কর্ণ ও অর্জুন সংবাদ (পর্ব -১)
মহাভারতের দুই মহা ধনুর্দ্ধর এবং বর্ণময় চরিত্র কর্ণ ও অর্জুন। কর্ণের জন্য আমাদের হৃদয় করুণায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে তাঁর সারাটা জীবন শুধু বঞ্চনার কথা। সবকিছু পেয়েও শেষ মুহুর্তে তার হাতে শূণ্য থালি। মহা ধনুর্দ্ধর কর্ণ দানবীর কর্ণ পাঞ্চালীর স্বয়ম্বর সভার কর্ণ আমাদের গর্বিত করে তাকে নায়কের আসনে বসাতে চাইলেও কৌরব সভার কর্ণ অভিমণ্যু বধের কর্ণকে আমাদের অচেনা মনে হয় এক লহমায় নায়ক থেকে খলনায়কে পরিনত হন তিনি। দূর্যোধনের জন্য অর্জুনের সঙ্গে অহেতুক বিবাদে তিনি স্বেচ্ছায় জড়িয়েছেন , বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু মনে হয়েেছে। কর্ণের পুরুষকার বারবার পরাজিত হয়েছে দৈবশক্তির কাছে।
আর অর্জুন? ঈশ্বর যেন তাঁর থালায় সাজিয়ে দিয়েছেন শুধুই সাফল্যের মালা। তার প্রতি সামান্য অবিচারেও আমাদের হৃদয় ব্যাথিত হয়ে ওঠে। তাঁর সম্ভ্রান্ত মানসিকতা তাঁর আত্মবিশ্বাস তাঁর লক্ষ্যে স্থির থাকা তার ঔদার্য্য সব মিলিয়ে তিনি এক মহান উচ্চতায় নিজেকে স্থাপন করতে পেরেছিলেন। আমরাও সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তাঁকে নায়কের আসনে বসিয়ে দিয়েছি। তার ভুল ত্রুটি আমরা ক্ষমার দৃষ্টিতে মার্জনা করে দিয়েছি।
কর্ণ ও অর্জুন দুজনেই মহা ধনুর্দ্ধর দুজনেই শস্ত্র চালনায় পারদর্শী দুজনেই কৌন্তেয় অথচ দুজনের ভেতরে কি আকাশ পাতাল প্রভেদ। শ্রেষ্টত্বের আকাঙ্ক্ষায় অর্জুনের প্রতি কর্ণের আচরণ এক ব্যক্তিগত আক্রোশে পরিনত হয়ে উঠেছিল। তাই তিনি অর্জুনকেই তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ভেবে নিয়েছিলেন। বারবার পরাজিত হতে হতে অর্জুনের প্রতি তার প্রতিহিংসা এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিলো যে কুরুক্ষেত্র প্রান্তে কুন্তী যখন তার জন্মরহস্য উদ্ঘাটন করেন তখনও তিনি প্রতিজ্ঞা করেন একমাত্র অর্জুন ছাড়া আর কোন পাণ্ডবকে তিনি বধ করবেন না। কার্যত তাই দেখতে পাই কর্ণ অর্জুনকে নিজের সহদর ভাই জেনেও তাকে বধ করার পরিকল্পনা থেকে বিরত হননি, কিন্তু অর্জুন কর্ণের পরিচয় জানতে পারেন তাকে হত্যা করার পর।
অর্জুন যদি জানতে পারতেন যে কর্ণ তার জ্যেষ্ঠভাই তাহলে কোন অবস্থাতেই তিনি কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতেন না। অর্জুনের এই চারিত্রিক গুন আমরা দেখতে পাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কলে যখন তিনি অস্ত্র ত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণকে বলেন আত্মীয় স্বজনকে আমি বধ করতে পারবো না হে কশব এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার চেয়ে পুনরায় বনবাস গ্রহণ করাই শ্রেয়। এখানেই ব্যক্তি অর্জুন ও ব্যক্তি কর্ণের প্রধান পার্থক্য হলেও অর্জুন ও কর্ণকে যথাযথ ভাবে বুঝতে হলে আরও গভীর অনুসন্ধিৎসু মনের প্রয়োজন। আসুন এই দুই মহান ব্যক্তিকে সম্যক রূপে জানতে আরও কিছুটা সময় ব্যয় করি। আশা করি এই সময়কালে আপনাদের সহযোগিতায় আমি প্রাণিত হবো।