কবি সমর সেন ও তাঁর কবিতা
সমর সেন চল্লিশ দশকের একজন উল্লেখযোগ্য কবি। তাঁর কবিতায় এলিয়টের প্রভাব খানিকটা লক্ষ্য করা গেলেও, নিজস্বতা ছিল ভিন্ন রকমের। তবে আপসোসের কথা,তাঁর ৭১ বছরের জীবনে তিনি কাব্যসাধনা করেছেন মাত্র ১২ বছর, ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। তিনি খুব বেশি কবিতা লেখেননি, সংযমী কবি ছিলেন। তবুও এই সময়ের মধ্যেই তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
১). কয়েকটি কবিতা (১৯৩৭ সাল),
২). গ্রহণ (১৯৪০ সাল),
৩). নানা কথা (১৯৪২ সাল),
৪). খোলা চিঠি (১৯৪৩ সাল)
৫). তিন পুরুষ (১৯৪৪ সাল)।
একমাত্র গদ্যগ্রন্থ ‘বাবু বৃত্তান্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে।
তাঁর কবিতাসংগ্রহ ‘সমর সেনের কবিতা’ নামে ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়।
বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে একসময় ‘কবিতা’ পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। নগর জীবনের ক্লেদ ও ক্লান্তি, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সংগ্রামী গণচেতনাকে তিনি কাব্যে রূপে প্রকাশ করেছেন। তাকে ‘নাগরিক কবি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে পরবর্তীকালে। কাব্যের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও ব্যতিক্রমী ও নিজস্ব বৈশিষ্টতায় তাঁর সব কবিতাই অনন্য। তাঁর কবিতায় রোমান্টিকতা বর্জিত তীক্ষ্ণ ভাষা প্রয়োগ সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। স্বাধীনোত্তর কালে বিপ্লবী বামপন্থী চিন্তাধারার সমর্থক ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কবিতায় তার প্রকাশ কখনোই সোচ্চার ভাবে ঘটেনি।
সমাজের হতাশা গ্লানির অন্ধকারে অকারণে তিনি, নতুন সূর্যোদয়ের ছবি তিনি আঁকতে পারেননি , বরং ঘুণধরা সমাজের ছবি তিনি এঁকেছেন। ফলে তিনি তৎকালিন কম্যুনিষ্ট তাত্ত্বিক নেতাদের (বিনয় ঘোষ, সরোজ দত্ত, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ) দ্বারা সমালোচিত হয়েছিলেন। তাঁর কবিতাকে তারা অন্ধকারের দিনলিপি বলে মনে করেছেন। তাকে হতাশার কবি আখ্যা দিয়েছেন। অথচ তিনিই লিখেছিছেন, –
“বিধ্বস্ত মাটিতে আনে ট্রাক্টারের দিন।
জোসেফ স্ট্যালিন।”
আবার অকম্যুনিষ্ট কবি অরুণ কুমার সরকারের (সমর সেনের প্রায় সমসাময়িক) অভিযোগ ছিল, সমর সেন কখনোই কবিতা লেখাকে তেমন seriously (গুরুত্ব সহকারে) নেননি। হেলাফেলা করে কবিতা লিখেছেন। তাই লেখা এমন আবেগ বর্জিত নীরস।
১৯১৬ সালের ১০ই অক্টোবর সমর সেন কলকাতার বাগবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অরুণচন্দ্র সেন। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ দীনেশচন্দ্র সেনের পৌত্র। তাঁদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশে ঢাকার সুয়াপুরে।
১৯৩২ সালে স্কটিশ চার্চ থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯৩৬ সালে ইংরাজী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন এবং ১৯৩৮ সালে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের এম.এ পরীক্ষায়ও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে, প্রথম হন।
তারপর কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। স্টেটসম্যান পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে।
১৯৫৭ সালে অনুবাদকের কাজ নিয়ে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যান। সেখান থেকে বহু রাশিয়ান সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন।
১৯৬১ সালে রাশিয়া থেকে দেশে ফিরে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় যোগ দেন। সেখান থেকে ছেড়ে এসে পরে হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় যোগ দেন। মতের অমিল হওয়ায় সেই চাকরিও ছেড়ে দেন এবং হুমায়ুন কবিরের ইংরেজি কাগজ ‘নাও’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব সামলান। এখানেও মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় , তা ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজেই ‘ফ্রন্টিয়ার’ নামক ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। তিনি ভীষণ স্বাধীনচেতা মনের মানুষ ছিলেন।
এছাড়াও তিনি দিল্লির অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদ বিভাগে কিছুকাল কাজ করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন “Frontier” নামের প্রগতিশীল পত্রিকার।
২৩শে আগস্ট, ১৯৮৭ সালে তিনি কলকাতায় মারা যান।
সমর সেনের কয়েকটি কবিতা
————————————————-
১).
একটি বেকার প্রেমিক
চোরাবাজারে দিনের পর দিন ঘুরি।
সকালে কলতলায়
ক্লান্ত গণিকারা কোলাহল করে,
খিদিরপুর ডকে রাত্রে জাহাজের শব্দ শুনি ;
মাঝে মাঝে ক্লান্ত ভাবে কী যেন ভাবি –
হে প্রেমের দেবতা, ঘুম যে আসে না, সিগারেট টানি ;
আর শহরের রাস্তায় কখনো প্রাণপণে দেখি
ফিরিঙ্গি মেয়ের উদ্ধত নরম বুক।
আর মদির মধ্য রাত্রে মাঝে মাঝে বলি
মৃত্যুহীন প্রেম থেকে মুক্তি দাও,
পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী আনো
হানো ইস্পাতের মত উদ্যত দিন।
কলতলায় ক্লান্ত কোলাহলে
সকালে ঘুম ভাঙে
আর সমস্তক্ষণ রক্তে জ্বলে
বণিক-সভ্যতার শূণ্য মরুভূমি।
…………………………………………………………
২).
স্বর্গ হ’তে বিদায়
সমুদ্র শেষ হ’লো,
আজ দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাড়ে
উড়ন্ত পাখির মতো।
সমুদ্র শেষ হ’লো
গভীর বনে আর হরিণ নেই,
সবুজ পাখি গিয়েছে ম’রে,
আর পাহাড়ের ধূসর অন্ধকারে
দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাড়ে
উড়ন্ত পাখির মতো।
সমুদ্র শেষ হ’লো,
চাঁদের আলোয়
সময়ের শূন্য মরুভূমি জ্বলে।
…………………………………………………………
৩).
নচিকেতা
“কে এসেছে কালরাত্রে কৃতান্তনগরে?
এখন হাটের বেলা, এখানে মজার খেলা,
সারি-সারি শবদেহ সাজানো বাজারে।
বজ্রনখ উলূক রাত্রির কালো গানে
দেশভক্ত বিভীষণ, মৎসবন্ধু বকধার্মিকের
কাঁধে হাত রেখে, দেখ, চলে,
মহম্মদী বেগ খর খড়্গ শানায়,
বাজার ভরেছে আজ হন্তারক দলে
দুঃসাহসে তুষ্ট আমি আশীর্বাদ করি,
পৃথিবীতে জন্ম যেন না হয় তোমার |”
“রক্তজবা সূর্য ওঠে পর্বত শিখরে,
বৃষ্টিবিন্দু দাও দেব বটের শিকড়ে
অনাবৃষ্টির আকাশ হোক অন্যরূপী
তিন কুল ভ’রে দাও জনে ধনে জনে সুখী |”
…………………………………………………………
৪).
মেঘদূত
পাশের ঘরে
একটি মেয়ে ছেলে-ভুলানো ছড়া গাইছে,
সে ক্লান্ত সুর
ঝ’রে-যাওয়া পাতার মতো হাওয়ায় ভাসছে,
আর মাঝে মাঝে আগুন জ্বলছে
অন্ধকার আকাশের বনে।
বৃষ্টির আগে ঝড়, বৃষ্টির পরে বন্যা বর্ষাকালে,
অনেক দেশে যখন অজস্র জলে ঘরবাড়ি ভাঙবে,
ভাসবে মূক পশু ও মুখর মানুষ,
শহরের রাস্তায় যখন
সদলবলে গাইবে দুর্ভিক্ষের স্বেচ্ছাসেবক,
তোমার মনে তখন মিলনের বিলাস,
ফিরে যাবে তুমি বিবাহিত প্রেমিকের কাছে।
হে ম্লান মেয়ে, প্রেমে কী আনন্দ পাও,
কী আনন্দ পাও সন্তানধারণে ?
…………………………………………………………….
৫).
নিঃশব্দতার ছন্দ
স্তব্ধরাত্রে কেন তুমি বাইরে যাও?
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,
বিশাল অন্ধকারে শুধু একটি তারা কাঁপে,
হাওয়ায় কাঁপে শুধু একটি তারা।
কেন তুমি বাইরে যাও স্তব্ধরাত্রে
আমাকে একলা ফেলে?
কেন তুমি চেয়ে থাক ভাষাহীন, নিঃশব্দ পাথরের মতো?
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,
বাতাসে গাছের পাতা নড়ে,
আর দেবদারুগাছের পিছনে তারাটি কাঁপে আর কাঁপে;
আমাকে কেন ছেড়ে যাও
মিলনের মুহূর্ত হতে বিরহের স্তব্ধতায়?
মাঝে মাঝে চকিতে যেন অনুভব করি
তোমার নিঃশব্দতার ছন্দ :
সহসা বুঝতে পারি – দিনের পর কেন রাত আসে
আর তারারা কাঁপে আপন মনে,
কেন অন্ধকারে
মাটির পৃথিবীতে আসে সবুজ প্রাণ;
চপল, তীব্র, নিঃশব্দ প্রাণ—
বুঝতে পারি কেন
স্তব্ধ অর্ধরাত্রে আমাকে কেন তুমি ছেড়ে যাও
মিলনের মুহূর্ত থেকে বিরহের স্তব্ধতায়।
…………………………………………………………….
৬).
নিরালা
বর্তমানে মুক্তকচ্ছ, ভবিষ্যৎ হোঁচটে ভরা,
মাঝে মাঝে মনে হয়,
দুর্মুখ পৃথিবীকে পিছনে রেখে
তোমাকে নিয়ে কোথাও স’রে পড়ি।
নদীর উপরে যেখানে নীল আকাশ নামে
গভীর স্নেহে,
শেয়াল-সংকুল কোনো নির্জন গ্রামে
কুঁড়েঘর বাঁধি ;
গোরুর দুধ, পোষা মুরগির ডিম, খেতের ধান ;
রাত্রে কান পেতে শোনা বাঁশবনে মশার গান ;
সেখানে দুপুরে শ্যাওলায় সবুজ পুকুরে
গোরুর মতো করুণ চোখ
বাংলার বধূ নামে ;
নিরালা কাল আপন মনে
পুরোনো বিষণ্ণতা হাওয়ায় বোনে।
…………………………………………………………….
৭).
একটি মেয়ে
আমাদের স্তিমিত চোখের সামনে
আজ তোমার আবির্ভাব হ’লো
স্বপ্নের মত চোখ, সুন্দর, শুভ্র বুক,
রক্তিম ঠোঁট যেন শরীরের প্রথম প্রেম
আর সমস্ত দেহে কামনার নির্ভিক আভাস
আমাদের কলুসিত দেহে
আমাদের দুর্বল, ভীরু অন্তরে।
সে-উজ্জ্বল বাসনা যেন তীক্ষ্ণ প্রহার।
……………………………………………………………
৮).
উর্বশী
তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে
দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো !
কিংবা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে,
হে ক্লান্ত উর্বশী,
চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যেমন বিষণ্ণমুখে
উর্বর মেয়েরা আসে
কত অতৃপ্ত রাত্রির ক্ষুধার ক্লান্তি,
কত দীর্ঘশ্বাস,
কত সবুজ সকাল তিক্ত রাত্রির মতো,
আর কতো দিন !
……………………………………………………………
৯).
বিকলন
তোমাকে দেখেছি দেবী লোহিত সকালে,
মাইকেলী মেঘনাদে, বিদ্যাসাগরের
বজ্রগর্ভ করুণায়, বিপ্লবী আরাবে।
আজ বিলাপের কাল! আনন্দ আকাশে
জুটেছে অন্যান্য জীব, হননের মন্ত্র মুখে।
পোড়ামুখ ভুলে যাও, হে জননী, এ ঘোর দুর্দিনে ;
রজকের কি বা লাভ উলঙ্গের কাছে!
বিফলে গভীর রাত্রে চাঁদ ওঠে।
অতীতের ঐশ্বর্যমহিমা চেতনার প্রান্তে আজ
বিভীষিকা মূর্তি ধরে, পদ্মার উদ্দাম গান
মাত্রারিক্ত! করাল জোয়ার! আমার সোনার ধানে
পরিচিত হাত রাখে শত্রুর দালাল।
দিগন্তে ধূসর মাঠে গতপত্র বট
মাথা নাড়ে প্রবীণ ক্লান্তিতে, সে কি জানে
যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙালি
দিনগত পাপক্ষয়ে মূঢ় ভ্রান্তমতি
লোকায়ত কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন বিধুর
মধ্যবিত্ত মানসের বিড়ম্বিত গ্লানি?
…………………………………………………………….
১০).
স্তোত্র
আদিদেব একা সাজে পুরুষ প্রকৃতি
মহাজন চাষি তিনি সবাকার গতি,
কৃষ্ণকালো বড়ো মেঘ জুড়েছে আকাশ
শ্যামবর্ণ মূর্তি তার চাষির আশ্বাস,
ধান দেখে মহাজন বলেছে সাবাস।
আকাশে শুনেছি আজ মেঘের বিষাণ
ঘরে-ঘরে বুঝি আজ রাসলীলা গান,
সাপ যত বসে আছে শিকারের তালে
রাত্রি এল, মৃত্যু লেখা ব্যাঙের কপালে।
মহাজন গান গায় নদারৎ ধান
অন্ধকার প্রেতলোকে ভাবে ভগবান,
অক্ষম এ রায়বার ঈশ্বর কথনে
প্রভুর বন্দনা শুনি বেনের ভবনে।
…………………………………………………………….
১১).
বিস্মৃতি
ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো
কখনো তোমাকে মনে পড়ে।
হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস।
আর মেঘের কঠিন রেখায়
আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে।
হলুদ রঙের চাঁদ রক্তে ম্লান হ’লো,
তাই আজ পৃথিবীতে স্তব্ধতা এলো,
বৃষ্টির আগে শব্দহীন গাছে যে-কোমল,
সবুজ স্তব্ধতা আসে।
…………………………………………………………….
১২).
বসন্ত
বসন্তের বজ্রধ্বনি অদৃশ্য পাহাড়ে।
আজ বর্ষশেষে
পিঙ্গল মরুভূমি প্রান্ত হতে
ক্লান্ত চোখে ধানের সবুজ অগ্নিরেখা দেখি
সুদূর প্রান্তরে।
…………………………………………………………….
১৩).
বিরহ
রজনীগন্ধার আড়ালে কী যেন কাঁপে,
কী যেন কাঁপে
পাহাড়ের স্তব্ধ গভীরতায়।
তুমি এখনো এলে না।
সন্ধ্যা নেমে এলো : পশ্চিমের করুণ আকাশ,
গন্ধে ভরা হাওয়া,
আর পাতার মর্মর-ধ্বনি।
…………………………………………………………….
১৪).
এবার ফিরাও মোরে
পড়ন্ত রোদে নগর লাল হল।
বহুদূর দেশে
পাহাড়ের ছায়া প্রান্তরে পড়ে;
সন্ধ্যার অন্ধকারে অন্ধ নদীর
মদির ক্লান্ত টান।
মেমননের স্তব্ধ মূর্তি
রাত্রি হয়ে এল শেষ
এবার ফিরাও মোরে।
…………………………………………………………….
১৫).
জয় হিন্দ
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মালিকের ফের বেঁধেছে ঘাঁটি ;
বৈষ্ণবী বিনয়ে ইংরেজ বসেছে বর্মায়,
ফরাসীরা প্রত্যাগত ইন্দোচীনে,
গোলন্দাজহীন ওলন্দাজ ঘোরে যবদ্বীপে।
ভারতের স্বাধীনতা আসন্নপ্রায়।
বম্বেতে দিন রেখে গেল বারুদের গন্ধ ;
রাস্তায় রক্তের ছিটে।
বন্দুকের খর শব্দ থামলে শহরে
বিপ্লবী নেতারা জমে বক্তৃতার মাঠে,
সর্দারের ধমকে পার্কের রেলিং কাঁপে,
হয়তো কৃত পাপের লজ্জা জাগে
মর্গে জমা দুশো সত্তরটা লাসে।
ধোঁকায় জব্দ জাহাজেরা বন্দরে স্তব্ধ,
মাঝে মাঝে উদ্যত সঙীন, সাম্রাজ্যের উদ্ধত প্রতীক।
আমাদের স্বাধীনতা আসন্নপ্রায়,
মন্ত্রীসভার বিলিতী দূতেরা আগতপ্রায়
জয় হিন্দ।
————————————————————-
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। ]
সূত্র নির্দেশিক –
সমর সেন, খালেদ হোসাইন ও সাজ্জাদ আরেফিন সম্পাদিত, সমর সেন, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০২, পৃষ্ঠা-২৮৮.
সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৯৪.
রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য সম্পাদিত; কবিতা সংগ্রহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তৃতীয় মুদ্রণ; জুলাই, ১৯৯০; পৃষ্ঠা- ৪৭৪.