পর্ব – ৪
কর্ণ ও অর্জুন দুজনেই কৌন্তেয় হওয়া সত্বেও কেন উভয়ের প্রতি দূর্নিবার বৈরি মানসিকতা পোষণ করতেন তা জানতে হলে ফিরে যেতে হয় তাদের পূর্বজন্মে। যেখানে কর্ণ ছিলেন দম্ভোদভব নামে এক ভয়ংকর রাক্ষস। তার আরাধ্য দেবতা ছিলেন সূর্যদেব। সূর্যদেবের আশির্বাদে দম্ভোদভবের শরীরে এক সহস্র রক্ষা কবচ ও কুণ্ডল থাকায় তিনি ছিলেন অপরাজেয়! সূর্যদেবের কাছ থেকে তিনি বরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যে তার মৃত্যু তখনই হবে যদি কেউ তার রক্ষাকবচ ভেদ করতে পারে তবেই। রক্ষাকবচ ভেদ করার শর্ত ছিল কোন তপস্বী তাঁর এক বছরের তপস্যা লব্ধ শক্তির ফলে একটি মাত্র কবচ ভেদ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হবে তাহলে এক হাজার কবচ ভেদ করা কারও পক্ষেই সম্ভব না। ফলে দম্ভোদভব অজেয় অহঙ্কারী ও দূরাচারী হয়ে উঠলো। দেবতা ও মানবকূল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণ দুই তপস্বী নর ও নারায়ণ রূপে জন্মগ্রহন করেছিলেন। নর ও নারায়ণের সঙ্গে দম্ভোদভবের যুদ্ধ শুরু হলো। এক বছর যুদ্ধের পর দম্ভোদভবের প্রথম কবচ ভেদ করার সঙ্গে সঙ্গে নররূপী অর্জুনের মৃত্যু হয়। নারায়ণরূপী শ্রীকৃষ্ণ স্বীয় তপস্যার শক্তিবলে নররূপী অর্জুনকে পুনরায় জীবিত করে দম্ভোদভবের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন। নর রূপী অর্জুন শুরু করেন তপস্যা। এক বছর পর নারায়ণ দম্ভোদভবের দ্বিতীয় কবচ ভেদ করে মৃত্যু বরণ করেন। এবার নররূপী অর্জুন তার তপোবলে নারায়ণকে জীবিত করে পুনরায় দম্ভোদভবের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। নর ও নারায়ণরূপী শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন নয়শত নিরানব্বইটি কবচ ভেদ করলে মৃত্যুভয়ে ভীত দম্ভোদভব সূর্যদেবের কাছে আশ্রয় নিলে সূর্যদেব কুন্তির গর্ভে তাকে স্থাপন করেন। এভাবেই একটি কবচ কুণ্ডল সহ কর্ণ জন্মগ্রহন করেন। নর ও নারায়ণ পুনরায় দম্ভোদভবকে হত্যা করার জন্য অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণ রূপে জন্ম গ্রহণ করেন। এভাবেই পূর্বজন্মাকৃতের ফলে অর্জুন ও কর্ণ পরষ্পরের বিরুদ্ধে বৈরী মনোভাব পোষণ করতেন।
পূর্ব কথনে কর্ণ ও অর্জুনের জন্মরহস্য ও তাদের পরষ্পরবিরোধী মনোভাবের কারন যথা সম্ভব বলার চেষ্টা করলাম। পরবর্তী পর্বে কর্ণ ও অর্জুন সংবাদের শেষাংশ।