উন্মুখ এক ঝড়
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর সোমা নিজেকে বেশ বড় ভাবতে শুরু করেছে। তাছাড়া আঠার বছর বয়স হয়েছে।সাবালিকা হয়েছে। এবার কলেজে পড়বে।সব বন্ধুর ছেলেবন্ধু আছে। এবার ছেলে বন্ধু করতে হবে।তার মধ্যে যে ভালো তাকে ভাবছে মনের মানুষ করে নেবে। নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে বলে শুধু পাকা পাকা ভাবনা।আসলে এ হলো বয়সের দোষ।মনের ঝড়।
নৈহাটি কলেজে জুলজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয় সোমা।সোমাদের বাড়িতে এক ভাড়াটে ছিল।ও পাইলট ছিল। দিল্লির ছেলে।ওর কাজের সুবিধার জন্য দমদমে ভাড়া খুঁজছিল।তাই সোমাদের বাড়িতে ভাড়া নেয়। সোমার সাথে ছেলেটার আলাপ ছিল না কিন্তু মা বাবা র সাথে খুব গল্প করত।সোমার মা নানান খাবার বানিয়ে খাওয়াত “অম্বর” নামের ভাড়াটে পাইলটকে। সোমার সাথে অম্বরের আলাপ সোমার জন্মদিনে। ছুটির দিনে সোমা অম্বরের সাথে গল্প ও করত।সোমা অম্বরের চাহনি দেখে বুকের মধ্যে ধুকপুক করতে শুরু করে।#উন্মুখ এক ঝড় ।এরপর দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব ও প্রেম হয়। একদিন ফাঁকা বাড়িতে বাবা মা’র অনুপস্থিতিতে সোমা ও অম্বরের মনের ঝড় ঘূর্ণিঝড়ের মতো তান্ডব চালায় মনে ও দেহে। তারপর সোমার জীবনে আসে অশনি সংকেত।।
দিল্লিতে অম্বরের বাবা- মা’র দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে শুনে অম্বর চলে যায় আর ফিরে আসে না।ফোন করলে ও ধরে না। জিনিসপত্র রেখে সেই যে চলে গেল কাঁদতে কাঁদতে। শুধু বলে গেছিল অপেক্ষা করো সোমা। তোমাকে খুব ভালোবাসি ।
দিন যায় সোমা নিজেকে গৃহবন্দি করে। সোমারজীবনে
#”উন্মুখ এক ঝড়”।
বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে বাচ্চা নষ্ট করা যাবে না।
সোমাকে নৈনিতালে মাসীর বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।মাঝে মাঝে অম্বরের ফোনে ফোন করে কিন্তু ওই নাম্বার সুইচ অফ বলে। সোমা নৈনিতালে পড়াশোনা করে বি এস সি করে এম এস সি ও পড়ে। দেখতে দেখতে বাচ্চাটার বয়স আট বছর ।মাসি মেসোকে প্রশ্ন করে তার বাবা কোথায়?
মেসো বলেছে তোর বাবা পাইলট।অম্বর দাশগুপ্ত। কোথায় একটা দেশে
গেছে ।
মেসো ‘অমর্ত’কে গীতাঞ্জলিতে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যায়। ওখানে ‘রাকা ‘বলে একটি ছেলের সাথে আলাপ হয়েছে।ওর বাবা ও মা নেই। মামার সাথে আসে।রাকা বলেছে অমর্ত তোর মা’র কাছে নিয়ে যাবি। আমারতো মা নেই দেখব মা কেমন হয়?বড় লাল টিপ পরে।সাদা লাল পাড় শাড়ি পরে তুলসী মঞ্চে প্রদীপ দেয়।সব গল্প রাকা মামার কাছে শুনেছে।
সোমা শুনে চমকে গেছিল “রাকার “মামার নাম অম্বর দাশগুপ্ত। উনি ব্যবসা করেন। একদিন ক্রিকেট খেলে অমর্ত ‘রাকার’ বাড়ি গিয়েছিল।
তাই ‘অমর্ত ‘ফোন করে মাকে জানাই মা ,’রাকা’ আজ আসবে আমাদের বাড়িতে। আজ ‘রাকার’ ইচ্ছা পূরণের জন্য ওই লাল পাড় সাদা শাড়ি পরি। ‘রাকা’ আমাকে দেখে বলে তোমাকে তো মামার গল্পের মতো লাগছে ।
কিন্তু মামাতো দেখতে পেল না!
তোমার মামা কোথায় গেছেন!!
ভিতরে ডেকে আনো?
কি করে বুঝব-
“উন্মুখ এক ঝড়”…কাকে দেখছি!
সেই চাহনি।যেন নারকেল কুড়ানি দিয়ে অন্তরটা কুড়িয়ে দিল।
এই ঝড়ের দাপট সোমা সহ্য করতে পারে না। মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।সোমার জ্ঞান ফিরতেই দেখে সোমার চারপাশে অম্বর , বাচ্চা দুটি , মেসো ,মাসি দাঁড়িয়ে।
উঠে বসতে না বসতেই ঘর ফাঁকা। শুধু রয়েছে অম্বর।অম্বর সোমাকে প্রশ্ন করে অমর্তর বাবা আর কিন্তু পাইলট নয়।এখন মস্ত ব্যবসাদার।
অমর্তর মায়ের অমর্তর বাবাকে চলবে তো!!
সোমা বলে তুমি সেই যে চলে গেলে ফিরলে না কেন?
এমন কি ফোনটা ধরতে না!!
সোমা শুনবে— ‘রাকা’ তখন আট মাস বয়স। দিদি , জামাইবাবু,বাবা মা চার জনের একসাথে মৃত্যু আমি নিজে এক বছর অসুস্থ ছিলাম। তারপর থেকে জামাইবাবু র ব্যবসা সামলাতে থাকি।
সোমা কান্না করে বলে একটা ফোন করতে পারতে!!
এক বছরে সোমা তোমার নম্বর ভুলিয়ে দিয়েছিল।তারপর কাজে মন দিয়ে ফেলি।তবে অবচেতনে তোমাকে খুঁজে বেড়াতাম।
আজ সোমার বিয়ে ।দুই ছেলে মামী ও মার বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত।
মা ও বাবা বিয়েতে এসে তাদের ভাড়াটেকে দেখে বলে আট বছরের ভাড়া বাকি।এবার কোলকাতায় গিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে ঘর ফাঁকা করে দিও।
বিয়ের বাড়িতে সবাই নানান মশকরাতে ব্যস্ত।
সোমা গুণগুণ করে গান ধরে-
“একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে,”।