এ পর্যন্ত যা দেখে আসছি
এক সুরেলা নারীকণ্ঠ ” নাম্বার প্লিসস্” প্রথম শোনার চমক তখন নিয়ম ছিল এ কাজ শুধু নারী কর্মীদের জন্যই নির্দিষ্ট। মার্ফি রেডিও তে গান নাটক খবর সেতো সকলে একসঙ্গে শোনা ,দৃশ্য নেই, অদৃশ্য । তাতে কি? জোর কদমে কণ্ঠস্বর এগিয়ে যাচ্ছে সকলের মাঝে— “খবর” শুনতে খুব ডাল লাগত, কথার সুরের ওঠানামা —ধীর অথচ পাহাড়ি নদীর গতি, এখনকার মতো এক নিঃশ্বাসে ঝড়শব্দ নয়। টেলিভিশন যেন কম্পিটিশন, এক মিনিটে কত শব্দ উচ্চারণ, এত তাড়া কেন? কি হারাবার ভয়— সময়? যাক্ এখন বলি ,আমার প্রথম কানে এলো একান্তই শুধু আমার কানে। এমন যে হতে পারে তা কি বিন্দুমাত্র আগেও জানতাম শুধু আমি শুনবো আর কেউ নয়!!! কি করে হয়?
— ছোট্ট আমি
বিস্ময়াভিভূত আমার ডাক্তার মেসোমশাই এর বাড়ির টেবিলে, একটি কৃষ্ণকালো ছোট্ট যন্ত্র মেশিন, ওটা থেকে নাকি কথাকলি ফুটে ওঠে। ছোটদের হাত দেওয়া নিষেধ। নিষিদ্ধ বাণী এক বিপরীতমুখী শক্তি, কৌতুহলদ্দীপক ও আকর্ষণ কারিগর।
দেখতাম বড়োরা ওতে কথা বলছে অথচ অন্য জনের কথা যে শোনা যাচ্ছে না। এ এক রহস্য — একদিন সবার অলক্ষ্মে টুক করে খেলনাটি কানে দিলাম ছোট্ট একটা হলুদ বাতি জ্বলে উঠলো—- ” নাম্বার প্লিসসস্…..” সভয়ে থতমত খেয়ে যথাযথ স্থানে খেলনা রেখে দৌড়—- অপরাধবোধ সাথে আর এক সন্দেহ !!! কে ও , বকুলদি নয়ত। যদি আমার কথা বাড়িতে বলে দেয়। শুনেছিলাম পাড়ার বকুলদি কলকাতা থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে “টেলিফোন এক্সচেঞ্জ” এ কাজ করেন। হ্যাঁ, সে (১)টেলিফোন ছিল এক্সচেঞ্জ পরিচালিত , স্বয়ংক্রিয় নয়। আমার প্রথম বিস্ময়!!! কিন্তু এও ত অনেক পর,১৮৭৬ সালে প্রথম Alexander Graham Bell যে টেলিফোনে কথার সূচনা করেছিলেন সেই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারের অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই এসেছিল আমার ছেলেবেলার প্রথম দেখা ঐ যন্ত্রটি। তারপর এলো পরপর বয়স বারবার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে (২)স্বয়ংক্রিয় মানে অটো ডায়ালিং টেলিফোন , গোল করে রাখা নম্বর ০ থেকে ৯ এলো রকমারী রঙবাহারের এক রূপে (৩) ডিজিটাল বোর্ড , আবার তারও নানা রঙের মনলোভা অবয়ব। তারপর (৪)রোটারি ডায়াল টেলিফোন, পরপর এলো (৫)ব্যাটারিচালিত কর্ডলেস ফোন — নব্বই এর দশকে( আমাদের দেশে)(৬)নোকিয়া মোবাইল। তারপর আরও দ্রুত এগিয়ে এলো আধকামড় খেয়ে (৭) আপেল আন্দোলন এলো অ্যানড্রয়েড স্মার্ট সাথী, বড়োই প্রিয়জন।
কোনমতেই কাছছাড়া করা না যায় , চোখে হারায়!!!! এখানে থামলেই হবে ? না , এলো (৮)ফোল্ডার ফোন, তারপর? যেমন হাল হয়েছিলJames Chadwick এর নিউট্রন আবিষ্কার ১৯৩২ সাল সব খোলনলচে পাল্টে দিয়েছিল পরমানুর গঠন। বিজ্ঞান কি শেষকথা বলেছে কোনদিন? সে তো থামতে পারবে নি।
তেমনিই পাল্টাচ্ছে নেট বৈচিত্র্যের হাতিয়ার। আর রূপবদলের খেলা সর্বত্র চলে, মানুষ ও যন্ত্রের। এদিকে কার টিকিট কবে কাটা আছে ত জানি না, কোন দিন , জানি না এরপর কি অপেক্ষমান। এত আপনার প্রিয় পাওয়া সঙ্গীটিকে ছেড়ে যেতে কি ইচ্ছে হবে কারোর? জনগণ হয়ে উঠছেন নেটিজেন। ঘুরে আসে সেই পুরানো কথা–জীবন এক মায়াকানন…..