এখন একটা শ্রাবণ চাই
পৃথিবীর বুকের ধূলি কণায় যে আবর্জনা মিশে গেছে তা ধুয়ে ফেলতে হবে ।
আমি তাঁকেও বলেছি আর তোমাকেও বলছি—
এখনও কেনও চুপ করে বসে থাকবে ?
ভাবছো বুঝি এই ভাবে বেঁচে যাবে তুমি অথবা আমরা ?
বিধ্বস্ত পৃথিবীর পথে পথে একবার হাঁটি চলো —
তোমাকে দেখাবো– নগ্ন পায়ে যারা পৃথিবী বানায়
তোমাকে দেখাবো— কোন জমি তে কত জল লাগে
তোমাকে দেখাবো পাট চাষির বেহাল জীবন
তোমাকে দেখাবো লকআউট কারখানার পাশে ভিক্ষারিদের ও যাওয়া আসা বন্ধ।
তুমি শুধু ভাতের মন্ত্র দিও ।
শ্রমিকের হাঁড়ির খবর রাখো কি ?
হয়তো বলবে — ” পন্থা আছে অনেক– ভাত খাবার ” তবে একটা দুটো আমাকেও বলতে পারো ।
আমি ওদের কানে কানে বলে আসবো সে মন্ত্র ।
তুমি হয়তো জানো না — সুভাষ মিস্ত্রির কচি ছেলেটা মালের গুদামে বস্তা টানতে গিয়ে চড়া রোদে প্রাণটা দিল —–
চাহিদা– দুটি ভাত — অভুক্ত বিধবা মা আর কচি বোনটার জন্য।
বলতে পারো ?– ঐ সংসারটা বাঁচে কি নিয়ে?!
তাই তো বলছিলাম — আমাকে শিখিয়ে দাও সেই ভাত পাওয়ার মন্ত্র টা ।
জানো—–
বৈষ্টমী এখন আর গান শোনাতে আসে না
ভৈরবী রাগে শুনতে পাই না সেই গান– “রাই জাগো রাই জাগো সুখ-সারি বলে , কত নিদ্রা যাও রাধে কালো মানিকের কোলে “
বৈষ্টমী বুঝি বুঝে গিয়েছে — খালি পেটে রাইয়ের ঘুম আসে না রাতে
সারা রাতটাই তার জাগরণের ।
দেয়ালের পোস্টারে কি যেন লেখাছিল!!?
” কলের চাকা ঘুরছে না ঘুরবে না “
“শ্রমিকের দাবি মানতে হবে”
হায় রে শ্রমিক!— তাকিয়ে দেখো , কারা যেন ঘষেমেজে তুলে দিয়েছে তোমাদের সে রক্তলেখন ।
এখন কলের চাকা ঘোরে মালিক পক্ষের ইশারায় ।
শুধু তুমি , তোমরা , আমরা বুঝলাম না ।
মেরুদণ্ড টা সোজা করে যতবার দাঁড়াতে যাই
কারা যেন ভেঙে দিয়ে যায়
খিদের পেটে ভিক্ষার হাত বাড়াই ।
মৃত্যু যেন আসবে নিশ্চয় , হয় না খেয়ে , নয় তো,,, না খেয়ে ( দুবার না খেয়ে কথা অর্থ বাহক )
শ্যামলা গায়ের কাজলা মেয়ে নদীর ঘাটে আসে বারংবার, যদি কোনো বাবুর দেখা মেলে!
তবে রাতে দুটি ভাত চড়বে হাঁড়িতে।
ছোটো ছ্যানাটার ঘ্যানঘ্যানানি সহ্য হয় না আর ।
মনে হয় গলা টিপে মেরে দেয় পেটের শত্তুর টাকে ।
বন্ধু— জানো নাকি একটু সম্মানের ভাত পাওয়ার মন্ত্র টা !?
হরেন কাকার একটিই ছেলে , সবের ধন নীলমণি
চটকল টা বন্ধ হয়ে গেল , বন্ধ হয়ে গেল লেখাপড়া , বন্ধ হয়ে গেল ভবিষ্যতের দরজা ।
হরেন কাকা বলছিল– “ইখানে কিছু হবেক লাই রে ব্যাটা” ,
ছেলেটা এখন শহুরে রাস্তার অলিতে গলিতে–
কিসের খোঁজে !? ভাত না কি কাজ ?
ও জেনে গেছে—–
স্বপ্ন– আশা — আকাঙ্ক্ষা ,,,, সবটাই এখন বড়লোকের ঝুলিতে ।