Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কনকাঞ্জলি || Samarpita Raha

কনকাঞ্জলি || Samarpita Raha

আজ ডঃঅমলবাবুর ,মা মর়া মেয়ে সাথীর বিবাহ। জন্মের পর সাথীর মা মার়া গিয়েছিলেন।তাই সাথী মামা বাড়ীর দাদু দিদার চোখের মনি হয়ে উঠতে পারে নি।এমনকি ঠাম্মা বাড়ির ও অনেকে অপয়া বলত আড়ালে আবডালে,সবই সাথীর কানে আসত।সাথীর যখন তিন বছর বয়স তখন সাথীর বাবা, বাড়ীর মা বাবার চাপে পড়ে মেয়ের কথা ভেবে পুনরায় বিবাহ করেন।
দ্বিতীয় মা অবশ্য ফুটফুটে সতীনের মেয়েকে নিজের মেয়ের মতই যত্ন করেন । একজন মা সন্তানের জন্য যা করেন,সৎমা সব করতেন।সাথীও মা পেয়ে খুব খুশী হয়।বছর খানেক বাদেই সাথীর নুতন মা সন্তানসম্ভবা। সাথীও জানতে পারে মা ভাই,বোন কিনবে।
আনন্দে আত্মহারা সাথী,মা আজ নার্সিংহোমে বেবি কিনতে গেছে। একটা ভাই কিনেছে মা। সাথীর খুব আনন্দ ভাই হয়েছে।কিন্তু ভায়ের পায়ে নাকি সমস্যা আছে।বড় হলে হয়ত হাঁটতে পারবে না।এই কথাটি শুনে পাঁচ বছরের শিশু হাপুস নয়নে কেঁদেছিল,কেননা ভাই দিদির সাথে দৌড়াতে পারবে না।
তারপর মা ভাইকে নিয়ে নার্সিংহোম থেকে বাড়ি আসে।সৎ দিদা বলে এই অপয়া মেয়ে তোর জন্য আমার নাতি বিকলাঙ্গ হয়েছে,তুই ছুঁবিনা। মা একটাও প্রতিবাদ করেনি।ওই পাঁচ বছরের শিশু মা কে জড়িয়ে ধরতে গেলে, সৎমা সাথীকে দূর করে দেয়।যা আমায় জ্বালাবি না।এখন বুঝেছি তোকে কেন সবাই অপয়া বলে।ছোট্ট মেয়ে ধাক্কাটা বুঝেছে কিন্তু অপয়াটা বারংবার ঠাম্মা, মামারবাড়ি,সৎ দিদার কাছে শুনে শুনে কানে সয়ে গেছে।কিন্তু আজ মা ও বলল।
সাথী কাঁদতে কাঁদতে বাবার চেম্বারে যায়,সব ঘটনা খুলে বলে।
হ্যাঁ রে মা এখন ভাবছি তোর মুখ চেয়েই তো নুতন মা আনলাম।বড্ড ভুল করেছি রে,ভাবছি তোকে হস্টেলে দিয়ে দেব।সাথী বলে আমি ভাইয়ের সাথে খেলব না বাবা।অমল বলে না রে মা,তোর ভাইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে, বড় হয়ে হাঁটতে পারবে কিনা।তুই হস্টেলে থাক মা,তোর অত্যাচার বেড়ে যাবে রে।সেটা আমি বাবা হয়ে সহ্য করতে পারব না।
তারপর থেকে নৈনিতালে থাকে সাথী।বাড়ির কথা আবছা মনে পড়ে।এখন তো অপয়া কথাটার মানে জানে,তাই কারর সাথে কথা বলে না।ভাই অনেক কষ্টে হাঁটতে পারে অল্প অল্প।দিদিকে ফোন করলে অত সাথী কথা বলে না।হু হ্যাঁ করে রেখে দেয়।
সাথী র বাবা সেই ছোট থেকে দুই মাস অন্তর সাথীর কাছে আসে।সাথীও দিন গুনতে থাকে বাবা কবে আসবে।
সৎমাও সাথীর উপর অভিমান করে।কিন্তু সাথীর আজ ও মায়ের ধাক্কা দেবার কথা মনে পড়ে,অপয়া কথাটা কানে অনবরত বাজতে থাকে।
সাথী ক্রমে স্কুলের গন্ডি পার করে।তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে,কোলকাতায় চাকরি পায়। সাথী চাকরির খবর বাবাকে জানায় নি।সাথী একেবারে নৈনিতালের পাঠ চুকিয়ে কোলকাতায় আসে।যাদবপুরে লেডিস হস্টেলে থাকে।চাকরি জয়েন করার পর বাবাকে জানায় আমি চাকরি পেয়ে গেছি।অফিসের নাম বলে আর কিছু বলে না।
বাবা রুবি হাসপাতালে কবে বসে কথার ভাজে জেনে নেয়। ব্যস প্রথম দিন অফিস জয়েন করে বাবার কাছে যায়। বাবা মেয়েকে দেখে জড়িয়ে ধড়ে। মেয়ে কোলকাতায় একেবারে চলে এসেছে শুনে অবাক। অনেক অনুনয় করে ,সাথী রাজি হয় না। হস্টেলে ফিরে যায় সাথী। বাবা রোজই যায় হস্টেলে, মা ও অনেক বলে,তবুও রাজি হয় না বাড়ি ফিরে যেতে।শেষে এক দিন বাবার চোখে জল দেখে সাথী নিজের বাড়ি তে যায়। দেখে ওর ঘর ঠিক আগের মতই আছে। একদিন থেকে হস্টেলে ফিরে যায়।এইভাবে কয়েক বছর পর,ডঃ অমল তাঁর চেনা এক ডাক্তার ছেলের সাথে মেয়ের বিবাহ স্হির করেন।

আজ সাথীর বিবাহ। সানাই এর সুর পিতৃহৃদয় বিগলিত করছে। কি আর করবে বাবা,কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের সুখী জীবন কামনা করছেন।
সৎমা আঁচল পেতে দাঁড়িয়েছিলেন,সাথী মা কে কনকাঞ্জলি দিতে চায় নি। সাথী শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় এতদিন পর একটা কথা বলে,মা আমি তোমার কাছে ঋণি নয়,বরং আমি তোমাকে আমার জায়গাটা ছেড়ে দিয়ে সারা জীবন নির্বাসনে ছিলাম।আর তোমার পাঁচ বছরের মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া ও ভাই হাঁটতে পারবে না বলে আমায় অপয়া বলা আমি ভুলতে পারব না।তুমি আমার সৎমা ছিলে পরেও থাকবে।আর সৎমা কখনোই নিজের মা হয় না। মা বলে সোনা আর ওভাবে বলিস না।আমি পারিপার্শ্বিক চাপে বলেছিলাম। তাহলে মা ,নিজের সন্তানকে কেউ ওভাবে বলে? মা ,সাথীকে বলে সোনা আমায় ক্ষমা কর। সাথী বলে এক শর্তে ক্ষমা করতে পারি যদি তুমি আমার বৌভাতে যাও।
মা ছুট্টে মেয়ের গলা জড়িয়ে আদরে ভরিয়ে দেয়।
সাথী মা কে বলে ছাড়ো ,আঁচল পাতো,কনকাঞ্জলি দেব।বাবা ও ভাইকে যেমন আগলে রেখেছিলে তেমনি রেখো আমার মিষ্টি মা।
সাথী শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে।অমল প্রথম স্ত্রীর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলে তোমার মেয়েকে আশীর্বাদ কর হেমা,ও যেন খুব সুখী হয়।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress