Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উঁচু বাড়ি || Sukumar Ray

উঁচু বাড়ি || Sukumar Ray

লোকে বলে—’মনুমেন্টের মতো উঁচু!’ সেরকম উঁচু বাড়ি দেখলে আমরা বলি ‘ইস্‌! বড্ড উঁচু বাড়ি।’ কিন্তু একটিবার আমেরিকায় ঘুরে এস, তারপরে সেই বাড়িই তোমার চোখে নিতান্তই ছোট ঠেকবে। মনুমেন্টের মাথায় অমন আরও দু-চারটা মনুমেন্ট চাপাও, তবে আমেরিকার লোকে বলবে ‘হ্যাঁ, কতকটা উঁচু বটে!’ নিউ ইয়র্কের একটি বাড়ি পঞ্চান্ন তলা—সাড়ে সাতশ ফুট উঁচু! একটা সাধারণ তিনতলা বাড়ি প্রায় ৪০ ফুট উঁচু—এইরকম উনিশটা বাড়ি একটার মাথায় আরেকটা চাপালে তবে ৭৫০ ফুট উঁচু হয়! আমেরিকার এক একটা সহরে বিশতলা ত্রিশতলা চল্লিশতলা বাড়ির ছড়াছড়ি!—ভাবতে গেলে আমাদের মাথা ঘুলিয়ে যায়।
এক একটি বাড়ি যেন এক একটি সহর। তার মধ্যে কত অফিস কত দোকান কত হোটেল গির্জা ইস্কুল থিয়েটার বায়স্কোপ ডাকঘর সভাসমিতি! বাড়ির এক-এক জায়গায় সারি সারি খাঁচার মতো ঘর— তাতে চড়ে লোকে উঠছে নামছে, বিশ পঁচিশ তলা সিঁড়ি ভেঙে কষ্ট করে উঠতে হয় না। বাড়ির মধ্যে ত্রিশ হাজার লোক—সকলেই ব্যস্ত, চারিদিকে ছুটাছুটি অথচ কোন গোলমাল নেই। বন্দোবস্ত এমন সুন্দর যে কিছু একটা দরকার হলে তার জন্যে হাঁ করে বসে থাকতে হয় না বা বিশ মাইল দূরে ছুটতে হয় না। বাড়িতেই সবরকম দোকান—ঘরে বসে টেলিফোন কর, যা চাও দু মিনিটের মধ্যে ঘরে এসে হাজির!
বাড়িতে ঢুকলে দেখবে শুধু যে মাথার উপরে এতখানি দালান তা নয়—মাটির নিচেও দশ বিশ তলা। সেখানে সূর্যের আলো যাবার উপায় নেই—সারাদিন আলো জ্বেলে কাজ চলে। ওইসব নিচের তলাগুলোতে নানারকম কলকারখানা—ইলেকট্রিক কোম্পানির বড় বড় চাকাওয়ালা কল, বাড়ি গরম রাখবার জন্য বড় বড় ‘বয়লার’—বড় বড় ছাপাখানা তাতে সকাল সন্ধ্যা খবরের কাগজ ছাপা হয়। কোন কোন রাস্তার দুধারে এইরকম দশ বিশ তলা বাড়ির সার চলেছে—তার ছায়ায় রাস্তা যেন অন্ধকার—সেখানে সূর্যের মুখ দেখা যায় না—আকাশ দেখতে হলে ঘাড় বাঁকিয়ে উপরে তাকাতে হয়। কিন্তু যারা একেবারে উপরে ত্রিশ বা চল্লিশতলায় থাকে তাদের আলো বাতাসের কোন অভাব হয় না। রাস্তার ধূলা সহরের কুয়াশা অত উঁচুতে পৌঁছয় না—কাজেই সেখানকার হাওয়া অতি পরিষ্কার।
বাড়িগুলো দেখতে যেমন আশ্চর্য, এগুলি তৈরি করার কায়দাও তেমনি অদ্ভুত। বাড়ি তুলবার আগে প্রায় ১০০/১৫০ হাত গর্ত কেটে ভিৎ খুঁড়তে হয়। যেখানে বাড়ি হবে, তার চারদিকে খুব মজবুত আর খুব উঁচু ‘কপিকল’ বসায়। সেই কলে বড় বড় লোহার থাম চাপিয়ে থামগুলাকে হিসাবমত ঠিক ঠিক জায়গায় বসান হয়। তারপর থামের গায় লোহার কড়ি বরগা বসিয়ে সেগুলোকে পেরেক স্ক্রু দিয়ে এঁটে দেয়। এমনি করে সমস্ত বাড়িটার একটা কঙ্কাল আগে খাড়া করা হয়। তারপর ঢালাই করা পাথুরে মাটির দেওয়াল দিয়ে কঙ্কালটিকে ভরাট করে তাতে দরজা জানালা বসালে পর তখন সেটা বাড়ির মতো দেখতে হয়। যারা এইসকল কাজ করে তাদের যে অনেকখানি সাহস দরকার তা বুঝতেই পার। মাটি থেকে ৪০০ হাত উপরে লোহার বরগার উপর দিয়ে হাঁটাহাটি করা—তার উপরে বসে কাজ কর্ম করা, কখন বা উপর নিচ ওঠা নামা—এসব যেমন তেমন লোকের কাজ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *