উজান যাত্রা (Ujan Jatra) : সে
এত সবুজ সত্ত্বেও গ্রীষ্মকালে সল্ট লেক ফার্নেস হয়ে থাকে। সন্ধের পর একটা মিনি কালবৈশাখী হল। চড়বড় করে একটু শিলাবৃষ্টি। যত না জল তার চাইতে বেশি শিলা। সকলেই বলছিল, রাতটা ঠান্ডা হবে। পার্কের পাশে একটা গাছ পড়েছে। এইগুলো খুব গোলমেলে ব্যাপার। কোন গাছটার মূল আলগা হয়ে গেছে, কোনটার ভেতর ফোঁপড়া, চট করে বাইরে থেকে বোঝা যায় না। গাছটা পুরো রাস্তা জুড়ে আড়াআড়ি পড়েছিল। ভাগ্যিস ঝড়-বৃষ্টির সময়ে কেউ ধারেকাছে ছিল না! পড়ার সামান্য আগেই কাজল বাড়ি ফিরেছে। যাঁদের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকে সেই অধিকারী মাসিমা খবরটা দিলেন।
ঝড়-বৃষ্টির সময়ে বাইরে থাকাটা খুব অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে, বুঝলে কাজল? ঝড় দেখলেই কোনও না কোনও শেড-এ দাঁড়িয়ে পড়বে।
অধিকারী দম্পতি তার একদা অধ্যাপক রমেন সান্যালের পরিচিত। ওঁর সূত্রেই এখানে ও জায়গা পেয়েছে। ঠিক যে ধরনের মধ্যশ্রেণীর জন্যে বিধান রায় সল্ট লেক সিটির পরিকল্পনা করেছিলেন এঁরা একদম সেই জাতের। সচ্ছল কিন্তু তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। হিসেব করে চলতে হয়। ওঁদের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, সে বিদেশে থাকে। সাগরপার। ঠিক কোথায় কাজল জানে না। তার কৌতূহল নেই। আর ছেলেটি বাঙ্গালোরে পড়াশোনা করছে। ছেলেটির খরচের জন্যই বোধহয় ওঁদের পেয়িং গেস্ট দরকার পড়েছিল। জমানো টাকা প্রায় নিঃশেষ করে ছেলেকে পড়ানো! ও পেয়েছে মেজানিনটা। একতলায় দু’টি ঘর ও একটা কলঘর শেয়ার করে থাকে আরও তিনটি ছেলে। অধিকারীদের ছেলে যেমন পড়তে গেছে বাঙ্গালোর, এরা তেমন চাকরি করতে এসেছে কলকাতায়। একজন বোধহয় কম্পিউটার-বিশারদ, কাছাকাছি সল্ট লেকেই অফিস। অন্য দুজন দক্ষিণী—এরা মুম্বই থেকে বেসরকারি কোম্পানিতে এসেছে। আবার হয়তো মুম্বই ফিরে যাবে। কম্পিউটারের ফেরার কোনও নির্দিষ্ট টাইম নেই। অফিসেই বোধহয় খাওয়া-দাওয়া করে। দক্ষিণীরাও বাইরে। ওদের খাওয়াদাওয়া আলাদা। তবু তিনজনকেই ব্রেকফাস্ট পাঠান মাসিমা। কাজলের সঙ্গে তিনবেলারই বন্দোবস্ত। কোনওদিন বাইরে আটকে গেলে, কোথাও খেয়ে নিতে হলে—ও মাসিমাকে ফোন করে দেয়। যদিও কাজল কারও সঙ্গেই খুব ঘনিষ্ঠতা করতে চায় না, তবু এঁদের সঙ্গে তার একটা চমৎকার সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে। ছেলের মতোই স্নেহ করেন তাকে। ওঁদের খাবার সময় কাঁটায় কাঁটায় ন’টা। তার মধ্যে কাজল না ফিরলে ওর ঘরে ক্যাসেরোলে খাবার এসে যায়।
শেডে দাঁড়ানো সম্পর্কিত পরামর্শটা দিয়েই ওঁরা রাতের মতো বিদায় নিলেন। কাজল আগে চান করল ভাল করে। এই ঝরঝর চানটা তার একটা বাতিক। সব সময়েই মনে হয় কোথাও কোনও ময়লা রয়ে গেল। বড্ড বেশি ঘাম, দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে বোধহয়। বোধহয়। সত্যি নয় সবসময়ে। তাই এটাকে বাতিক বলাই ভাল। কোথায়, কোন অভিজ্ঞতায় এই বাতিকের মূল! শাওয়ারটা ছেড়ে সে ঊর্ধ্বমুখে চোখ বুজে দাঁড়ায়। কাজল কখনও উলঙ্গ হতে পারে না। একটা না একটা কটিবস্ত্র চানের সময়ে তার চাই-ই। একটা মেরুন রঙের মাদ্রাজি গামছা পরে সে শাওয়ার অনুভব করে। যেন সে বৃষ্টিতে ভিজছে। ভিজতে চাইছে। সব বৃষ্টি একরকম নয়, শাওয়ারের নবটা পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেবার পর যখন ফিনকি দিয়ে জল ছোটে তখনও সেটা বর্ষার বৃষ্টি হয় না। বর্ষার বৃষ্টির ধারা কী মোটা এবং বল্লমের মতো ফলাঅলা। তেমন তেমন হলে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। চামড়ার তলায় হাড়ের কাঠামোসুদ্ধ ভিজে যাবে। অন্য দুই ঋতুর বৃষ্টির স্বাদ মোটের ওপর শাওয়ারে বোঝা যায়— ফাগুনের বৃষ্টি, শালমঞ্জরীর গন্ধ মাখানো। আশ্বিনের হালকা বৃষ্টি, হাসির মতো। উচ্চরবে হাসছে কে আড়ালে, চট করে আকাশ নীল, তাতে কাশঝাড় ভেসে যাচ্ছে। উদোম, একেবারে উদোম একটা ছোট ছেলে ভিজছে, সপাটে ভিজছে, হি হি করে কাঁপছে ঠান্ডায়। তারপর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে। বৃষ্টির তোড় তাকে ক্রমেই পেছনে ঠেলে দিচ্ছে, আবার কখনও কখনও পেছন থেকে দমকা হাওয়া এসে সামনে হুমড়ি খাইয়ে দিচ্ছে প্রায়। কিন্তু তার পলকা শরীর, পড়ে গেলেও সে উঠে দাঁড়াতে অসুবিধে বোধ করে না। ছুটছে, সে ছুটছে। হঠাৎ খেয়াল হয়, বৃষ্টি থেমে গেছে। কিন্তু আকাশ দেখা যাচ্ছে না। কী হল? এত জল সে রাতবিরেতে ব্যবহার করে ফেলেছে যে ট্যাঙ্কের জল শেষ?
মোছামুছি শেষ করে, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে সে। পায়জামা শার্ট পরে নেয়। চোরের মতো চুপিচুপি নীচে চলে যায়। পাম্প ঘরে রাত্তিরের তালা লাগানোটা তারই কাজ। তালা লাগানো, নীচের সব কোল্যাপসিবল, গ্রিল চেক করা। সে পাম্পটা চালিয়ে দেয়। রাত্তিরে জল দরকার হলে কেউ পাবে না। একটা মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে পাম্প চলতে শুরু করে। ভীষণ লজ্জা পায় কাজল। যদি ওঁদের ঘুম ভেঙে যায় শব্দে! কী মনে করবেন? কাজল মুণ্ডা সব জল শেষ করে দিয়েছে। ওঁরা এসব ব্যাপারে খুব সতর্ক। দু’বারের বেশি পাম্প চলে না। ছি, ছি, কী করল? কেন, কাজল কেন? কী এমন করেছ যে তোমার এত সংকোচ! হতেই পারে, একদিন হয়ে যেতেই পারে। ঈশ্বরের দেওয়া জলে, হাওয়ায়, ভূমিতে ও ভূমিজ উদ্ভিদে সকলের অধিকার। সেই অধিকার একটার পর একটা কেড়ে নেবে তারপরে কৈফিয়ত চাইবে? না কাজল। এ শুধু ঈশ্বরের দেওয়া জল নয়, এর ওপর মানুষের যান্ত্রিক হাত পড়েছে। ইলেকট্রিসিটি পোড়ে, খরচ বেশি হয়, বাঙ্গালোরে ছেলেটির জন্যে কত লাখ টাকা গুনে দিতে হয়েছে কে জানে? কম্পিউটার পড়ছে। পাশ করে বেরোলে অমন কত লাখ টাকা উশুল হয়ে যেতে পারে, আবার না-ও পারে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। উপেন্দ্র, লখাই, গমস্তাপ্রসাদ, সুন্দরী, বুধুয়াদের থেকেও অনিশ্চিত? দূর, ভুল হল। ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই দুনিয়ায়, কে ভাবতে যাচ্ছে ভবিষ্যতের কথা? বর্তমানটাকে কোনওক্রমে টিঁকিয়ে রাখা। মরে গেছে? মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে তেষট্টির বার্ধক্যে পৌঁছে মরে গেছে? পেট এসে পিঠে ঠেকেছিল! ভবিষ্যৎ আবার কী! বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ভীষণ শব্দে অদূরে বাজ পড়ল। উদোম ছেলেটা দেখল সেই উদোম বাজ— একটা যমজ নারকেল গাছ তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও জ্বলছে, জ্বলে যাচ্ছে। আবার পেছন দিকে দৌড়োনো, আবার পাশ কাটিয়ে সামনে। ভবিষ্যতের ভয়হীন। অথচ ভবিষ্যতের সন্ধানে অন্ধ দৌড়োনো।
ক্যাসেরোলের ঢাকা খুলতেই চমৎকার একটা গন্ধ নাকে আসে, দৃশ্যটাও চমৎকার। আজ বৃহস্পতিবার। এঁরা নিরামিষ খান। নিরামিষের সৌজন্যে ভাল ভাল কিছু পদ খাওয়া হয়ে যায়। বড় বাটিতে পোলাও। ছোট বাটিতে ছানার ডালনা। অধিকারী মাসিমা! এভাবে পোলাও টোলাও দেবার দরকার নেই। কেন কষ্ট করে করতে যান? ভাত— শুধু গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, সঙ্গে একটু আলু পেঁয়াজ লঙ্কা— বিশ্বাস করুন— এই আমার রাজভোগ। এখনও। ছোটবেলায় মানুষ যা শেখে, আর কখনও ভোলে না।
খেতে খেতে সুস্বাদে স্বাস্থ্যবান জিভ লালায় ভরে যায়। একই সঙ্গে কাঁটা ফুটতে থাকে, মাছের কাঁটা, ক্যাকটাসের কাঁটা … ক্যাকটাস ঝাড়ে ঝাড়। বিস্তৃত টাঁড়ভূমি, ক্রমাগতই বৃক্ষচ্ছেদ, ভূমিক্ষয়, এবং মরুভূমি। তাতে ক্যাকটাস।
কাজল জানে আজকের এই অপরিমিত চান ও ঠাকুরের প্রসাদের মতো খাওয়ার পরে, কাজ করতে করতে তার চোখের ঝাঁপ পড়বে, ঝাঁপ পড়ে যাবে কন্টকময় মরুবালুতে, সে নিবিড় ঘুমোবে। সুস্থ শরীরের, স্বাস্থ্যবান মানুষের নিশ্ছিদ্র ঘুম। ঈষদুষ্ণ উদ্দীপ্ত আলস্যে ভরে থাকবে কালকের দিন। আলস্য ঠিক নয়— শান্তি। শরীরটা যেন ধ্যানমগ্ন কিন্তু অফুরন্ত কাজ করবার ক্ষমতা। মিঠু তার চকচকে চোখে কৌতুক ও বিস্ময় মাখিয়ে জিজ্ঞেস করে— তুই তো অদ্ভুত! দেখে তো মনে হচ্ছে শান্তস্য শান্ত, কিন্তু বেশ তো দুটো উচিত কথা শুনিয়ে দিলি। এমন করে দিলি আবার কিছু মনে করতেও পারবে না লোকটা। দেখে মনে হচ্ছে ঘুমন্ত পুলিশ, কিন্তু গুচ্ছেরখানিক ইনফর্মেশন, আর্টিকল ডাউনলোড করে ফেলেছিস। রাধিকাদির পেপারটা পুরো হয়ে গেল? চব্বিশ পাতা, ওই খুদি খুদি হাতের লেখায়! নমস্য বাবা তুই।
মিঠুকে কাজল ঠাট্টা করে বলে— হিরো-হান্টার। সবসময়ে নমস্য করার খোঁজে রয়েছে। ‘ভক্তিমতী বালিকা’ বলেও সে ডাকে ওকে। বেশি কথা কী, মিঠুর লাল-নীল সবুজ-হলুদ-গোলাপি হ্যান্ড-মেড পেপারের অটোগ্রাফ খাতায় জ্বলজ্বল করছে তার সই। এত চালাক যে অটোগ্রাফ বলে চায়নি। বলেছিল তুই বেশ সুন্দর সুন্দর বাণী জানিস, একটা লিখে দে না রে, তলায় বেশ তোর নাম লিখে দিবি।
তার মানে? অন্য লোকের বাণী দেব, তলায় লিখব আমার নাম!
তাতে কী হয়েছে? তুই কি কারও বাণী চুরি করছিস? তাঁর নামটাও লিখে দে, সোর্সটা জানতে আমার সুবিধে হবে, তোর কাছ থেকে পেয়েছি সেটাও জানা থাকবে। ভুলভাল লিখলে ক্যাঁক করে ধরব।
কী ব্যাপার বল তো!
তাড়াতাড়ি মিঠু বলে, ব্যাপার তেমন কিছু নয়। আই জাস্ট ওয়ন্ট টু লার্ন। বাণী জমাচ্ছি। ভীষণ দরকার হয়, আমাকে পপুলার আর্টিকল লিখতে হয় তো গুচ্ছের! জানিসই তো সব!
কাজলের ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ হয়নি মিঠু এইসব ভ্যানতাড়া করে তার অটোগ্রাফ নিচ্ছে। এ পর্যন্ত কেউ তার অটোগ্রাফ নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। বাণী চাই? আরে! মানুষের কত বাণী দলে দলে/ অলক্ষিত পথে উড়ে চলে/ অস্পষ্ট অতীত হতে অস্ফুট সুদূর যুগান্তরে …। বাণীর অভাব কী? অভাব সেইসব মানুষের যারা সেইসব বাণী অনুযায়ী কাজ করবে। হঠাৎ কিছু না ভেবেই সে লিখে ফেলেছিল— লুক অ্যাট দা লিলিজ হাউ দে গ্রো— দি বাইবেল। নিউ টেস্টামেন্ট, সাপোজে্ডলি আটার্ড বাই জিশাস। পরে নিজের নামটা কীভাবে দেবে ভেবে না পেয়ে অবশেষে লিখেছিল— কোটেশন কার্টসি কাজল মুণ্ডা।
সে কী খুশি মিঠু! যেন হাতে স্বর্গ পেয়েছে!
কেমন কায়দা করে তোর অটোগ্রাফটা নিয়ে নিলাম বল!
অটোগ্রাফ! আমার? তা বলতে হয়! লিখে দিতুম একটা লাগসই বাণী, যেটা তোর পক্ষে লাগসই হত!
মিঠু বিমর্ষ হয়ে বলেছিল, এ মা! তাহলে তো কায়দাটা বৃথাই গেল। এত বুদ্ধি খাটালাম। দে না রে নিজস্ব একটা বাণী!
আর হয় না। কাজল মুণ্ডা ইজ নট দ্যাট অটোগ্রাফ ফ্রেন্ডলি!
আচ্ছা, কেন খ্রিস্টের কথাগুলো সর্বপ্রথম তার কলমে উঠে এসেছিল! স্মৃতির খাতায় কীভাবে কী ক্রম অনুযায়ী কথারা সাজানো থাকে? নিজের কোনও বিশ্বাসের ক্রম? ভাল লাগার ক্রম? না কি প্রথমে ও বারে বারে শোনার ক্রম? ফাদার মরিসন তাদের মুণ্ডাদের সম্পর্কে কথাগুলো প্রায়ই বলতেন। সাঁওতাল, মুণ্ডা, লোধা, শবর! তিনি আরও বলতেন— ব্লেসেড আর দা মিক, ফর দেয়ার্স ইজ দা কিংডম অব হেভন। এখন, তিনি কি সত্যিই এই সারল্য পছন্দ করতেন, না তাদের খোশামুদি করতেন সে জানে না। ফাদার মরিসন তার জীবনের প্রথম মানুষ যাঁকে সে শ্রদ্ধা করেছে, বিশ্বাস করেছে। কিন্তু সারল্যই যদি কাম্য, তাহলে কেন শিক্ষা? কেন আপামর মানুষ ও সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলার ট্রেনিং? ঈষৎ তিক্ততার সঙ্গে মনে হল— হ্যাঁ স্বর্গের দরজা তো গরিবদের জন্যে বটেই। তাড়াতাড়ি চলে যায়।
ফাদার যাই বলুন, লিলির মতো সহজে গজিয়ে উঠে অপরের চিত্তবিনোদন করার বিন্দুমাত্র সাধ তার নেই। থাকা উচিত নয় কারও। শিক্ষা মানুষের সহজাত নয়। বুদ্ধি খানিকটা, স্মৃতি খানিকটা। কিন্তু তাদেরও অভ্যাসে অভ্যাসে বাড়াতে হয়। এবং সেই বুদ্ধি দিয়ে মনন হয়, আবিষ্কার হয় নতুন নতুন চিন্তাপথ। এটা সহজাত আহার-নিদ্রা-আমোদ-মৈথুনের বাইরে। সুতরাং খ্রিস্টের উক্তি নেহাতই কবিতার পঙ্ক্তি তার কাছে। লিলিজ? —অর্ধভুক্ত নেংটি পরা অকালবৃদ্ধ শরীর, যেটুকু বা টাঁড়জমি, মহাজনের গর্ভে গেছে। বনের কাঠকুটো, কন্দমূল, ইঁদুর, সাপ, ব্যাঙ ভরসা। ফসল ওঠার সময়ে নামালে যাওয়া, ইট-ভাটার হাড় ভাঙা খাটুনি, পরব বলতে কতকগুলো জটিল আচারের মিশ্রণ, ঠাকুরের ভোগে হাঁড়িয়া, আমোদে হাঁড়িয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধরা শুধু হাঁড়িয়া খেয়েই ঢুলতে থাকে সন্ধ্যা হলে। এখন সে বোঝে মানুষ হয়ে জন্মে কোথাও কোনও সার্থকতার আনন্দের উপায় নেই, তাই এইভাবে হাঁড়িয়ায় ভুলে থাকা। দূরদেশি কোন রাখাল ছেলে …, রাখাল, বাগাল, বেগার, —দূর থেকে কী চমৎকার পল্লিদৃশ্য! লিলিজ?
আজ সে ছুটি নিয়ে নিয়েছে। ব্যায়াম সেরে ইডলি দিয়ে প্রাতরাশ সেরে সে কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ল। আজ সে সাড়ে তিনটের সময়ে কস্তুরীবেনের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছে। ভদ্রমহিলা সেই এসে থেকে কই একবারও তার সাহায্য টাহায্য চাননি। অথচ তারই ওপর ওঁর ভার দিয়েছেন কানাইদা। সে অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই খবর নেয়। উনি সোব সময়েই ভালো আচেন, আর ওঁর কিছুতেই অসুবিদা হচ্ছে না। বললে হবে? উনি এখন একজন নামকরা মহিলা। চিরকালই ছিলেন। কিন্তু কে, কোথায়, কী ধরনের কাজ করছেন, সবসময়ে তো জানা সম্ভব হয় না! গুজরাত কাণ্ডের পর উনি ভারতবিখ্যাত হয়ে পড়েছেন। নিজের প্রাণ বিপন্ন করে কীভাবে উনি বন্দুক নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তিয়াত্তর জন মহিলা-পুরুষকে কীভাবে বাঁচান, সেসব এখন গল্প কথা। মিডিয়ার কল্যাণে মুখে মুখে ফেরে। সে সুদূর গুজরাতের হলেও। নিজের কী ব্যক্তিগত কাজে উনি একেবারে চুপিচুপি কলকাতায় আসছেন এবং সেই সূত্রেই কানাইদাকে চিঠি দিয়েছিলেন। কানাইদা কাজে গেছেন জলপাইগুড়ির দিকে ফালাকাটা সেন্টারে। তাকে এবং মিঠুকে ওঁর দেখাশোনার ভার দিয়ে গেছেন। তা ওরা ওঁর ভার নেবে কী? উনিই ওদের ভার নিলে ভাল হয়। তার ওপর তো ওঁর সারা ছোটবেলাই নাকি কলকাতায় কেটেছে। কলকাতার অনেক কিছুই ওঁর জানা। কলকাতা যে কত পাল্টে গেছে, এপাশ ওপাশ ঘিরেছে, উনি হয় সেগুলো জানেন না বা মানতেই চান না। —ও, এই সেই রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার। এখানে কতকগুলো কদমগাছ ছিল। খুব ফুল দিত। এইখানে তো বাঁকতে হোবে। আরে এ ড্রাইভারজি হমকো ফার্ন রোড জানা। ছটফট করে সারাক্ষণ কলকাতা সম্পর্কে নিজের জ্ঞান প্রমাণ করতে করতে আসছিলেন। তবে এখানে ওঁর যে যথেষ্ট ভাল একটা বাড়ি আছে, তার দারোয়ানও মজুত, অতশত ওরা জানত না। উনি না আসলে কী হবে? ওঁর চেনাশোনা বহু লোক কলকাতায় এলে সেই বাড়িতে ওঠে। অর্থাৎ একটা চালু ব্যবস্থা আছে। কী ব্যক্তিগত কাজে উনি এসেছেন তা তারা জানে না। কিন্তু এইরকম মজবুত ব্যাকগ্রাউন্ড যাঁর তাঁকে দেখাশোনার কাজটা বাহুল্য ছাড়া কী! সে ওঁকে খানিকটা বুঝতে পারে, জানে, স্বাধীনচেতা মানুষরা নিজেদের স্বাধীনতা স্বাবলম্বিতা সম্পর্কে অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর, হয়তো ভেতরে কোথাও বশ্যতা আছে বলেই। কিংবা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অসম্ভব বলেই। সে নিজেও তো এই চরিত্রের। কত জন তাকে নির্ভরযোগ্য, দারুণ সাহসী, একেবারে অচল-অটল বলে মনে করে। সে তো জানে কত সাবধানে নিজের ভেতরের শূন্যতা, ক্ষতগুলোকে লুকিয়ে রাখতে হয়। আপাতদৃষ্টিতে সে মিশে গেছে এই জনস্রোতে। এদেরই একজন, নিজের কাজ নিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে সে সকালে ঘুম ভেঙে পারিপার্শ্ব চিনতে পারে না। এটা কি বাঁকুড়া মিশন? নাকি দেওঘর? নাকি মধ্য কলকাতার সেই নয়ানজুলির মতো সংকীর্ণ রাস্তাটার লাল বাড়ির অন্ধকার একতলায়? কী যেন নাম? ডিকসন লেন। তা হলে এত আলো কীসের? রোদ কেন এত?
মহুল পিয়াশালের পাতার মধ্য দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে জোছনা। লাল-কাজল মাটি জোছনায় মাখামাখি, তার সঙ্গে মাখামাখি হাঁডিয়ার তীব্র গন্ধ! মা-টা মাতাল হয়ে লাচছে? কে মা? কোন মা? বাবা? আপা নাই তার? আছে বটেক! দু’সন আগে নামাল খাটতে গেল আর আসলো নাই। তো কী? আমি তোর বাপ বটেক!
উঁহু না না, সে প্রাণপণে মাথা ঝাঁকিয়ে নেয়, সেই প্রাগৈতিহাসিক ছন্ন জোছনার মদগন্ধময় রাতে সে আর ফিরবে না। কোনও মোহ, মায়া নেই তার। এই বিরাট জঙ্গম পৃথিবীতে প্রকৃতির খেয়ালে— না, না, মানুষেরই ষড়যন্ত্রে সামান্য কিছু মানুষ আটকে গেছে মজা দঁকে, তাদের মাচায় তাদের মাদল ধামসায় এবং হাঁড়িয়ায় মহুলমদে। মিউজিয়াম-পিস। প্রাপ্য কী? অবহেলা, বড় জোর করুণা, ভাতের জন্যে ট্রাইব্যাল আইনের দোরে দোরে ভিখ মাঙা। নিজের মাটি হল ঝাড়খণ্ড। চৈতন্যচরিতের ঝারিখণ্ড। বুঝি ফিরে এল সেই ছত্রিশগড়ের স্বরাজের দিনগুলো। চাম্পাগড়। কত দূর থেকে ভাঙতে ভাঙতে আসছে! সেই হারাপ্পার কাছ থেকে এই সিংভূম, ধলভূম, মেদিনীপুরে। কোথায় সেই নতুন দিনের নতুন চাম্পাগড়? নিজের মাটিতে নিজের সরকার। সরেন, হেমব্রম, মুণ্ডা, হাঁসদা, মুর্মু … যে আসছে তার ঘরে ধনদৌলত উপছে যাচ্ছে। মানুষগুলি যে কে সেই। পরনে ত্যানা, অবিশ্রান্ত খাটুনির দড়িপাক শরীরে, ঝড়ে-জলে রোদে ঘামে! প্রতি বসন্তে এক একখানা গাছ নতুন হয়ে ওঠে। মানুষের জীবনবৃত্তে এরকম কোনও প্রাকৃতিক নিয়ম নেই। এই নিয়ে আবার শিল্পী মানুষগুলির চূড়ান্ত ন্যাকামি। কতজন যে ধরে তাকে ওই জোছনারাতের মাতাল নাচ দেখাবার জন্যে। নাচের পেছনে অবশ্য আছে নাচনিও।
সে স্পষ্ট বুঝতে পারে। ওরা সোজাসুজি বলে না কেননা কাজল মুণ্ডাকে তারা চেনে। ভয় পায়। কিন্তু কাজল এ-ও বোঝে না টিভির পরদায় নিতুই যেসব লোভনীয় আধখোলা, সিকিখোলা নারী-শরীর দেখায় তার থেকেও অশ্লীল, আদিরসগন্ধী শরীর কি তার মুণ্ডানি সাঁওতালনিদের? আবৃত হবার কাপড় পায় না, সিনেমার নাচে তো লাল পাড় শাদা ধবধবে শাড়ি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আদতে কি তা আছে? নেই। খাটেখোটে, অত দরকারও মনে করে না, ধান রোয়া থেকে কাঠ কুড়োনো, খেতমজুরি, কুলিগিরি, খনির কামিন— ‘মেঝেন’ সর্বত্র পুরুষের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অবিশ্রান্ত খেটে যাচ্ছে। দেহ দেখাবার জন্যে কি তারা দেখায়? তাদের সংস্কৃতির নিয়ম বা বলা উচিত সংস্কার আলাদা। তবে কেন টিভিনিদের ছেড়ে মুণ্ডানিদের দিকে লোভের দৃষ্টি হানছে ওরা? তারা সরল বলে? সহজলভ্যও না কি?
কাজলের রক্তে আগুন ঝলসে ওঠে এসব ভাবলে। সে যে ভাবতে চায় তা-ও না। কিন্তু কমলি ছোড়ে না। ঘুমের মধ্যে, ঘুম ভাঙার অসতর্ক মুহূর্তে অতর্কিতে হানা দেয়।
সে কি তবে এত করেও একলা রয়ে গেছে? কোনও দুঃখের কথা নয়। একটা জ্বলজ্যান্ত সত্য। যাদের ছেড়ে এসেছে তারা তাদের মূল ছড়িয়ে রেখেছে তার দেহে, মনে। শালপাতার দোনায় করে খুদ সেদ্ধ আর বামলা আলু, যা নাকি তার মা বন থেকে তেড়ে নিয়ে আসত সে কি ভুলতে পারে! প্রত্যেকটি গ্রাসে এখনও তার যন্ত্রণাময় স্বাদ। সে কি ভুলতে পারে উপোসি বালক ছেঁড়া জামা গায়ে পাঁচ মাইল হেঁটে নিম্ন বিদ্যালয়ে যাচ্ছে— রাস্তায় হোঁচট খেয়ে গোড়ালি থেকে গলগল রক্ত বেরিয়ে এল। পঞ্চা মাস্টার ঠিক সেইখানটাতে খুঁচিয়ে দিল। উঃ! শয়তানি হাসি হাসছে, তারপরেই ক্রোধে চোখ লাল। বই আনিসনি কেন? আঁক কষিসনি কেন? লাঠির ডগা দিয়ে হেঁড়া জামাটা আরও ছিঁড়ে বলল— জামা কিনতে পারিস না! নোংরা ছোটলোক, বজ্জাত। অন্ধ আক্রোশে সে ঘুসি চালাচ্ছে। ছোট ছোট হাতে ঘুসি। তারপর তার জ্ঞান নেই। কেননা চতুর্দিক থেকে ইট পাটকেলের মতো মার পড়ছে। পিঠে বুকে মাথায়, মুখে। ফাঁকা মাঠে মাঝরাত্তিরে জ্ঞান এল। এ কোথায় সে? ওই তো চেনা চাঁদ! না। ও চাঁদ আমার নয়, ও আকাশ, এ বাতাস, এ মাটি আমার নয় তো! ভোরবেলা বৃষ্টি এল। মুষলধারে বৃষ্টি। ভিজছে। বৃষ্টির ঠান্ডা লাগছে শরীরের ফোলা জায়গাগুলোয়, কাটা ঠোঁটে, থ্যাতলানো কানে, ব্যথায় ভেঙে পড়া হাড়ে। সাদা পোশাক পরা একজন সাহেব খুব আসেন তাদের বস্তিতে। শুনো, তুমরা লিখাপঢ়া শিখবে? হস্টেল, থাকিবে, খাইবে, পড়িবে, কোনও ব্যয় নাই।
মুখিয়া বললে, তা সাহেব মাঙনা দিবে সব? টিপছাপ লাগবে নাই?
না, তুমরা শিখবে, মহাজন ও দুষ্ট রিসিভার কিছু করতে পারবে না। ঠকিবে না।
মুণ্ডাবস্তি লোধাবস্তি ভেঙে পড়েছে— রাজকোঠিতে থাকছি এ মাস। যে কেহ পড়িতে চাইবে, পড়িবে। আমরা দিব। ক্রাইস্ট দিবেন। —উনি বললেন।
চলে গেলে জল্পনা-কল্পনা। এ বোধহয় ছোট ছেলেগুলোকে খাদানে নিয়ে যাবার ষড়। নইলে আর কী হতে পারে!
ব্যথা ভুলে, দপদপে যন্ত্রণা বৃষ্টি সব অগ্রাহ্য করে সে ছুটছে, ছুটছে, ডুলুং নদীর পুল পার হয়ে যাচ্ছে, কনকদুর্গা পার, রাজকোঠি তুমি আর কত্তদূর।
রাজনীতিতে যাবার ডাক সে অনেকবার পেয়েছে। এতটা উচ্চশিক্ষিত, শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে এমন অঙ্গাঙ্গী মিশে গেছে এমন ট্রাইব্যাল ক’জন আছে? সে শুধু কতকগুলো প্রশ্ন রাখে:
—দাঁড়াতে বলছেন? নির্বাচনে? বেশ, কোন দল? আমার কোনও দল নেই। ঢুকতে ইচ্ছা করি না।
বেশ তো, নির্দল হয়ে দাঁড়াবে।
নির্দল মানে কি সত্যি নির্দল? কারও সঙ্গে যোগ দেব না। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বোঝাপড়ায় যাব না ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’র জন্যে। নিজের বিকেক মতো চলব!
তাহলে তো কোনও কাজ-কাম করতে পারবে না, উন্নয়ন তো করতে হবে।
উন্নয়ন বলতে?
ইস্কুল-কলেজ হবে, হাসপাতাল হবে, দেশের ধন দেশে থাকবে। আম-মানুষ খেতে পরতে পাবে, কামকাজ পাবে।
তা এ সবই তো ভাল কাজ। নির্বাচন বুঝি। কিন্তু এই কাজগুলো করবার জন্য দলে না ভিড়লে কাজ করতে পারব না? মানে?
নির্বাচনওয়ালারা এই ‘মানে’র মানেটা বলতে পারেনি।
কাজল বলেছিল, আমার নিজস্ব কাজ আছে। কারও স্বার্থে লাগলেই মিথ্যে অপবাদে ফাঁসা কিংবা খুন হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।।
আমি সমাজ-সংস্কারক নই, রাজনৈতিক আদর্শ নামে সোনার পাথরবাটিতে বিশ্বাস করি না। আমি গবেষক। তবে হ্যাঁ, যথাসম্ভব মানুষের কাজে লাগা; আপাদমস্তক সৎ ও যুক্তিশীল থাকা— এগুলো আমার দায়। একটা জীবনে মানুষ আর এর চেয়ে বেশি কী করতে পারে? —নতুন ওয়েবসাইট হচ্ছে ইনস্টিটিউটের, সে কাজে মগ্ন হয়ে গেল। খেয়াল হল তিনটেয়। লাফিয়ে উঠে সে প্রায় ছুটতে লাগল। গড়িয়াহাটের বাস ধরল। উলটোডাঙায় পড়তে না পড়তে হঠাৎ আকাশ কালো করে মেঘ জমল। এবং সে বুঝল নামবার সময়ে সম্ভবত তাকে প্রবল বারিপাতের মধ্যে পড়তে হবে। বাসে এক ভদ্রলোক আর একজনকে বলছিলেন ছাতা নিয়ে না বেরোলে বৃষ্টি হবেই। একরকম গ্যারান্টি, বুঝলেন দাদা। কিন্তু যদি ইচ্ছে করে ছাতা না নিয়ে বেরোন, তুকটা কাজ করবে না। তুক, তুকতাক এইসব শব্দ শুনলেই তার মনে পড়ে যায় আরও অনেক তুকের কথা। ছোট ছেলেমেয়ের কপালে ভুষো কালির টিপ। নজর লাগলে কয়লা আর ঠুঁটো ঝাঁটার কাঠি এক নিশ্বাসে দু’বার ‘আহা’ অর্থাৎ নজর লাগা লোকটির গায়ে বুলিয়ে নিজের পায়ের নীচ দিয়ে গলিয়ে বাস্তুতে ফেলে দেওয়া। আচ্ছা এই যে নজর লাগা মানুষটাকে ‘আহা’ বলে, বাংলার ‘আহা রে— বেচারা’ এর সঙ্গে কি কোনও সম্পর্ক আছে?
আর এক ভদ্রলোক বললেন, লোক্যালাইজ্ড্ রেন, শুরু হয়েছে তা ধরুন গত দশ বছর তো হবেই। নর্থ বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে দক্ষিণ খটখটে। দক্ষিণে হাঁটুজল, খিদিরপুরে ফার্স্টক্লাস কাজকর্ম হচ্ছে। মাল্টিস্টোরিড আর ডিজেল মিলে ওয়েদারের মেজাজ বিগড়ে দিয়েছে। আরও কত কী দেখতে হবে কে জানে!
বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল কাজল। প্রবল হাওয়ার তোড়ে চলার গতি কমছে। কিন্তু বৃষ্টি মুক্তি এক অন্ধকার জীবনের কারাগার থেকে। দূরে বজ্রপাত হয়। যমজ তালগাছ জ্বলে যায়। জ্বলে চিত্তের গভীরে, এক ভয়ংকর দৃশ্য অভিজ্ঞান হয়ে থাকে মুক্তির। গতকাল রাতে শাওয়ার ছেড়ে কীরকম আলুনি লেগেছিল মনে পড়ল। প্রতিদিনই লাগে, খেয়াল করে না। কাল করেছিল বলেই কি বৃষ্টি তার নিজস্ব স্বাদ দিয়ে গেল তাকে? তবে হ্যাঁ, ভেবে-চিন্তে যদি খেয়ালটা করো তাহলে তুকটা খাটবে না। বাসের ভদ্রলোকটির যেমন বিশ্বাস।