Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উলূপি || Dona Sarkar Samaddar

উলূপি || Dona Sarkar Samaddar

মহাভারতের প্রধান চরিত্রগুলো নিজ গুণে ভাস্বর, কিন্তু পাশাপাশি কিছু চরিত্র রয়েছে যাদের মৌলিকতা অনন্য। এরকমই কমচর্চিত চরিত্র গুলোর মধ্যে এক অন্যতম আকর্ষিত চরিত্র হলো উলূপি। ইনি হলেন অর্জুনের চার স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয়া। ইনি নাগরাজ কৌরব্যের কন্যা। যিনি গঙ্গা নদীর জলভাগের সর্পরাজ্যের শাসনকর্ত্রী ছিলেন।

নারুদের উপদেশ অনুসারে পান্ডবরা দ্রৌপদীর সম্পর্কে দাম্পত্য নিয়ম বন্ধন করেন-দ্রৌপদী এক ভ্রাতার কাছে এক বছর এক কাল থাকবেন। সেই সময় অন্য কোন ভ্রাতা সেই গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন না। যিনি এই নিয়ম লঙ্ঘন করবেন তাকে ১২ বছরের জন্য বনবাস যেতে হবে।

যদিও অর্জুন দ্রৌপদীকে জয় করে এনেছিলেন, তবুও সেই নিয়ম প্রথম লঙ্ঘন করেন অর্জুন। দেশে দস্যুদের আক্রমণ হওয়াতে, দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য অর্জুন অস্ত্রাগারে গিয়েছিলেন অস্ত্র আনতে। তখন অস্ত্রাগারে বাস করছিলেন যুধিষ্ঠির দ্রৌপদী। অর্জুনকে তাদের মিলন কালে সেখানে উপস্থিত হয়ে পড়াতে দস্যু নিধনের পর ১২ বছর ব্রহ্মচারী হয়ে বনবাসে যেতে হয়।

বহু দেশ ঘুরে অর্জুন যখন গঙ্গার তীরে হরিদ্বারে এসে পৌঁছান স্নান করার জন্য, তখন অর্জুনের রূপে মুগ্ধ হয়ে যান নাগরাজা কৌরব্যার কন্যা উলূপি। কামবাসনা তার মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে। অর্জুনকে নিজের মতো করে পাওয়ার জন্য উলূপি, গঙ্গার জলের গভীরে নিজ রাজগৃহে অর্জুনকে টেনে নিয়ে যান।

উলূপী ছিলেন অর্ধনারী ও অর্ধ মৎস্য। তিনি প্রসিদ্ধ ঐরাবত বংশজাত। এর আগে উলূপির বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের কিছুদিন পর তার স্বামীকে সুপর্ণ অপহরণ করেন। বিধবা উলূপি তার বাবার বাড়িতেই থাকতেন। উলূপির জীবন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। অর্জুনকে দেখা মাত্রই তিনি কামাসক্ত হয়ে পড়েন।

উলূপী বিধবা ছিলেন। অর্জুন আগেই বিবাহিত, তার মধ্যে তিনি ব্রহ্মচারীর জীবন যাপন করছেন। কোনভাবেই তিনি প্রণয়ে জড়াতে পারবেন না জানান। বিধবা উলূপি বিভিন্ন যুক্তির ও রূপের দ্বারা অর্জুনকে বিমোহিত করেন। অর্জুন বলেন যে তিনি উলূপিকে কেবলমাত্র একটি রাত দিতে পারেন। কামাসক্ত উলুপির কাছে সহবাসের একটি রাতই যথেষ্ট ছিল। তিনি রাজি হলেন।

উলূপির সমস্ত কামনা-বাসনা এক রাতে পূরণ করে পরদিন অর্জুন ফিরে এলেন গঙ্গার তীরে। ফেরার আগে অর্জুন উলূপিকে বরদান করেন যে জলের ভেতরে তিনি অজেয় থাকবেন ও জলচরেরা তার বশীভূত থাকবে। তারপর উলূপির সাথে অর্জুন কখনোই আর দেখা করেনি। উলূপিও তেমন কোন আশা করেননি। উলূপি গর্ভবতী হলেন। যথা সময় জন্ম দিলেন পুত্র ইরাবনকে। তিনি ইরাবনকে যোগ্য পুরুষের মতোই তালিম দিয়ে বড় করতে লাগলেন। উলূপির খোঁজ অর্জুন না রাখলেও উলূপি কিন্তু অর্জুনের খোঁজখবর নিয়মিত রাখতেন।

এরপর বহু দেশ ঘুরে অর্জুন এসে পৌঁছান মণিপুরে। এখানে তিনি চিত্রাঙ্গদাকে দেখতে পেয়ে প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন। তিনি তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তার পিতার কাছে। নিজেকে ধনঞ্জয় বলে সেখানে পরিচয় দেন।

চিত্রাঙ্গদার পিতা চিত্রবাহন বলেন মহাদেবের বরে তাদের বংশে শুধুমাত্র পুত্রসন্তানই এতকাল জন্মেছে। এই প্রথম কন্যা সন্তান। যার নাম চিত্রাঙ্গদা। বংশ রক্ষা সেই করবে। চিত্রবাহন চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুনের বিবাহ সম্মত দিয়েছিলেন এই শর্তে যে চিত্রাঙ্গদার পুত্র মাতা মহোদয়ের বংশ রক্ষা করবে। এই শর্তেই অর্জুন চিত্রাঙ্গদাকে বিবাহ করেন। পরবর্তীকালে চিত্রাঙ্গদার পুত্র জন্মালে তাকে কেবলমাত্র তিনি আলিঙ্গন করেন ও বিদায় নেন। পুত্র বভ্রুবাহন হলো চিত্রাঙ্গদার পুত্র।

উলূপিপুত্র ইরাবন অর্জুন পুত্র হওয়ার সত্বেও ওনার পূর্বপতির ক্ষেত্রজ পুত্র হিসেবেই পরিচিত হন। যদিও ইন্দ্রলোকে গিয়ে ইরাবন অর্জুনের কাছে অর্জুন পুত্র বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও পান্ডবদের হয়ে যুদ্ধ করে তিনি প্রাণ দান করেন।

অর্জুন শিখন্ডিকে সামনে রেখে ভীষ্মকে শরসজ্জায় শায়িত করেছিলেন বলে যখন গঙ্গা দেবীর সামনে বসুরা অর্জুনকে নরকবাসের অভিশাপ দিচ্ছেন,তখন উলূপি সেটা শুনতে পান, তার অনুরোধে পিতা কৌরব্য শাপমোচনের জন্য বসুগণকে অনুরোধ করলে বসুগণ বলেন যে পুত্র বভ্রুবাহনের বাণে পরাস্ত হয়ে রণভূমিতে শায়িত হলে অর্জুনের নরকবাসের যন্ত্রণার মুক্তি ঘটবে।

জ্ঞাতিহত্যা শাপান্তে যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্বকে নিয়ে অর্জুন যখন মণিপুরে পৌঁছান তখন পুত্র বভ্রুবাহন যুদ্ধ না করে ভক্তি সহকারে পিতা অর্জুনকে অভ্যর্থনা জানান। অর্জুন পুত্র বভ্রুবাহনকে তিরস্কার করেন। এবং যুদ্ধে আহ্বান করেন। তখন ভূমিতল থেকে উলূপি উঠে আসেন। তিনি নিজেকে বভ্রুবাহনের বিমাতা বলে পরিচয় দিয়ে অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচনা দেন। বভ্রুবাহন যুদ্ধ করেন। তার নিক্ষিপ্ত বাণে অর্জুন যুদ্ধভূমিতে শায়িত হন। বভ্রুবাহনের দ্বারা নিহত অর্জুনকে তিনি সঞ্জীবনী মণি এনে সুস্থ করেন। তখন তিনি বসুগণের অভিশাপের কথা সকলকে জানান।

অশ্বমেধের যজ্ঞে অর্জুনের আমন্ত্রণে চিত্রাঙ্গদা ও বভ্রুবাহনের সঙ্গে উলূপিও এসেছিলেন। বভ্রুবাহন পরবর্তীকালে মণিপুরে ফিরলেও চিত্রাঙ্গদা ও উলূপি থেকে যান পান্ডবদের বাসভবনে।

মহাভারতের অন্তিম পর্বে মহাপ্রস্থানের সময় একমাত্র দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপান্ডবরা গিয়েছিলেন মহাপ্রস্থানে। অন্যান্য কূলবধূরা রয়ে গেলেন হস্তিনাপুরে। চিত্রাঙ্গদা ফিরে গেলেন মণিপুরে। উলূপি কিন্তু পুত্রের কাছে আর ফিরে যান নি। তিনি নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলেন গঙ্গাবক্ষে, সেই হরিদ্বারে, যেখানে তিনি প্রথম স্নানরত অবস্থায় অর্জুনকে দেখেছিলেন। সেই গঙ্গা বক্ষেই ঝাঁপ দিয়ে আত্ম বিসর্জন দিলেন উলূপী। অর্জুনকে তো তিনি প্রাণাধিক ভালোবেসে ফেলেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *