Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উত্তেজনা || Samarpita Raha

উত্তেজনা || Samarpita Raha

উত্তেজনা

অনুপমবাবু বিমানবন্দরে পার্সেলের অপেক্ষায় ধৈর্যচ্যুত হয়ে ছটফট করছেন। তিনি বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টা আগেই উপস্থিত হয়েছেন। একবার মনে মনে ভাবেন ভালো হয়েছে , রাস্তায় যা যানজট।যদি পৌঁছাতে দেরি হতো। ছটফট করতে করতে ঘড়ির কাঁটা কিঞ্চিত সরে। বাইরের চেয়ারে বসে ফুরফুরে হাওয়ায় ঝিমাতে থাকেন। হঠাৎ ছেলে এসে বলে বাবা দেরি আছে, সব সময় ছোট থেকে দেখছি আমায় স্কুলে এক ঘন্টা আগে পৌঁছে দিতে। মায়ের চেয়ে তোমার ছটফটানি বেশি । কলেজ থেকে আসছে না কেন !ঘন ঘন ফোন! বন্ধুরা ফোন আসলে বলত ওই “রাজন” তোর বাবার ফোন এসে গেছে!! বাবার নানা প্রশ্ন! কি করছিস? কোথায় আছিস! সাবধানে রাস্তা পার হোস। বিরক্তি প্রকাশ করে রাজন দেখে মায়ের ফোন। হ্যাঁ মা বলো, তুমিতো অকারণে ফোন করো না!! মা, কিছু কি দরকার আছে?? মা চুপ করে থাকতেই বুঝতে পারে রাজন মায়ের ফোন থেকে বাবা হয়তো করেছেন। হাহাহা করে ‘রাজন’ হেসে বলে, তুমি পারো বাবা! বাবা তোমার ফোন ধরি না ,বলে মায়ের ফোন থেকে ফোন করছ। হঠাৎ কাঁদছ কেন! অবলীলাক্রমে রাজনের বাবা বললেন তোর মা চলে গেছেন।ডাক্তার জবাব দিয়ে গেলেন। বাড়িতে এসে রাজন তার বাবার লাঠি হলো। সেই লাঠি ধরে বাবা *হাঁটি হাঁটি পায়ে পুনরায় হাঁটতে শুরু করেন। বাবা একাধারে রাজনের মা ও বাবা হয়ে উঠলেন। রাজনকে জোর করে রিসার্চ করতে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলেন। বাবার খোঁজ নিতে নিতে ছেলে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। বাবা যা ছোটতে করতেন এখন ছেলে সেটাই করে। ও বাবা খেয়েছ! খাওয়ার পর পায়চারি করেছ! বাবা তুমি এখানে চলে এসো না । তোমার জন্য খুব চিন্তা হয়। হঠাৎ একদিন ছেলে বলে বাবা আমি মনামীকে বিয়ে করেছি। ও ব্যাঙ্গালোরের মেয়ে। বাবা ও মা নেই। বিয়ে করেছি বলে তুমি এত খুশি হলে বাবা! ভেবেছিলাম হঠাৎ বিয়ে করাতে তুমি নিশ্চয় রাগ করবে। বাবা বলেন খুব নিশ্চিন্ত লাগছিল। তাইতো বেটা খুব খুশি হয়েছিলাম। তোমার তো মা নেই! কেউতো তোমাকে দেখবে , সেটা ভেবেই খুশি হয়েছিলাম। কবে আসছিস?দেশে ফিরে আয়। বাবা তোমার বৌমার বাচ্চা হবে!! রাজন বলে আসব আসব , ঠিক ফিরে আসব।

হঠাৎ এক বাচ্চার চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে যায়। অনুপম বাবু চোখ রগড়ে দেখেন এগারোটা ! তাহলে তো বিমান এসে গেছে। হাঁটি হাঁটি পায়ে এগিয়ে অনুপমবাবু গেটের কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন এগারোটার বিমান…. আসলে একটা জিনিষ আসার আছে! ওখানকার কর্মকর্তা বলেন বিদেশ থেকে বুঝি আপনার ছেলে জিনিষ পাঠাচ্ছেন,তাই এত উত্তেজনা!

ততক্ষণে ছেলের একটা বড় ছবি উঁচু করে ধরেন। নতুন বৌমা একা আসছে।ও তো শ্বশুর-বাড়িতে প্রথম আসছে! একজন বলে দশ মিনিট বাদে ল্যান্ড করবে প্লেন। অনুপম বাবু ওখানকার কর্মকর্তাকে বলে আপনি বলছিলেন না ছেলে জিনিষ পাঠিয়েছে কিনা! আমার ছেলের বৌ আমেরিকা থেকে শ্বশুর-বাড়িতে প্রথম আসছে! অনুপম বাবু রুমালে চোখ মুছে বলেন একমাত্র ছেলের ছাই ও বৌমা র সঙ্গে বংশধর আসছে!

বিমান থেকে বৌমার ফোন বাবা নেমে গেছি। অনুপম বাবু বলেন গেটের বাইরে “রাজনের” ছবি নিয়ে অপেক্ষা করছি। তুমি সাবধানে এসো মা। মর্মান্তিক ঘটনা যারা যারা আশেপাশে শুনতে পেলেন, একেবারে স্তম্ভিত হন সকলে। অনুপম বাবু বুক ফাঁটা কান্না চেপে বলেন, আমি ঠিক আছি।আমাকে ঠিক থাকতে হবে।রাজনের মা যেমন সব দায়িত্ব দিয়ে অসময়ে চলে গেছে।মা ন্যাওটা ছেলেটাও পোয়াতি বৌয়ের দায়িত্ব দিয়ে কেটে পড়েছে। একবার ও ভগবান রাজনের বাবার কথা ভাবলেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress