কর্ণ ও অর্জুন সংবাদ (পর্ব – ২)
কর্ণ ও অর্জুুন দুজনেই ছিলেন কৌন্তেয় অর্থাৎ কুন্তির পুত্র , আর কুন্তি ছিলেন মথুরা রাজ সুরসেনের কন্যা এবং বসুদেবের সম্পর্কিত বোন সেই সূত্রে শ্রীকৃষ্ণের পিতৃস্বশা বা পিসি, সুরসেন তার কন্যার নাম রেখেছিলেন পৃথা, ভোজরাজ কুন্তিভোজের সাথে মথুরা রাজ সুরসেনের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো, অপুত্রক কুন্তিভোজকে রাজা সুরসেন কথা দিয়েছিলেন তার প্রথম সন্তান যাই হোক তিনি তার বন্ধুকে দত্তক হিসেবে দেবেন। সেই প্রতিজ্ঞার জন্য রাজা সুরসেন তার প্রথম সন্তান কন্যা পৃথাকে রাজা কুন্তিভোজকে দত্তক হিসেবে দেন। রাজা কুন্তিভোজও পৃথাকে তার কন্যার মতো লালন পালন করতে থাকেন, রাজা কুন্তিভোজের নামানুসারে এরপর থেকে পৃথা পরিচিত হন কুন্তি নামে।
রাজা কুন্তিভোজ তার পালিত কন্যাকে রাজ্যের সব দায়িত্ব পালনের জন্য সুশিক্ষিত করে তোলেন। একদিন মহর্ষি দূর্বাশা এলেন রাজসভায়, রাজা কুন্তিভোজ মহর্ষির দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করেন কুন্তিকে, কুন্তিও তার সেবা দ্বারা সন্তুষ্ট করলে মহর্ষি দূর্বাশা তাকে এমন এক মন্ত্র প্রদান করেন যে সেই মন্ত্র প্রভাবে তিনি যে দেবতাকে আহ্বান করবেন, তিনি তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হবেন।
মহর্ষি দূর্বাশা প্রস্থান করার পর, কুন্তি গোপনে সেই মন্ত্রের প্রভাব পরীক্ষার জন্য সূর্যদেবকে আহ্বান করলে তৎক্ষণাৎ সূর্যদেব সেখানে উপস্থিত হন। কুন্তি ভিত হয়ে সূর্যদেবকে ফিরে যেতে বললে সূর্যদেব বললেন, মন্ত্রের গুনে তিনি এসেছেন তার আসা কোনভাবেই ব্যর্থ হতে পারে না, ফলে সূর্যের প্রভাবে কুন্তির গর্ভসঞ্চার হয়।
নিদৃষ্ট সময়ে কবচ কুণ্ডল সহ এক শিশুর জন্ম দেন তিনি। কুমারীকালিন গর্ভসঞ্চারের জন্য জন্মের পর শিশুটিকে পরিত্যাগ করেন কুন্তি, কবচ কুণ্ডল সহ জন্মগ্রহন করার জন্য শিশুটি কর্ণ নামে পরিচিত হয়। হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডুর সারথি অধিরথ তাকে কুড়িয়ে পেয়ে মানুষ করতে থাকেন, অধিরথের স্ত্রী রাধার নামানুসারে কর্ণ পরিচিত হন রাধেয় নামে।
এরপর হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডুর সাথে কুন্তির বিবাহ হলে তিনি যুধিষ্ঠির ভীম ও অর্জুনকে জন্ম দেন।
কুন্তির অপর নাম পৃথা তাই অর্জুনও পরিচিত হন পার্থ নামে। কর্ণের জন্মের পর কুন্তির বিবাহ হয় তারপর যুধিষ্ঠির ও ভীমের জন্মের পর অর্জুনের জন্ম হয় , সেই হিসেবে কর্ণের চেয়ে অর্জুন বয়সে অনেক ছোট ছিলেন। কিন্তু অর্জুন বড় হচ্ছিলেন রাজপুত্রের মতো অন্যদিকে কর্ণের বড় হওয়া অত্যন্ত অবহেলায়। কর্ণ চেয়েছিলেন কৌরব ও পাণ্ডবদের মতো তিনিও গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্র শিক্ষা করবেন, কিন্তু রাজকুলের না হওয়ার জন্য এবং অর্জুনকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানের জন্য তাকে অস্ত্রশিক্ষা দিতে দ্রোণাচার্য অস্বীকার করেন। ( কোন কোন মহাভারতকার বলেছেন কর্ণ ও অশ্বত্থমা দুজনেই কৌরব ও পাণ্ডবদের সাথে একযোগে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলেন, অশ্বত্থমাকে যে দ্রোণাচার্য অস্ত্র শিক্ষা দিয়েছিলেন একথা স্বীকৃত হলেও দ্রোণাচার্য্য নিজে কোথাও বলেন নি যে তিনি কর্ণকে কোন শস্ত্র শিক্ষা দিয়েছেন মতভেদ সত্বেও একথা বলা যায় একলব্যের মতো কর্ণও সরাসরি দ্রোণাচার্যের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন নি )।অর্জুনের প্রতি কর্ণের প্রাথমিক বিদ্বেষ এখান থেকেই শুরু। এরপর কর্ণ শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন পরশুরামের কাছে, ক্রমশ কর্ণ ও অর্জুন দুজনেই হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দী ধনুর্দ্ধর। অর্জুন যতো মহান যোদ্ধা হয়ে উঠছিলেন ততই কর্ণের সেই সুপ্ত বিদ্বেষ প্রতিহিংসার বিষবৃক্ষের মতো বেড়ে উঠতে লাগল। অর্জুন পেলেন ভূবন বিখ্যাত গাণ্ডিব ধনুক কর্ণের হাতেও এলো মহা শক্তিশালী বিজয় ধনুক। অর্জুন ও কর্ণ ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন এবং ধিরে ধিরে দুজনেই একে অপরের পরম প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠলেন।
যদিও এই দুজনে দুজনার ভয়ংকর শত্রু হয়ে ওঠার পিছনে আরও এক অন্য রহস্য জড়িয়ে আছে সেকথা পরের পর্বে