Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কতবার ভাবি || Shamsur Rahman

কতবার ভাবি || Shamsur Rahman

কতবার ভাবি তার উদ্দেশে লিখব না আর কবিতা।
প্রতিটি শব্দে ব্যথার তুষার জমিয়ে
কবিতা-মুক্তো কোনো দিন তাকে করব না উৎসর্গ।

সেই কবে তার কেশতরঙ্গে হৃদয় টালমাটাল
নৌকোর মতো প্রহরে প্রহরে নিত্য উঠত দুলে,
সেই আমাদের জীবন-রাঙানো বনভোজনের দিন,
সূর্য ডোবার মুহূর্তে মুদু স্বর দিয়ে প্রাণ ছোঁয়া,
পাহাড়ি পথের ঝরনার ধারে উড্ডীন পাখি দেখা-
এসব খুচরো ঘটনাবলির স্বাক্ষর আজও বই।

আমার ওষ্ঠ তার ওষ্ঠের গাঢ় বন্দরে
ভিড়তে অধীর হয়েছে যখন,
মৃত চড়ুইটা পড়েছিল চুপ মেঝের ওপর,
হাওয়ায় জড়ানো স্তব্ধ শরীর।
নৈঃশব্দের হৃৎপিণ্ডের মতো আমরাও
যুগ্ম দোলায় কেঁপেছি শুধুই।
উথালপাথাল ঢেউয়ের চূড়ায় হৃদয়ের সাঁকো
ভেসেছে চকিতে একদা যখন,
দুপুরের লাল এজলাসে দুলে জারুলের শাখা
করেছিল বুঝি জজিয়াতি খুব।
আমাদের প্রেম ফুলের মতন উঠেছিল ফুটে,
তোমরা বলতে পারো।
আমাদের দেখে সন্ধ্যার মেঘ উঠেছিল জ্ব’লে,
তোমরা বলতে পারো।

কতবার তাকে এই তো এখানে, মানে খোলা এই
বারান্দাটায়
অথবা ঘরের সুশ্রী ছায়ায় চেয়ারে বসিয়ে
হয়েছি নিবিড়।
এই ব’সে থাকা, কথা বলা আর কথা না-বলা,
কিছু বিশ্বাস
কিছু সন্দেহ, কিছু রোমাঞ্চ-এই তো প্রেমের
ভাষান্তরণ।

তার সে বুকের নাক্ষত্রিক অলিন্দ আর
চোখের বাগানে হাতের মহলে অবক্ষয়ের
দারুণ বেলায় কার অধিকার? নেই তথ্যের
মূল্য কী আজ? সময় তো এক তুখোড় পাচক,
সোনালি-রুপালি ল্যাজা-মুড়ো সব হাতায় হাতায়
করে একাকার। আমাকেও তার হাঁড়িতে চাপিয়ে
দিচ্ছে তীব্র জাঁহাবাজ আঁচ। অবান্তরের
আবর্জনায় অনেক কিছুই চাপা প’ড়ে যায়।
সেই জঞ্জালে প্রায়-নিভন্ত অঙ্গার এক
রটায় হাওয়ায় একদা কখনো সে ছিল আমার।
আমার স্বরের ব্যাকুল কোকিল-ভাবি রাত্তিরে মিশে-
কখনো আবার পৌঁছে যাবে কি তার বাসনার নীড়ে?
এই মুহূর্তে সে যদি আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে,
চোখ জ্বেলে রাখে চোখের ওপর, চুন-খসা দেয়ালের
বয়েসী ঘড়ির নিশ্চলতায় জাগবে কি ফের দোলা?
আগের মতোই হৃদয় আমার আরক্ত নাচ হবে?
এর যথার্থ উত্তর দিতে আমার ভীষণ বাধে।
এ-যুগে শুনছি, রটায় সবাই, হৃদয় থাকাটা বিপজ্জনক;
ভালোই হয়েছে, সুনীল নেকড়ে ছিন্নভিন্ন করেছে হৃদয়।
অতীত-প্রেতের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় শিহরিত ঘাস; মরা পাখিদের
ভয়ানক সাদা কংকাল নিয়ে খুব খসখসে কাগজের মতো
এলোমেলো আর ছেঁড়া-খোঁড়া সব পাখা নিয়ে মাঠে হাহাকার হয়।

কতবার ভাবি তার উদ্দেশে লিখব না আর কবিতা,
তবু তার প্রেত অতনু স্মৃতির রুমাল ওড়ায়
আমার রচিত শব্দ,
গন্ধ বিলায় ছন্দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *