একুশে পা (Ekushey Paa) : 16
সে এইমাত্র জন্মাল…
‘লেক যে এত যাচ্ছেতাই খারাপ জায়গা আমার ধারণা ছিল না’, ক্ষুব্ধ মুখে বলল বিষ্ণুপ্রিয়া। তার মুখ রাগে লজ্জায় লালচে। তার পেছন পেছন তন্ময় বেরোচ্ছে। সে তার চশমার কাচ দুটো ভালো করে মুছছিল। বলল, ‘আমারও ধারণা ছিল না। কিন্তু অমি তোমাকে এখানে আসতে বারণ করেছিলাম। করিনি?’
‘বিষ্ণুপ্রিয়া বলল, ‘কিন্তু আমার যে এখনও অনেক জরুরি কথা বলতে বাকি রয়ে গেল তন্ময়। কথা বলতে গেলেই যদি পয়সা খরচ করতে হয়…’
পাশ দিয়ে দুটি ওদেরই বয়সী ছেলেমেয়ে খুব হাত পা নেড়ে কথা বলতে বলতে চলে গেল। সেদিকে ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া বলল, ‘ওই তো ওরাও তো যাচ্ছে, ওদের তো কেউ বিরক্ত করছে না।’
তন্ময় চিন্তিত মুখে বলল, ‘আসলে এটা ওদের পাড়া। নিজস্ব এলাকা। চলো আমরা বরং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ কফি হাউজে যাই।’
‘আমি কখনও যাইনি। যদি কোনও চেনা লোক…?’ বিষ্ণুপ্রিয়ার স্বরে প্রচুর দ্বিধা।
‘চলোই না। চেনা লোক থাকলে এত ভয়ের কী আছে?’ তন্ময় সাহস করে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করালো।
বিষ্ণুপ্রিয়া এবার খুশি মনে ট্যাক্সিতে উঠল। তন্ময়ের মধ্যে কোন ব্যাপারে কোন উদ্যম দেখতে পেলে সে খুশি হয়। মনটা হালকা লাগে। সে একটা হাত তন্ময়ের হাতের ওপর রাখল। এ ব্যাপারেও সে তন্ময়কে আগুয়ান দেখলে খুশি হত। কিন্তু তন্ময় এতো দেরি করলে সে আর কী করতে পারে! সে বলল, ‘তন্ময়, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন।’
তন্ময় চমকে বলল, ‘সে কি? এত তাড়াতাড়ি? কেন?’ বিষ্ণুপ্রিয়া এখন তার হাত সরিয়ে নিয়েছে। তন্ময় পাশ ফিরে তার দিকে তাকিয়ে। ভীষণ বিস্ময় তার চোখে। আঘাত আছে কী? আঘাত?
‘বাবা নিশ্চয় কিছুর গন্ধ পেয়েছে। আমরা কত জায়গায় যাই, কেউ হয়ত দেখেছে, কিছু বলেছে।’
‘কোথায় আর যাই আমরা?’ তন্ময় অবাক হয়ে বলল, ‘কলেজ ক্যান্টিন, কফি হাউজ ছাড়া ন্যাশন্যাল লাইব্রেরিতে একটু, লেকে তো আজ প্রথম এসেই…’
‘ওই হল। ওরই মধ্যে কেউ হয়ত দেখে থাকবে, নয়ত বাবা অত তাড়া করবে কেন? কায়দা করে আমাকে দেখানো হয়ে গেছে। প্রথম ইনস্টলমেন্টে পাত্রের ভাই, দিদি আর মা। পাশ করেছি। পাত্র আসবেন ফিলাডেলফিয়া থেকে তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়ে, ফেব্রুয়ারিতে, তখনই হবে ব্যাপারটা।’
‘এপ্রিলে পরীক্ষা, ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে?’
‘সেটাই তোমার আগে মনে হল?’ বিষ্ণুপ্রিয়ার গলা বুজে আসছে।
তন্ময় শুকনো মুখে বলল, ‘সেটাই তো সবচেয়ে জরুরি, নয়?’
বিষ্ণুপ্রিয়ার গলা ধরে গেছে। সে বলল, ‘এর আগে অনেক কাটিয়ে দিয়েছি। সেগুলোর কথা তো জানো না! তোমাকে বলিনি সব। মাঝে মাঝে হিন্ট দিয়েছি, কিন্তু তুমি বুঝতেই চাও না!’
তন্ময় একটু পরে বলল, ‘বুঝেই বা সত্যি-সত্যি আমি কী করতে পারি। প্রিয়া?’
‘কিচ্ছু পার না?’
‘কী পারি, তুমিই বলো! তোমাকে তো আমাদের বাড়ি নিয়ে গেছি, দেখেছ আমার মা বাবা কি রকম লিবার্যাল। আমাদের বন্ধুত্ব? কোনও ব্যাপারই না! কিন্তু তুমি এক দিনও পেরেছ আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে? এই সামান্য ব্যাপারেই যখন এত বাধা, তখন আমি কী করব বলো? গ্র্যাজুয়েটটা পর্যন্ত তো হইনি এখনও। একটু সময় তো আমাকে দেওয়া দরকার!’
‘সময় দিতে পারলে তো ভালোই হত। আমিও তো তাই-ই চেয়েছিলাম। কিন্তু এটা একটা এমার্জেন্সি তন্ময়। এমার্জেন্সির সময়ে এমার্জেন্সির উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হয়।’ বিষ্ণুপ্রিয়া বলল।
‘কী ব্যবস্থা তুমি বলো? এক, তুমি তোমার মনের কথা মা-বাবাকে পরিষ্কার করে খুলে বলতে পার। নিজেকে অ্যাসার্ট করতে পার।’
‘বাঃ। যা করবার আমিই করব? তোমার কিচ্ছু করার নেই?’
‘এই মুহূর্তে আমি ঠিক কী অধিকারে তোমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াব বলো! কী আমার স্ট্যাটাস! একটা আন্ডারগ্রাজুয়েট ছেলে যে এখনও পর্যন্ত জানেই না সে কী করবে, বা তার কী সম্ভাবনা আছে ভবিষ্যতে।’
বিষ্ণুপ্রিয়া হতাশ গলায় বলল, ‘তোমার কোনও উদ্যম নেই তন্ময়, রোখ নেই কোনও। কেমন গা-ছাড়া। ডিফিটিস্ট। আমি যদি বলতে না পারি, তাহলে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। তখন তোমার মনের অবস্থাটা কী হবে আমি জানতে চাই।’
‘আমার মনের অবস্থা যা-ই হোক প্রিয়া, আমি সেটা প্রাণপণে ওভারকাম করার চেষ্টা করব।’
‘অর্থাৎ তুমি মেনেই নিয়েছ, আগে থেকেই জানতে আমাদের ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কোথাও পৌঁছবে না।’ বিষ্ণুপ্রিয়া যেন ক্রমশই তন্ময়কে কোণঠাসা করে ফেলছে। তন্ময়ও ততই হৃদয়াবেগ ইত্যাদির ধারে কাছেও না গিয়ে যুক্তির আশ্রয় নিচ্ছে।
‘দেখো, আমরা তো কোনও প্ল্যান করে মেলামেশা করতে শুরু করিনি।’
এই কথা শুনে বিষ্ণুপ্রিয়া ভীষণ রেগে গেল। বসে বলল, ‘তা তো তুমি বলবেই। প্ল্যান। প্ল্যান করে আবার কে কী করে? তোমরা ছেলেরা এরকমই। ফুলে ফুলে বিচরণ করবে, দায়িত্ব নিতে বললেই কেটে পড়বে। ছিঃ। ট্যাকসি থামাতে বল, আমি নেমে যাচ্ছি।’
‘শোনো’, তন্ময় বলল, ‘তুমি ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গেছ প্রিয়া। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করো আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবে।’
‘পেরেছি। তুমি খুব অসহায়, তৈরি হওনি এখনও, মা-বাবার আঁচল-চাপা কচি ছেলে। এই যে শুনছেন, এসপ্ল্যানেডের মোড়ে আমায় একটু নামিয়ে দেবেন তো!’
তন্ময় হাসবার চেষ্টা করে বলল, ‘কী বলছ যা-তা? বাবার আবার আঁচল হয় না কি? চলো কফি হাউজে চলো, একটা কিছু ভেবে ঠিক করা যাবে। আজে-বাজে জায়গায় নেমো না।’
কফির কাপে উত্তেজিতভাবে চুমুক দিচ্ছে বিষ্ণুপ্রিয়া। তন্ময় বলল, ‘এই কফি হাউজ সত্যজিৎ রায়, কমলকুমার মজুমদার—এঁদের আড্ডার জন্যে বিখ্যাত, জানো তো!’
বিষ্ণুপ্রিয়া সোজা তার চোখের দিকে চেয়ে বলল, ‘শুধু শুধু এতদিন আমায় কেন ঘোরালে?’
তন্ময় বলল, ‘শোনো প্রিয়া, একটু সাহস খরচ করো। ব্যাপারটা অন্তত তিন বছরের জন্যে ঠেকাও। বাকিটুকু আমি করবো, কথা দিচ্ছি।’
‘ছারপোকার গাল টিপে মুখ হাঁ করিয়ে দোব, তবে তুমি ওষুধ দিয়ে মারবে?’ বিষ্ণুপ্রিয়া তীব্র শ্লেষের সঙ্গে বলল।
‘তুমি যদি এভাবে ঝগড়া করে যাও, আমি কী করতে পারি?’ তন্ময়েরও এখন একটু-একটু রাগ এসে যাচ্ছে।
‘তোরা এখানে?’ ওরা মুখ তুলে দেখল ঋতু আর মিঠু। সঙ্গে একজন পাজামা-পঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক। তন্ময় তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারলো। বিখ্যাত শিল্পী-নাট্যকার পার্থপ্রতিম। সে উঠে দাঁড়িয়ে সসম্ভ্রমে বলল, ‘বসুন!’
প্রশ্নটা করেছিল মিঠু। উত্তর দিল ঋতু। সে কেমন এক রকম মুখভঙ্গি করে বলল, ‘আহা, তুই আসতে পারিস, আমি আসতে পারি, আর ওরা পারে না! কী বল প্রিয়া!’ সে টানতে টানতে মিঠুকে অন্য টেবিলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করল।
তন্ময় বলল, ‘আলাপ করিয়ে দিবি না মিঠু!’
মিঠু বলল, ‘নিশ্চয়ই! কাকু এ আমার ক্লাস ফেলো তন্ময় হালদার। খুব ব্রিলিয়ান্ট। ভালো আবৃত্তি করে। আর ও হল বিষ্ণুপ্রিয়া চক্রবর্তী। ও-ও আমাদের বন্ধু। স্কুল থেকে। আর ইনি হলেন—’
তন্ময় সামান্য হেসে বলল, ‘ওঁকে চিনি। কে না চেনে?’
‘চেনো? তবে এখানেই বসা যাক, ঋতু এদিকে এসো’, পার্থপ্রতিম বসে পড়ে বললেন।
বিষ্ণুপ্রিয়া তার ব্যাগ সমেত উঠে পড়ে বলল, ‘আমার খুব দেরি হয়ে যাবে, আমি যাই।’
মিঠু বলল, ‘সে কি? কাকুর সঙ্গে একটু আলাপ করে যা।’
‘আমার খুব দেরি হয়ে যাবে,’ বিষ্ণুপ্রিয়া একই কথা দুবার বলল, তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে চলে গেল।
পার্থপ্রতিম তন্ময়ের দিকে ফিরে বললেন ‘আমরা বোধ হয় তোমাদের ডিসটার্ব করলুম।’
‘না, না, মোটেই না।’ তন্ময় খুব অপ্রতিভভাবে হাসল।
‘ওই মেয়েটি কিন্তু খুব ডিসটার্বড হয়েছে। তোমার উচিত হবে তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে ধরে ফেলা।’
তন্ময় কী করবে ঠিক করতে পারছিল না। সে পার্থপ্রতিমের ভীষণ ভক্ত। এমন সুযোগ! ওদিকে আবার বিষ্ণুপ্রিয়া ভীষণ রেগে আছে। পার্থপ্রতিম বললেন, ‘আমার সঙ্গে আবার দেখা হবে। তুমি মেয়েটিকে গিয়ে ধরো। কুইক!’
তন্ময় তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে তাড়াতাড়ি পায়ে হেঁটে এসে দেখল বিষ্ণুপ্রিয়া গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছে। তন্ময়কে দেখেই সে ট্রাম গুমটির দিকে হাঁটতে লাগল। যত জোরে সম্ভব। ট্রাম নিল ওরা। নীরবে কেটে গেল সমস্ত রাস্তা। যদিও পাশাপাশি বসা যেত, তবুও বিষ্ণুপ্রিয়া লেডিজ সিটেই গিয়ে বসল, তন্ময় বাঁ দিকের প্রথম সিটটায়, জানলার ধারে। নিজের স্টপ আসতে বিষ্ণুপ্রিয়া হুড়মুড় করে নেমে গেল, তন্ময় লাফিয়ে, লোক টপকে নেমেও তাকে ধরতে পারল না। সে অগত্যা বাড়ির বাস ধরল।
বাড়ি ফিরে তন্ময় খুব গম্ভীর মুখে তার বই-পত্তর টেনে নিয়ে বসল। বেশ কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারল সে এক বর্ণও পড়ছে না। স্রেফ তাকিয়ে আছে অক্ষরগুলোর দিকে। তার চোখের সামনে বিষ্ণুপ্রিয়ার অভিমানী, বিষণ্ণ, কখনও ক্রুদ্ধ মুখ। তন্ময় বইপত্র গুটিয়ে রেখে দিল। দরজা খুলে বেরোচ্ছে, মা বলল, ‘এই তো এলি! আবার কোথায় বেরচ্ছিস!’
‘একটু রাস্তা থেকে ঘুরে আসছি।’
রাস্তায় বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে একটা পার্কে গিয়ে বসল। কেউ নেই কোথাও। ঠাণ্ডা জলো হাওয়া দিচ্ছে। একটা পাতলা সুতির শার্ট তার গায়ে। ক্রমশই হঠাৎ বাদলের ঠাণ্ডা সেটাকে ভেদ করতে লাগল। সে এখন কী করবে? বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে তার ভাবটা তালে গোলে হয়ে গেছে ঠিকই। দুজনের এক বিষয়ে অনার্স। একই দিকে থাকে। অনেকটা পথ এক সঙ্গে আসতে হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ আছে কি, যে তাদের বন্ধুত্বটা যথেষ্ট নিবিড় পর্যায়ে পৌঁছেছিল! তন্ময় ঠিক রায় দিতে পারছে না। সে এ বিষয়ে আলাদা করে কিছু ভাবেনি। বিষ্ণুপ্রিয়া যেন চিরকাল এমনি ভাবে তার পাশে পাশে হেঁটে যাবে। খুব স্বস্তির ব্যাপারটা। বিষ্ণুপ্রিয়া কতবার তার বাড়িতে এসেছে। অন্য ছেলেবন্ধুরাও এসেছে কেউ কেউ। কিন্তু বিষ্ণুপ্রিয়ার মতো কেউ নয়। তার বাড়িতেও এ নিয়ে কেউ আলাদা করে ভাবে না। ভাবেনি কখনও। তার সঙ্গে কোনও মেয়ের খুব অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব হলেই যে বিয়ের কথা ভাবতে হবে, এমন চিন্তায় সে বা তার বাড়ি অভ্যস্ত নয় মোটেই। বিষ্ণুপ্রিয়া যদি ইদানীং কোনও কোনও ইঙ্গিত না দিত, সে একথা ভাবত না। আবার তার মানেই এ নয় যে, অদূর ভবিষ্যতে সে পড়াশোনা শেষ করে উপার্জন করতে আরম্ভ করলে বিষ্ণুপ্রিয়াকে বিয়ে করত না। তন্ময় কো-এডুকেশন স্কুলে পড়েছে। ক্লাস ফাইভ-সিক্স থেকেই সেখানে ছেলেরা খুব মেয়ে-সচেতন হয়ে উঠত। ছোটখাটো বাল্য প্রেম, রোম্যান্স যে হত না তা নয়। কিন্তু বেশির ভাগই বন্ধুত্ব। বিষ্ণুপ্রিয়া যে কেন এত তাড়াতাড়ি এসব কথা ভাবতে গেল? অবশ্য ওর খুব একটা দোষ নেই। বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। চাপের মুখে পড়ে তারা দুজনেই বুঝতে পেরেছে তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে অন্য মাত্রা আছে। প্রিয়া আগেই বুঝেছে, তন্ময় আজ ভালো করে বুঝতে পারল। কিন্তু, পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করব না—এটুকু জেদ ধরতে কী অসুবিধে প্রিয়ার? তার পক্ষে, এখন, এই অবস্থায় প্রিয়ার বাবার কাছে পাণিপ্রার্থনা করতে যাওয়াটা খুব হাস্যকর হবে না? যতই ভাবে, ততই তন্ময়ের ঠাণ্ডা মাথা গরম হয়ে যেতে থাকে। মেয়েটা রেগে গেল। তার চেয়েও বড় কথা দুঃখ পেল। তন্ময় নিজের ওপর, নিজের অল্প বয়সের ওপর, প্রিয়ার বাবার ওপর রেগে গেল এবার। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। বেশ রেগে বাড়ি ফিরলে সে। ফিরে দেখল, বাবা, মা, বোন সবাই খেতে বসেছে। বোন চেঁচিয়ে বলল, ‘দাদা আয়, খেতে দিচ্ছি।’ সে কলঘরে ঢুকে যেতে যেতে বলল, ‘আমি খাব না।’
হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে দেখে বাবা সিগারেট ধরিয়ে পায়চারি করছে। বাবার চোখে মোটা কালো শেল-ফ্রেমের চশমা। পেছনে চোখ দুটোয় উৎকণ্ঠা।
‘কী রে বুবুল, খাবি না কেন? শরীর খারাপ?’
‘হ্যাঁ।’
‘কী হল?’
‘বড্ড বেশি পড়ছিস। তার ওপরে খানিকটা ভিজে এলি। না খেলে দুর্বল হয়ে যাবি, যা হোক একটু খেয়ে নে।’
একবার আড়চোখে চেয়ে দেখল তন্ময় মা টেবিলে ফাইল খুলে বসেছে। কেমন রাগ বেড়ে গেল তার। বাবা নাছোড়বান্দা। বেশি কচলাকচলি করতে ভালো লাগল না। সে চুপচাপ টেবিলে গিয়ে খাবারগুলো উল্টে-পাল্টে দেখল। বোন চেঁচিয়ে বলল, ‘দাদা খেয়ে টেবিলটা পরিষ্কার করে দিস। আমি শুয়ে পড়ছি।’ বাবা বলল, ‘তুই খা, আমি পরিষ্কার করে দেব।’
দু-একখানা রুটি, দু-এক টুকরো মাংস নিয়ে নাড়াচাড়া করে উঠে পড়ল তন্ময়। আবার পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল। কখন মন লেগে গেছে, কখন হাতে পেনসিল তুলে নিয়ে দাগ দিতে শুরু করেছে, সে নিজেই বুঝতে পারেনি। চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেছে, সে খসখস করে লিখতে শুরু করেছে। তার মা পাশের ঘরে জরুরি কাগজপত্র দেখতে দেখতে, বারোটা বাজল দেখে ফাইল বন্ধ করলেন। যথেষ্ট হয়েছে, এর চেয়ে বেশি নয়। তিনি উঠে পাশের ঘরে উঁকি মেরে দেখলেন টেবল-ল্যাম্প জ্বলছে। আস্তে আস্তে পেছনে এসে দাঁড়ালেন ছেলের। বুবুল বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে লিখে যাচ্ছে। তিনি শব্দ না করে সরে এলেন। মাথা ধরেছিল ছেলেটার, ভালো করে খেলো না—মেজাজটা একটু খারাপ সম্ভবত, যা ওর চট করে হয় না। তিনি খেয়াল করেছেন, কিন্তু সেটা জানতে দেননি। ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে সব সময়ে নাক গলানোর তিনি পক্ষপাতী নন। ওরা একটু স্বাধীন চিন্তা করতে শিখুক। নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান নিজেরা করুক। অন্তত চেষ্টা তো করুক। এই অখণ্ড মনোযোগ—এটাই বুবুলের প্রতিভা। অনেক রাত হল, শুয়ে পড়াই উচিত। কিন্তু ও যখন পড়ছে, তিনি ওকে পড়তেই দেবেন। আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়লেন তিনি। তন্ময় পড়তে লাগল।
কিন্তু, বিষ্ণুপ্রিয়ার অভিজ্ঞতা হল বড় অদ্ভুত। সে যখন বাড়ি ঢুকছিল মনে হচ্ছিল একটা অন্ধকার অজানা গুহার মধ্যে সে ঢুকে যাচ্ছে, তার কেউ কোথাও নেই। বাবা-মা এবং অন্যান্য নিকট আত্মীয় যাঁরা বাড়িতেই থাকেন তাঁরা তার জীবনে অবান্তর। একমাত্র সত্য ছিল তন্ময়। তন্ময় আজকে যা করল তাকে বলে উদাসীনতা, তাকে বলে প্রত্যাখ্যান। সে-ও কি পরিকল্পনা করে তন্ময়ের সঙ্গে মিশেছিল? মোটেও না। কিন্তু প্রথম দেখাতেই চশমা-পরা সিরিয়াস-চেহারার পাতলা ছেলেটিকে তার ভালো লেগেছিল। অনার্স-ক্লাসে সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর, চিন্তাশীলতার প্রমাণ, তার মধ্যে ওর প্রতি একটা সম্ভ্রমের সৃষ্টি করেছিল। মাঝে-মাঝেই ক্লাসের পর সে তন্ময়ের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিত। এইভাবে কলেজের মাঠে, ভিক্টোরিয়ার কোনও হঠাৎ-ক্লাস-না-হওয়া দিনে, কফি হাউজে তাদের আলাপ ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। তন্ময়ের লেখাপড়া ছাড়াও অন্য বিষয়ে আগ্রহ। তার আবৃত্তি, সাহিত্য-শিল্প-নাটক নিয়ে কৌতূহল, তার বাড়ির খোলামেলা আবহাওয়া সব মিলিয়ে তন্ময়কে তার খুব ভালো লাগত। বন্ধুরা যে তাদের ঘনিষ্ঠতাটাকে অন্য চোখে দেখছে এটা বুঝে সে প্রথম থেকেই সচেতন ছিল তাদের বন্ধুত্বটা ভালোবাসায় পৌঁছতে পারে। বাড়ি থেকে ক্রমাগত বিয়ের তাগাদায় অস্থির হতে হতে সে অনুভব করে তন্ময়কে ছেড়ে থাকা অসম্ভব। এবং এটা সত্যিই ভালোবাসা। কিন্তু আজ তন্ময় যা করল তা থেকে বোঝা গেল তন্ময় জানে যে বিষ্ণুপ্রিয়া তাকে ভালোবাসে এবং তার কাছ থেকে একই অনুভূতি প্রত্যাশা করছে, তা সত্ত্বেও সে উদাসীন হয়ে রইল। বিষ্ণুপ্রিয়ার ভেতরটা অপমানে, দুঃখে জ্বলে খাক হয়ে যাচ্ছে। বৈঠকখানার পাশ দিয়ে যেতে যেতে সে অনেক গলার আওয়াজ পেলো। খুব আলো জ্বলছে ঘরে। যেন অনেকদিন পর খুব আড্ডা হচ্ছে।
ভেতর থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো, ‘বুড়ি ফিরলি? এ ঘরে শোন একবার।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বৈঠকখানায় ঢুকে বিষ্ণুপ্রিয়ার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। বাবা, মা, কাকা, জ্যাঠা, কাকিমা, দুই দাদা, বউদিরা—এলাহি ব্যাপার। দুজন অভ্যাগত এসেছেন। রিমলেস চমশা পরা মধ্যবয়স্ক এক মহিলা হাসিতে মুখ ভরিয়ে খুব দরাজ গলায় বললেন, ‘বুড়ি চিনতে পারছিস?’
মা ইশারায় বলল প্রণাম করতে। বিষ্ণুপ্রিয়া অনেকের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করল। ভদ্রমহিলার উজ্জ্বল হাসি সংক্রামক। সে হাসিমুখে বলল, ‘চেনা যায় না, তবু চিনতে পেরেছি, মৈত্রেয়ীদি না?’
হাসিতে ফেটে পড়ে মৈত্রেয়ীদি বললেন, ‘অ্যাই একদম নাম ধরবি না এখন, দিদিও বলবি না, কেলেঙ্কারি কাণ্ড হবে তাহলে।’ সবাই কেন কে জানে অট্টহাস্য হাসছে। মৈত্রেয়ীদি পাশে ছাই-ছাই রঙের শার্ট আর কালো ট্রাইজার্স পরা এক যুবক। বলল, ‘বুড়ি, চিনতে পারছ?’
‘তুই ওর পাশে গিয়ে বোস।’ মৈত্রেয়ীদি পথ করে দিলেন। দিয়ে গল্পে মেতে গেলেন।
‘তনু!’ দ্বিধা মিশ্রিত স্বরে বিষ্ণুপ্রিয়া বলল। মৈত্রেয়ীদি তার পিসতুত দিদি নীপার বড় ননদ। নীপাদির বিয়েই হয়েছে অন্তত বছর বারো। তনু প্রথম এসেছিল নিতবর হয়ে। দিদির এ বাড়ি থেকেই বিয়ে হয়েছিল, বিয়ে, অষ্টমঙ্গলা সব। যতবার দিদি আসত, তনুও ততবার আসত। তার সঙ্গে খুব জমে গিয়েছিল। এই সেই তনু? সেই প্যাংলা, দুষ্টু, টপাটপ রসোগোল্লা আর ট্যাংরা মাছ খাওয়া তনু? ছাতের চিলে-কোঠা থেকে ইঁদুর খুঁজে এনে যে তার নাকের সামনে দুলিয়ে ভয় দেখাত? কী তিলে বিচ্ছু ছিল? এখন ভোল পাল্টে ভদ্র সভ্য মার্জিত। চকচকে চোখ, স্মিত মুখ?
‘চিনতে পারোনি প্রথমে, না? আমি কিন্তু পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে তোমাকে দেখলে চিনে ফেলতুম।’ তনু তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বিষ্ণুপ্রিয়া দেখল সে ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। যতবার তাকাচ্ছে ওর দৃষ্টি তার অন্তর ভেদ করে গভীর একটা চোরা আলোর মতো তার চোখের ভেতর দিয়ে হৃদয়ের ভেতরে নেমে যাচ্ছে। এ কী রকম চাউনি? যেন আর কোত্থাও কেউ নেই জগতে। শুধু ও আছে আর বিষ্ণুপ্রিয়া আছে! দৃষ্টি দিয়ে ও যেন এসে তার হাত দুটো ধরেছে। কোথা থেকে ও এমন চাউনি পেলো?
‘কী মামিমা, রাজি তো? আপনার মেয়ে রাজি তো? বাব্বাঃ এতগুলো বছর নাকি ওর প্রতীক্ষাতেই ছিল। শবরীর প্রতীক্ষা! ওমা, এ তো আবার শবর, বলুন!’ নিজেই বলছেন, নিজেই এক গঙ্গা হেসে যাচ্ছেন নীপাদির ননদ, ‘এই বুড়ি, বলে দে তো তোর পছন্দ হচ্ছে না, বল তুই এনগেজড, দেখ না মজাটা!’
মৈত্রেয়ীদির কথাবার্তা শুনে বিষ্ণুপ্রিয়ার বাড়ির দারুণ রক্ষণশীল মেজাজের জ্যাঠা, কাকা, বাবা, দাদারা প্রাণখুলে হাসছে। কিমাশ্চর্যমতঃপরম!
‘কী রে রাজি তো!’ মৈত্রেয়ীদি বলছেন এবার। তনুর চাপা গলা শোনা গেল,
‘আঃ মা, এরকম প্রেশার দিলে কিছু বলা যায় না কি?’
মা হঠাৎ বলল, ‘তনু, তোমার মনে আছে আমাদের বাড়িটা? কত আসতে। সমানে একতলা-দোতলা ছোটাছুটি করতে। এখন এক্সটেনশন হয়েছে কিছুটা। বুড়ি ওকে দেখা না গিয়ে!’
তনু বিষ্ণুপ্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আসতে পারি?’
আপনি কি তুমি বলবে বিষ্ণুপ্রিয়া বুঝতে পারছে না। সে উঠে দাঁড়াল। মৈত্রেয়ীদি চোখ টিপছেন ছেলেকে। ছেলে মাকে পার হতে হতে খুব মৃদু গলায় ধমক দিল, ‘আঃ, মা!’
তিনতলায় এখন আধখানা ছাত। বাকি আর্ধেকটায় একটা বাথরুম, তিনটে বড় বড় ঘর, তিন দাদার। সেগুলো দেখালো বিষ্ণুপ্রিয়া। ছাতে এসে দাঁড়াল, শীত করছে, জলো হাওয়া দিচ্ছে। তার গায়ে শাড়ির হালকা আঁচল হাওয়ায় উড়ছে। বিষ্ণুপ্রিয়া সেটা জড়িয়ে নিল। তনু বলল, ‘বুড়ি তুমি রাজি হবে না, এ আমি ভাবতেও পারছি না। তবু তোমার কিছু বলবার থাকলে বলো!’
বিষ্ণুপ্রিয়া চুপ করে আছে। সে বেরিয়েছে শেষ দুপুরে। রাত্তির সাতটা পর্যন্ত অশান্ত-অস্থির ঘোরাঘুরি করে দারুণ মানসিক বিপর্যয় বয়ে বাড়ি এসেছে। তার মুখ শুকনো, করুণ। সেদিকে তাকিয়ে পরম মমতার সঙ্গে তনু বলল, ‘পরীক্ষার জন্য খুব খাটছ, না? আমি আবার এর মধ্যে এসে উৎপাত করছি। বুড়ি, তবু আমাকে করতেই হবে এটা। শোনো, আমি গিলানি গ্রুপ্স-এ আছি। ওরা শিগগিরই স্টেট্স-এ পাঠাবে। এই রকমই কনট্র্যাক্ট। তুমি যদি রাজি থাকো দু-চারদিনের মধ্যেই রেজিস্ট্রি করে নেব।’
বিষ্ণুপ্রিয়া শিউরে উঠল। তনু চোখে উদ্বেগ নিয়ে বলল, ‘কী হল?’
‘এতো তাড়ার কী?’
‘তোমার ভিসার জন্যে। যত তাড়াতাড়ি রেজিস্ট্রি হয়। ততই ভালো। তোমার আপত্তি থাকলে হবে না বুড়ি,’ তারপর একটু থেমে আস্তে বলল, ‘আমাকে তোমার মনে নেই। না?’
বিষ্ণুপ্রিয়া কিছুই বলতে পারল না।
তনু ধীরে ধীরে বলল, ‘সত্যিই তুমি কী করে মনে রাখবে? সাত-আট বছরের খুকি ছিলে বোধ হয় তখন!’ বলল বটে, কিন্তু তনুর গলায় হতাশা, সে বলল, ‘আমার এখন তোমার সেই বাচ্চা চেহারাটা মনে আছে। ভয়ে মুখ সিঁটকে’ প্রায় মূর্ছা গিয়েছিলে ইঁদুরটা দেখে … তনু হাসতে লাগল।
বিষ্ণুপ্রিয়া আস্তে, খুব আস্তে বলল, ‘এ রকম হয়?’
তনু তার দিকে আবার সেই আলোর মতো দৃষ্টি ফেলে বলল, ‘হয়েছে তো দেখা যাচ্ছে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। বুঝতে পারছি তোমার হয়নি। বুড়ি, তুমি কি রাজি হবে না?’ শেষ কথাগুলো বলার সময়ে তনুর মুখটা কী রকম যেন হয়ে যাচ্ছিল।
বিষ্ণুপ্রিয়া হঠাৎ যেন একটা উঁচু বেদীর ওপর উঠে দাঁড়িয়েছে। তার সামনে প্রার্থী। কী সুন্দর এই প্রার্থনা!
‘তোমায় একটু ভাবতে সময় দিতে হবে, না? ঠিক আছে, তুমি জানিও। আমি অপেক্ষা করব।’
বিষ্ণুপ্রিয়া বুঝতে পারল তনুর ভেতরটা বিষণ্ণ হয়ে যাচ্ছে। তার জন্য। এই বিষণ্ণতাও কী সুন্দর! মানিকতলার পুরনো পাড়ার ঘেঁষাঘেঁষি বাড়িগুলোর দোতলার ছাত সব নিচে। বাদলের প্রত্যাশায় কেমন চুপচাপ, অথচ উন্মুখ হয়ে রয়েছে। দূরে দূরে গাছেদের মাথা। গাছগুলো একটু একটু দুলছে। এ দোলা দুলতে যেন ভারি আরাম, ভারি আনন্দ! বিষ্ণুপ্রিয়া বাড়িগুলোর ছাতের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। তনু প্রথমে অনেক কথা দিয়ে আরম্ভ করেছিল। এখন সে চুপচাপ। হঠাৎই যেন কথা অকিঞ্চিৎকর মনে হচ্ছে। কথা বড় দীন, অক্ষম মনে হচ্ছে। তাই বিষ্ণুপ্রিয়া আর তনুর মাঝখানে বহু শব্দগর্ভ নীরবতা।
মৈত্রেয়ীদির গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ওপরে উঠে আসছেন।
‘এই তনু, তোরা আর কতক্ষণ প্রেম করবি? কী ভেবেছিস বল তো!’
তনু বলল, ‘ওফ মা-টা যা চ্যাংড়া হয়েছে না, পেরে উঠছি না। বুড়ি, তুমি কিছু মনে করো না।’
বিষ্ণুপ্রিয়া খুব মৃদু স্বরে বলল—‘আমি রাজি।’
‘কী বললে?’ তনু ঝুঁকে পড়েছে। জলভরা একটা দমকা হাওয়া ছাতে পৌঁছচ্ছে। পুবে হাওয়া। বিষ্ণুপ্রিয়ার খুব শীত করছে। তার যেন কোনও অতীত নেই। সে এইমাত্র জন্মাল। জন্মেছে একেবারে সৃষ্টিকর্তার নাভিকুণ্ড থেকে। তার মা নেই, বাবা নেই। ব্ৰহ্মকমলের ওপর তার অধিষ্ঠান। একেবারে তরুণী, সর্বালংকার ভূষিতা, দুকূলবসনা এক তরুণী। তাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে দুঃখ সুখ। তার একটি কথার ওপরে নির্ভর করছে কত জনের আনন্দ।
সে আবারও আর একটু স্পষ্ট করে বলল, ‘আমি রাজি।’
অমনি চারদিকে বহু মানুষের আনন্দের কলনাদ শ্রুত হল। শঙ্খ ঘণ্টা বেজে উঠল, ধূপ ধুনো গুগগুলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে লাগল চারিদিক। ঝাপটার পর ঝাপটা পুবে হাওয়ায় সেই ধূপ-ধুনোর সুঘ্রাণ নিতে নিতে তন্ময় হয়ে গেল বিষ্ণুপ্রিয়া। বৃষ্টি নামল।