Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উড়োচিঠি || Sibani Gupta

উড়োচিঠি || Sibani Gupta

উড়োচিঠি

বীরেন বাবু ভারী বাজারের ব্যাগটা নিয়ে ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে বাড়িতে ঢুকতে যাবেন,দেখেন একটা পুঁচকে ছোঁয়া উঁকিঝুঁকি দিয়ে কাকে যেন খুঁজছে।
আজকাল চোর ছ্যাচোরের প্রতাপ বেড়েছে,বলা যায়না কি মতলবে এসেছে।
গলা খাকারি দিলেন– এই রে ছোড়া,মানে কী,এভাবে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিস কেনরে?
বীরেন বাবুর লাল চোখ দেখে ভিরমি খাবার মত সিঁটিয়ে গেলো ছেলেটি,মিনমিন করে – না,মানে,একটা চিঠি ছিলো–
বীরেনবাবু সন্দেহের চোখে তাকান- চিঠি কীসের? কার চিঠি?
ভয়ে চুপসে যায় ছেলেটি, কাঁপতে থাকে।
বীরেন বাবু এগিয়ে আসতেই আঁতকে উঠে একটা হলুদ খাম ফেলে বিদ্যুৎ গতিতে হাওয়া হয়।
বীরেন বাবু মেজাজ তেতে আছে।খামটা তুলে দেখেন, উপরে লেখা– শুধুমাত্র মৌরীর জন্যে।
লেখাটা পড়েই আরো খিচড়ে রায় মেজাজটা।
খামটা উল্টেপাল্টে দেখে কেমন সন্দেহ ঘনীভূত মনে।
বাজারে আজ নকুলের সাথে দেখা,কথায় কথায় বলছিলো,আর বলো না ভাই,আজকালের ছেলেমেয়েগুলো একেবারে বখে যাচ্ছে,কলেজে যাবার নাম করে ছেলেদের নিয়ে পাথরকে,রেস্টুরেন্টে — ছিঃ ছিঃ,কি দিনকাল যে পড়লো,আরে,আমাদের ও দিন ছিলো,কৈ এমনটা কেউ করেছি,না এসব ভেবেছি।
ভাইরে,ভাবনা হলো,আমার ও মেয়ে কলেজে পড়ছে,বড্ড ভাবনা হয় — মান সম্মান বাঁচাতে হলে এখনি বিয়ে দিয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে,কি বলো ভাই?
বীরেন বাবু আনমনা হন,নিজের মেয়ে মৌরীও তো কলেজে পড়ে,কি সর্বনাশ ! কখন কি হয় !
এখন খামটা দেখেই নকুলের কথাগুলো মনে পড়তেই যদিও কারো চিঠি না বলে খুলতে নেই সে হুঁশ থাকেনা,খামটা ছিঁড়তেই গোলাপের পাপড়ি কুচি ঝরে পড়ে,চিঠি মেলে ধরতেই চক্ষু চড়কগাছ!
ভারী সুন্দর কিছু ফুলের ছবি ।
আর নিচে কবিতার মত করে লেখা –
মাথায় রক্ত চড়ে– এ্যাই মৌরী,মৌরী শিগগিরই বেড়িয়ে আয়, আজ থেকে কলেজ ফলেজ সব বন্ধ বলে দিলাম।
তরুলতা শাড়ির আঁচলে ভিজে হাতটা মুছে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন,কি হলো বাপু,বাজারের ব্যাগটা তো আগে নামিয়ে রাখো।এই নাও জলটা খেয়ে একটু সুস্থির হয়ে তারপর বলো-
বীরেন বাবু গলা শুকিয়ে কাঠ ,জলটা ঢকঢক করে খেয়ে শূন্য গ্লাসটা ঠকাস করে রেখেই চেঁচিয়ে উঠেন- বলি,মেয়ে কোথায় শুনি? বুঝলে গিন্নি ,তোমার মেয়ের পাখা গজিয়েছে,ব্যাপার মোটেও সুবিধের ঠেকছে না-
তরুলতা কিছুই মাথামুন্ডু বুঝতে না পেরে বলেন,আচ্ছা মুস্কিল তো,কি করেছে মেয়ে সেটা বলবে তো।
বীরেন বাবু কটমট করে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে খামটা ছুঁড়ে ফেলেন সরোষে।
তরুলতা খামটা খুলে ছবি ও কিসব লেখা দেখে বিষয়টি বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল তাকান।
ইতিমধ্যে বাড়িতে এতো সোরগোল শুনে মৌরী বেড়িয়ে আসে– কি হয়েছে গো,এতো চেচামেচি কীসের?
মেয়েকে দেখেই ক্ষেপে যান বীরেন বাবু – বলি,এসব কি চলছে? কলেজে পড়ার নাম করে কিসব করে বেড়াচ্ছিস? ছিঃ ছিঃ —
মৌরী হকচকিয়ে যায় বাবার কথা শুনে- কিসব বলছো শুনি?
কি হয়েছে সেটা বলবে তো?
তরুলতা খামটা এগিয়ে দেন।
মৌরী খামটা খুলে চিঠিতে চোখ বুলাতেই হেসে গড়িয়ে পড়ে — ওফ্ এই কান্ড!
লেখাটা দেখেই বুঝতে পারে বেলার কান্ড!
জগৎ মাঝে সেরা ফুল
আমার মৌরী ফুল
চিঠি খুলে করবে ভুল
হবে জেনো * ফুল

মৌরীর ভেতরে হাসির তুফান।তবু গম্ভীর ভাবে বাবাকে বলে- এটা কোন মাস?
বীরেন বাবু বলেন- এপ্রিল!
মা ,আজ কত তারিখ?
তরুলতা অবাক- কেন,আজ তো এক তারিখ
মৌর খিলখিলিয়ে হাসে- তবেই দেখো,এটা বেলার কান্ড,আজ এপ্রিল ফুল কিনা?
এবারে সকলের মুখেই হাসি-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress