উত্তরসাধক (Uttarsadhak) : 12
এবার অরুণা দিল্লি থেকে ফিরলেন বড় অন্যমনস্ক হয়ে। মৈথিলী এখন এতো ব্যস্ত যে সে মায়ের এই ভাবান্তর লক্ষ্যই করল না। রাতে দুজনে খেতে বসে, মৈথিলী খেতে খেতে পড়ে, অনেক সময়ে কয়েক গ্রাস খেয়ে নিয়ে বলে—‘মা উঠব?’
—‘ওঠ।’
—‘তোমার দেরি আছে?’
—‘না, হয়ে এলো।’ মা যে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, ভালো করে খাচ্ছে না বা খেতে পারছে না, মৈথিলীর নজরে পড়ে না।
খাওয়ার পরে সে নিজের ঘরে চলে যায়, হয় পড়তে থাকে, নয় ছাত্রসংঘের কিছু-কিছু হিসেব-পত্র করে। অনেক সময়ে অরুণা ঘরে ঢোকেন।
—‘কি করছিস, মুন্নি?’
—‘পড়ছি মা, তোমার ঘুম পায়নি।’
—কিরকম একটা চাপা অভিমানের সঙ্গে অরুণা বলেন—‘হ্যাঁ, এইবার ঘুমোব, যাই।’
মাঝে মাঝে সামান্য একটু গল্প করে মৈথিলী। বেশির ভাগই তার কাজের গল্প। মা ফিকে হেসে বলে—‘বাঃ, তা হলে তো তোরা সত্যিই ভবিষ্যৎ ভারতবর্ষের জন্ম দিচ্ছিস!’
মৈথিলী বলে—‘মা, আমি অত বড় করে ভাবি না। একেবারে সামনে, এক্ষুনি যে কাজটা রয়েছে সেটাকেই করে ফেলতে চাই। আমার যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু দিয়ে। কেওড়াখালির একটা ম্যাপ দেখিয়ে মাকে সব কিছু বোঝাতে থাকে সে।
কয়েকদিন পর সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে বসবার ঘরে একজন অস্বাভাবিক কালো গ্রাম্য মানুষকে বসে থাকতে দেখল সে। ধপধপে শার্ট আর প্যান্ট পরে ভদ্রলোককে আরও কালো দেখাচ্ছে। চওড়া চোয়াল। মাথায় ঘন চুল। মার সঙ্গে কথা বলছেন। মৈথিলী ভেতরে চলে যাচ্ছিল। মা ডাকল—‘মুন্নি, এদিকে এসো একবার।’ সে কাছে আসতে বললো—‘ইনি মহাদেব সোরেন, তোমার বড় মামা।’
মৈথিলী তার সমস্ত বিস্ময় চেপে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে যাচ্ছিল, ভদ্রলোক খুব সঙ্কুচিত হয়ে তাঁর ধূলিধূসরিত চটি-পরা পা দুখানা সরিয়ে নিলেন। বললেন—‘বাস, বাস, তুমার কন্যা তুমারই মতো স্কলার হচ্ছে তো! আয়ে এস হবেক?’
মা বললে—‘না, ও ডাক্তার হচ্ছে।’
—‘ডাক্তার! উ ডাক্তার! বা! বা! বা! একটা কম্মের মতো কম্ম হইচে। বাঃ ডাক্তার?’
মা বললে—‘ভেতরে যা মুন্নি, বৈজু খাবার দেবে।’
কথাটা বলার দরকার ছিল না। মৈথিলী চলেই যেত। এ ঘরটা তাদের সম্পূর্ণ বাইরের লোকেদের বসবার ঘর। বাবার অফিস-সংক্রান্ত অতিথিরা এখানে বসেন। ভেতরে রয়েছে মস্ত বড় হল। তার একদিকে বসবার আয়োজন, আরেক দিকে খাওয়ার টেবিল, ফ্রিজ, সাইড বোর্ড। ঘনিষ্ঠ জনেরা ভেতরের এই ঘরে বসেন। সে ভেতরে যেতে বৈজুদা খুব গম্ভীর ভাবে টেবিলে জলখাবার রেখে বলল—‘মড়া কেটেছো মুন্নি, জামাকাপড় ছাড়ো আগে!’
—‘কি আশ্চর্য! মড়া কাটিনি! ওসব অনেক দিন হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো!’
—‘তোমাদের আর কি! ঘেন্না-পিত্তি নেই।’
মৈথিলী সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এসে বসল। তার ভীষণ খিদে পেয়েছে। হঠাৎ বৈজু বলল—‘এবার বাড়িতে এতো সাঁওতাল আসে কেন মুন্নি! জানো?’
—‘একদম না’, মৈথিলী বলল, বোঝাই যাচ্ছে এই ভদ্রলোকের পরিচয় এখনও বৈজুদা জানে না, সে হেসে বলল—‘এলে তোমার আপত্তি আছে না কি?’
বৈজু মুখটাকে গোমড়া করে রেখেছে। সে বিহারী ব্রাহ্মণ! তার অনেক বাহানা আছে। বহু দিন ধরে সে সাহেব-মেমসাহেবদের সঙ্গে থেকে থেকে একরকম বাঙালিই হয়ে গেছে। কিন্তু তার জাত্যভিমান যায়নি।
মৈথিলীর মনে হল মস্ত একটা ভুল হয়ে গেছে, তার বয়স্ক-শিক্ষার তালিকার সর্বপ্রথমে বৈজুদার নাম থাকা উচিত ছিল। বৈজুদা অবশ্য সাক্ষর। সে নিয়মিত পোস্ট-অফিসে টাকা রাখতে যায়, টাকা তোলে, মনি-অর্ডারের ফর্ম ভর্তি করে, তুলসীদাসও পড়ে, কিন্তু মৈথিলীদের লক্ষ্য সাক্ষরতা নয়, শিক্ষা। প্রথম-প্রথম ওরা ব্যাপারটা অতটা বোঝে নি। কিন্তু একটা মাত্র প্রোগ্রামে গিয়েই ওদের চোখ ফুটে যায়। অক্ষর পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন ওরা কুসংস্কারের ভিতটা ধরে আস্তে আস্তে টান দেয়। চুপচাপ খাওয়া-দাওয়া সেরে সে বাথরুমে ঢুকল। চান করল বেশ অনেকক্ষণ ধরে। ঠিক এই সময়টায় সে সাধারণত বাড়ি ফেরে না। আজকাল ছাত্রসঙেঘর একটা স্থায়ী অফিসের দরকার হচ্ছে। এতদিন কখনো উজানের বাড়ি, কখনো প্রমিতের বাড়ি, এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে তারা দরকারি ফাইলপত্র রাখত। এখন একটা ফাইল ক্যাবিনেট কেনা হয়েছে। মেধাদির বাড়ির নিচের তলাটা ফাঁকা থাকে, একখানা ঘর উনি ছেড়ে দিয়েছেন সেক্রেটারিয়েট টেবিল, পুরনো দিনের সিন্দুক এইসব ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। কলেজ ফেরত প্রায়ই ওখানে গিয়ে কাজ করতে হয় দুজন কি তিনজন মিলে কাজ সারে। এক-এক দিন ফিরতে বেশ রাতই হয়ে যায়। গত ক’দিন ধরেই তার ভীষণ খাটুনি যাচ্ছিল, মেধাদি বলে দিয়েছিলেন এ সপ্তাহের বাকি দিন কটা লুকু, গুঞ্জন আর বুল্টু কাজ করবে। মৈথিলীর ছুটি। কলেজ থেকে আজ সোজা বাড়ি এসেছে সে।
এই সাঁওতাল ভদ্রলোকটি তার মামা? জীবনে এ কথা মৈথিলী এই প্রথম শুনল। সে চিরকালই সরকারি বাংলোর আবহাওয়ায় মানুষ হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে তার মা-বাবার সম্পর্ক কম। বাবার বন্ধু-বান্ধবের অভাব নেই। তাঁরা তাদের পারিবারিক বন্ধু, কিন্তু বাবার দিকে তার বিশেষ কেউ নেই। ঠাকুমা যতদিন ছিলেন, বাবা যাতায়াত করতেন ভাগলপুরে। কিন্তু ঠাকুমা তার খুব অল্প বয়সে মারা গেছেন। মাকে সে চিরকালই খুব নিবিড়ভাবে পেয়েছে, কিন্তু কখনও বিশেষ মামার বাড়ির কথা বলতে শোনেনি। নীতামাসি বলে একজনই মাসি আছে তার, তাঁর বাবা-মা, মায়ের জ্যাঠামশাই, জেঠিমা। তবে একেবারে নিজের নয় এটাই তার জানা ছিল। এই দাদু-দিদা এখন থাকেন পণ্ডিচেরির আশ্রমে, নীতামাসি থাকেন মাদ্রাজে। দাদু-দিদা তো কখনোই আসেন না। নীতামাসিকেও সে বড় হবার পর মাত্র দুবার দেখেছে।
আজ চান করতে করতে সে ভাবতে লাগল তাহলে তার মার আপন জনেরা ছিলেনই নীতামাসিরা ছাড়াও? তার বড়মামা সাঁওতাল? কিন্তু নীতামাসিরা তো ঘোষ, সোরেন পদবীর সঙ্গে ঘোষ পদবীর তো কোনও সম্পর্ক নেই? সবই কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ টয়লেটের আয়নায় নিজের মুখের ছায়ার দিকে তার নজর পড়ল। মুখটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল মৈথিলী। হ্যাঁ, সন্দেহ নেই। এই চোখ মুখ নাক সব আদিবাসী ফীচার্স। তার মা চকচকে কালো, মহাদেব সোরেনের মতো কাজল কালো নয়। তামাটে কালো, মায়ের ফিগার অসাধারণ।
মায়ের ঠোট অবিকল তার মতো। তবে মা তার চেয়ে খানিকটা লম্বা, সুন্দরও বটে। মায়ের চেহারার মধ্যে একটা অদ্ভুত অভিনবত্ব আছে, নীতামাসি, রঞ্জুমাসি এদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটা স্বতন্ত্র চটক। মায়ের চেহারার কথা কোনও সন্তান ঠিক এভাবে কখনও ভাবে না। কথাগুলো শুধু মনের তলায় থাকে। এখন নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মাতৃরূপকে এইরকম সচেতনভাবে বিশ্লেষণ করল মৈথিলী। জলের ধারাগুলো তার বাহু বেয়ে কনুইয়ে, গলা বেয়ে বুক ছাপিয়ে নাভিতে নেমে যাচ্ছে গড়িয়ে গড়িয়ে, মৈথিলীর সারা শরীর রোমাঞ্চিত হচ্ছে। সে তাহলে অস্ট্রো-দ্রাবিড়, নাকি আরও সহজভাবে বলতে গেলে নিষাদ! এই ভারতবর্ষের সবচেয়ে আদিম অধিবাসী। যারা ক্রমশ কোণঠাসা হতে হতে অবশেষে অরণ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। কিংবা বরাবরই অরণ্যবাসী। অরণ্যের আশ্রয় কোনদিন ছাড়তে চায়নি। অমিশ্র ‘নিষাদ’ জাতির সঙ্গে মিশ্র আর্যরক্তের মিলনে তবে সে তৈরি হয়েছে? একদিক থেকে দেখতে গেলে সে তো অন্যান্য অনেকের চেয়েও বিশুদ্ধ ভারতবাসী।
ভালো করে গা মাথা মুছে, বাথরোবটা গায়ে জড়িয়ে সে যখন হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে সবে তার চুলগুলোকে শুকোতে আরম্ভ করেছে তখন তার মা ঘরে ঢুকল। মা কি রকম অন্যলোকের মতো তার দিকে তাকাল। কেমন ব্যস্তভাবে বলল, ‘মুন্নি, আমাকে শিগগিরই তোমার মামাদের ওখানে যেতে হবে। হয়ত বেশ কিছুদিন আসতে পারব না। তুমি বাবা এলে কথাটা বলবে। চালিয়ে নিতে তো নিশ্চয় পারবে।’
মৈথিলী গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল ‘মা, এমন তুমি তুমি করে কথা বলছ কেন আমার সঙ্গে? কোথায় যাবে? ঠিক কোন জায়গায় আমার মামার বাড়ি? হঠাৎ এতদিন বদে কেন সেখানে যেতে চাইছ? আমায় বলবে না। আমি তোমাকে আমার সব আশা আকাঙ্ক্ষা প্ল্যান প্রোগ্রামের কথা বলি না?’
অরুণার স্তিমিত চোখ। তিনি ম্লান হাসি হাসলেন, বললেন—‘আমার অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিল। আমি খুব ভুল করেছি, অন্যায় করেছি। তোমাদের কথা ভেবে করেছি। যাইহোক এখন তুমি বড় হয়ে গেছো, তোমার বাবার তো কাউকেই আর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আর আমার অতটা দায়িত্ব নেই। তোমাদের প্রতি কর্তব্যের ছুতো করে এখন আর আমি আমার নিজের লোকেদের দায়িত্ব এড়াতে পারি না।’
মৈথিলী অনুভব করল মা হঠাৎ যেন অনেক দূরের মানুষ হয়ে গেছে। মায়ের শরীরে মনে একটা অসম্ভব কঠিনতা, যার মুখোমুখি তাকে কখনও হতে হয়নি। টেলিফোনেও মাকে কখনও এত সহস্র যোজন দূর মনে হয়নি। তার আগে কখনও ভয় করেনি, কিন্তু এখন তার সারা শরীর ভয়ে শির শির করতে লাগল। সে প্রায় বোবা স্বরে বলল—‘মা, তুমি এমন মিস্টিরিয়াসলি কথা বলছ কেন?
আমায় পরিষ্কার করে সব খুলে বল। বিশ্বাস করো, আমি ঠিক বুঝব।’
অরুণা মৈথিলীর চেয়ারে বসে পড়লেন। বললেন, ‘মুন্নি আমি কি কখনও তোকে অযত্ন করেছি? তোর বাবার প্রতি কর্তব্যপালনে কখনও গাফিলতি দেখেছিস?’
‘না তো মা। এসব প্রশ্ন উঠছে কেন?’
দূরের দিকে চেয়ে আছেন অরুণা। যেন মুন্নির কোনও প্রশ্নই তিনি ঠিকঠাক শুনতে পাচ্ছেন না। বললেন—‘অথচ এই আমিই আরও অনেক গুরুদায়িত্ব ঘাড় থেকে নামিয়ে দিয়ে এসেছি। সে কি সুখ স্বাচ্ছন্দ্য টাকা পয়সার লোভে?’
শেষের প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করলেন অরুণা!
‘মা, তুমি যে কি বলছ, কেন বলছ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’ মৈথিলী ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল।
—‘তোর মামা। তোর মামার বাড়ির দিকের সবাই খালি এই একই কথা বলে।’
‘কেন, কী দায়িত্ব, আমায় বুঝিয়ে বলল।’
অরুণা বললেন—‘খাতা কলমে আমার নাম রাধিকা সোরেন, মুন্নি, যদি চাকরিটা করতুম এখনও এই নামটাই চালু থাকত। গৃহবধূ হয়ে গেছি বলে তোর আর জানার দরকার পড়ল না। আমি লোধাসুলির সাঁওতাল পল্লীর মেয়ে। আমার বাবা মা যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাকে রাধি বলে ডাকতেন। ক্রিশ্চান মিশনারিরা আমাদের পড়াতো। তা ছাড়াও দিত দুধ, মুরগীর ডিম। পল্লীর সব ছেলেমেয়েকে ডেকে ডেকে দিত, তার সঙ্গে খ্রীস্ট ধর্ম প্রচার করত। আমাদের মধ্যে অনেকেই এভাবে ক্রিশ্চান হয়ে গেছে। আমার সম্পর্কে ওদের আশা ছিল আমি ওদের সিস্টার্স অফ চ্যারিটিতে যোগ দেবো। সেভাবেই আমাকে গড়ছিল ওরা। কিন্তু আমার পরিবারের লোকেরা ধর্মান্তরিত হতে চাইত না। ওদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখত। আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ব, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমার নিজের লোকেদের জন্য কাজ করব এই চাইত আমার মা বাবা এমনকি পল্লীর অনেক মাতব্বর লোকেরাও। মিশনারিরা যেদিন জানল আমাকে কিছুতেই ক্রিশ্চান সন্ন্যাসিনী বানাতে পারবে না, ওরা আমার পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য করা ছেড়ে দিল। আমার তখন আরও শেখবার অদম্য ইচ্ছে। মিশনারি বোডিং ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেলাম। আমার বাবা আন্নু সোরেন পল্লীর প্রধানদের সঙ্গে কথা বললেন, সবাই একবাক্যে বলল স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় জলপানি পাওয়া মেয়ে একদিন বড় আরও বড় হয়ে পুরো পল্লীর মানুষকে বাঁচাবে। কেউ কেউ অন্য কথা বলেছিল, কিন্তু যারা দেশের হালচাল বোঝে, আমার বাবা বা দাদার মতো খবরের কাগজ পড়তে শিখেছে তারা সবাই বলল—‘আমাদের শিডিউলড ট্রাইবস বলে অনেক বিশেষ সুযোগ সুবিধে দিচ্ছে সরকার, সে সব আমরা সব বুঝিও না। অন্য লোকে ট্রাইব্যাল সেজে সে সব নিয়ে নিচ্ছে। আমরা পড়ে আছি অন্ধকারে।’ আমাকে ওরা লেখাপড়া শেখাতে চাইল। ঝাড়গ্রাম কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হলাম। সে সময়ে আমাকে সাহায্য করেছিলেন একটি বাঙালি পরিবার। নীতার বাবা সৌরীন ঘোষ আর মা রাণী ঘোষ।’
মৈথিলী বলল—‘দাদু দিদা তোমার কেউ নন? আশ্চর্য। আমি তো কখনও বুঝি নি।’
—‘আশ্চর্যই। উনি তখন ছিলেন মেদিনীপুরের ডি এম। বাবা ওঁর বাংলোয় আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন যদি ওঁর বাড়িতে কাজকর্ম করে আমি পড়াশোনা করতে পারি। তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমাকে দেখে ওঁদের কি রকম খটকা লাগে। ওঁরা জেরা করে করে বাবার কাছ থেকে আমার কাছ থেকে সব শোনেন। তারপর বলেন—‘পরীক্ষায় জলপানি পাওয়া মেয়েকে দিয়ে আমরা তো দাসীবৃত্তি করাতে পারব না। আপনার যদি এতোই দরকার হয়, ওকে এখানে রেখে যান, আমার মেয়েও যেমন সংসারের কাজ দরকার পড়লেই করে ও ও তেমনি করবে। এখানে ও নিঃসঙ্কোচে থাকুক।’
মৈথিলী উত্তরোত্তর আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছিল। বলল—‘মা, তুমি যে এ রূপকথা শোনাচ্ছো।’
অরুণা আস্তে আস্তে বললেন—‘তোর কি লজ্জা হচ্ছে মুন্নি।’
—‘লজ্জা? কেন?’
‘এই তোর মা জঙ্গলের অসভ্য আদিবাসীদের মেয়ে শিক্ষিত সভ্যসমাজ থেকে যারা বহুদূরে বাস করে। তোর মা লোকের চ্যারিটিতে বড় হয়েছে, দাসীবৃত্তি করতে গিয়েছিল। ধর, দাসীই।’
‘মা!!!’ মৈথিলী মাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা গুঁজল। অনেকক্ষণ পর রুদ্ধ কণ্ঠে বলল—‘মা, তোমার এ কথার উত্তর নিশ্চয়ই আমায় দিতে হবে না।’
অরুণা বললেন, ‘রাণী জেঠিমা, সৌরীন জেঠু অবশ্য আমাকে দাসী হতে দ্যাননি। মস্ত ঘরে নীতার পাশের খাটে আমি শুতাম। লোকজনে মশারিটা পর্যন্ত গুঁজে দিয়ে যেত। নীতার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হল। ওদের ভালোবাসতে শুরু করলাম। সরকারি আমলাদের বাংলোর কাজকর্ম, বাঙালি রান্না, রুচি, কথা, ভাষা, সাহিত্য সবই আমার নিজের হয়ে গেল। আমাদের লোধাসুলির মানুষজনের আশা আমি সরকারি পরীক্ষা দিয়ে ভেতরে ঢুকব, তাদের প্রতিনিধি হবো, তাদের শিক্ষা, তাদের সংস্কৃতি, তাদের বিশেষ সুযোগসুবিধা এই সবের জন্যে কাজ করব। ডাবলু বি সি এস পরীক্ষা দিলাম। প্রথম পোস্টিং হল বরশুল, বি ডি ও অফিসে। বর্ধমানের ডি এম তখন তোমার বাবা। তাঁকে বিয়ে করলাম। তুমি এলে তোমার বাবা বদলি হয়ে গেলেন দার্জিলিংএ। এই বিয়ে উপলক্ষ্যেই আমার নিজের লোকেদের সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ। ওরা সবাই আমাকে ত্যাগ করল। কমিউনিটির বাইরে বাঙালি ব্রাহ্মণকে বিয়ে করেছি। ওরা আমার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
কেউ কোথাও নেই, নিজের লোকেরা ভীষণ হিংস্র হয়ে উঠেছে, তোমার বাবা দার্জিলিঙে। আমি ঝট করে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দিলাম। নিজের ট্রাইবের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যেই আমার পড়াশোনা, এই আশাতেই ওঁরা আমাকে তৈরি করেছিলেন, আমি কিছু করি নি। ওরা আমাকে পরিত্যাগ করেছিল। ঠিকই করেছিল। আজ আবার ওরা আমায় ডাকছে।’
—‘কেন? মা তুমি তো বলোনি ওঁদের জন্যে কিছু করবে না। ওঁরা তো তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলেন। তুমি নিজেই বলছো ওঁরা হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন। সে সময়ে তো তোমার চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। পুরো জিনিসটাই বানচাল হয়ে গেল। আমার তো মনে হচ্ছে এটা ওঁদেরই ভুল। তোমার দোষ কোথায়? আর আজ হঠাৎ তুমি এমন কি করলে যাতে ওঁদের বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠলে?’
অরুণা বললেন, আমি সাহস করে দাদাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম। তাতেই ওঁরা আবার আমায় কাজ করার সুযোগ দিতে চান।’
—‘বেশ তো, করো না কাজ। আমরা যে গ্রাম উন্নয়নের কাজ করছি, তেমনিভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তুমি তোমার বাপের বাড়ির গ্রামের উন্নতি করো না মা।’
অরুণা হাসলেন—‘জিনিসটা অত সোজা নয়। পূর্ব ভারতের আদিবাসীরা এখন একত্র হয়েছে। মৈথিলী, আমার যে পিতৃভূমি সেই ছোটনাগপুরের মালভূমি এবং তার আশপাশের এলাকা পৃথিবীর সবচেয়ে খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর একটা তো জানিস। ওখানকার মতো মাইকা পৃথিবীতে আর কোথাও মেলে না। এই সব খনিজ কয়লা, অভ্র, তামা বক্সাইট লোহা, সমস্ত আমার দেশের মাটির তলায় ছিল। আছে। আর ওপরে আছে লাল মাটির ওপর অফুরন্ত শাল পলাশ মহুয়ার জঙ্গল, সেই জঙ্গলও আমাদের রুজি, আমাদের জীবন। জঙ্গলগুলোকে এরা একটার পর একটা কেটেছে আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেছে, যাযাবরের মতো আমরা ঘুরেছি। এক একটা খনি খুঁড়েছে, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে উৎখাত হয়েছি আমরাই। আর হয়েছি কুলি। আমাদের ভোগে কখনও কিচ্ছু আসেনি। আমরা এই সব অধিকার ফিরে পেতে চাই। ওরা আমাকে ওদের মধ্যে চায়। এই আন্দোলনকে শক্তি দেবার জন্য।’
—‘ঝাড়খণ্ড মুক্তি আন্দোলন! মা? রাজনীতি?’
—‘মুন্নি শাসনযন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে নিজের লোকেদের স্বার্থে কাজ করার সুযোগ আমার এসেছিল। সে সুযোগ আমি স্বেচ্ছায় হারিয়েছি। আজকের এই ডাক উপেক্ষা করবার সাধ্য আমার নেই।’
—‘কিন্তু জি. এন. এল. এফ, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এসব সাংঘাতিক সেশেসসনিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাপার। তুমি, তোমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তারপর এতদিন একেবারে অন্যরকম জীবন কাটিয়ে গেছো। মা ওরা যদি তোমাকে নিজেদের লোক বলে বিশ্বাস করতে না পারে।’
—‘এ সমস্ত রিসক্ আছেই। আমাকে তবু আমার কথা রাখতে হবে মুন্নি। না হলে হয়ত ওরাও আর সইবে না। চরম কিছু করে ফেলবে।’
মৈথিলী চমকে উঠল। তারপর মাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বলল—‘মা, আমিও তোমার সঙ্গে যাবো।’
—‘যাবি? অরুণা মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন, চোখ টলটল করছে। বললেন —‘তোকে তো আমি গড়ে দিয়েছি মুন্নি। আমি নয়, আসলে আমার ভাগ্যই তোকে গড়ে দিয়েছে। যা হতে যাচ্ছিস সেটা সম্পূর্ণ কর। না হলে আবার অসম্পূর্ণ অতীত তোকে এমনি করে পেছু টানে টেনে নেবে। মুন্নি তোর বাবাকে কথাগুলো বলবার দায়িত্ব তোর।
তাকে দেখাশোনা বিশেষ করতে হয় না, তবু যেটুকু করতে হয়, সেটুকুও এখন থেকে তোকে করতে হবে। উনি আসবার আগেই আমি চলে যাবো ঠিক করেছি।’
—‘মা, তুমি ভেবেচিন্তে কাজ করো। ডোন্ট বি সো র্যাশ।’
—‘খুব ভেবেচিন্তেই করছি। তোকে একদিন বলেছিলাম নিজের কাজ আরম্ভ করলে আর তোরা আমায় পাবি না মনে আছে।’
মৈথিলী বলল—‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে তোমার অসুবিধে কোথায়?’
—‘আছে আছে। তবে আমি সময় সুযোগমতো আসব। লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলে তো আমার কাজ হয়েই যাবে। তখন আর আমার ফিরে আসতে কোনও বাধা থাকবে না।’
ক্রমশ রাত হয়ে আসছে। চ্যাপেল রোডের এই বাংলো নির্জন। বৈজু একবার রাতের খাবার খেতে ডেকে গেছে। মা মেয়ের কারোই যেন গা নেই। বৈজু আবার ঘরের বাইরে টোকা দিল।
অরুণা বললেন—‘খেতে যা মুন্নি।’
—‘তুমি যাবে না।?’
—‘আমার ইচ্ছে করছে না।’
—‘আমি তো এসে অনেক খেলাম। বৈজুদা।’ একটু গলা তুলে বলল মুন্নি।
—‘তুমি খেয়ে নাও।’
‘তোমরা কেউ খাবে না, আমি আগে।’
অরুণা বললেন—‘আমার খিদে নেই। মুন্নিরও পেটভরা। তুমি খাবে না কেন বৈজু?’
দরজার বাইরে টোকা থেমে গেল। বৈজু চলে গেছে। মুন্নি মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রয়েছে। যেতে দেয়নি পাশের ঘরে। চিড়িয়াখানা থেকে সিংহের ডাক ভেসে আসছে নির্জন রাতে। মৈথিলী বলল—‘মা আমি অনেক ভাবলাম। তোমাকে আমি একা ছেড়ে দিতে পারি না। তুমি অন্তত একুশ বছর তোমার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। ওদের বেশির ভাগ তোমাকে চেনে না। তুমি ব্যুরোক্র্যাটের স্ত্রী। সরকারি লোক। ওদের শত্রুপক্ষ। মা তোমার বয়স বেড়ে গেছে, তুমি কি করে নতুন জায়গায় মানিয়ে নেবে, কোথাও হয়ত তোমার কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে যাবে। তখন ওরা যদি তোমায় কিছু করে?’
অরুণা বললেন—‘আমরা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করি না। দাদা যখন আমাকে এভাবে ডাকতে এসেছেন, বুঝেই তো এসেছেন! এখন আর বাবা-মা বেঁচে নেই। দাদা শুধু পল্লীর প্রধানই নন, একজন নেতাও বটে। দাদার ইচ্ছে আমি যাই, ওদের সব অভিমান মিটিয়ে দিই। মনে কর না আমি এতদিন পর বাপের বাড়ি যাচ্ছি।’
মৈথিলী বলল—‘ঠিক আছে, আমিও এতদিন পর মামার বাড়ি যাচ্ছি। আচ্ছা মা কোথায় তুমি যাবে এখন? ওই লোধাসুলি বলে জায়গাটাতে?’
অরুণা বললেন—‘ঠিক বলতে পারছি না।’
—‘এখান থেকেই যদি কাজ করো, অসুবিধে কি?’
—‘এখান থেকে? সরকারি আমলার বাড়ি থেকে? তাও কি হয়?’
—‘বাবাকে তুমি জানাচ্ছো না কেন?’
—‘তোমার বাবা আমাকে যেতে দেবেন না। আমাদের বিয়ের সময় ওরা তো মত দেয়ই নি, ওঁকে প্রচণ্ড শাসিয়ে ছিল। সে-সব তো তোমার বাবা ভুলে যেতে পারে না!’
অরুণা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন। মৈথিলী আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল। সে সাধারণত বিছানায় পড়ে আর স্বপ্নহীন ঘুম ঘুমোয়। আজ তার ঘুমের সঙ্গে চিড়িয়াখানার বন্দী বাঘ-সিংহ-শেয়ালের ডাক মিশে যেতে লাগল। নির্ভীক মৈথিলী ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বুক-চাপা ভয়ের স্বপ্ন দেখতে লাগল। মাথার ওপর পদস্থ বাবা, স্নেহশীলা মা। সচ্ছল, শান্ত জীবনের নিরাপত্তা এক জিনিস। আর হঠাৎ মাথার ওপর থেকে সেই নিরাপত্তার আবরণ সরে যাওয়া, ভ্রূকুটিময় আকাশ অনাবৃত হয়ে যাওয়া আর এক জিনিস! তার স্বপ্নের মধ্যে কেওড়াখালি, পদ্মকাকী, দেবপ্রিয়, ডাঃ সোম, লুকু এবং মহাদেব সোরেন তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল। তার সঙ্গে মেটিরিয়া মেডিকার গুরুত্বপূর্ণ পাতাগুলো। ঘুমের মধ্যে কোথায় যেন ট্রাকের ভটভট আওয়াজ, হুহু করে গাড়ি ছুটে গেল, মৈথিলী পাশ ফিরে ঘুমোতে লাগল।
ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে। এত দেরি করে সে সাধারণত ওঠে না। কদিন খুব খাটুনি যাচ্ছে বলেই বুঝি এত ঘুম! চোখ মেলে দেখল মা উঠে গেছে, দরজা খোলা। বাইরে বেরিয়ে দেখল, ডাইনিং টেবিলের একদিকে মোড়ার ওপর বৈজুদা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মৈথিলীকে বেরোতে দেখে কাঁদো-কাঁদো হয়ে বলল—‘মুন্নি, ভোর রাত্তিরে সেই সাঁওতাল মোড়লটা এসেছিল, মা একটা পাতলা সুটকেস নিয়ে তার সঙ্গে কোথায় গেল, তোমাকে জাগাতে বারণ করল। একটা চিঠি রেখে গেছে তোমাকে দেবার জন্য। দেখো, দেখে বলো সায়েবকে আগে ট্রাঙ্ককল করবে না আগে পুলিসে ফোন করবে।’
মৈথিলীর হাত একটু একটু কাঁপছে, সে চিঠিটা নিল। মা লিখেছে : ‘মুন্নি, তোর পক্ষে এখনই মামার বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। যখন যাবার মতো অবস্থা হবে, আমি নিজে এসে তোকে নিয়ে যাবো। ভাবিসনি। আমি ভালো থাকবো। মনে রাখিস, তোর মায়ের বংশ কখনও বিশ্বাসের অমর্যাদা করে না। আমিও যতক্ষণ না তাদের বিশ্বাসের ঋণ চুকিয়ে দিতে পারছি ততক্ষণ নিজেকে মানুষ বলে মনে করতে পারছি না। ভালো থাকিস, বাবাকে বোঝাস।’
মৈথিলীর ঠোঁট ভীষণ কাঁপছে, বৈজু তার তিন চার বছর বয়সের পর আর কখনও এভাবে ঠোঁট কাঁপতে দেখেনি। মুন্নি টেলিফোনটার ওপর একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ল—‘হ্যালো, কাকু! আমি মুন্নি বলছি, লুকুকে একটু দিন না।’
বৈজু ভেবেছিল মুন্নি বাবাকে ফোন করছে।
—‘লুকু? তুই আজ এক্ষুণি আমাদের বাড়ি চলে আসতে পারবি? …লুকু প্লীজ আয়…আমার মা চলে গেছে…।’
ফোনের অপর প্রান্তে লুকু বিপুল বিস্ময়ে প্রশ্ন করছে—‘কি বলছিস? মৈথিল? মাসি কোথায়? কাকুর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে?’
মৈথিলী কিচ্ছু বলতে পারছে না। রিসিভারটা হাতে নিয়ে থরথর করে কাঁপছে, কাঁদছে, জীবনে এই প্রথম।
লুকুর বাবা বললেন—‘কি হয়েছে লুকু?’
লুকু কাঁদতে কাঁদতে বলল—‘মাসি বোধহয় মরে গেছে বাপী, আমার মায়ের মতো মাসিও মরে গেল। এখন মুন্নি আর আমি এক।’
কিছুক্ষণের মধ্যেই মৈথিলীদের চ্যাপেল রোডের বাংলো তার বন্ধুবান্ধবে ভরে গেল। যাকে যাকে যোগাযোগ করতে পেরেছে খবর দিয়েছে লুকু। উজান, প্রমিত, গুঞ্জন, লুকুর বাবা, ভাইয়া, মেধাদি সব্বাই।