Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এঁচোড় পাকা || Suchandra Basu

এঁচোড় পাকা || Suchandra Basu

এঁচোড় পাকা

আশপাশের লোকজনকে তোয়াক্কা করছে না মোটেও। হেঁটে চলার সরু রাস্তার পাশে সাইকেলের ওপরে বসেছে দুজন। যুবক ও কিশোরী। কিশোরী মেয়েটি নিজ থেকেই ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরছে। কখনও বুকের কাছে যুবকের মাথা ধরে রাখছে। এরমধ্যেই চলছে আদর, আহ্লাদ।
লিপিস্টিকের দাগ বসছে যুবকের গলায়, ঘাড়ে, গালে। কখনও কখনও তা ঠোঁ’ট-মুখ হয়ে যাচ্ছে যুবকের পাকস্থলিতে। পাশে দিয়ে যেতে যেতে বয়স্ক এক নারী বলছেন, নির্ল’জ্জ্ব, বেহায়া পোলা-মাইয়া। ওদের একদম লজ্জা-শরম নাই।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মিলন মেলা ঘটছে পথে প্রান্তরে। তারা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্ধু, প্রেমিকের সঙ্গে বের হয়ে অবাধে মেলামেশা করছে।সমাজ ভয়ঙ্কর বিষময় হচ্ছে।
এরা যেন এঁচোড় পাকা বড্ড বেশি।
আমাদের গ্রাম্যজীবনে শিশুকাঁঠাল, মানে এঁচোড় খাওয়ার এত চল ছিল না। তাই বলে ‘এঁচোড়ে পাকা’ ছেলেমেয়ের অভাব ছিল না।
প্রেম আর কাঁঠাল দুইটির কাঁটা আর আঠা দুই-ই আছে। কাঁটায় পরে আসছি, আঠা দিয়ে শুরু করি। কোনও কোনও দিন ফড়িং উড়তে দেখে মা বলত, বৃষ্টি হবে আজ। সেইসব দিনে আমার দাদা লম্বা পাটকাটির মাথায় গাছ থেকে কাঁঠালের আঠা লাগিয়ে হাতে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকত। ফড়িং বেচারা ঠিক ফাঁদে, আঠায় পা দিতেই পালানোর উপায় থাকত না। এইভাবে ভালোবাসার ফন্দিতে অনেক ফড়িংয়ই প্রাণ হারিয়েছে। কাঁঠালের আঠাই তা বলতে পারে।
আধুনিক ছেলেমেয়েরাও একইভাবে মহাবিশ্বের
এই প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনছে সমাজে।
ওদের বুদ্ধিটা চিরকালই খুব কাঁচা বলে পুষ্টি কাকে বলে না জেনে কাঁচা আর অপুষ্ঠ কাঁঠালের তরকারির মতো প্রেম তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ
করে।
তবে পাকা কাঁঠালের তো কথাই নেই। কী সুন্দর রং ! আর গন্ধে ভুতও মাতাল হয়ে যায়।
একথা ঠিক যে গ্রামবাংলায় কাঁঠালের অভাব নেই বলেই ভুতের আনাগোনা বেশি। ভুত এবং কাঁঠাল দুটোই প্রচুর পাওয়া যায় বলে ‘পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া’র লোকেরও অভাব দেখি না আমাদের দেশে।
এভাবে প্রথম তাদেরকে দেখে আমি খুব অবাক হই। এত সুন্দর ছিল তারা। মেয়েটির মায়াবী চেহারা, তার চোখের চাহনি কোনো কিছুর কম ছিল না। প্রতিদিন একই জায়গায় অপেক্ষা করা কথা বলা, দেখা করা—এভাবেই চলতে থাকে তাদের প্রেম। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে দেশে হঠাৎ লকডাউন। নোটিশ এল কলেজ হোস্টেল সব বন্ধ থাকবে।সবাইকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। তাদের কাছে এটা সমস্যা হয়ে গেল। ঘাড়ের ভুত
নেমে গেল।
‘গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল’ ভাববেন না।কলেজ
খোলার কোন আশা না থাকায় ফোনে কথা বলার
চেষ্টা করে সেই গোলাপ গাছের পাশে দাঁড়িয়ে।
গেঁয়ো যোগী ভিখ্ পায় না।বাড়ি থেকে হয়তো
মেয়েটা কথা বলার সুযোগ পায় না।
এই কম কথা বলাতে একে-অপরের প্রতি আকর্ষণ কমে আসে। এই থেকে তাদের ভালোবাসাটা বিছিন্ন হয়ে যায়। এখনো ছেলেটিকে দেখি তার
অপেক্ষায় সেখানে এসে দাঁড়ায় তাকে মনে করে। কিছু করার নেই।কাঁঠাল সত্যিই ম্যাজিক ফ্রুট।
আমাদের দেশের জাতীয় ফলবিশেষ যদিও রাজা
কদর সে পায়নি। তবে প্রেমের কদর বেশি।
ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে কাঁঠালকে রাখতে পারলে মন্দ হয় না।
ফস্কে গেল লেগ পিস।যাকগে, কাঁঠাল-প্রীতি দিয়ে শেষ করি। ভালবাসা শুধু গোলাপ দিয়েই হয় না, প্রেমে কাঁঠালকে বাদ দেওয়া যায় না।গোলাপেও একই কাঁটা, প্রেমেও সেই কাঁটা আর কাঁঠালেও কাঁটা থাকে। কাঁঠাল গাছে মুকুল আসার মতো জীবনে যখন প্রেম আসে, বুঝতে হবে ‘পিরীতি কাঁঠালের আঠা’। ব্যস্! ফাঁদে পড়বে
পা ফড়িংয়ের মতো। এ প্রেমের অভিশাপ। এ-জীবন ফড়িংয়ের-ই মতো। আর কাঁঠালের মতোই তীব্র গন্ধ ছড়ায় প্রেম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress