বলতে পারেন নি সেই সত‍্য প্রকাশের ভার আমাকেই নিতে হচ্ছে। এই বলে তিনি ঘটনার আনুপর্বিক বিবরণ দিয়ে চুপ করলেন।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো এতক্ষণ সকলে শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনছিলেন, এবার যেন সম্বিত ফিরে পেলেন তারা! একটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় যেন কর্ণের অতীতের সব আবরণ উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে কর্ণ আর সূতপুত্র নয় রাধেয় নয় তিনি সূর্যপুত্র কৌন্তেয়। কুন্তির সর্বাধিক প্রিয় পুত্র অর্জুন শোকাকুল ভাবে চাইলেন মায়ের দিকে, এ কি মহাপাতকের কাজ তিনি করেছেন? যুদ্ধ শুরুর প্রাক মুহূর্তে যে কারনে তিনি অস্ত্র ত‍্যাগ করেছিলেন সেই মহাপাপের কাজই শেষ পর্যন্ত তাকে করতে হলো? তিনি নিরস্ত্র পিতামহকে বাণে বাণে জর্জরিত করেছেন গুরু দ্রোণকে আহত ও নিরস্ত্র অবস্থায় বধ করতে ধৃষ্টদ্রুম্নকে বাধা দেননি আবার কর্ণকে যখন তিনি বধ করেন তখনও সে নিরস্ত্র। শ্রীকৃষ্ণের কথায় তিনি ক্ষত্রধর্ম পালন করেছেন ঠিকই কিন্তু একি শুনছেন তিনি স্বহস্তে জেষ্ঠভাইকে তিনি হত‍্যা করেছন। তিনি কর্ণের সহোদর এমনকি তিনি যুধিষ্ঠিরেরও অগ্রজ । মাতা কুন্তি এ কি করলেন? আজীবন দ্বৈরথ মনোভাব পোষণ করেছেন তিনি বহু অকথা কুকথা বলেছেন যখন তখন আঘাত করতে তৎপর হয়েছেন এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে বধও করলেন। জ্ঞানত নয় অজ্ঞানত কি যুধিষ্ঠিরের প্রতি তিনি এই মনোভাব ব‍্যক্ত করতে পারতেন? যুধিষ্ঠিরের চাইতেও আরও বেশি সম্মান প্রাপ্ত ছিল কর্ণের। অথচ মাতা কুন্তির অবিমৃশ্রকারিতার ফল তাকে ভাতৃহত‍্যায় বাধ‍্য করেছে। তিনি শ্রীকৃজ্ঞের দিকে তাকিয়ে বললেন, – মাধব তুমি তো জানতে সব তবুও এই মহা পাতকের কাজ কেন করালে? কেন নিরস্ত্র কর্ণকে শেষ আঘাত করতে আমাকে বাধ‍্য করলে? কেন এই সত‍্য তুমি যুদ্ধের পূর্বে আমাকে বলোনি?
শ্রীকৃষ্ণ বললেন ধৈর্য্য ধরো পার্থ এই সত‍্যও তোমাদের কাছে ব‍্যক্ত করছি……

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *