ঈশ্বরতুল্য বাবা
ডাক্তার চঞ্চল বেদী নতুন জয়েন করলেন ঘাটশিলা সরকারি হাসপাতালে। প্রথমদিন নিজের ওয়ার্ডে রোগীদের দেখতে গিয়ে দেখেন কোণের একটা বেডে চার-পাঁচ বছরের একটি শিশু শুয়ে আছে,সর্বদা হাসছে।
ছেলেটি সম্বন্ধে জানতে চাইলে নার্স বলেন, কেউ ওকে হাসপাতালের অনুসন্ধান ঘরে বসিয়ে রেখে চলে যায়। হাসপাতালের সুইপারের নজরে পড়লে মেট্রনের কাছে নিয়ে আসে। বাচ্চার গায়ে একশো চার জ্বর, সর্দিতে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মেট্রন ভর্তি করে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। সেই থেকে এই ওয়ার্ডে আছে। কোনো কথা বলেনা, খিদে পেলেও বলে না, শুধু হাসে। ওটিজমে আক্রান্ত। হাসপাতালের নথিতে নাম রাখা হয় প্রিয়ম।
ডাক্তার বেদী শিশু চিকিৎসক। প্রতিদিন রোগী দেখেতে এসে প্রিয়মকে কোলে নিয়ে আদর করে চলে যান।
একদিন ডাক্তার বেদী প্রীয়মকে কোলে নিতেই ডাক্তারের কাঁধে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে, কোল থেকে নামতে চায়না। মুখে কিছু বলেনা।
ডাক্তার বেদীর মায়া হলো। তিনি প্রিয়মকে ঘরে নিয়ে এলেন।
ব্যাচেলর ডাক্তার হাসপাতাল আবাসনেই থাকেন। শত অসুবিধার মধ্যেও প্রিয়মকে তিনি স্নেহ দিয়ে বড় করে তোলেন। হাসপাতালে ডিউটিতে আসতেন প্রিয়মকে সঙ্গে নিয়ে। প্রত্যহ কাউন্সিলিং, উপযুক্ত চিকিৎসা, পড়াশোনা শিখিয়ে ডাক্তার বেদী প্রিয়মকে স্বাবলম্বী করে তোলেন। প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্গ দেন।
কালের নিয়মে দিন চলে যায়। ডাক্তার বেদীর আর বিয়ে করবার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
তিনি এখন বৃদ্ধ। প্রিয়ম সুস্থ, স্বাভাবিক। ভালো চাকরি করে। প্রিয়মের কাছে ডাক্তার বেদী ঈশ্বরতুল্য পিতা।