এরাও মানুষ
আমরা যদি পরিসংখ্যান লক্ষ্য করি এবং একটু অতীত বৃত্তান্ত ঘেটে দেখি তাহলে পতিতালয়ে একশ শতাংশ মেয়েদের মধ্যে সত্তর শতাংশ মেয়েদের সেখানে এসে পৌঁছানোর কারণ হয় তাদের বিশ্বস্ত বা তাদের পছন্দ করা ভালোবাসার কোনো পুরুষ! বাকি কুড়ি শতাংশ পারিবারিক অভাব বা তাদের দূর বা নিকট কোনো আত্মীয় তাদের অভাব অভিযোগ সংক্রান্ত কোনো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাদের কাজের লোভ দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এসে বেঁচে দেয় পতিতালয়ের কোনো অন্ধকার গলিতে! আর একটু যদি ভালো করে খেয়াল করা যায় তাহলে দেখা যায় দারিদ্রতার সাথে এঁটে উঠতে না পেরে অর্থের লোভে কিছু বাবা বা মায়েরা ও তাদের ঘরের মেয়েটাকে তুলে দেন এই চক্রের কোনো দালালের হাতে। হ্যাঁ অবশ্যই তেমন বাবা মায়ের সংখ্যা সংসারে খুব কমই মেলে কিন্তু একেবারে যে নেই সে কথা কিন্তু কোনো ভাবেই বলা চলে না এটি হলো বাকি দশ শতাংশের হিসেব।
এদের ভালোবাসার পুরুষ বা বিশ্বস্থ মানুষজন তাদের ভীষণ ভালোবেসে যে যন্ত্রণার জীবনটা তাদের উপহার দিলো সেই খোঁজ কিন্তু আমরা কেউ রাখি না। রাখার দরকার ও মনে করি না। কারণ আমাদের সভ্য সমাজে, ব্যাস্ত জীবনে তাদের মতো নীচু স্তরের মেয়েদের নিয়ে মাথা ঘামানোটাও বিরাট লজ্জার এবং কিছুক্ষেত্রে অপরাধের তো বটেই! কতো সহজে আমরা তাদের বেশ্যা, খানকি রেন্ডি আরো না জানি কি কি সুন্দর আর ভালো ভালো ভাষায় তাদের আমরা সম্বোধন করে থাকি। এই ভাষাগুলো একটা মেয়ে সম্পর্কে ব্যাবহার করার সময় আমাদের কিন্তু একবারও আমাদের শিক্ষায় রুচিতে আঘাত লাগে না। একবারও জানতে ইচ্ছে করে না, কেনো? কি কারণে তার জায়গাটা আজ কোনো পতিতালয়ের ওই এক কামরারার একটা অন্ধকার খুপড়ি ঘরটা? কেউ জানতে চাই না এর পিছনের সত্যিটা! কেউ জানতে চাই না তাদের যন্ত্রণার আকুতি।
আমরা বিশেষত কিছু সংখ্যক পুরুষেরা যারা মনে করে থাকেন বেশ্যা হওয়া কি আর এমন কঠিন কাজ? চাইলেই বুঝি হয়ে যাওয়া যায়। শুধু শরীর ঢেকে রাখা পোষাকটাকে শরীর থেকে সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা করে দেওয়া এ আর এমন কি কঠিন ব্যাপার? যে পুরুষেরা এদের নিয়ে কখনো পড়ার মোড়ে কখনো চায়ের দোকানে এদিকে ওদিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে তাদের সম্পর্কে খারাপ ভাষা খারাপ কথা বলতে একবারও পিছু পা হয় না। অথচ এদের মধ্যে অনেকেই আবার রাতের অন্ধকারে তাদের নিজেদের বিকৃত লালসার নিবৃত্তি ঘটাতে তাদের কাছেই ছুটে যায়। কি যায় না? যায় যায়। আমার, আপনার মতো ঘরেরই অনেক পুরুষের রাতের ঠিকানা ওই অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর ঘরটা।
কিন্তু আমরা তো জানি মেয়েরা মায়ের জাত। তারা কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো প্রেমিকা কারো বৌ আবার কারো মা। এদের লজ্জা বোধ কাজ করে এদের আত্মসন্মান থাকতে পারে তাহলে পতিতালয়ে সেই মেয়েগুলো কারো মেয়ে নয় ? মা নয়? বোন নয়? তারাও তো কারো বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে আজ এমন একটা জীবন উপহার পেলো সেই মেয়েটা বা মেয়েগুলো নারী শক্তির বিপরীতে কি ভাবে চলে গেলো? তাহলে ওই মেয়েগুলো সেই জাত থেকে বাদ কি ভাবে পড়ে গেলো? কি করে সহজ হতে পারে তাদের পক্ষে ও এমন লজ্জাস্কর আর অশ্লীল কাজ করা?
আসল কথা হলো কোনো মেয়েই তার সখে বা তার নিজের ইচ্ছেয় এমন পথ বেঁছে নেয় না। তারা কোনো না কোনো কারণে এই পরিস্থিতির শিকার হয় এবং মেনে নিতে বাধ্য হয় এমন একটা যন্ত্রণার জীবনকে, তাকে বাধ্য করা হয় এমন একটা জীবনের জন্য। এমনটা হতে বাধ্য করে তাদের ভীষণ বিশ্বাস আর ভালোবাসার মানুষগুলো।
মানুষের জীবনের মূল চারটি স্তম্ভ হলো ভালোবাসা, বিশ্বাস, আশা এবং স্বপ্ন। একটা সুস্থ জীবনের জন্য একটু ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য এর থেকে বড় মূলধন সত্যি কি আর কিছু হতে পারে?
এগুলো জীর্ণতার পথ বেয়ে তবেই জন্ম নেয় একটা বেশ্যা, পতিতা বা যা যা নামে তাদের সম্বোধন করা যেতে পারে। একজন মেয়েকে নোংরা অশ্লীল ভাষায় আঘাত করাটা যতোটা সহজ তাকে বুঝতে পারাটা ততোটাই বেশী কঠিন, জটিল। তাই কোনো মেয়েকে এই শব্দগুলো দিয়ে বিদ্ধ করার আগে একবার ভেবে দেখুন যে আপনি যার জঠরে পরম যত্নে লালিত হয়ে এই পৃথিবীর আলো দেখেছেন তার রূপ, রস, গন্ধ প্রাণ ভরে উপভোগ করছেন তিনি ও একজন মেয়ে।
মেয়েদের ভালবাসলে তাকে তার যোগ্য এবং প্রাপ্য সন্মান দিতে পারলে পুরুষের পৌরুষ কমে না বরং তা শতগুণে বেড়ে যায়। কারণ আপনি তাকে খারাপ ভাষায় বিদ্ধ করে তাকে কষ্ট দিতে পারছেন সে কথা সত্যি কিন্তু পরিচয় দিচ্ছেন নিজের পারিবারিক শিক্ষা এবং ব্যাক্তিগত রুচির। কারণ কোনো রুচি সম্পন্ন মানুষ বা পরিবার তার ঘরের বা অন্য যেকোনো মেয়েকে এমন কুৎসিত আর কদর্য ভাষায় আঘাত করে না করতে পারে না। পৌরুষ মেয়েদের অসন্মান করায় নয় তাকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়ায় লুকিয়ে থাকে।