Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উঠোনের শিমুল গাছটা || Pradip Acharyya

উঠোনের শিমুল গাছটা || Pradip Acharyya

আমাদের গ্রামের বাড়ির — উঠোনের শিমুল গাছটা কবেকার সেটা আমার বাবারও মনে ছিল না, কিন্তু ফাল্গুন চৈত্রের কাট ফাটা দুপুর রৌদ্রে গাছটার সবগুলো ডাল, সেজে উঠতো লাল রংএর চোখ ধাঁধানো হাজারো ফুলের মেলায়, সেটা আমার বড়বেলাতেও দেখেছি। অনেক পুরনো মোটা আর উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকেই গাছটিকে,
তপ্ত দুপুরে আগুনে সাজে সাজা রঙ্গিনী মেয়ের মতো মনে হতো, যদিও এই ব‍িশেষনটা আমি কলেজে পড়তে এসে শুনেছিলাম, আমার তথাকথিত শহুরে বন্ধুদের কাছে , সে কথায় পরে আসছি। গাঁয়ে আমাদের একটা বিশেষ পরিচিতি ছিল শিমুল বাড়ি নামে, এই বিশেষ পরিচিতিটায় আমাদের খুব গর্ব ছিলো। স্কুলের প্রথম দিনে নাম জিজ্ঞেস করে মাষ্টার মশাই হেসে বললেন, ও তুই ওই শিমুল বাড়ির মেয়ে। ক্লাসের সব ছেলে মেয়েরা একসাথে চিৎকার করে বলে উঠেছিল হ‍্যাঁ মাসটার মশাই —
সেই থেকে আমার আর একটা পরিচয় হয়ে গেল শিমুল বাড়ির মেয়ে। স্কুলের পড়া শেষ হলো , মাধ‍্যমিকে আশির ঘরে নম্বর পেয়ে জেলা শহরে গেলাম পড়তে,
সেখানেও আমার পরিচয় হয়ে গেল শিমুল বাড়ির মেয়ে। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় আলাপ হলো শুভ্রর সাথে, শুভ্র জোয়াদ্দার দারুণ প্রানবন্ত ছেলে কলেজের সেরা,
ওদের পারিবারিক ব‍্যবসা, চার ভাই সকলেই সুপ্রতিষ্ঠিত, ঠাট বাট রাজকীয় বিশাল বাড়ি কয়েকটা গাড়ি লোকজনে সরগরম সব সময়, শুভ্রর বাবা এক রাজনৈতিক নেতা অনেক ওপর তলায় তাঁর যোগাযোগ। সেই শুভ্রই আমাকে ডেকে বন্ধুত্ব করেছিলো। তারপর অনেক দিন কেটে গেছে, আমাদের বন্ধুত্বও ক্রমশ গভীর হয়েছে,
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় কলেজের কয়েক জন বন্ধু বান্ধব মিলে নদীর ধারে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। গাড়িতে যেতে যেতে দুর থেকেই গাছটাকে দেখিয়ে আমি বলেছিলাম, ওই যে শিমুল গাছটা দেখছো ওটাই আমাদের বাড়ি, বিকাশ নামে এক বন্ধু বিশ্রী ভাবে হেসে বললো, ওহ রেড লাইট বাড়ি।
শুভ্র ধমক দিয়ে বিকাশকে থামিয়ে দিলেও আমার কান দিয়ে আগুনের হলকা বেড়িয়ে এলো, সেই প্রথম শিমুল গাছটার ওপর আমার ভীষণ রাগ হলো, যে গাছটাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতাম সেই গাছটাকে আমার ভিলেনের মতো মনে হলো। সারাদিন হৈ হুল্লোড় করে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম শহরে, বাড়ির সবাই খুবই আপ্যায়ন করেছিল আমার বন্ধুদের খাওয়া দাওয়ার কোন ত্রুটি করেনি, সারা গ্রাম নদীর ধার আম বাগান খেলার মাঠ স্কুল লোকনাথের মন্দির দড়গাতলা ঘুরে দেখে সবাই প্রশংসা করলেও বিকাশের কথা আমি ভুলতে পারছিলাম না। শহরে ফেরার পর যদি কেউ আমাকে শিমুল বাড়ির মেয়ে বলতো ভীষন অপমানিত মনে হতো নিজেকে, কেটে গেছে আরও দুটি বছর গ্রাজুয়েশনের পর এম এ করছি, শুভ্রর সাথে আমার সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে, অনেক কথা হয় দুজনের, আগামীর দিন গুলি নিয়ে স্বপ্ন বুনি আমরা। বুঝতে পারি শুভ্র আরও কিছু চায় আমার কাছে, শেষে একদিন এক বৈশাখী রাতে আমি আর শুভ্র এক হয়ে গেলাম, আর সেই রাতেই ঘটলো আমার জীবনের দুটি মর্মান্তিক ঘটনা। ফেরার পথে প্রচন্ড ঝড়ে বাইক দূর্ঘটনায় মারা গেল শুভ্র, আর বাড়ি থেকে ফোন এলো ওই রাতের ঝড়ে, আমাদের বাড়ির সেই পুরনো শিমুল গাছটা, ভেঙ্গে পরেছে গোড়া থেকে, সেই এক রাত্রেই আমি আমার দু দুটো পরিচয় হারিয়ে ফেললাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress