বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ যথারীতি;
এ মাহ ভাদরে
ভরা এ শহরে
সারাদিনমান বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি একটানা আর আসমানে
মেঘের কুচকাওয়াজ, তেড়ে-আসা কসাক সওয়ার
যেন ঝোড়ো হাওয়া,
হাজিরা খাতায় সই করেননি সূর্যদেব আজ। এ ভবের
হাটে কাকে সত্য বলে মানি? গলিতে জোয়ার এলো,
ভিজে জাব ক্ষয়রুগী রিক্শা-অলা চড়া ভাড়া হাঁকে,
বস্তি ডোবেঁ অকাল বন্যায়, ব্যাঙ ডাকে মাঝে-মাঝে,
ভরা সাঁঝে শিশুর কান্নার রোলে মুখ-গোমরা আকাশ আরও
বেশি মুখ কালো করে।
টিপয়ে চায়ের কাপ, ধোঁয়া;
দিন কাটে ছায়া নিয়ে। বৃষ্টির ধোঁয়ায় আমি স্মৃতিভারাতুর
আর মধ্যবিত্ত মনে চুপিসারে হামাগুড়ি দেয় ছদ্মবেশী
বুর্জোয়া-বিলাস। একরোখা বৃষ্টি পড়ে
চতুর্দিকে, রবীন্দ্রনাথের গান অবিরাম হানা দেয় মনের কোটরে-
পাগল আমার মন জেগে ওঠে। টেলিফোনে শুনি
ক্লান্ত কণ্ঠস্বর
তোমার, রাত্রির দুঃস্বপ্নের ভাষা করে
ভর স্বরে, বললে, ‘ভুলে যেতে চাই, তবু
বৃষ্টির সুরের মতো স্মৃতি আমাকে রয়েছে ঘিরে
রাত্রিদিন। আসমান কয়লার খনি,
ময়লা গলিতে ভেজে উন্মাদিনী, বাতাস হাজার
নেকড়ের আর্তস্বর, সে মুহূর্তে নিজেকে কেমন
অবান্তর মনে হলো উৎসব রাত্রির ক্লিন্ন উচ্ছিষ্টের মতো।
তোমার গলায় বাজে অতীতের স্খলিত নূপুর, দুলে ওঠে
নিবু নিবু ঝাড়লণ্ঠনের শোভা। মনে মনে বলি,
হে মেয়ে কী খোঁজো তুমি পলায়নবিলাসী ছায়ার
সঙ্গে নিত্য সহবাসে? এ বৃষ্টির দিনে
রভসে গোঙাও কেন বিগত যুগের ভস্মরাশি বুকে নিয়ে?
বরং ক্যাসেট প্লেয়ারে আমির খাঁর মেঘ রাগে যাক
ভেসে যাক হৃদয়ের একূল-ওকূল।
টেলিফোন ভরা বর্ষাখচিত গলায়
শোনাল আমাকে,-
‘কেন তুমি শিরায় স্পর্শের
অস্থির উৎসব জ্বেলে দিতে চাও বারবার? কেন
আমাকে বসাতে চাও মদন মণ্ডপে? আমার তো
ভিন্ন অধিষ্ঠান।
তক্ষুণি আমার চোখে
এক জোড়া সুতীব্র সবুজ চোখ জ্বলে ওঠে আর
নাকে লাগে বৃষ্টির ছাঁটের সঙ্গে ভেসে আসা দূর
লাশকাটা ঘরের উৎকট গন্ধ, বিবমিষা জাগে!