উপলব্ধি
ভোরের সূর্য সবেমাত্র উঠেছে। ঘুম ভাঙ্গা গাছের পাতায় নরম আলো। জলের রেখার সাথে মাছ কিলবিল করছে। পরিচিত পাখিরা প্রতিদিনের মতো ঝিলের ধারে এসে নিজেদের মধ্যে কত কথা বলে। ওদের মধ্যে রাগ অভিমান ঝগড়া ঝাটি সব হয়। শালিক দের ঝগড়া একটু বেশি ভাবে হয়। ঘুঘু পাখি গুলো জোড়ায়এলেও একা একা ঘুরে ঘুরে খায়। কি সুন্দর চেহারা। রূপবতী ওরা। শালিক গুলো প্রথমে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে পোকাগুলো ধরে খাচ্ছিল, এরপর জোড়ায় জোড়ায় গাছে বসে আছে। আমরা জোড়া শালিক দেখতে ভালোবাসি। তাই কয়েকজন কে দেখলাম কপালে হাত ঢুকলো, অর্থাৎ প্রণাম। সারাদিন আজ তার ভালো যাবে। পাড়ার কুকুর গুলো ভোর থেকেই উঠে পড়ে পাহারা দেয়। অন্য অচেনা কুকুর যাতে পাড়ায় ঢুকতে না পারে। রাতে লোক পাহারা দেয় ,আর দিনের বেলা অন্য পাড়ার কুকুরকে পাহারা দেয়। নিজেদের মধ্যে কিছুটা কথা বলে নিল। পাড়ায় ওদের এখন দুটো ঠেক। একেবারে সামনের দিকে, যেখানে এক ম্যাডাম প্রচুর খাবার দেন ওদের। তার সন্তান নেই। পাড়ার কুকুর বেড়াল ওনার সন্তান। আরেকটা ঠেক একগাদা ওদের খেতে দেন, পাড়ার শেষ প্রান্তে। দু’জায়গায় ওরা স্বাধীনভাবে যেতে পারে না। দু’দলের মধ্যে সামান্য কথাবার্তা হয়। তবে যাওয়ার অধিকার নেই। প্রতিবেশীকে সাহায্য করবার জন্য একে অপরের কাছে যায়। মাঝে মাঝে নীলু বাইরে বের করলে কেউ যদি নীলুকে বকে, অপরজন ছুটে এসে সমাধা করে দেয়। অর্থাৎ নীলু ওদের পাড়ার একজন। বেশ মজা লাগে ওদের কে দেখতে। কিছু বিড়াল ওদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করে। তবে অন্য কেউ পাড়ায় বিড়াল ছেড়ে দিয়ে গেলে, ওরা কেউ কেউ ওগুলো কে মেরে ফেলে। বেশ সুন্দরওদের জীবন। সব মানুষগুলোর সাথে ওদের সখ্যতা রয়েছে। কেউ কেউ অপছন্দ করলে তাদেরকেও ওরা ভালোবেসে কাছে নিয়ে নেয়। ওদের এটা বড় বৈশিষ্ট্য। কাকেরা বাসা ছেড়ে চলে এসেছে আশপাশে। যেন বাড়িগুলো ওদের নির্দিষ্ট করা। সেখানে অন্য কোন কাক আসে না। চিৎকার-চেঁচামেচি, ওদের এলাকা’ ভাগ করা থাকে। ভোরবেলা বহু মানুষ এ রাস্তা দিয়ে হাঁটে। আগে সবাই ভয় পেত কুকুরের জন্য। এখন আর কেউ ভয় পায় না। মাছেরা দলবেঁধে খেলা করে। ওদেরও আলাদা আলাদা জায়গা রয়েছে। ওরা নির্দিষ্ট কয়েকজন মিলে একটা করে দল গড়ে। একটা লাল মাছ আমাদের সকলের নজর কাড়ে। জেলে ভাইরা জাল দিলে কখনো কখনো ধরা পড়ে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসে। পাড়ার প্রতিটা মানুষ ওকে চেনে। তাই জাল থেকে ছাড়িয়ে ওকে জলে ছেড়ে দেয়। এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। তবে যে জায়গাটায় বেশি জাল তোলা হয় ওই খান থেকে ও চলে গেছে আর একটু সামনের দিকে। ওকে খুঁজে পাই এখন ওর নতুন জায়গায়। আমাদের দিকটায় এখন আর আসে না। বেশ মজার জীবন। এদেরকে নিয়ে সুখে আছি আমরা।