পর্ব – ৩
কর্ণ ও অর্জুন
মহাভারতীয় কালের যে দুই মহান যোদ্ধাকে নিয়ে এই আলেখ্য তারা সম্পর্কে সহোদর ভাই হলেও ( দু জনের কাছেই এই তথ্য অজ্ঞাত ছিলো ) সমধিক পরিচিত ছিলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আসর হোক বা যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরের সম্মুখীন হলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরী হতো, দুজনই চাইতো যেভাবেই হোক নিজের জয় সুনিশ্চিত করতে। কিন্তু একমাত্র কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সপ্তদশ দিবস ছাড়া কোন না কোন ভাবে তাদের দ্বৈরথ অমিমাংসিত থেকে গেছে।
কর্ণের শরীর সূর্যদেবের দেওয়া কবচ কুণ্ডল থাকায় তাকে বধ করা সম্ভব ছিলো না তাই ছলনার সাহায্যে ইন্দ্রদেব তার কবচ কুণ্ডল দান হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু তার সুরক্ষার জন্য সূর্যদেবের কথায় ইন্দ্রদেব এক মহা শক্তিশালী অস্ত্র একাঘ্নি তাকে দিয়ে দেন। এই অস্ত্রের পৌনঃপুনিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিলো। কবচ কুণ্ডল বা একাঘ্নি ছাড়াও কর্ণের শক্তির উৎস ছিল তার ধনুক। কর্ণের ধনুকের নাম ছিলো বিজয়। এই ধনুক ব্যবহারকারির চতুর্দিকে এক অভেদ্য সুরক্ষা বলয় তৈরি করতো ফলে যুদ্ধে তাকে পরাজিত করা ছিলো অসম্ভব। এই বিজয় ধনুক ত্রিপুর ধ্বংসের জন্য মহাদেবের ইচ্ছানুসারে তৈরী করেছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মহাদেবের কাছ থেকে এই ধনুক পেয়েছিলেন ইন্দ্র, ইন্দ্রের কাছ থেকে এই ধনুক প্রাপ্ত হন পরশুরাম ! পরশুরাম তার শিষ্য কর্ণকে এই ধনুক দান করেন।
অপরপক্ষে অর্জুনের কাছে ছিলো ব্রহ্মাস্ত্র ব্রহ্মশিরাস্ত্র পাশুপত অস্ত্র কপিধ্বজ রথ এবং সর্বোপরি তার অজেয় ধনুক গাণ্ডিব। এই গাণ্ডিব ধনুক নির্মান করেন স্বয়ং ব্রহ্মা।গণ্ডারের শৃঙ্গ দিয়ে তৈরি হওয়ার জন্য এই ধনুকের নাম হয় গাণ্ডিব, কেউ কেউ বলেন মহিষাসুরের গণ্ড দেশের হাড় দিয়ে এই ধনুক নির্মিত হয়েছিল তাই এর নাম গাণ্ডিব। ব্রহ্মা এই ধনুক এক হাজার বছর নিজের কাছে রেখে মনুকে দান করেন মনু পাঁচশত বছর ব্যবহারের পর ইন্দ্রকে দান করেন ইন্দ্র পঁচাশি বছর এই ধনুক ব্যবহার করে বরুণদেবকে এই ধনুক দিয়েছিলেন বরুণ এই ধনুক ব্যবহার করেছিলেন একশত বছর। খাণ্ডব দহনের জন্য অগ্নিদেব বরুণদেবের কাছ থেকে চেয়ে অর্জুনকে দিয়েছিলেন অর্জুনের কাছে এই ধনুক ছিল পঁয়ষষ্ঠি বছর, স্বর্গারোহনের সময় অর্জুন বরুণদেবকে এই ধনুক ফিরিয়ে দেন।
অস্ত্র সম্ভারের দিক থেকে কর্ণ বা অর্জুন কেউ কারও চেয়ে কম ছিলেন না।
তাহলে অর্জুনের সম যোদ্ধা হয়েও কর্ণ কেন নিহত হলেন অর্জুনের হাতে আসুন আগামী পর্বে সেই কথা বিস্তৃত করি।