দ্বিতীয় পর্ব
কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীর মধ্যরাত অতিক্রান্ত। হস্থিনাপুরের রাজ প্রাসাদে নিশ্চিন্ত নিদ্রা ছেয়ে আছে। যুধিষ্ঠিরের সাম্রাজ্যে সর্বত্র শাস্তি বিরাজমান। গবাক্ষের আলো ক্রমশ স্তিমিত হয়ে আসছে। সবাই নিদ্রায় অচেতন হলেও মহারাজ যুধিষ্ঠিরের চোখে ঘুম নেই। কক্ষের ভেতর তিনি উদভ্রান্তের মতো পায়চারী করছেন। নকুল বৃত্তান্ত তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। খুবই সংগোপনে মনের ভেতর একটু হলেও দম্ভ ছিল তাঁর। তিনি যুধিষ্ঠির “ধর্মপুত্র”। কখনও মিথ্যাচার তিনি করেন নি সর্বদা ধর্ম ও ন্যায়ের পথে চলেছেন তাইতো ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের পরাজিত করে হস্থিনাপুরের সিংহাসনে তিনি বসেছেন। প্রজারা তাঁকে ঈশ্বরজ্ঞানে পূজো করে ভালোবাসে। তাহলে নকুল কেন বললো, তারও অকথিত পাপ আছে? কি সেই পাপ? যা শুধু শ্রীকৃষ্ণই জানেন?
যুধিষ্ঠির কক্ষ থেকে বেরিয়ে ঘুমন্ত রক্ষীদের পাশ কাটিয়ে প্রাসাদের এক বিশেষ অতিথি কক্ষের সামনে এসে দাঁড়াতেই হাসিমুখে দড়জা খুলে দিলেন শ্রীকৃষ্ণ নিজেই। — আসুন মহারাজ যুধিষ্ঠির, এই মুহূর্তে আপনি আমার কাছে আসবেন আমি জানতাম।
যুধিষ্ঠিরের বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছে না। অবাক হয়ে তিনি শ্রীকৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে আছেন, তিনি নিঃশব্দে দড়জার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কোন সাংকেতিক শব্দ করেন নি, বরঞ্চ ইতস্তত করছিলেন এই মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণকে ডাকা উচিৎ হবে কি না? মনকে সংযত করতে না পেরেই তিনি এই কক্ষের সামনে চলে এসেছিলেন, যুধিষ্ঠির আরও অবাক হয়ে গেলেন যখন শ্রীকৃষ্ণ আবার বললেন, ভেতরে আসুন মহারাজ যুধিষ্ঠির আপনার মনের অবস্থা আমি জানি নকুল বৃত্তান্ত আমি অবগত আছি।
কক্ষে প্রবেশ করে যুধিষ্ঠির অসহায় ভাবে বললেন,– তাহলে মাধব আমি কিভাবে জানতে পারবো আমার পাপের কথা? আপনাকে পাণ্ডবদের পরম হিতৈষী, বন্ধু এবং পরামর্শদাতা হিসেবে আমি জানি। জ্ঞানত আমি কোন মিথ্যাচার করিনি, তবুও কি আমার সেই অকথিত পাপ? যা শুধু আপনি জানেন!
শ্রীকৃষ্ণ মৃদু হেসে বললেন, অধৈর্য হবেন না মহারাজ যুধিষ্ঠির, ধৈর্যহীন ব্যক্তি মূঢ়ের সমান। কিন্তু আপনি জ্ঞানী চেতন বোধ সম্পন্ন জেষ্ঠ পাণ্ডব এবং সম্পূর্ণ আর্যাবত্তের একছত্র সম্রাট। আপনার কাছে এই বিহ্বলতা কাম্য নয়।
যুধিষ্ঠির বললেন, কিন্তু আমার পাপ সম্পর্কে অবগত না হলে আমি শান্তি পাচ্ছি না যদুশ্রেষ্ঠ। আপনিই পারেন আমার এই বিশেষ জিজ্ঞাসার নিরসন করতে।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, — মহারাজ আমি নই সময়ই বলে দেবে আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর। আপনি এখন আর্যাবত্তের সম্রাট, আপনার শাষনে প্রজারা সুখেই আছে। অশ্বমেধ যজ্ঞের পর সকলে ধন্য ধন্য করছে, তবুও রাজা হিসেবে সরাসরি তাদের কাছ থেকে সুখ দূঃখের কথা জানা আপনার কর্তব্য। আপনার সাম্রাজ্যকে পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত করেছেন হস্থিনাপুর ইন্দ্রপ্রস্থ কুরুক্ষেত্র পাঞ্চাল এবং বারানাবত। আপনি ছদ্মবেশে এই অঞ্চলগুলি পরিভ্রমণ করুন প্রজাদের আলাপচারিতায় তাদের প্রকৃত সমস্যা আপনি অবগত হতে পারবেন। আপনি চাইলে আমিও আপনার সহযাত্রী হতে পারি। ••••
যুধিষ্ঠির বললেন আমি আপনার ইচ্ছাকে সম্মান করি, তবে তাইহোক মাধব আগামীকাল থেকেই আমি এবং আপনি ছদ্মবেশে রাজ্য পরিক্রমায় বের হবো।