Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একুশে পা || Bani Basu » Page 15

একুশে পা || Bani Basu

‘একটু চলো না প্লিজ…’

পার্ট ওয়ান শেষ হতে না-হতে ঋতু সুটকেস গুছিয়ে তৈরি। দাঁতে নখ কাটতে কাটতে বলল, ‘মিঠুকে ফোন করে দিয়েছি, কদিন মিঠুর বাড়ি থাকব।’

‘সে কিরে?’ অজিত দাশ অবাক হয়ে ঋতুর মুখের দিকে চাইলেন।

‘আমার বোর লাগছে। এক ঘেঁয়ে একই জায়গা।’

সোমা কদিন ছিল বলল, ‘মা, তুমি তো জানো ও আমাকে সহ্য করতে পারে না। কেন শুধু-শুধু জোর করে আমায় রাখছ!’

‘ওর পছন্দ হচ্ছে না বলে তোকে আমি ছেড়ে দিতে পারি? তুইও আমার মেয়ে। তোরও এ বাড়িতে সমান অধিকার! ছি ছি, অ্যাত্তো অসভ্য!’

অজিত বললেন, ‘আহা আগে থেকেই অসভ্য-অসভ্য করছ কেন? ছেলেমানুষ, ইচ্ছে হয়েছে বন্ধুর বাড়ি ঘুরে আসতে গেছে। একটু ছুটিও তো দরকার।’

ক’দ্দিন ছেলেমানুষ থাকবে শুনি? আমরা যখন সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পার থেকে বাড়ি এলুম তখনও তো ও ওইরকম সুটকেস দুলিয়ে চলে গিয়েছিল? যেন কিছুই না! আমরাও যেন কেউ নই! চমৎকার! এরপর কোনদিন বলবে, মা, বাপী আসছি, এখানে আর ভালো লাগছে না, চললুম ফর গুড।’

অমিত বাইরে লিভিং রুমে বসেছিল। তার পারিবারিক কথাবার্তার মধ্যে থাকতে একটু অসোয়াস্তি হচ্ছিল। সে এই সময়ে উঠে বারান্দার দিকে গেল। অজিত বললেন, ‘রিট্রীট করাই ভালো মনে হচ্ছে, কি বল সোমা!’

সোমা একটু ফিকে হাসল।

ঋতু প্রথমে ভেবেছিল উজ্জয়িনীদের বাড়িতে যাবে। কিন্তু ওর বাবার দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকার স্মৃতি যেন ও বাড়িতে গেলেই মনে পড়ে যায়। সে দেখে এসেছিল। উঃ কি বিশ্রী, মুখটা বেলুনের মতো ফুলে গেছিল, জায়গায় জায়গায় পোড়া দাগ। সাদা মুখটা ছাড়া আর সবই চাদর দিয়ে ঢাকা। সেই সুন্দর, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বটা নষ্ট হয়ে গেছে। একেবারে। ঋতুর কোনও ইচ্ছেই করত না আর ও ভদ্রলোককে দেখতে। কিন্তু উজ্জয়িনীদের ফ্ল্যাট দুটো এত বিশাল! এত কম মানুষ থাকে। আর এত শৃঙ্খলা, যে গেলে বোঝাও যেত না ওখানে একজন শয্যাশায়ী মরণাপন্ন রোগী আছে। কিন্তু তবু কেমন একটা বিতৃষ্ণা, ভয়। সে যেতে পারল না। অগত্যা মিঠু।

মিঠু সিঁড়ি টপকে টপকে নামতে নামতে হাসি মুখে ওর সুটকেসটা নিল। বলল, ‘এত কী এনেছিস রে? বেশির ভাগই তো আমার ড্রেসেই চলে যেত!’

ঋতু বলল, ‘আমি অন্য কারো জিনিস ব্যবহার করতে পারি না মিঠু, ঘেন্না করে।’ মিঠু একটু আঘাত পেয়ে চুপ করে গেল। মিঠুর আলাদা ঘর। বেশ বড়। পড়ার টেবিল। ওয়ার্ডরোব। বইয়ের শেলফ। ঘরের দেয়ালে ওর মার আঁকা মিঠুর পোট্রেট। বিভিন্ন বয়সের। একটা ফ্রেমের মধ্যে বাঁধানো। একটা ল্যান্ডসকেপ। খুব সুন্দর। খোলামেলা ঘরটা। ঋতুর ঘরটা যেন কেমন চারদিক থেকে বন্ধ। একদিকে শুধু জানলা, সেটা পশ্চিম। বিকেলের দিকে পড়ন্ত রোদ আসে।

মিঠু বলল, ‘চল আমরা ছাতে যাই।’

মিঠুদের ছাত থেকে আমীর আলি অ্যাভিন্যু-এর অনেকটা দেখা যায়। ট্রাম-বাস-ট্যাক্সি-প্রাইভেট গাড়ি চলছে। মিঠু খুব ছাতে পায়চারি করতে ভালোবাসে। সে ছাতেই কাটায় গ্রীষ্মের সন্ধেগুলো। পাঁচিলের কোণে কোণে কিছু ফুলগাছ আছে। ঋতু খানিকটা বেড়িয়ে বলল, ‘তুই খালি বোঁ বোঁ করে ঘুরছিস কেন? দাঁড়া না একটু।’

‘তোর ভালো লাগে না? দাঁড়া আমি চেয়ার বার করি।’ ছাতের ঘর থেকে মিঠু দুটো বেতের ঝুড়ি-চেয়ার বার করল। যতই সন্ধে গাঢ় হয়, ততই তার মুড আসে। সে গান গাইতে থাকে একটার পর একটা। আজ বাবা মা কোনও বন্ধুর বাড়ি গেছেন। দাদা গেছে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ব্যাঙ্গালোর। ফ্রিজের মধ্যে রান্না করা খাবার আছে। সে শুধু দুজনের মতো রুটি করে নেবে। কিন্তু ঋতু সারাক্ষণ চুপ। ঋতুকে এত চুপচাপ থাকতে সে কখনও দেখেনি। অবশেষে সে বলল, ‘ঋতু, কী হয়েছে রে? কথা বলছিস না, হাসছিস না।’

‘কি আবার হবে?’ ঋতু মৃদু স্বরে বলল।

‘উজ্জয়িনীদের কী বিপদ হল বল তো!’

‘বিপদের কী আছে? এক হিসেবে ভালোই তো হল। স্ক্যান্ডাল-এ কান পাতা যেত না তো!’

‘তাই বলে এরকম হবে? উজ্জয়িনীটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। কিরকম বদলে গেছে।’

‘আমার তো মনে হয় ও সব ভান। মনে মনে খুশিই হয়েছে।’

‘য্যাঃ, ওরকম বলতে আছে! বাবা তো! ওইসব রটনা সত্যি নাও তো হতে পারে।’

‘সত্যি নয়? তুই ওই আনন্দেই থাক। তবে হ্যাঁ, ভদ্রলোকের ক্ষমতা ছিল স্বীকার করতেই হবে। জীবনটাকে যেভাবে চেয়েছেন ভোগ করে গেছেন।’

একজনের বাবার সম্পর্কে এইরকম কথায় মিঠু একটু আহত হল। ঋতু মন্তব্য করল, ‘তুই স্কুল-গার্ল আছিস এখনও। হয় সত্যি সত্যি ইম্যাচিওর, নয় ভান করিস।’

‘ভান? কী ভান করব?’

‘বাজে কথা বলিস না মিঠু তোর বয় ফ্রেন্ড কটা!’

‘বন্ধুদের মধ্যে ছেলেও আছে, পাড়াতে, কলেজে, কিন্তু ঠিক বয়-ফ্রেন্ড বলতে যা বোঝায় তা তো এখনও…তোর? তোর আছে?’

‘আমায় কেউ স্টিমুলেট করতেই পারে না। ভ্যাদভেদে, ম্যাদামারা সব।’

‘তুই কি তার জন্যে খুব ওয়ারিড? দেখ, আমাদের বন্ধুদের কারোই সে ভাবে বয়-ফ্রেন্ড নেই।’

‘কেন, প্রিয়া? ও তো ওই তন্ময় বলে চশমা-পরা ছেলেটার সঙ্গে অনেক দিন ঘুরছে।’

‘ধ্যাঃ, ওদের মধ্যে কিছু নেই। জাস্ট ফ্রেন্ডস।’

‘তোর খালি য্যাঃ আর ধ্যাঃ, বলছি ওরা স্টেডি যাচ্ছে, আর ইমনের তো এত বয়ফ্রেন্ড যে হাতে গোনা যায় না।’

‘কী বলছিস? ইমনের সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা, কখনও বলে নি তো!’

‘এসব আবার কেউ কাউকে বলে না কি? চুপি চুপি চালায়।’

‘বয়-ফ্রেন্ড থাকাটা কী খুব খারাপ তোর মনে হয়? এতে অন্যায়ের কী আছে?’

‘ঋতু বলল, ‘চল এবার নিচে যাই। খিদে পেয়ে গেছে।’

ওরা খাচ্ছে এমন সময় মিতুর বাবা-মা ফিরলেন, সাদেক বললেন, ‘কী ঋতু। কোনও অসুবিধে হয়নি তো!’ ঋতু সজোরে মাথা নাড়ল। মাসি মিষ্টি মশলা নিয়ে এসেছেন। বললেন, ‘কাল সকাল থেকেই একজন খুব ইনট্‌রেস্টিং মানুষ আসছেন, সারা দিন থাকবেন।’

‘কে মা?’ মিঠু বলল।

‘কে, আন্দাজ কর।’

‘আমি আন্দাজ করতে পারছি না। তুমি বলো।’

‘আজ যেখানে গিয়েছিলুম শফিউলের বাড়ি। ওইখানেই দেখা হয়েছে।’

‘তাহলে কি পার্থপ্রতিম?’

সাদেক বললেন, ‘রাইট।’

অমিত য়ুনিভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে, পেছন থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে এলো মিঠু, ‘অমিত! অমিত!’

অমিত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, ‘কী ব্যাপার?’

ঋতু আজকে একটা হালকা বেগুনি রঙের শিফন শাড়ি পরেছে, তাতে বাদলার কাজ। মুখে চোখে প্রসাধন নেই। চুলটা একটা আলগা ঝুঁটি বাঁধা। সে দৌড়ে এসে অমিতের হাত ধরল। বলল, ‘ভীষণ দরকার আছে। চলো কোথাও যাওয়া যাক।’

অমিত বলল, ‘আমি বাড়ি ফিরছি ঋতু, দেরি হলে অনর্থক সবাই ভাববে।’

‘তুমি কি ক্রীতদাস? না জাস্ট একটা মেল ডল?’

অমিত বলল, ‘কোথায় যেতে চাও?’

‘ট্যাক্সি, ট্যাক্সি’, ঋতু একটা ট্যাক্সি থামিয়ে ফেলল। নিজে উঠে পড়ে অমিতকে ডাকল, ‘এসো।’

অমিত উঠে পড়তেই ঋতু বলল, ‘পার্ক স্ট্রিট।’

‘পার্ক স্ট্রিটে কোথায় যাচ্ছ ঋতু, আমার কাছে খুব বেশি টাকা নেই কিন্তু।’

‘ঠিক আছে রাসেল স্ট্রিটে চলো, আইসক্রিম পার্লারে।’

দুজনে পিৎজা নিয়ে বসেছে। ‘দাঁড়াও একটু আসছি’ অমিত চলে গেল। একটু পরে এসে বসতে ঋতু বলল, ‘কোথায় গিয়েছিলে?’

‘বাড়িতে ফোন করে দিলুম একটু দেরি হবে বলে।’ ঋতুর মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করছে।

‘বলো? কী দরকার?’ অমিত জিজ্ঞেস করল।

ঋতু বলল, ‘কিচ্ছু দরকার নেই। জাস্ট বোর লাগছিল তাই।’

‘তাই ওরকম উন্মাদের মতো রাস্তা থেকে আমাকে ধরে নিয়ে এলে?’

‘তোমার আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না! এতদিন বাড়ি নেই, খারাপ লাগে না।’

‘খারাপ লাগলেই বা করছি কী? মা বাবা সোমা সকলেই তো আপসেট!’

‘অন্যদের কথা শুনতে চাই না। তোমার নিজের কথা বলো অমিত! আমাদের সেই দিনগুলো কী সুন্দর কাটত, বলো, আড্ডা, সিনেমা, থিয়েটার, প্লিজ, আমার কোনও বন্ধু নেই আমাকে নিয়ে একটু নন্দনে চলো না অমিত কাল! সতী এসেছে। একটু আমায় ফিল্ম দেখতে নিয়ে গেলে কী হয়?’

অমিত ইতস্তত করে বলল, ‘সোমাকে বলি, তিনজন যাব।’

‘সোমার সঙ্গে আমি যাব না।’ ক্রুদ্ধ স্বরে ঋতু বলল।

‘সোমার সঙ্গে তোমার এত কিসের রেষারেষি ঋতু? শী ইজ এ পার্ফেক্টলি আন্ডার স্ট্যান্ডিং অ্যান্ড অ্যাকমোডেটিং গার্ল!’

‘শী ইজ এ পার্ফেক্ট বিচ্।’

‘ঋতু!’

‘হোয়াট রাইট ডিড শী হ্যাভ টু মীট য়ু ফার্স্ট!’

অমিত নিশ্চল হয়ে গেল।

‘হোয়াই কান্ট আই হ্যাভ দা কম্প্যানি অফ দা ফ্রেন্ড আই লাইক বেস্ট!’

ঋতুর চোখ দিয়ে গরম জল পড়ছে।

‘শোনো শোনো ঋতু’ নরম গলায় অমিত বলল, ‘বাড়ি ফিরে চলো। আমরা সবাই কত্ত মজা করব।’

‘আই অ্যাম নট আ কিড’, ঋতু বলল। সে রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছছে।

বিষ্ণুপ্রিয়া ঢুকছে, সঙ্গে আর একটি মেয়ে, দুটি যুবক। বিষ্ণুপ্রিয়া সেজেছে কিন্তু মুখটা শুকনো।

‘হাই প্রিয়া, মীট মাই ফ্রেন্ড অমিত।’ ঋতু বিষ্ণুপ্রিয়াকে টেনে এনে অমিতের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।

অত্যন্ত অস্বস্তির সঙ্গে আলাপ করল অমিত।

‘প্রিয়া কে রে ওরা তোর সঙ্গে?’

‘আত্মীয়-স্বজন’ বলে শুকনো মুখে বিষ্ণুপ্রিয়া ওদিকে চলে গেল।

অমিত তার আইসক্রিম পুরো শেষ না করেই উঠে পড়ল। ‘ঋতু তুমি আসবে তো এসো। আমি কিন্তু চললুম।’

ঋতুকে মিঠুদের বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল অমিত।

ঋতু সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, পার্থপ্রতিম নামছেন। মাথায় এক রাশ বাদামি চুল। খোদাই করা মুখ। একটু ভারী ছেলেমানুষি ভরা টলটলে চোখ। চেহারাটা দোহারা। বাফতার পাঞ্জাবি গায়ে এই গরমেও।

‘বাঃ, ভারি সুন্দর ফিগার তো তোমার? মিঠুর বন্ধু না?’

ঋতু জীবনেও কখনও এমন কথা শোনেনি। ‘বেশ দেখাচ্ছে’, ‘ভারী মিষ্টি মুখ’ এসব শোনা যায়। কিন্তু একজন বয়স্ক পুরুষ তার মতো একজন উদ্ভিন্নযৌবনাকে ‘ভারি সুন্দর ফিগার’ বলে অভ্যর্থনা করবেন। এরকমটা আগে কখনও তার অভিজ্ঞতায় হয়নি।

একটু লজ্জা পেয়ে, কোনও জবাব না দিয়েই সে ওপরে উঠতে লাগল।

পার্থপ্রতিম যেদিন এসেছিলেন সেদিন সে ব্রেকফাস্ট খেয়েই তার নাচ ক্লাসের এক বন্ধুর বাড়ি কাটিয়ে এসেছিল। একে অন্যের বাড়ি। তাতে অন্য একজন অতিথি, সর্বোপরি তার মেজাজ একেবারেই ঠিক নেই। ওপর থেকে মিঠু বলল, ‘এর কথাই তোমায় বলছিলুম কাকু, আমাদের দুজনকেই নিয়ে যাবে?’

ঋতু বলল, ‘কোথায়?’

‘কাকু কলকাতা সিরিজ আঁকতে নানান জায়গায় যাবে। আমরাও যাব। কখনও কখনও মা-বাবাও যাবে। পিকনিক হবে, মজা হবে।

পার্থপ্রতিম নামতে নামতে বললেন, ‘শুধু গেলে হবে না, আমার কাজে সাহায্য করতে হবে। এই শর্ত।’

‘তোমার শর্ত মানছি।’ মিঠু চেঁচিয়ে বলল।

কিন্তু পার্থপ্রতিম পরদিনই কী জরুরি কাজে দিল্লি চলে গেলেন। সারা গ্রীষ্ম আর আসতে পারলেন না। বর্ষার মেঘ ঝমঝমালো, তখন কাদার কলকাতায় পার্থপ্রতিম আবার।

‘অমিত, অমিত’ ঋতু ছুটতে ছুটতে আসছে। সে বাড়ি ফিরে এসেছে। কতদিন আর বন্ধুর বাড়ি থাকা যায়? বিশেষ করে ওইরকম স্কুলগার্ল মনোভাব-বিশিষ্ট বন্ধুর সঙ্গে? কোনও ভাব-বিনিময়ই মিঠুর সঙ্গে হয় না তার তার কথা শুনে শিউরে শিউরে ওঠে মিঠু। আরও যাতে শিউরোয় তাই আরও বৈপ্লবিক মতামত দেয় সে, মিঠু এক্কেবারে চুপ হয়ে যায়।

বাড়ি এসে ঋতু মোটের ওপর স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। মা আর সোমার শরীর খারাপ বলে কোথাও বেড়াতে যাওয়াও হল না। কিন্তু ঋতু সেটা মেনে নিয়েছে। সে খাওয়া-দাওয়া করে, নাচস্কুলে যায়, ফাইন্যাল পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছে, এখন গুরুদেবের কাছে আলাদা করে শিখছে। লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতেও সে আর্ধেক দিন বেরিয়ে যায়। কিন্তু ভীষণ চুপচাপ। কারুর সঙ্গেই বিশেষ কথা বলে না। গত বছর মে মাসে সোমা একটি মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। নার্সিং হোম থেকে সে সোজা নিজের বাড়ি চলে যায়। হাজার অনুরোধেও মা-বাবার কাছে আসেনি। এখন সোমা আবার সন্তানসম্ভবা। কিন্তু দু চারদিন থেকে সে ফিরে গেছে। ঋতুদের বাড়ি ফাঁকা। সেই বাবা-মা মেয়ে। সারা গ্রীষ্ম ঋতু শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ে। মাঝে মাঝে মিঠুর ফোন আসে। উজ্জয়িনীকে সে নিজেই মাঝে মাঝে ফোন করে। বাস।

‘অমিত, অমিত’, ‘ছুটতে ছুটতে আসছে ঋতু। আকাশে শেষ জুলাইয়ের নীল মেঘ। মুখ ভার করে আছে। ঋতু একটা পাতলা খাদির সালোয়ার কুর্তা পরেছে। তার উড়নিটা পেছন দিকে উড়ছে। ঋতুর মুখে প্রসাধন নেই। পাণ্ডুর একটা গোলাপি রং তার খুব প্রিয়, এই রঙের লিপস্টিক সে প্রায় সব সময়ে ব্যবহার করে। আজ ঠোট রং হীন। তাকে তাই খুব বিবর্ণ দেখাচ্ছে।

‘অমিত’—অমিত দাঁড়িয়ে পড়েছে আজকাল তার য়ুনিভার্সিটি থেকে ফেরাবার সময় রোজই ভয় হয়। এক্ষুনি পেছন থেকে দৌড়ে এসে তাকে ধরবে ঋতু। ঋতুর এই ডাকের সঙ্গে, ঋতুর জেদের সঙ্গে, ‘অমিত আমাকে নিয়ে একটু, রবীন্দ্রসদন চলো না, জাস্ট বেড়াব’ এই প্রার্থনার সঙ্গে ক্রমশই জড়িয়ে পড়ছে অমিত। সে প্রাণপণে ঝেড়ে ফেলবার চেষ্টা করছে অবাঞ্ছিত এই টান। কিন্তু ঋতু দয়াহীন, তাকে অনুসরণ করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। দৌড়ে এসে তার কনুইয়ের কাছটা ধরেছে ঋতু, ফ্যাকাশে মুখ, ‘অমিত আজকে আমরা কোথায় যাবো?’

‘কোথাও না, এখন বাড়ি যাব ঋতু’, সামান্য কঠোর হতে চেষ্টা করে অমিত।

‘সোমার ফিরতে এখন অনেক দেরি। একটু চলো না প্লিজ।’

‘ঋতু, ঋতু, সোজা হয়ে বসো, প্লিজ, আমার লাগছে।’ অমিতের গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

ঋতু সোজা হয়ে বসল।

নন্দনের সামনে। ভেতর দিয়ে শিশির মঞ্চ, তথ্যকেন্দ্র, আবার ঘুরে নন্দন আর রবীন্দ্রসদনের মাঝখানে একটা জায়গা দেখে বসেছে ঋতু। অমিতকে টানছে বসবার জন্য। একটা সিগারেট ধরিয়েছে অমিত। সে বেশি খায় না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে না খেয়ে সে থাকতে পারছে না।

‘ঋতু তুমি যা করছ ঠিক করছ না।’

‘হু কেয়ার্স।’

‘এর ফল খুব খারাপ হতে পারে?’

‘কার পক্ষে?’

‘কার? আমার, তোমার, সোমার, সবার পক্ষে।’

‘অমিত, তোমাকে ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না, বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। অমিত, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

অনেকক্ষণ চুপ করে রইল অমিত। তারপর বলল, ‘এর তো কোনও কিনারা নেই ঋতু। কোনও কূলকিনারা নেই। তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে। সবে কলেজে পা দিয়েছ, তোমার সামনে সমস্ত ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। আর আমি একজন বিবাহিত ভদ্রলোক।’

‘তুমি সোমাকে ডিভোর্স করতে পার না?’

চমকে উঠল অমিত। বলল, ‘না।’

‘আমার জন্যে, আমি যে মরে যাচ্ছি, আমার জন্যেও পার না! এই দেখ, আমার গায়ে হাত দিয়ে,’ ঋতু অমিতের হাতটা তুলে নিয়ে নিজের গলায় বুলিয়ে দিল, বলল—‘আমার রোজ রাতে জ্বর আসে, আমি মরে যাচ্ছি অমিত। তুমি দেখতে পাচ্ছ না?’

অমিত বলল, ‘এবার ওঠা যাক ঋতু, দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

‘আমি কি যথেষ্ট সুন্দর নই,’ ঋতু বলে উঠল, ‘সোমার চেয়ে সুন্দর?’

‘তুমি প্রলাপ বকচ্ছ ঋতু।’ অমিত উঠে পড়ল।

‘ঠিক আছে ডিভোর্স করতে হবে না, তুমি আরেকটা ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া করো। সেখানে তুমি আর আমি থাকব।’

অমিত এবার ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, ‘তুমি কি ক্ষেপে গেছ ঋতু? ছিঃ।’

সে সজোরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একবারও পেছন দিকে না তাকিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেল।

ঋতুর বুকের মধ্যেটা এত ভারী যেন বিশমণী পাথর কে বসিয়ে দিয়েছে সেখানে। সে নড়তে পারছে না, দম নিতে পারছে না, এত কষ্ট। তার বুকটা কি ফেটে যাবে?

এই অবস্থায় এইখানেই তাকে আবিষ্কার করলেন পার্থপ্রতিম।

‘তুমি মিঠুর সেই বন্ধু না?’

‘ঋতু মুখ তুলে তাকিয়ে দুটো পাজামা-পরা পা, পাঞ্জাবির প্রান্ত, একটা ঝোলার তলা আর তার ওপরে একটা ভারী মুখ, ছেলেমানুষি হাসিতে ভরা চোখ দেখতে পেল। সে কোনও জবাব দিতে পারল না। পার্থপ্রতিম একটা হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘আরে কতক্ষণ এখানে বসে থাকবে! ওঠো।’ তিনি টেনে তুললেন ঋতুকে।

কোনমতে উঠল ঋতু, পার্থপ্রতিম তাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। ঋতু একটা নিষ্প্রাণ পুতুলের মতো পার্থপ্রতিমের গায়ে লেপ্টে থেকে চলছে।

‘চলো কিছু খাওয়া যাক।’ তিনি পেছন দিকে চায়ের স্টলে নিয়ে গেলেন। বিস্বাদ চা-কেক, মুখে দিয়ে ঋতু মুখ বিকৃত করল। পার্থপ্রতিম বললেন, ‘চলো, অ্যাকাডেমিতে একটা ভালো নাটক হচ্ছে, দেখি গে যাই।’

নাম করা নাটক। সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু পার্থপ্রতিমের কাছে এটা কোনও সমস্যাই নয়। তিনি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। দুটো অতিরিক্ত চেয়ার সামনের সারিতে দিয়ে তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হল।

ভয়ের চোটে বাস স্টপ পর্যন্ত চলে গিয়ে অমিতের হঠাৎ খেয়াল হল কাজটা সে ভালো করেনি। ঋতু কী করছে, ওখানে ঋতু কী খুব নিরাপদ? মাথাটা তো একদম খারাপ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। সে এক-পা দুপা করে ফিরে গেল আবার, ঋতুর চিহ্নও নেই ওখানে। একটু এদিক-ওদিক খুঁজে সে তাড়াতাড়ি বাস ধরে বাড়ি ফিরে গেল। সোমা দেখা যাচ্ছে খুব সকাল-সকাল ফিরেছে আজ। অমিতকে দেখে সে খুব খুশি হয়ে উঠল। আগেকার দুর্ঘটনার জের সে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার চেহারায় এখন অটল ব্যক্তিত্বর চেয়ে একটা করুণ মিষ্টতাই বেশি। একটু অভিমানী, আদুরেও হয়ে উঠেছে। কিন্তু অমিতের মুখের দিকে তাকিয়ে সে থমকে গেল। কে যেন কালি মেড়ে দিয়েছে তার সারা মুখে।

‘কী হয়েছে অমিত?’

অমিত ফ্যাঁসফেঁসে গলায় বলল, ‘কিচ্ছু না।’ তারপর সে কৌচের পিঠে হেলান দিয়ে চোখ বুজল।

সোমা এক গ্লাস জল নিয়ে এলো। ‘খাও।’ জলটা নিঃশেষে পান করে অমিত হঠাৎ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সোমার কোমর জড়িয়ে ধরে মাথাটা তার ওপর রাখল। সোমা তার পাশে বসে ভীষণ উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল, ‘কী হয়েছে অমিত? কী হয়েছে? আমাকে বলবে না?’

‘অমিত বলল, ‘সর্বনাশ হয়েছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না এখন কী করব।’

‘আঃ, শিগগির বলো। ঋতুর ব্যাপারে কিছু?’

কৃতজ্ঞ চোখে স্ত্রীর দিকে তাকাল অমিত। তারপর একটু একটু করে এ ক মাসের ঘটনা। আজকের পরিস্থিতি সুদ্ধ বলে গেল। শুনতে শুনতে সোমার মুখের রং বদলাচ্ছিল। কিন্তু শেষটুকু শুনে সে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ল। বলল এক্ষুনি চলো। শিগগির।’

ট্যাক্সি নিয়ে দুজনে রবীন্দ্রসদনের সমস্ত চত্বর ভালো করে খুঁজে দেখল। তারপর সেই ট্যাক্সি নিয়েই চলে গেল মা-বাবার কাছে, হিন্দুস্তান রোড। মা নিজেই দরজা খুলে দিল।

‘আরে সোমা, অমিত, আয় আয়।’

এদিক-ওদিক তাকিয়ে সোমা বলল, ‘ঋতুকে দেখছি না!’

‘ঋতুর একটু দেরি হচ্ছে আজকে!’ মীনাক্ষী বললেন।

‘এরকমই ফেরে?’

‘না তো! দিনের বেলায় কলেজ, লাইব্রেরি। নাচের জন্যে বুধ শুক্র সন্ধেবেলায় বেরোয়। আজকাল সাতটার মধ্যে ফিরে যায়। খুব দেরি হলে।’

মীনাক্ষী জামাই আর মেয়ের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সোমা বলল, ‘ঠিক আছে, রাত্তিরে খেয়ে যাব মা। যা হয়েছে তাতেই হয়ে যাবে আমাদের। ব্যস্ত হয়ো না।’

অজিত বললেন, ‘অনেক দিন পরে এলি।’

সোমা ছটফট করছে। সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। অজিত জামাইয়ের সঙ্গে গল্প করে যাচ্ছেন। জ্যোতিবাবু, রাজীব-হত্যা, সোনিয়া গান্ধী আসবে কি না, বুশ…

মীনাক্ষী কিন্তু বুঝতে পেরেছেন কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। তিনি বারান্দায় মেয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। ‘কী হয়েছে রে সোমা?’

সোমা কী বলবে মায়ের প্রশ্নের উত্তরে? সে কি বলবে ওর ছোট বোন তার বিশ্বাস ভালোবাসা আর প্রশ্রয়ের ঘরখানা টুকরো টুকরো করে ভাঙছে? সে কি বোঝাতে পারবে ঋতুর প্রতি তার এই মুহূর্তে কী দুরন্ত ক্রোধ আর ঘৃণা? সেই সঙ্গে ঋতুর জন্যে তার কী প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা? রাগে যে এখন অমিতকে আঁচড়ে-কামড়ে একসা করে দিতে ইচ্ছে করছে, তাই বা সে কেমন করে প্রকাশ করবে! অমিত কি ধরেই নিয়েছে তার সমস্ত দুর্বল আচরণ, তার সমস্ত অহেতুক গোপনতা সোমা ক্ষমা করবে! প্রথম বাচ্চাটা গেল, সোমাকে তার জন্য অনর্থক কত কষ্ট পেতে হল, এতেও কি ওই বোকচন্দরটার কোনও চৈতন্য হয়নি? সবটার জন্যেই ঋতু দায়ী, ঋতু এবং অমিতের অবিমৃষ্যকারিতা এখন আবার…

সোমা বলল, ‘কিছু হয়নি মা। আচ্ছা, ঋতুর বিয়ে দিলে হয় না?’

‘ঋতুর বিয়ে? সবে তো কলেজে ঢুকেছে। তুই তো ডক্টরেট করে বিয়ে করেছিস।’

‘সবাইকার ক্ষেত্রেই কি এক নিয়ম হবে? আমি আলাদা, ঋতু আলাদা।’ সোমার বলবার ভঙ্গি কেমন কাঠ-কাঠ।

‘কী হয়েছে, আমায় বলবি?’ মীনাক্ষী জিজ্ঞেস করলেন।

সোমা মাথা নাড়তে লাগল, ‘কিছু না, কিছু না।’ এ সমস্যার কী সমাধান! সে তার মাথার মধ্যে খুঁড়তে লাগল। কী করা যায়, কী করা যায়!

রাত্তির সাড়ে ন’টায় রাস্তার মোড়ে একটা ট্যাক্সি থেকে নামল ঋতু। ট্যাক্সিটা হুশ করে বেরিয়ে গেল। বোঝাই গেল কেউ রয়েছে ভেতরে। বারান্দায় চার জনেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। ওদিকে দরজা খুলেই রেখেছে বাসন্তী। ঋতুর ঢোকবার শব্দ হল। হাই-হিলের খুটখুট। জুতো বদলে চটি পরতে সামান্য সময় নিল, তারপর নিজের ঘরে ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ হবার শব্দ শুনলো সবাই।

সারা পথ অমিতের সঙ্গে একটা কথাও বলল না সোমা। অমিতের মুখ শুকিয়ে ছোট্ট হয়ে আছে। নিজেদের বাড়ি ঢুকে নিঃশব্দে জানলা খুলল, জল খেল, পোশাক বদলালো, তারপর শুয়ে পড়ল সোমা। অমিত বেশ কিছুক্ষণ পরে বলল, ‘সোমা, কথা বলবে না?’

সোমা বলল, ‘আমি কালই একবার মোড়ের বাড়ির ওই অ্যাডভোকেট মৈত্রর কাছে যাব।’

অমিত অবাক হয়ে বলল ‘কেন?’

‘ডিভোর্স করতে হলে কী কী নিয়ম কানুন…’

অমিত ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, ‘কে ডিভোর্স করবে? কেন? কোথায়?’

‘আমি এবং তুমি পরস্পরকে করব। তারপর সময়মতো তুমি ঋতুকে বিয়ে করবে।’

‘মানে?’

‘মানে এই যে তোমার সায় না থাকলে তো জিনিসটা এত দূর গড়াতে পারত না, অমিত। জীবন নিয়ে ছেলেখেলা সাজে না। এখন এই দোটানা করতে গিয়ে ঋতুর আমার দুজনের জীবনই একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। এইবেলা, ফ্যামিলি বাড়েনি। এটাও যাক! শেষ হয়েই যাক!’ সোমার গলা কঠোর।

‘সোমা!’ আর্ত গলায় অমিত বলল, ‘কী বলছ যাতা? তোমার আর ঋতুর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে? আর আমি? আমার জীবন? আমার কথা ভাবলে না?’

‘ভাবলাম তো! ঋতুকে বিয়ে করে সুখী হও। সন্ধেবেলায় কলেজ থেকে ফিরে চিকেন-ওমলেট, অফ-ডেগুলোতে সারা দিন রাত সাহোগ আর ভি সি পি। এক দিন ছাড়া ছাড়াই—সিনেমা থিয়েটার গান নাচ দেখতে শুনতে যাবে—এই তো জীবন! আমি তোমার বা ঋতুর কারুর পথেই এক মুহূর্তের জন্যেও দাঁড়াব না।’

‘তাহলে শুনে রাখো।’ অমিত ক্রুদ্ধ গলায় বলল, ‘এই সামান্য কারণে তুমি যদি আমাকে ছেড়ে যাও, আমি ইউনিভার্সিটির কাজ ছেড়ে দেব। আরামবাগে বাবা-মার কাছে গিয়ে জমিজমা দেখব, চাষ বাস,…’

সোমা বলল, ‘আর ঋতু? ঋতুর কী হবে!’

‘চুলোয় যাক তোমার ঋতু! একটা হেডলেস, খেয়ালি, স্পয়েল্ট অপদার্থ মেয়ে। কী শিখিয়েছ তোমরা ওকে? কিচ্ছু না! একটা…’

‘খবর্দার অমিত। যা বলার বলেছ, আর কিছু বলবে না। ওর মাথায় এসব উদ্ভট খেয়াল চাপল কেন? তার দায়িত্ব তোমার।’

‘দায়িত্ব চাপিয়ে দিলেই দায়িত্ব আমি স্বীকার করব, ভেবেছ?’ অমিত এখন ফুঁসছে। ‘আমি সাধারণ ভদ্রতা করেছি। অনেক ছোট শালী, তাই তার আবদার রেখেছি কিছু। এই পর্যন্ত।’

সোমা বলল, ‘তাহলে গোপন করেছিলে কেন এত দিন?’

‘ওর সব কথাগুলো কি রিপিট করবার মতো? যতবার গিয়ে দেরি হবে মনে হয়েছে, ফোন করে তোমায় জানিয়ে দিয়েছি না?’

ভোরের দিকে দেখা গেল সোমা আর অমিত পরস্পরকে শিশুর মতো আঁকড়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। মাঝখানে ঋতু নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress