Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ওরা যাযাবর || Roma Gupta

ওরা যাযাবর || Roma Gupta

ওরা যাযাবর।
বীরবাহান,কাসোয়ার, দেলোয়ান, পীরাজ, জাখোরি ,তুসাই এরা সকলে পরিযায়ী পাখির মত যেখানে ইচ্ছা চলে যায় সদলবলে। খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে করে বসবাস। কোথাও একমাস, কোথাও তিনমাস, , আবার কোথাও এক সপ্তাহ থেকে পাততারি গুটিয়ে চলতে থাকে অজানা পথে। ক্যারাভানে করে যাত্রা মাঠ ঘাট মরু সাগর তেপান্তরের যেখানে ইচ্ছা। একবার নির্জন জঙ্গলে নদীর পাশে তাঁবু ফেলে। রাত্রে হঠাৎ করুণ গোঙানি শুনে তারা মশাল জ্বালিয়ে বর্শা হাতে আওয়াজ অনুসারে এগিয়ে যায়। তারা নিশ্চিত এখানে বাঘের আনাগোনা আছে। ভয় ভেড়া উটের জন্যে।

বীরবাহান আর কাসোয়ার কিছুদূর যেতেই দেখে কয়েকটা হায়না একটা ঘোড়াকে কামড়ে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তারা কালবিলম্ব না করে হুঙ্কার দিয়ে দৌড়ে গিয়ে একটা মশাল ছুঁড়ে দেয়। হায়নারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরমধ্যে দেলোয়ার চলে আসে সঙ্গে তীর ধনুক নিয়ে। ছুঁড়তে থাকে তীর। একটা হায়নার পায়ে লাগতেই ঘোড়া ফেলে সব অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যায়।

যাযাবর জাতি শিকার করে খাওয়ার জন্য তীর ধনুক, বর্শা সঙ্গে রাখে। বিপদেও কাজে লাগায়। ঘোড়া কোনোরকমে খুঁড়িয়ে হেঁটে পালাবার চেষ্টা করতেই আবার পড়ে যায়। ওরা ধরে গামছা দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে আসে তাঁবুর কাছে।

ঘোড়ার ঘাড়ে আর পায়ে ভালো ক্ষত হয়েছে দেখে জাখোরি তাড়াতাড়ি রান্নার হলুদ ঢেলে দেয় ক্ষতস্থানে।

যাযাবর জাতি, পশুপাখি শিকার করে খায়। তাই বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠে ঘোড়াটাকে দেখে ভালো খাবার আনন্দে লাফাতে থাকে। কিন্তু জাখোরি সন্তানের মা। সে বলে, এই অসুস্থ ঘোড়াকে খাওয়া হবেনা, বরং একে সুস্থ করে ছেড়ে দেওয়া হবে। কাছেই নদী। আমরা মাছ ধরে খাবো।

তবে এখানে বেশি দিন থাকা ঠিক হবেনা। যদি বাঘ হানা দেয়। আমাদের ভেড়া শুধু নয় মানুষ তুলে নিয়ে যাবে।

তাই তারা ঠিক করলো ঘোড়াটা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত থাকবে। ঘোড়াটাকে উটের পাশে বেঁধে প্রতিদিন শুশ্রুষা চলে। উট, ভেড়া যা খায় তা-ই ঘোড়াকে দেয়। আদর যত্ন পাওয়ায় ঘোড়াও বশীভূত হয়ে যায়। একসপ্তাহ বাদে ঘোড়াকে ছেড়ে দিলে ঘোড়া প্রথমে যেতে চাইছিল না। পরে দেলোয়ার তাড়া করে দূরে দিয়ে আসে।

সন্ধ্যা হলে দেখে ঘোড়া, উট ভেড়ার মাঝে বসে আছে। প্রতিদিন সকালে ঘোড়াকে তাড়িয়ে দূরে দিয়ে আসে। ঘোড়া সারাদিন চরে সন্ধ্যায় চলে আসে।

এবার ওদের অন্যত্র চলে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। তাই ক্যারাভানে জিনিসপত্র গুছিয়ে খুব ভোরে রওনা দেওয়ার আগে ঘোড়াকে তাড়িয়ে বেশি দূরে দিয়ে এসে যাত্রা শুরু করে। সকলে ক্যারাভানের পাশে হেঁটে দূর একটা বিশাল মাঠে পৌঁছায়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সেখানেই তাবু খাটায় রাত কাটানোর জন্য।

রাত শেষে ভোরবেলায় তারা যখন উঠেছে দেখে ঘোড়া কখন এসে উটের পাশে বসে আছে। তাদের ভয় হয় যদি চুরির দায়ে পড়ে। তাই আবার পুরুষরা সবাই তাড়া করে বহুদূর প্রান্তে ছুটিয়ে নিয়ে যায়, যাতে আসতে না পারে।

কিন্তু অদ্ভুতভাবে ঘোড়াটি ফিরে এসে পথের সাথী হয়ে তাদের পিছন পিছন চলতে থাকে। দু তিনদিন এভাবে চলার পর পীরাজ বলে, আমার ঘোড়াটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে। বোধহয় ভয়ে আমাদের সাথী হয়েছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি। যদি বাঘ, হায়নায় ধরে। দেখোনা কেমন রাত্রিরে চলে আসে আমাদের কাছে। ও অসহায়। আমাদের সঙ্গে নিয়ে চল। তাদের উটের নাম পালু। ঘোড়াটার নাম রাখা হলো ডিংবু। পালুর পাশাপাশি ডিংবুও চলতে লাগলো। পালুর সাথে ডিংবুর আগেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল।

দেলোয়ার বললো ভালোই হলো, চল কোনো বনে গিয়ে থাকি ক’দিন। গাছ কেটে একটা ক্যারাভান বানিয়ে ডিংবুকে দিয়ে টানা করাবো। আমাদের যাতায়াতের সুবিধা হবে। সকলে রাজি হলে ডিংবু হয়ে গেলো ওদের পরিবারের একজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *