Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে || Samarpita Raha

ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে || Samarpita Raha

কখনো দেখেছেন হয়ত কনের বাড়ি আলোকসজ্জায় সজ্জিত—-বাইরে লেখা দুলছে —– শুভবাহ “রীনা/কমল।
“গান বাজছে লাজে রাঙা হল কনে বৌ গো ,মালা বদল হবে এ রাতে”।

তারপর বিয়ের বাড়িতে হঠাৎ কান্নার রোল– বর আসবে না বিয়ে করতে।
যা ইচ্ছা ভেবে নিন–শুভদিনে খারাপটা নাইবা ভাবলাম।
যেখান থেকে পারো বর খুঁজে বিবাহ দেওয়া হত।মেয়েটি লগ্নভ্রষ্টা হবে বলে।
তাহলে আমার কপালে ঐরকম উল্টো ঘটনা।
আমি সোমা,সদ‍্য ঊনিশ ,ব‍্যারাকপুর নিবাসী,খুব সাজসজ্জা করে —-সপরিবারে বাবার বন্ধুর বাড়ি নৈহাটি গেছি, বরযাত্রী যাব বলে।

গোধূলি লগ্নে বিয়ে ।একটু পাকামি ক‍রে রানী বেনারসি পরেছিলাম।
আমার মাকে ডেকে অনেকেই বলছিলেন,দিদি আপনার মেয়েকে বিয়ের কনে লাগছে।দেখবেন এত সুশ্রী দেখতে,পড়াশোনাতেও ভালো ,আপনার মেয়ের বিয়েতে আর পাত্র খুঁজতে হবে না।
পাত্রদের লম্বা লাইন পড়ে যাবে।
মা হেসে বলে কি যে বলেন আপনারা।
“জন্ম মৃত‍্যু ,বিয়ে সব বিধাতার হাতে”।
“বিয়ের ফুল না ফুটলে “—-আমরা কেউ কিছু করত পারব না।
এই নিয়ে মা রা বেশ হাসাহাসি করছিল।
অল্পবয়স এই সকল মশকরা খুব লজ্জা দিচ্ছিল।এক ফাঁকে মাকে বলেছিলাম এত কথা কেন বলছ??

মা ধমকের সুরে বলেছিল তুমি ছোটতো ছোটর মত থাকো।পাকামি করে শাড়ি পরেছ?সবাই ভাবছে বিবাহ দেব তোমার।আমায় বললেন যাও ফ‍্যানের তলায় সব বাচ্চারা আছে ওদের নিয়ে থাকো।
শোভনদা আমায় বলে বি-এস-সি পড়ছ??
এখনতো বড় হয়ে গেছো।আজ মেয়ের বাড়িতে বাসরে থাকবে। মা থাকতে দেবে না ।
শোভনদা বলে ড্রেস এনেছ??হ‍্যাঁ তা এনেছি। তুমি মাকে বলবে তারপর। মাধ্যমিক দেবার পর এই দেখা।শোভনদার বন্ধুরা শোভনদাকে আওয়াজ দেয় ,কেনরে??

শোভনদার মা বলেন এই সোমা শোভনকে চন্দন পড়িয়ে দে।আমি লজ্জা ভাব নিয়ে চন্দন পরায়।শোভনদা আমার মাকে বলে —কাকিমা আজ সোমা —রাতে আমার সাথে থাকবে।তুমি ওর জন্য ড্রেস নিয়ে যেও।মা এবার ও বলতে যাচ্ছিল—-ও -তো ছোট—না মা সেটা বলেনি—ঠিক আছে বলে মাথা নাড়ে।আহা কি মজা —–জীবনে প্রথম বাসর জাগব।হঠাৎ উঠানের পাশে লাল ফুলে ভরা কৃষ্ণচূড়া গাছে কোকিলের কুহুতান শুনে মনে হল—পিক বুঝতে পেরেছে আমার আজকে হঠাৎ বড় হয়ে যাবার কথা।

তখন ঠিক বিকাল সোয়া চারটে বাজে।কনে বাড়ি যেতে আধা ঘন্টা পথ।
সবাই হাঁক দেয় বরের গাড়িতে কে যাবে??অনেকেই আবার বলেন সন্ধ্যায় বিয়ে —–কনে বাড়ি থেকে কেউ বর নিতে তো এল না।
অবশেষে কাকু বললেন দোষ ধরলে লগ্ন পেড়িয়ে যাবে।উলু শঙ্খধ্বনি বাজছিল।

বরের গাড়িতে বর উঠতে যাচ্ছে,এমন সময় ফোন আসে মেয়ে পালিয়েছে,বিয়ে হবেনা।কান্নাকাটি বরের মায়ের,তার ছেলে লগ্নভ্রষ্ট হবে।
বর রেগেমেগে বলে ,বাবাকে বললাম মেয়েটাকে দেখতে গিয়ে আমায় চোখ মেরেছিল,ও ভালো নয়।তোমরা বললে কোথায় তোমরাতো দেখোনি।হঠাৎ কাকু বলেন আজ আমার ছেলের বিয়ে হবেই।
বাবা আর কাকু খুব বন্ধু।হঠাৎ আমার মা ,বাবা আর কাকু ,কাকিমা হাওয়া।আমি শোভনদার থমথমে মুখ দেখছিলাম।

হঠাৎ ঠান্ডা মাথায় কাকু শোভনদাকে বলেন— এই সমর কাকুর মেয়েকে বিয়ে করবি??
শোভনদা বলে সোমা রাজী হবে ??ওর মতামতের ও প্রয়োজন আছে।মা বললেন ওর কিসের মতামত ও এখন ছোট।আমরা যা বলব তাই।
দেখো কান্ড বিয়ের কথা ভাবছে,তাও মা ছোট বলছে আমায়।ঠিক আছে এবার আমি বিয়ে করে বড় হব।
কাকিমা আমার হাত ধরে বলেন ,মা তুই আমার মেয়ের মত থাকবি।আর নৈহাটিতে ঋষি বঙ্কিমে পড়িস তো। বাড়ির কাছে কলেজ—-কোন অসুবিধা নেই।
শোভনদার করুণ মুখ দেখে মাথা নেড়ে দিলাম।
ব‍্যাস কোথা থেকে হলুদ এনে বর ও আমাকে ছুঁয়ে ছেলের বাড়িতেই বিয়ে দিয়ে দিল। ☺বসন্তের গোধূলীর এক সন্ধ্যা বেলায় কানের কাছে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে।ভালো শাড়ি তো পরায় ছিল।যে মা একটু আগে আমায় ছোট বলে বকলেন,
আর ঐ মাকে দেখি হাসি মুখে নিজের গলার সীতাহার,কানের,হাতের বালা আমায় পরিয়ে দিলেন।আমার নকলগুলি মা পরে নিলেন।দোকান থেকে শাঁখা পলা সব এসে গেল।
মনে হল বর দেখলাম খুব খুশি,হয়ত মনে ইচ্ছে ছিল,অনেক ছোট ছিলাম বলে সেইভাবে ভাবেনি। মাধ্যমিক দেবার পর আমার সাথে দেখাও হয়নি।
ঐ নয়বছরের বড় শোভনদা বর হয়ে গেল। আমরা অনেক বাধ‍্য সন্তান ছিলাম।হঠাৎ বলল বিবাহ অনুষ্ঠানে আমায় বিয়ে করতে হবে—–এক গোধূলির সন্ধ্যায় জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেল।

তবে বাবা শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছু না চাওয়া সত্ত্বেও বৌভাতে মেয়ে ,জামাইকে জিনিসপত্র সব দিয়েছিলেন। তারপর বিবাহিত জীবন চলতে থাকে।তবে সুখকর মুহূর্তে শোভন বলে দুঃসময়ে একটা ছেলে ,একটা মেয়েকে উদ্ধার করে,কিন্তু এই বিয়েতে একটা মেয়ে একটা ছেলের সম্মান রক্ষা করেছে।যার কনে বিয়ের রাতে পালায়,সেই একমাত্র বুঝতে পারে —কি লজ্জার মুহূর্ত।হয়ত কোনদিন বিয়ে করতাম না।
ছেলে মাঝে মধ্যেই পাপার কাছে পাপার বিয়ের কাহিনী শোনে।আবার মায়ের কাছে ও মায়ের বিয়ের গল্প শোনে।যদিও দুজনের গল্প একটা বিন্দুতে শেষ হয়।গোধূলির দৃশ্য দেখলেই নিজের বিয়ের গল্প মনে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress