শেষ অধ্যায় (পর্ব – ১)
সূচনা পর্ব এবং পূর্ব কথন অংশে কর্ণ ও অর্জুনের পরিচয় তাদের পরাক্রমের উৎস পূর্ব জন্মবৃত্তান্ত ও তাদের উভয়ের বৈরী মানসিকতা সম্পর্কে আমার সামর্থ্য মতো আলোচনা করেছি। শেষ অধ্যায় অংশে মহাভারতীয় আখ্যানে অর্জুন ও কর্ণের আত্ম উপলব্ধি সম্পর্কে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা পাব এই প্রত্যাশা করি।
ধন্যবাদ সকল গুনী জনদের
স্থান কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গন সময় সপ্তদশ দিবসের প্রাক সন্ধ্যা এইমাত্র অর্জুনের দিব্য বাণে রথ বিহীন নিরস্ত্র কর্ণ মৃত্যুপথ যাত্রী। তার রক্তাক্ত শরীরে অস্তগামী সূর্যের আভা প্রলেপ এঁকে দিচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ বিরতির সংকেত দিলেন তার পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজিয়ে ( যুদ্ধের প্রথম নয় দিন মহামহিম ভীষ্ম যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করতেন দশম দিনে তিনি আহত ও শরশয্যায় গেলে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করছেন।) তারপর অর্জুনকে বললেন চলো কর্ণের কাছে, এই সময়ে কর্ণের কাছে তোমার যাওয়া আবশ্যক। অর্জুন ইতস্তত করছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ বললেন নির্দ্বিধায় চলো কারণ কর্ণ তোমার নিকট আত্মজন। অর্জুন বললেন কি বলছো মাধব? কর্ণ অধিরথ পুত্র রাধেয় শূদ্র বংশজাত স্বীয় দক্ষতা ও পরশুরামের আশির্বাদে অস্ত্রবিদ্যায় নৈপুণ্য লাভ করলেও আমার আত্মজন কিভাবে হতে পারে? আমি কুরু বংশজাত পাণ্ডুপুত্র কৌন্তেয় দ্রোণাচার্যের শিষ্য, আমাদের দুজনের আত্মীয়তার সম্পর্ক কোথায়?
শ্রীকৃষ্ণ মৃদু হাসলেন, তিনি জানেন আর কিয়দক্ষণ পরেই এই রহস্য উন্মোচিত হবে, কর্ণ নিহত হয়েছে এ সংবাদ যুদ্ধ শিবিরে রাজমাতা কুন্তি পেয়ে গেছেন, তিনি এখনই অকুস্থলে আসবেন । তারপর সব রহস্য উন্মোচিত হলে কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে সেটাও তিনি অনুমান করতে পারছেন। তাই প্রথমেই তিনি কর্ণ ও অর্জুনকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চান। কারণ অর্জুন না জানলেও কর্ণ জেনে গেছেন তিনি প্রথম কৌন্তেয়।
অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণ যখন কর্ণের কাছে উপস্থিত হলেন তখন তাঁর অন্তিম মুহূর্ত, নিমিলিত চোখ নিশ্বাস ক্ষীণতর রক্তস্খরণে শরীর অভ্যন্তরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে তবুও তিনি বুঝতে পারলেন শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন তার কাছে এসেছেন। অনেক কষ্টে তিনি চোখ খুলে স্মিত হাসলেন, শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, বাসুদেব তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হলো তোমার ধর্মরাজ্য স্থাপনের প্রচেষ্টা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যুধিষ্ঠিরই তোমার এই ধর্মরাজ্যের প্রকৃত উত্তরসূরি। আমি বেঁচে থাকলেও হস্তিনাপুরের সিংহাসন আমার জন্য ছিল না। কারন মহামহিম ভীষ্মের মতো আমিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হস্তিনাপুরের সিংহাসনকে আমৃত্যু রক্ষা করবো। তারপর অর্জুনের দিকে চেয়ে অসাড় হাতদুটি বাড়ানোর অক্ষম চেষ্টা করলেন মৃদু স্বরে বললেন অর্জুন আমার কাছে এসো!
এই প্রথম কর্ণের প্রতি অর্জুনের হৃদয় মমতায় পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তাঁর মনে হচ্ছে কর্ণ তার শত্রু নয় শ্রীকৃষ্ণের কথা সম্পূর্ণ সঠিক কর্ণ সত্যিই তাঁর আপনজন