Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পঞ্চম পর্ব

পাঞ্চালে প্রবেশ করে যুধিষ্ঠির বললেন, — হে মাধব এই সেই একচক্রা গ্রাম। আমরা ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে এই গ্রামেই আশ্রয় নিয়েছিলাম, তার পরের ঘটনা তো সবই আপনার জানা। শ্রীকৃষ্ণ বললেন চলুন মহারাজ আমরা এই বৈশ‍্য বেশে সেই ব্রাহ্মণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, আপনাদের কথা এই গ্রামের সকলের স্মরণে আছে কিনা পরীক্ষা করেই দেখা যাক।
ব্রাহ্মন গৃহে পদার্পন করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, — আমরা সুদুর দ্বারকা থেকে আসছি, এখানে কোন অথিতিশালা দেখছি না, কিন্তু আমরা দুজনেই ভীষণ ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত। আপনাকে একজন সদাশয় অতিথিপরায়ন ব‍্যক্তি বলেই মনে হচ্ছে, আমরাকি আজকের মতো আপনার গৃহে স্থান পেতে পারি?
ব্রাহ্মণ বললেন, আপনারা নিশ্চিন্তে আমার বহির্বাটিতে বিশ্রাম নিন আমি আপনাদের জন্য জল ও আহার্যের ব‍্যবস্থা করি। শ্রীকৃষ্ণ বললেন আহারের সামগ্রী আমাদের সাথেই আছে শুধু তৃষ্ণা নিবারনের জন‍্য সামান্য জল হলেই আমাদের চলবে।
কিছু সময় পরে এক কলস জল ও কিছু মিষ্টান্ন নিয়ে ব্রাহ্মণ বহির্বাটিতে উপস্থিত হলে শ্রীকৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠির তাঁর সাথে কথোপকথন শুরু করলেন। প্রসঙ্গ ক্রমে তাঁর গৃহে ছদ্মবেশে পঞ্চ পাণ্ডবের অবস্থানের কথা উঠতেই ব্রাহ্মণ বললেন, — ভীমের জন‍্যই আমার পরিবার রক্ষা পেয়েছিল, মহিয়সী কুন্তীদেবীর কথাতেই বক নিধন করেছিলেন ভীমসেন। তখন থেকেই এই একচক্রা ভীমের নগরী বলেই খ‍্যাত। দ্রৌপদীকে স্বয়ম্বরে জিতে পাণ্ডবরা এই গৃহেই অবস্থান করেছিলেন। এখানেই কুন্তী দেবীর কথায় একা দ্রৌপদীর সাথে পঞ্চ পাণ্ডবের বিবাহের সূচনা হয়। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং মধ‍্যস্থতা করে মহারাজ দ্রুপদকে সম্মত করান, তাই আমার এই গৃহ শ্রীকৃষ্ণ বলরাম সহ পঞ্চ পাণ্ডব মহারাজ দ্রুপদ ধৃষ্টদ্মুন্নদের আগমনে ধন‍্য।
শ্রীকৃষ্ণ মৃদু হেসে বললেন, — আপনিতো তবে একজন স্মরনীয় ব‍্যক্তি, আমাদের সৌভাগ্য কাকতালীয় ভাবে আমরাও আপনার গৃহে আশ্রয় লাভ করেছি।
ব্রাহ্মন বললেন এখন পাঞ্চাল দেশ শাষন করছেন মহারাজ যুধিষ্ঠির তিনি একজন ন‍্যায়নিষ্ঠ সত‍্যবাদী ধার্মিক মানুষ তবুও বিগত পনেরো বছরের ঘটনা পরম্পরা যদি সূক্ষ্ম ভাবে অনুসন্ধান করেন তাহলে বুঝতে পারবেন সব কিছুর মূলে দায় মহারাজ যুধিষ্ঠিরের, আর এর বীজ প্রোথিত হয়েছিল এই গৃহেই।
কি রকম? শ্রীকৃষ্ণ উৎসাহিত হয়ে উঠলেও যুধিষ্ঠিরের মুখমণ্ডল পাংশুবর্ণ ধারণ করলো। ব্রাহ্মণ বললেন আপনারা বিদেশী সেই সময়ের কথা আপনাদের জানা নেই কিন্তু সমগ্র পাঞ্চাল জানে কি ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি করেছিলেন আমাদের বতর্মান মহারাজ যুধিষ্ঠির।
দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের মূল সর্ত ছিলো যে ধনুর্দ্ধর ধনুকে জ‍্যা রোপন করে ঘূর্ণিয়মান চক্রের ছিদ্র দিয়ে ওপরে স্থাপিত মৎস্যের চক্ষুভেদ করতে পারবেন তিনিই দ্রৌপদীর বরমাল‍্য পাবেন। সমগ্র আর্যাবর্তে এই কাজ মহা ধনুর্দ্ধর অর্জুন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। সর্ত অনুযায়ী একমাত্র অর্জুনই দ্রৌপদীর স্বামী একথা সমগ্র পাঞ্চালবাসী মনে প্রানে সমর্থন ও বিশ্বাস করে।
আপনারাই বলুন স্বয়ম্বর সভার শর্তে বিজিত দ্রৌপদী আর ভিক্ষা লব্ধ সামগ্রী কি এক? যুধিষ্ঠির জানতেন প্রতিদিনের মতো কুন্তীদেবী গৃহাভ‍্যন্তর থেকে নিশ্চিতরূপে বলবেন যা পেয়েছো পাঁচ জন সমবন্টন করে নাও। দ্রৌপদীকে দেখে যুধিষ্ঠিরেরও চিত্ত বিভ্রম হয়েছিল তাই তিনি মিথ‍্যার আশ্রয় নিয়ে দ্রৌপদীকে ভিক্ষা লব্ধ বস্তু বলে কুন্তীদেবীকে দিয়ে সমবন্টনের কথা বলিয়ে নিয়েছিলেন অত‍্যন্ত চতুরতার সাথে। যদি অর্জুন বলতেন তিনি দ্রৌপদীকে স্বয়ম্বর সভায় লক্ষ্যভেদ করে প্রাপ্ত হয়েছেন তবে কুন্তীদেবী কখনই সমবন্টনের কথা বলতেন না। জেনে বুঝে এখানেই সবচেয়ে বড় ভুল এবং অন‍্যায়টা করলেন যুধিষ্ঠির। দ্রৌপদী যদি একা অর্জুনের স্তী হিসেবে স্বীকৃত হতেন তবে দ‍্যূতক্রিয়ায় যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে পণ হিসেবে ধার্য করতে পারতেন না আর দূর্যোধনরাও দ্রৌপদীকে অসম্মান করতে পারতো না ফলে কূরুক্ষেত্রের ওই মহাযুদ্ধ ঘটতো না। তাই যতই তিনি নিজেকে ধর্মপুত্র বলে দাবী করুন তাঁর এই মিথ‍্যাচারের জন‍্য করুক্ষেত্রের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের তিনিই সম্পূর্ণ দায়ী।
যুধিষ্ঠির আর সহ‍্য করতে পারলেন না অকস্মাৎ তিনি জ্ঞান হারালেন। সবাই ব‍্যতিব‍্যস্ত হয়ে উঠলে। শ্রীকৃষ্ণ তার চোখে মুখে জল সিঞ্চন করে জ্ঞান ফেরালেন তারপর সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন তার সাথী দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত তাই দূর্বলতার কারনে হঠাৎই জ্ঞান হারিয়েছেন। এখন কিছুটা সময় বিশ্রাম ও আহার্য গ্রহণ করলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন, তাই এই আলোচনা বন্ধ হোক।
সবাই সেই স্থান পরিত‍্যাগ করে গেলে, যুধিষ্ঠির বললেন, মাধব আমার মনে হচ্ছে সত‍্যি এই সবকিছুর জন‍্য আমিই দায়ী ••••

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress