যেদিন
আমার আত্মা আমাকে ছেড়ে গেছিল,
যেদিন আমি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম
যেদিন নিজের হৃদয় টুকরো হয়ে গেছিল আবারও..
যেদিন একাকীত্বের অঙ্গীকারে
প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু হচ্ছিল আমার,
যেদিন বুকফাটা কান্নায় আমি হাহাকার করছিলাম,
চিৎকার করে ঈশ্বরকে বলছিলাম
“কেন ঠাকুর,কেন?
শুধু আমার সাথেই কেন ?
বলে দাও এবার আমি বাঁচবো কেমন করে ?”
সেদিন ঈশ্বর কোনো উত্তর দেয় নি !
সেদিন শুধু তুমি …
কেবল তুমিই হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও
নিজের বুকে টেনে নিয়েছিলে,
বলেছিলে …
“এসো , আমার বুকে মাথা রাখো…
যত খুশি কাঁদো”
মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলে
“আমার পাগলী মেয়েটা”….
আমি কাঁদলাম সমস্ত কিছু ভুলে নিজেকে উজাড় করে ।
অনেকক্ষণ পর যখন আমার চৈতন্য হল
যখন আমার বাস্তব সত্তা উপলব্ধি হল
যখন আমি শান্ত হলাম
তখন তুমি আমাকে বোঝালে জীবন দর্শন ,
বোঝালে আমাদের অহং…
আমি বুঝলাম
নিজের অহং পরাজিত হয়েছে নিজেরই কাছে ,
তাই বুঝি এত কষ্ট !
বোঝালে আমাদের ভ্রান্ত উপলব্ধি…..
আমি বুঝলাম
নিজেকে ছাপিয়ে অন্যকে গুরুত্ব দেওয়া অন্যায় ।
বোঝালে সঠিক মার্গ
আমি বুঝলাম অন্যের কাছ থেকে কিছু আশা করার অর্থ নিজেকেই অপমান করা ,
দেখালে আলোর উৎস ,
আমি দেখলাম
এক মুঠো রোদ্দুর কেবল আমার অপেক্ষাতে….
আমি হাসলেই ওরা হাসবে ,
আমি গাইলেই ওরা ঝলমল করে উঠবে ।
আমি যত বুঝলাম ,
ততটাই কঠোর হলাম,
ততটাই স্থির ,ততটাই নম্র ,
ততটাই উর্দ্ধে উঠলাম নিজের অহং এর…
ততটাই আঁধার কাটিয়ে আলোর শিখায় স্নাত হলাম…
ততটাই স্নিগ্ধ , ততটাই শীতল হলাম …
আমার বেদনা বিষাদ যন্ত্রনা কষ্টের ঘুণপোকাগুলোকে
উড়িয়ে দিলাম নীল আকাশে…
হা হা করে হেসে বিদ্রুপ করে ওরা
তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ল আকাশ জুড়ে ।
একদিন বৃষ্টিভেজা রাতে আমার আত্মা এসে
বলল “এত হাসছো যে ?”
আমি বললাম “তুমি এলে তাই” !
হে বুদ্ধ , আমার ঈশ্বর
তুমি নিঃস্বার্থ ভাবে
আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছো…
উত্তরণের পথ দেখিয়েছো ।
এখন আমি ভ্রান্ত অহং ভুলে
তোমার জ্ঞানের আলোকে
আলোকিত ,
আপন আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার প্রচেষ্টায়…
আমার এ জীবন শুধু তোমারই দান ।
প্রিয়জনের পরিবর্তনে একটুও কষ্ট পাই না আর !
এখন ভালোবাসার বদলে অবহেলা পাওয়াতেই
আমার কাঙ্ক্ষিত কর্মের সাফল্য ,
অশ্রুর আলিঙ্গনেই আমার মুক্তি !
এখন পরমই আমার জীবন….
পরমই আমার পিতা….
পরম প্রেমই আমার সাধনা…
হে পুরুষোত্তম ,পরম করুণাময়
আমি বড় ক্লান্ত…..
তোমার কোলেই মাথা রেখে ঘুমোতে চাই
শেষবারের মতো..
তোমার কোলটা একটু পেতে দেবে ?
বলো , দেবে ?