গুহার কাছে ফিরে এসে
গুহার কাছে ফিরে এসে অর্জুন দোভাষীকে বলল, এই গ্রামের যেসব ছেলে কাঠমণ্ডুতে গিয়েছে তারা সবাই এখন এখানে আছে?
হ্যাঁ। দোভাষী মাথা নাড়ল। চুরির পর কেউ গ্রাম থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়নি?
হলে তো আমরা তাকেই চোর বলে বুঝতে পারতাম।
যে লোকটি খবর দিতে গিয়েছিল সে ফিরে এসেছে?
হ্যাঁ। গতকাল ফিরেছে।
আপনারা কাকে সন্দেহ করেন?
কারও নাম বলতে পারব না। তবে এর পেছনে সাদা চামড়াদের বুদ্ধি আছে। ওদের একটা দল চুরি যাওয়ার পরেই গ্রামের এত কাছে তাঁবু ফেলল কেন? নিশ্চয়ই পবিত্র জিনিসগুলোকে চোর কাছেপিঠের বরফের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। ওরা সেটা জানে, তাই নিয়ে যেতে এসেছে।
অর্জুন হেসে ফেলল। দোভাষী রেগে গেল, হসছ কেন?
দ্যাখো, ওদের এই অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এক বছর আগে। এখানে আসতে যেসব অনুমতি পাওয়া দরকার তার ব্যবস্থা করতে সময় লেগেছিল। তোমাদের পবিত্র জিনিসগুলো যদি চুরি না হত তা হলেও ওরা আসত। এই আসার সঙ্গে চুরির কোনও সম্পর্ক নেই। ওরা এসেছে তুষার-ভালুকের ছবি তুলতে। অর্জুন ধীরে ধীরে লোকটাকে বোঝাতে চেষ্টা করল।
তুষার-ভালুক? তার ছবি তুলবে ওরা?
হ্যাঁ। তাতে নিশ্চয়ই তোমাদের আপত্তি নেই।
দোভাষী গুহার সামনে বসা মানুষগুলোকে খবরটা জানাতে তারা হো-হো করে হেসে উঠল। দোভাষী বলল, যাক, আমাদের কাজটা সহজ হয়ে গেল। আমাদের আর কিছুই করতে হবে না।
তার মানে?
এই তুষার-ভালুকগুলো খুব চালাক। প্রচণ্ড বুদ্ধি ওদের। আর শক্তিও খুব বেশি। ওদের সঙ্গে টক্কর দেওয়া সহজ নয়। শেষ হয়ে যাবে সাদা চামড়ারা। তার ওপর এবার সঙ্গে দুটো মেয়েকে নিয়ে এসেছে। দ্যাখো। দোভাষী মাথা নাড়ল, যাক গে, তুমি বুদ্ধি খরচ করে চোরকে ধরতে পারবে?
অর্জুন জবাব দিতে গিয়ে থেমে গেল। কয়েকটা ছেলে সেই বড় পাথরের নীচে অর্জুনের খোঁড়া গর্তটাকে এতক্ষণে বিশাল করে ফেলেছে। সে চেঁচিয়ে ওদের নিষেধ করল। ছেলেগুলো সূক্ষেপ করল না। অর্জুন দোভাষীকে বলল, ওদের বারণ করো, নইলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
লোকটা বুঝতেই পারল না কথাটা। হলদে দাঁত বের করে হাসতে লাগল। এবার ছেলেগুলো একসঙ্গে পাথরটাকে পেছন থেকে ঠেলতেই সেটা নড়ে উঠল। যেহেতু তার নীচে মাটির বাঁধন নেই, তাই গড়িয়ে গেল তৈরি করা গর্তে। এবং সেই চাপে গর্ত ডিঙিয়ে ঢালু জমিতে পড়ে মুহূর্তেই দ্রুতবেগে পাক খেতে-খেতে নামতে লাগল নীচের দিকে। চারধার থেকে চিৎকার উঠল। নীচের মানুষজন ছুটে পালাতে লাগল। একটা মুরগি পালাতে পারল না। অনেক ভাঙচুর করে পাথরটা নীচে বরফের ওপর যখন আছড়ে পড়ল, তখন দেখা গেল মুরগির শরীরটা কাগজের মতো মাটির ওপর আটকে আছে। ওর যে রক্ত মাংস হাড় ছিল তা আর বোঝা যাচ্ছে না। চারপাশের মানুষ যেন মূক হয়ে গেছে। কারও যেন সাড়া নেই।
অর্জুন বলল, আমি ওদের নিষেধ করেছিলাম। তুমিও কিছু বললে না। ভাগ্য ভাল, কোনও মানুষ ওই পাথরের সামনে পড়েনি।
দোভাষী কিছু বলার আগেই গ্রামপ্রধানরা চিৎকার করে উঠল। সবাই দুহাত আকাশে ছুড়ে কিছু বলছে। সেটা যে উল্লাসের অভিব্যক্তি তা বুঝতে সময় লাগল। লোকগুলো ছুটে এসে অর্জুনের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়াল।
দোভাষী বলল, আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।
কেন?
আমরা তো বটেই, আমাদের পূর্বপুরুষরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ওই পাথরটাকে ওখানে দেখে এসেছে। আমরা সবাই জানি ওটা একটা শয়তান। এই মন্দিরের বাইরে শয়তানটা যুগ-যুগ ধরে বসে আছে। যখনই কেউ ঝগড়া আর মারপিট করে তখনই দেখা গেছে ওই পাথরটার পাশে সে গিয়েছিল। আমাদের কারও ক্ষমতা হয়নি ওটাকে সরাবার। তোমার জন্যে শয়তানটাকে গ্রাম থেকে দূর করে বরফের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হল। এখন ও ক্ষতি করবে যারা বরফের ওপর বাস করে তাদের। তুমি আমাদের খুব উপকার করেছ।
এরকম কাকতালীয় ঘটনা অর্জুন কল্পনা করেনি। এক লহমাতে সে গ্রামের মানুষের প্রিয়জন হয়ে গেল। প্রধানের নির্দেশে একঘটি দুধ আর চমরি গাইয়ের দুধ থেকে তৈরি শক্ত দুরপি পরিবেশন করা হল। খিদে পেয়ে গিয়েছিল অর্জুনের। কৌতূহলী দৃষ্টিগুলো নস্যাৎ করে সে খেয়ে নিল। প্রধানের সঙ্গে কথা বলে দোভাষী বলল, আমরা এখন বিশ্বাস করি যে তুমি চোর ধরে দিতে পারবে। আর যেহেতু তুমি ওই সাদা চামড়াদের সঙ্গে এসেছ তাই এবার ওদের কোনও ক্ষতি করব না আমরা। তবে তুমি ওদের বলে দিও আমাদের গ্রামে যেন না ঢোকে।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, এই দলের দুই ভদ্রমহিলা যদি আসতে চান?
দোভাষী আবার আলোচনা করতে গেল। ওদের ভাষা না বুঝলেও অনুমান করা যাচ্ছে ওরা একমত হচ্ছে না। শেষপর্যন্ত দোভাষী ফিরে এসে বলল, মেয়েদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তাদের ওপর আমাদের কোনও রাগ নেই। তবে তুমি যদি সঙ্গে থাকে তা হলেই আমরা মেয়েদের এখানে আসতে দিতে পারি।
অর্জুন যখন তাঁবুতে ফিরে এল তখন বেলা বারোটা। অতটা পথ বরফ ভেঙে এলেও এবার তার তেমন কষ্ট হয়নি। লোকগুলোর দেওয়া পির একটা টুকরো তখন গালে ছিল। বস্তুটি দুগ্ধজাত কিন্তু প্রচণ্ড শক্ত। মুখে রাখলে একটা স্বাদ পাওয়া যায়। গলে খুব ধীরে ধীরে। নরম হয় অনেকক্ষণ রাখার পরে। অর্জুনের মনে হল এই বস্তুটি নিশ্চয়ই বাড়তি এনার্জি জোগায়।
ক্যাম্পে কেউ ফিরে আসেনি। এখন মাথার ওপর সূর্য এবং খুব হালকা রোদ। শেরপা দুজন এগিয়ে এল। একজন জিজ্ঞেস করল, কতদুরে গিয়েছিলেন সার?
গ্রামে।
আপনি একা গিয়েছিলেন বলে আমরা চিন্তা করছিলাম।
থ্যাঙ্ক ইউ। অর্জুন মাথা নেড়ে দেখল জুডি তার তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে আকাশের দিকে তাকাল। ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেজাজ ভাল নেই।
অর্জুন এগিয়ে গেল, একাএকা খুব বিরক্ত লাগছে, তাই না?
সেটাই স্বাভাবিক।
আমি তোমার কাছে একটা সাহায্য চাই।
জুডি কথা না বলে তাকাল। দৃষ্টিতে প্রশ্ন।
আমি কাছাকাছি একটা গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানকার মানুষগুলো এমনিতে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। কিন্তু এক বৃদ্ধ পুরোহিত প্রচণ্ড অসুস্থ। গায়ে বেশ জ্বর। এদের এখানে চিকিৎসা করা হয় আদিম পদ্ধতিতে। অত জ্বর দেখে আমি একটা ক্রোসিন ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়েছি। অর্জুন বলল।
ক্রোসিন ট্যাবলেট। জুড়ি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
এটা এক ধরনের প্যারাসিটামল দেওয়া অ্যানালজেসিক ট্যাবলেট।
তুমি কি ডাক্তারি পড়েছ?
না।
তা সত্ত্বেও ওষুধ দিয়ে দিলে?
অর্জুন জানে জুডি ঠিক কথা বলছে। কিন্তু এ-দেশের মানুষ সামান্য জ্বরজারিতে কিছু নিরীহ ওষুধ খেয়েই থাকে। সামান্য পেট খারাপ হলে কেউ ডাক্তারের কাছে যায় না। কিন্তু জুডিকে এসব কথা বোঝানো বৃথা।
সে বলল, আমি জানতাম জ্বর বেশি হলে ওষুধটা কাজে দেয়।
কী ধরনের জ্বর। যদি অন্য কোনও ইনফেকশনে জ্বর আসে তা হলে কোনও কাজই দেবে না। আমাদের প্রত্যেকের নিজের এক্তিয়ারের মধ্যে থাকা উচিত। জুড়ি মাথা নাড়ল।
সরি। এটা সবসময় সত্যি নয়। আমি যদি দেখি এই মুহূর্তে তুমি অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছ, যেহেতু আমি ডাক্তার নই তাই অক্সিজেন মাস্ক তোমার মুখে লাগিয়ে দেব না? তুমি মারা গেলেও আমার এক্তিয়ারের বাইরে যাব না? যে লোকটাকে ওষুধ দিয়েছি তার পেটে এখন পর্যন্ত কোনও ওষুধ পড়েনি। ও ওইভাবে ভুগে মরে গেলেও ওষুধ পড়বে না। বরং ট্যাবলেটটা খেয়ে যদি ওর একটুও উপকার হয় তাহলে ওর অনেক উপকার হবে।
জুডি অবাক হয়ে অর্জুনের দিকে তাকিয়েছিল।
অর্জুন বলল, তুমি ডাক্তার। লোকটাকে একবার দেখবে?
জুড়ি অন্যদিকে তাকাল, আমার যেতে আপত্তি নেই। তবে জনের অনুমতি চাই।
ঠিক আছে। জন এলে ওকে বলব।
অর্জুন নিজেদের তাঁবুতে চলে এল। জুডি তাকে পছন্দ করছে না কেন? ডানার মতন সহজ মেয়ে ও নয়। প্রথম থেকেই দূরত্ব রেখে চলেছে। জন যদি আপত্তি করে তা হলে আর কী করা যাবে।
চেয়ারে বসে অর্জুন সমস্ত ঘটনাটা ভাবার চেষ্টা করল। আজ গ্রামে গিয়ে একটাই উপকার হয়েছে। ওরা তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু মুণ্ডু এবং চামড়া যা গ্রামের মানুষের কাছে পবিত্র জিনিস, তা কে কীভাবে চুরি করল তার বিন্দুমাত্র হদিস পায়নি। এ যেন সমুদ্রে পড়ে যাওয়া একটা আধুলিকে খুঁজে বের করা। গ্রামের লোকগুলোকে দেখে বোঝাই যায় ওরা অসৎ নয়। অন্তত নিজেরা যা পবিত্র মনে করে তা টাকার লোভে বাইরের লোকের কাছে বিক্রি করবে না। বিক্রি যদি করেও তা হলে সেই টাকা রাখার এবং খরচ করার কোনও রাস্তা ওদের জানা নেই। একটা মস্ত পাথরকে যারা শয়তান বলে মনে করে তাদের ধূর্ত বলা চলে না। অর্জুনের মনে হল পুরোহিতের কথা। ঘটনার দিন থেকেই লোকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কেন? তবে কি ও এমন কিছুর সাক্ষী যার জন্যে প্রচণ্ড মানসিক ধাক্কা খেয়েছে। এবং সেই কারণেই অসুস্থতা? অর্জুন সঙ্গে-সঙ্গে ভাবনাটাকে বাতিল করল। প্রথম চিন্তায় যে ভাবনা মাথায় আসে সেটাকে আঁকড়ে ধরলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল পথে হাঁটতে হয়।
আসতে পারি?
অর্জুন দেখল জুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই!
এসো। দ্বিতীয় খালি চেয়ারটা দেখিয়ে দিল অর্জুন। আই অ্যাম সরি।
ঠিক আছে।
আসলে আমি খুব ডিস্টার্বভ।
কেন?
অভিযানে যখন যোগ দিয়েছিলাম তখন ভাবিনি এমন অলসভাবে সময় কাটাতে হবে। এখানে আমার কিছুই করার নেই, যতক্ষণ কেউ অসুস্থ না হয়। অথচ ডানাকে দ্যাখো, সবাই ব্যস্ত ওকে নিয়ে। ওর সাফল্যের ওপর এই অভিযানের সাফল্য নির্ভর করছে। নিশ্বাস ফেলল জুডি।
ব্যাপারটা তুমি অন্যভাবেও দেখতে পারে।
কীরকম?
তোমার ওপর অভিমান নির্ভর করে আছে। ধরো, ডানা বা জন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। তুমি যদি চিকিৎসা করে ওদের সুস্থ করতে না পারে তা হলে অভিযান বাতিল হয়ে যাবে। তাই না?
তা ঠিক। কিন্তু আমি কখনওই চাই না ওরা অসুস্থ হোক।
এইসময় বাইরে কথাবার্তা শোনা গেল। ওরা বাইরে এসে দেখল দলের সবাই ফিরে এসেছে। জন এগিয়ে এলেন, গিয়েছিলে?
হ্যাঁ।
কীরকম দেখলে?
তোমাদের ওপর খুব রেগে আছে ওরা। ভাবছে তোমরাই ওগুলো চুরি করিয়েছ। আমি অনেক বুঝিয়েছি।
জন বললেন, কী ঘটেছে সব খুলে বলে। ডিটেলসে।
অর্জুন বলল।
জন ওর হাত ধরলেন, অনেক ধন্যবাদ।
তোমাদের কোনও কাজ হল?
এবার ভানা এগিয়ে এল, অনেকটা ঘুরেছি। তুষার-ভালুকরা বোধহয় আগেই খবর নিয়েছিল। কেউ ছবি তুলতে এগিয়ে আসেনি।
জন বললেন, রাবিশ। আমি দুটো ভালুকের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। চারটে পা নয়, দুটো পায়ের ছাপ। এখান থেকে মিনিট পনেরো উত্তরে। তার মানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলেছে ও দুটো। তার ওপর রাত্রে তুষার পড়েছে। দিনের বেলার টাটকা ছাপ নজরে আসেনি। এর থেকে প্রমাণিত হয় ওরা মাইল দুয়েকের মধ্যেই আছে। এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের। তুমি আবার কবে গ্রামে যাবে?
অর্জুন বলল, আমি আজ যেতে চাই।
কেন?
ওই পুরোহিতকে বাঁচাতেই হবে।
কিন্তু লোকটার অসুখ কী, তা তো জানো না।
সেইজন্যে জুডিকে নিয়ে যেতে চাই।
জুডিকে? না, না।
না কেন?
ওরা আমাদের পছন্দ করছে না। জুডির ক্ষতি করতে পারে।
আমি কথা দিচ্ছি সেটা করবে না।
তা ছাড়া জুড়ি খুব নিয়ম মেনে চলে। আমার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে অভিযানের সদস্যদের সে চিকিৎসা করবে। বাইরের লোককে দেখতে আমি তাকে বাধ্য করতে পারি না।
জুডি যদি নিজে যেতে রাজি হয়?
জন অবাক হয়ে তাকালেন, তাই নাকি? তা হলে যাও তোমরা।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ওরা রওনা হল। ডানার খুব ইচ্ছে ছিল সঙ্গে যাওয়ার। কিন্তু জন নিষেধ করলেন। সকালে এতটা পরিশ্রম করার পর আবার বরফ ঠেঙিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আগামীকাল ভোরের আগেই বেরোতে হবে তাঁদের।
এখানে সন্ধে নামে ঝুপ করে। তবু হাতে ঘণ্টা তিনেক সময় আছে। জুডির ওষুধের বাক্সটা অৰ্জুন বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রথম প্রথম হাঁটার সময় জুডি ফানি, ইন্টারেস্টিং ইত্যাদি শব্দ বলছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে চুপ করে গেল। অর্জুন ঘড়ি দেখল। একটু একটু করে তাদের ওপরে উঠতে হচ্ছে। পায়ের তলায় জমাট তুষার থাকায় হাঁটতে হচ্ছে পা টেনে-টেনে। হাতে সময় আছে। সূর্যাস্তের আগেই তাদের ফিরে আসতে হবে। সে বলল, হেলিকপটারে না এসে পুরো পথটা যদি পায়ে হেঁটে আসতে হত তা হলে আমি কিছুতেই আসতাম না।
আমিও না। এই প্রথম হাসি দেখা গেল জুডির মুখে।
চলো, ওই পাহাড়ের বাঁকটা ঘুরলেই গ্রামে পৌঁছে যাব।
গ্রামের পথে উঠতেই চিৎকার শুনতে পেল ওরা। দু-তিনটে বাচ্চা মাথার ওপরে হাত তুলে চেঁচাচ্ছে আর লাফাচ্ছে। ওরা এগোতেই তারা অদৃশ্য হয়ে গেল। জুড়ি ভয় পেল, কী ব্যাপার? আমরা বিপদে পড়ব না তো?
উপকার করতে গিয়ে বিপদে পড়লে যিশু কী করতে বলেছেন?
সরি। আবার উপকার করার বাসনা আমার নেই।
গ্রামে ঢুকতেই বয়স্কদের এগিয়ে আসতে দেখল ওরা। দোভাষী ওই দলে নেই। সবাই একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। এই ভাষা অর্জুনের জানা নেই। ব্যাপারটা ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারল। জুড়ি বলল, তুমি এদের ভাষা আগেরবার কী করে বুঝলে?
তখন দোভাষী ছিল।
তা হলে শেরপাদের একজনকে সঙ্গে নিয়ে আসা উচিত ছিল। ওরা নিশ্চয়ই বুঝবে।
লোকগুলো চুপ করতেই অর্জুন জুডিকে ইশারা করে এগোল। গ্রামের মধ্যে দিয়ে ওরা হাঁটছে আর লোকগুলো পেছনে আসছে। এবং প্রতি পদক্ষেপে ওদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। দোভাষী কোথায় গেল। সে যদি না থাকে তা হলে একমাত্র ভরসা হচ্ছে ডাক্তারের বাবা।
পুরোহিতের ঘরের সামনে পৌঁছে সে জুডিকে বলল, পেশেন্ট এখানে থাকে। আমার সঙ্গে এসো।
জনতাকে বাইরে রেখে ওরা ভেতরে ঢুকল।
লোকটি ঘুমোচ্ছে। তার পাশে বসা বৃদ্ধা অর্জুনকে দেখে দুহাত তুলে কিছু বলতে লাগল। ব্যাপারটা আশীবাদের মতো বলে মনে হল অর্জুনের। অর্জুনের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে জুড়ি পরীক্ষা আরম্ভ করল। প্রথমে নাড়ি দেখল। তারপর স্টেথো দিয়ে বুক পরীক্ষা করল। এইসময় লোকটি চোখ খুলল। কিন্তু সে এত ক্লান্ত যে, বেশিক্ষণ তাকাতে পারল না।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, জ্বর কত?
জুড়ি মাথা নাড়ল, এখন জ্বর নেই।
তা হলে ওষুধ কাজ করেছে, তাই না?
হয়তো। কিন্তু সেটা সাময়িক। জ্বর আবার আসবে।
কী করে বুঝলে?
ওর বুকে কফ বসে আছে। হার্ট বিট নর্মাল নেই। এখনই রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। বলেই জুডির খেয়াল হল, সেটা তো এখানে সম্ভব নয়। হসপিটাল কতদূরে? সেখানে নিয়ে যাওয়া যায় না?
একদিনে পৌঁছনো যাবে না। আগে এলে আমাদের হেলিকপটারে পাঠানো যেত। হেলিকপটার আসবে তিনদিন বাদে।
তা হলে? জুডিকে চিন্তিত দেখাল।
এভারেস্টের একশো গজ নীচে যদি কেউ অসুস্থ হয় ডাক্তার হিসেবে তার চিকিৎসা যেভাবে করবে, এর ক্ষেত্রে তাই করো।
অর্জুনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে জুডি লোকটার চোখের পাতা সরিয়ে টর্চ দিয়ে দেখল। তারপর পেট টিপতে লাগল। লোকটা বলল উঃ।
জুড়ি ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, কোথায় ব্যথা লাগছে? এখানে?
অর্জুন হেসে ফেলে অবাক হল! জুডি দ্বিতীয়বার চাপ দিতেই লোকটা মাথা নাড়ল, হ্যাঁ, ওখানেই লাগছে।
এইসময় ঘরে ঢুকলেন বৃদ্ধ। অর্জুন বলল, আপনি এতদূরে আসতে পারলেন?
না এসে উপায় নেই। যে লোকটা হিন্দি জানত সে গিয়েছে সাত মাইল দৃরের গ্রামে। এদের কথা তোমরা বুঝতে পারছ না বলে বাধ্য হয়ে আমাকে ডেকে এনেছে। এমনিতে এরা আমাকে পছন্দ করে না। চুরি যাওয়ার পর তো একঘরে করে রেখেছে।
কেন?
আমার ছেলে সাহেবদের স্কুলে পড়েছে। ডাক্তার হয়েছে। গ্রামের বাইরে জন্মেছে। আমি একটু ইংরেজি জানি। তাই। ছেলে কত বলেছে তার ওখানে গিয়ে থাকতে। কিন্তু আমি যাব না। এই গ্রাম আমার প্রাণ, এখানেই জন্মেছি, এখানেই মরতে চাই।
অর্জুন বৃদ্ধের সঙ্গে জুভির আলাপ করিয়ে দিল। বৃদ্ধ গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করল, ইউ ডক্টর?
ইয়েস।
ম্যারেড?
নো।
গুড। তারপর পুরোহিতকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাড?
ইয়েস। জুড়ি মাথা নাড়ল।
বৃদ্ধ এবার অর্জুনের দিকে তাকিয়ে হিন্দিতে বলল, এই যে শুনলাম তোমার দেওয়া ওষুধ খেয়ে ও ভাল হয়ে গিয়েছে, জ্বর সেরে গেছে? আমি বললাম, ওই ওষুধ আমার ছেলে আমাকে দিয়েছিল। তা হলে?
ইনি ডাক্তার। যা বলছেন ঠিকই বলছেন।
বৃদ্ধ গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। ওঁর ইংরেজির শব্দভাণ্ডার শেষ হয়ে গিয়েছে। জুড়ি ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, একে কী খাওয়ানো হচ্ছে?
বৃদ্ধ বুঝতেই পারলেন না কথাগুলো। অর্জুন হিন্দিতে বলতে তিনি পুরোহিতের পাশে বসা মহিলাকে প্রশ্নটা করলেন। জবাব শুনে জানালেন, জল ছাড়া কিছুই খেতে চাইছে না।
জুডি বলল, একে বলে মাংসের স্টু করতে। আজ চার ঘণ্টা অন্তর এক কাপ করে স্টু খাওয়াবে। কাল যদি জ্বর না আসে মশলা ছাড়া সেদ্ধ খাবার দেবে। এর লিভারে ব্যথা হয়েছে। কোনওরকম পরীক্ষা ছাড়া রোগ ধরা সম্ভব নয়। হার্টের কন্ডিশন ভাল নয়। জ্বর না এলে যেন ঘরের বাইরে যায়। এই ঘরে দেখছি হাওয়া ঢোকার উপায় নেই। কথা শেষ করে জুড়ি ব্যাগ থেকে শিশি বের করে ইঞ্জেকশন তৈরি করল। তারপর লোকটার হাতে ওষুধ ঢুকিয়ে দিল। মুখে একটু ভাঁজ পড়ল লোকটার। একবার তাকাল। বৃদ্ধ তাকে ওদের ভাষায় বোধহয় সান্ত্বনা দিল। জুড়ি চারটে ক্যাপসুল বের করে অর্জুনের হাতে দিল, আজ দুটো একসঙ্গে, সুপ খাওয়ানোর পর, আর কাল সকালে কিছু খাইয়ে খাওয়াতে বলবে।
অর্জুন বৃদ্ধকে সব বুঝিয়ে দিল। এমনকী সুপ কী করে তৈরি করতে হবে সেকথাও। বৃদ্ধ সেটা তর্জমা করে দিলে মহিলা মাথা নেড়ে ক্যাপসুলগুলো হাত পেতে নিল। বাইরে বেরিয়ে আসতে প্রধান এগিয়ে এসে তিনবার মাথা ঝুঁকিয়ে কিছু বলল। বৃদ্ধ তর্জমা করল, প্রধান বলছে তোমার কাছে সবাই কৃতজ্ঞ। তুমি একবেলাতেই পুরোহিতের জ্বর সারিয়ে দিয়েছ। এখন থেকে তোমাকে ওরা বন্ধু বলে মনে করছে। তাই তোমাদের কিছু খাওয়াতে চায় সবাই।
অর্জুন বলল, অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে এসেছি। তা ছাড়া সন্ধের আগেই ফিরে যেতে হবে।
বৃদ্ধের তর্জমায় কান দিল না লোকগুলো। ওদের নিয়ে আসা হল মন্দিরের সামনে। বসার জায়গা এনে দিল। মেয়েরা জুডিকে দেখছিল কৌতূহলী চোখে। কেউ-কেউ এগিয়ে এসে ওর গায়ে হাত বোলাল। জুডি বিব্রত হলেও মুখে হাসি রেখেছিল। এইসময় খাদ্যদ্রব্য এল। বড়বড় ঘটিতে চমরি গোরুর দুধ, পোড়া মাংস আর প্রচুর পরিমাণে ছুরপি। অর্জুনের অনুরোধে দুধে চুমুক দিয়ে ছুরপি নিল জুড়ি। অর্জুনও মাংস খেল না। অনেক সাধাসাধিতেও নয়। এ কোন প্রাণীর মাংস আন্দাজ করা মুশকিল। আকৃতি দেখে বোঝাই যাচ্ছে প্রাণীটি ছোট নয়।
দুধটাও শেষ করতে পারল না ওরা। ছুপিগুলো পকেটে রেখে রওনা হল ওরা। অর্জুন দেখল চারজন গ্রামবাসী ওদের সঙ্গে চলেছে। প্রচুর পরিমাণে শীতবস্ত্র পরে ওদের দিকে তাকিয়ে সংকোচ হচ্ছিল তার। কম্বল জাতীয় বস্তু শরীরে জড়িয়ে হাঁটছে। মাথায় কিছু নেই। পায়ে টায়ারের চটি। ওরা ওদের এগিয়ে দিতে চলেছে বুঝতে পেরে নিষেধ করল অর্জুন। ওরা শুনছিল না। অনেক চেষ্টার পর ওদের ফেরত পাঠাতে পারল সে।
জুড়ি চুপচাপ দেখছিল। ওরা চলে যেতে সে বলল, আমি না বলে পারছি না এই মানুষগুলোর মন খুব ভাল।
অর্জুন বলল, চিরকালই নিঃস্ব মানুষেরা ভাল হয়।
কেন?
ওদের মনে জটিলতা থাকে না।
জন বলছিল ওরা আমাদের ওপর খুব রেগে আছে। হয়তো ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু কিছুই করল না। জুডি হাঁটতে-হাঁটতে বলল।
উপকার পেলে এরা মনে রাগ পুষে রাখে না।
জুডি হাসল, আচ্ছা তুমি কি প্রাইভেট ডিটেকটিভ? জন যখন বলেছিল তখন আমি ভেবেছিলাম শার্লক হোমসের মতো কেউ পাইপ হাতে আসবে। তোমাকে দেখে খুব হতাশ হয়েছিলাম। তুমি ওদের চুরি হয়ে যাওয়া জিনিসগুলো উদ্ধার করতে পারবে?
জানি না। আজ দুবার ওখানে গিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও কু পাইনি।
তা হলে?
দেখা যাক ভাগ্যে কী আছে?
আচ্ছা, গল্পের বইয়ে দেখেছি গোয়েন্দারা কখনও ব্যর্থ হয় না। তাই না?
ব্যর্থ হলে পাঠক সেই গোয়েন্দার গল্প আর পড়বে না।
তুমি কি কখনও ব্যর্থ হয়েছ?
অনেকবার। তবে আমার ভাগ্য ভাল, সেগুলো প্রচারিত হয়নি।
দিনটা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল। সূর্যদেব পশ্চিমের আকাশে আরও কিছুক্ষণ হয়তো থাকবেন কিন্তু পাহাড় তাঁকে আড়াল করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। অর্জুন দেখল হঠাৎ বরফের চেহারা বদলে গেল। অপূর্ব এক মায়াময় আলো এখন চারপাশে ছড়িয়ে। এই আলোতে কোনও তেজ নেই। ন্যাতানো, মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মতো অস্বস্তিকর অর্জুন বলল, তাড়াতাড়ি। সন্ধে নেমে গেলে খুব মুশকিল হবে।
কী হবে?
রাস্তা হারিয়ে ফেললে সারারাত এখানে বেঁচে থাকব না।
এখানে রাস্তা কোথায়?
বাঃ, আমাদের পায়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছি না?
তখনও ক্যাম্প নজরে পড়ছে না। হঠাৎ জুড়ি দাঁড়িয়ে গেল।
অর্জুন পেছনে ছিল, জিজ্ঞেস করল, কী হল?
কোনদিকে যাব? এদিকেও ছাপ ওদিকেও ছাপ।
অর্জুন দেখতে পেল। নরম বরফে পায়ের ছাপ পড়েছে। দুদিকে দুটো লাইন। ডানদিকের ছাপটা এই অবধি এসে আবার ফিরে গিয়েছে। সেই ছাপ মানুষের পায়ের নয়।
অর্জুন বলল, একটু ওপাশে গিয়ে দেখি। এসো।
ওটা তো আমাদের পায়ের ছাপ নয়।
না। ওরা খানিকটা হেঁটে একটা বরফের টিলার ওপর উঠে এল। সামনেই পাহাড়, মাঝখানে দুটো ফুটবল-মাঠের মতো জায়গা বরফে ঢাকা। হঠাৎ জুডি অর্জুনের হাত শক্ত করে চেপে ধরে চাপা গলায় বলল, লুক, লুক!
জুডির হাত লক্ষ করে অর্জুন দেখল, বরফের ওপর একটা কালো প্রাণী হেঁটে যাচ্ছে। আলো কমে যাওয়ায় এবং দূরত্ব থাকায় স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু প্রাণীটি তাদের দিকে পেছন ফিরে হেঁটে আচমকা কোথায় মিলিয়ে গেল। জুড়ি চিৎকার করে উঠল, ইয়েতি! আই অ্যাম শিওর। ইটস ইয়েতি।
অর্জুন কোনও কথা বলতে পারল না। নিজের চোখকে সে অবিশ্বাস করবে কী করে?
জুড়ি বলল, তাড়াতাড়ি ফিরে চলো। জনকে বলতে হবে ব্যাপারটা। এখনই যদি ওই পায়ের চিহ্ন ধরে খোঁজা যায় তা হলে পৃথিবীর আশ্চর্যতম আবিষ্কারটা করে ফেলব আমরা।
ক্যাম্পে পৌঁছবার শেষদিকটায় প্রায় অন্ধকারে হাতড়াতে হয়েছিল। তাঁবুর আলো তাদের পৌঁছতে সাহায্য করল। জন খুব উত্তেজিত হয়ে বললেন, এ কী কাণ্ড। তোমরা এত দেরি করলে? চিন্তায় আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। এখনই আমরা রওনা হচ্ছিলাম তোমাদের খুঁজতে। ওরা কি তোমাদের আটকে রেখেছিল?
জুড়ি প্রবলভাবে মাথা নাড়ল, নো, নো। ওরা খুব ভাল লোক। ফিরে আসার সময় এমন একটা জিনিস দেখলাম যা তোমরা ভাবতে পারবে না।
কী জিনিস?
ইয়েতি। উত্তেজিত গলায় বলল জুডি।
দলের অন্য সদস্যরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। ডানা বলল, জন, তুমি বলেছিলে ইয়েতি বলে কিছু নেই। তোমরা ওর আগে প্রমাণ করেছ। তা হলে ডক্টর জুডি সেটাকে দেখলেন কী করে?
জুডি রেগে গেল, অর্জুনকে জিজ্ঞেস করো।
সবাই অর্জুনের দিকে তাকাল। অর্জুন বলল, আমি একটা প্রাণীকে হেঁটে যেতে দেখেছি। বরফের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। অনেকটা দূরে ছিল ও, আমাদের দিকে পেছন ফেরা। ওটা যে ঠিক কী, তা বলতে পারব না।
জন বললেন, জুড়ি ভুল করছে। হয়তো আশপাশের কোনও গ্রামের মানুষ যাচ্ছিল। ওরা সন্ধের সময়েও আসা-যাওয়া করতে অভ্যস্ত।
অর্জুন মাথা নাড়ল, না। ওই প্রাণী মানুষ নয়। ওর পায়ের ছাপ অনেক বড় এবং গোল।
কথাটা শোনামাত্র জন চেঁচামেচি করে শেরপাদের ডাকতে লাগলেন। তারা এলে জন বললেন, আমার মনে হচ্ছে তুষার-ভালুক আমাদের খুব কাছে চলে এসেছে। অর্জুনরা ওর পায়ের ছাপ দেখে এসেছে। এখন না গেলে রাত্রে যে তুষার পড়বে তাতে আর কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। চলো, বেরিয়ে পড়ি।
শেরপাদের নেতা বলল, আপনি আদেশ করলে আমরা যেতে বাধ্য। কিন্তু আপনার তো অভিজ্ঞতা আছে সার। অন্ধকারে টর্চ নিয়ে গেলেও বরফের ওপর হেঁটে যাওয়া উচিত নয়।
আমি জানি। কিন্তু এমন সুযোগ সবসময় পাওয়া যায় না।
শেরপাদের নেতা অর্জুনের কাছে পুরো ঘটনাটা শুনতে চাইল। অর্জুন বলার পর লোকটা মাথা নাড়ল, সার, সুযোগ আবার পাওয়া যাবে।
কী করে বলছ?
জানোয়ারটা মানুষের পায়ের ছাপ পর্যন্ত এসে ফিরে গিয়েছে। ও এক ছিল। গ্রামের মানুষদের সম্পর্কে ওদের তেমন কৌতূহল নেই। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে নিশ্চয়ই আছে। এই কারণেই আবার ফিরে আসবে। নরম বরফের ওপর ওরা চার পায়ে হাঁটে বলে বিপদে পড়ে না। আমরা পড়তে পারি।
জুড়ি বলল, কিন্তু ওটা দুপায়ে হাঁটছিল।
ও নিজের পায়ের ছাপ দেখে ফিরে যাচ্ছিল বলে জানত দু পায়ে হেঁটে গেলে বিপদে পড়বে না। ওরা মানুষকে নকল করে দু পায়ে হাঁটে যখন ইচ্ছে হয়।
যে-যার তাঁবুতে চলে গেলে জনকে পুরোহিতের কথা বলল অর্জুন। জন মন দিয়ে শুনে বললেন, এটা খুবই মানবিক কাজ কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।
কীরকম?
লোকটার আয়ু যদি সত্যি ফুরিয়ে গিয়ে থাকে তা হলে কোনও চিকিৎসায় কাজ হবে না। তা ছাড়া হসপিটালে যেভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব তা এখানে জুডি করতে পারবে না। লোকটা মরে গেলে ওদের মনে হবে তোমাদের দেওয়া ওষুধ খেয়ে মারা গেল। তাই না?
আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ক্রোসিন ট্যাবলেট খেয়ে লোকটার জ্বর কমে গিয়েছিল। জুড়ি বলেছে অবশ্য, ওর অবস্থা ভাল নয় কিন্তু এখনও মারা যাওয়ার আশঙ্কা নেই। ওকে সুস্থ করে তুলতে হবেই। সাময়িকভাবে হলেও সুস্থ করা দরকার। অর্জুন জোর গলায় বলল।
কেন?
মন্দির থেকে জিনিসগুলো যে রাত্রে চুরি হয় তারপরেই লোকটা অসুখে পড়ে। আমি জানি না সেই রাত্রে পুরোহিত মন্দিরে ছিল কিনা।
ইন্টারেস্টিং।
একটু পরেই ঝড় শুরু হল। দিনের আকাশ পরিষ্কার ছিল। কিন্তু সন্ধের কিছু পরেই যে প্রকৃতি রুদ্র চেহারা নেবে, ভাবা যায়নি। পাহাড়ের আড়ালে থাকায় সরাসরি ঝড়ের আঘাত সহ্য করতে হচ্ছে না তাঁবুগুলোকে। কিন্তু তার শোঁ-শোঁ আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছিল কয়েকশো রাগী বাইসন দৌড়ে যাচ্ছে। জন বিড়বিড় করে বললেন, দিস ইজ ব্যাড। খুব খারাপ। এরকম ওয়েদার আমি পছন্দ করছি না।
ঘড়িতে এখন মাত্র সাতটা বেজে দশ। অর্জুন তাঁবুর দরজা খুলে বাইরে তাকাল। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সামনের পৃথিবীতে যে তাণ্ডব চলছে তা বুঝতে পারা যাচ্ছে। এর মধ্যে একজন শেরপা দৌড়ে তাদের রাতের। খাবার নিয়ে এল।
জন লোকটাকে বললেন, তোমরা খুব ভাল পরামর্শ দিয়েছ। তখন বের হলে খুব বিপদে পড়তাম। লোকটা খুশি হয়ে চলে গেল।
খাওয়া শেষে প্রাকৃতিক কাজ করতে বাইরে বের হতে হল। ঠাণ্ডা বেড়ে গেছে খুব। জন বললেন, তুষারঝড় হচ্ছে। সকালে কোনও পায়ের চিহ্ন খুঁজে পাব না।
শুতে যাওয়ার আগে জন সবকটা তাঁবু ঘুরে এলেন। ঝুলন্ত বিছানায় শুয়ে আজ অর্জুনের খুব রোমাঞ্চ লাগছিল। এতদিন বইয়ের পাতায় যা পড়ে এসেছে আজ তা বাস্তবে ঘটছে। আজকের তুষারঝড় অথরা এস্কিমোদের নিয়ে কত কাহিনী লেখা হয়েছে। বাংলা কোনও গল্প-উপন্যাসে এসব পাওয়া যায়নি। অথচ হিমালয় কত কাছে। এক ঘণ্টা উড়ে গেলেই বরফের রাজত্বে পৌঁছনো যায়। আচ্ছা, যদি ওই প্রাণীটা সত্যি ইয়েতি হয়?
ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে-ভারতে কখন ঘুম এসে গিয়েছিল। ঘুম ভাঙল চিৎকার শুনে। শেরপারা চেঁচাচ্ছে। তাদের গলা দাপিয়ে জনের কণ্ঠস্বর কানে এল, ডোন্ট শুট। কেউ বন্দুকের আওয়াজ কোরো না।
ধড়মড়িয়ে বিছানা থেকে নীচে নেমে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি শীতবস্ত্র জড়িয়ে বাইরে এসে অর্জুন দেখল মশালের মতো আলো হাতে নিয়ে শেরপারা তখনও চেঁচিয়ে চলেছে। দলের অন্য সদস্যরা মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তাকে দেখে ডানা এগিয়ে এসে বলল, এতক্ষণে ঘুম ভাঙল!
কী হয়েছে? অর্জুন ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল না।
তুষার-ভালুক এসেছিল। শেরপারা বলছে দুটোকে দেখেছে।
কোথায়?
আমাদের তাঁবু আঁচড়াচ্ছিল। আমার ঘুম ভেঙে যেতে চিৎকার করি। তখন শেরপারা বেরিয়ে পড়ে ওদের তাড়ায়।
তুমি দেখেছ?
বা রে! আমি দেখব কী করে? আমি তো তখন তাঁবুর ভেতরে ছিলাম।
এইসময় একজন সদস্য এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, এত তাঁবু ছিল, কিন্তু তোমাদেরটায় ওরা পৌঁছল কেন?
ডানা মাথা নেড়ে বলল, জানি না।
অর্জুন বলল, আমার মনে হয় ওদের কেউ আহত অথবা অসুস্থ হয়েছে।
ডানা চোখ বড় করল, তার মানে?
ওরা বোধহয় ডাক্তারের কাছে এসেছিল।
সবাই মজা পেয়ে হেসে উঠল। শুধু জুড়ি রাগত ভঙ্গিতে বড়বড় পা ফেলে তার তাঁবুর ভেতর চলে গেল! ডানা বলল, হয়ে গেল। তোমার সঙ্গে ঘুরে আসার পর ও আজই একটু ভাল মুডে ছিল, তুমি তার বারোটা বাজিয়ে দিলে।
প্রাণীগুলো এখন কাছাকাছি নেই বোঝার পর জন সবাইকে নিয়ে মিটিং করলেন। শুধু জুডি তার তাঁবু থেকে বের হল না।
জন বললেন, আমি শুনেছি এই ধরনের ভালুকরা মানুষকে নকল করতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু নিজে থেকে আক্রমণ করে বলে শুনিনি। এমন হতে পারে খাবারের গন্ধ পেয়ে ওরা এখানে চলে এসেছিল। আমরা কখন ঘুমোচ্ছি, কখন জেগে আছি এই পার্থক্যটা ওরা করতে পেরেছে। তাই আত্মরক্ষার জন্যে আমাদের একজন সদস্য আর একজন শেরপা প্রত্যেক রাত্রে জাগবে। যে জাগবে সে পরের দিন বিশ্রাম পাবে। যারা জাগবে তারা সন্দেহজনক কিছু দেখলেই চিৎকার করে সবাইকে সতর্ক করে দেবে।
একজন সদস্য জিজ্ঞেস করলেন, সেটা দেখতে হলে তো খোলা আকাশের নীচে বসে থাকতে হয়। তা কি সম্ভব?
জন মাথা নাড়লেন, তা সম্ভব নয়। তিনি আর একটা তাঁবু খাটাতে বললেন যার সামনের দিকটা খোলা থাকবে। মাথার ওপর এবং পেছনের পাহাড়ের দিকটায় আড়াল থাকবে। দুপাশের আড়াল দেখার কাজে অসুবিধে ঘটাবে না। ওরা যখন তাঁবু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন অর্জুন জুড়িদের তাঁবুতে গেল।
ভেতরে আসতে পারি?
কী ব্যাপার? জুডি একটা চেয়ারে বসে ছিল।
আমি তোমার সঙ্গে রসিকতা করেছিলাম। তুমি রেগে গেছ বলে আমি
দুঃখিত।
হ্যাঁ, আমি তো এখানে রসিকতার বস্তু।
তার মানে?
সারাটা সন্ধে ডানা আমাকে খেপিয়েছে ইয়েতি দেখেছি বলে। তারপর তুমিও–। কথা শেষ করল না জুডি।
আচ্ছা, যদি ইয়েতি বলে কিছু থাকে, যাকে দেখেছি সে যদি সত্যি ইয়েতি হয় আর আহত হয়ে তোমার কাছে চিকিৎসার জন্যে আসে তা হলে তুমি তার চিকিৎসা করবে না? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।
জুডি অবাক হয়ে তাকাল। তারপর বলল, অবশ্যই।
রসিকতাকে ওইভাবে নাও না! সত্যি আমি তোমাকে আহত করতে চাইনি। আমি বলি কী, জন চাইছে দুজন করে রোজ রাত জাগুক। আমাদের তো কাল সকালে কোনও কাজ নেই, তাই আমরাই প্রথমদিন পাহারাটা দিই। কি, তোমার আপত্তি আছে?
আমি?
হ্যাঁ। আমিও থাকব। যদি আবার ওরা আসে তা হলে দেখে বুঝতে পারব শ্বেত-ভালুক না ইয়েতি, কোনটা ঠিক।
দ্যাটস এ গ্রেট আইডিয়া। উঠে দাঁড়াল জুডি।
অবশ্য জন রাজি হবে কিনা জানি না।
কেন?
এত হেলে থাকতে মেয়েদের এই দায়িত্ব দিতে চাইবে কি?
ওকথা বললে আমি প্রতিবাদ করব।
তাঁবু থেকে বেরিয়ে জুডি সোজা জনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, জন, আজ রাত্রে আমি পাহারা দিতে চাই। তোমার আপত্তি আছে?
জন জুডির মুখের দিকে তাকালেন, বিন্দুমাত্র নয়।
এমন উত্তর জুড়ি আশা করেনি। সে অর্জুনকে দেখল, তারপর বলল, আমি তো ক্যাম্পে সারাদিন বসেই থাকব। দলের সবাই কাজে যাবে। তাই আমার রাত জাগতে কোনও অসুবিধে হবে না।
জন মাথা নাড়লেন, সেকথা ঠিকই। তবে ডানাকে তোমার সঙ্গে দিতে পারছি না।
ডানা বলল, আমার মনে হয় অর্জুন জুডির সঙ্গে থাকতে পারে।
অর্জুন বলল, আমার আপত্তি নেই।
একটা রাইফেল দেওয়া হল ওদের। বলা হল বিপজ্জনক কিছু দেখতে পেলে শূন্যে গুলি ছুড়তে কোনও অবস্থাতেই যেন তুষার-ভালুককে আঘাত করা হয়।
জুডি এবং অর্জুন বসে ছিল সদ্য নির্মিত ছাউনির নীচে। ওদের পেছনে পাহাড়ের আড়াল। একপাশে ক্যাম্পের বিছানাগুলোতে যে-যার মতো আরামে ঘুমোচ্ছে। যে-কোনও প্রাণীকে ওদের তাঁবুর দিকে পৌঁছতে হলে ওদের সামনে দিয়ে এগোতে হবে। অর্জুন সমস্ত শরীর মুড়ি দিয়ে বসেও ঠাণ্ডা এড়াতে পারছিল না। মাথার ওপর আচ্ছাদন রয়েছে, কিন্তু সামনের খোলা অংশ দিয়ে ঠাণ্ডা যেন হুড়মুড়িয়ে ঢুকছে। সে জুডির দিকে তাকাল। ওকে এখন মেয়ে বলে আলাদা করা যাবে না। দুটো চেয়ারে সারারাত জেগে বসে থাকতে হবে ওদের। সামনের অন্ধকার এখন অনেক চোখ-সয়ে গেছে। আকাশে মেঘ নেই। ওই তুষার-ঝড়ের পর একটা দারুণ ঝকঝকে আকাশ অজস্র তারা নিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এত দ্রুত প্রকৃতির চেহারা বদলে যায়।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তোমাদের নিউজিল্যান্ডে এমন ঠাণ্ডা পড়ে?
জুডি মাথা নাড়ল, না। এইসময় স্লিপিং ব্যাগের ভেতর যারা আছে তারা সত্যি ভাগ্যবান। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।
কী?
ইয়েতিদের গায়ে নিশ্চয়ই খুব জোর হয়? ইয়েতিদের কেউ দ্যাখেনি।
যেন ভগবানকে সবাই দেখেছে! এমন কথা বলো!
তা হলে নিশ্চয়ই হয়। এই বরফের ওপর দুর্বল প্রাণী বাঁচতে পারে না।
উঃ কী ঠাণ্ডা! তুমি সিগারেট খাও?
খেতাম। এখন চেষ্টা করছি না খেয়ে থাকতে।
কিন্তু এই ঠাণ্ডায় একটা সিগারেট ধরালে ভাল হত।
সরি। আমার সঙ্গে প্যাকেট নেই।
তারপর কোনও কথা নেই। দুজনেই চুপচাপ। অর্জুন দেখল আকাশের তারারা বরফের ওপর জোনাকি-জোনাকি-আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এখন অন্ধকার তেমন নেই। এই বরফের পৃথিবীটাকে কী মায়াময় মনে হচ্ছে এখন। অথচ এইসময় ওখানে বেড়াতে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। কোথায় বরফের খাদের ওপর তুষার জমে আছে, পা দিলেই তলিয়ে যেতে হবে।
একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল অর্জুন, জুডির হাত তাকে স্পর্শ করা মাত্র সে দেখতে পেল, গুঁড়ি মেরে কিছু এগিয়ে আসছে ডানদিক থেকে। না, ওরা ইয়েতি তো দূরের কথা, বড়সড় কোনও জানোয়ারও নয়। একসঙ্গে চারটে। প্রথমে মনে হয়েছিল কুকুর, কিন্তু তারপর চিনতে পারল! বড় লোমওয়ালা চারপেয়ে জন্তুগুলো শেয়াল ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই বরফের ওপর শেয়াল
কোত্থেকে এল?
জুডি চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, কী করবে?
কিছু না। শুধু দেখে যাও। ফিসফিস করে বলল অর্জুন।
শেয়াল চারটে শেষপর্যন্ত সাহসী হয়ে এগোতে লাগল। তারপর হঠাৎই ওদের একজন ঘুরে মুখ ওপরে করে নাক টানতে লাগল। জলপাইগুড়িতে যে শেয়াল অর্জুন দেখেছে তার চেয়ে অনেক বড় এবং শক্তিশালী এরা। অর্জুন আচমকা হ্যাট বলে চেঁচিয়ে উঠতেই ওরা ছিটকে অনেকটা দূরে চলে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াল। এবার ওরা বুঝতে পেরেছে মানুষ জেগে আছে। একজন দুই থাবায় বরফ ছিটোল। একজন গোঁ-গোঁ করতে লাগল রাগে। ঠিক তখনই দূরে, বহু দূরে অদ্ভুত একটা আওয়াজ হল। যেন কিছু ডেকে উঠল। অস্পষ্ট আওয়াজ। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া হল খুব। শেয়াল চারটে দ্রুত মিলিয়ে গেল চোখের সামনে থেকে।
জুড়ি জিজ্ঞেস করল, কীসের আওয়াজে ওরা ভয় পেল?
অর্জুন বলল, বোধহয় আরও বড় কোনও জন্তু।
জুডি বলল, আমি ভাবতেই পারছি না এই আদিগন্ত বরফের রাজ্যে জন্তুগুলো কী করে থাকে? খায় কী?
নিশ্চয়ই প্রকৃতি ওদের খাবার জোটায়। মেরুদেশের তুষার-ভালুকরা শুনেছি সিল মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ওদের খাওয়ার পর যেটুকু পড়ে থাকে তাই খেয়ে বাঁচে শেয়ালজাতীয় প্রাণীরা। অর্জুন বলল।
আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ। জ্যোৎস্নায় চারপাশ স্বপ্নের মতো দেখাচ্ছে। জুড়ি বিরক্ত হয়ে বলল, আমি বুঝতে পারছি না জন কেন বরফের ওপর ক্যাম্প করল। ওই ওপাশের পাহাড়ে তো শুকনো জায়গা অনেক পড়ে আছে, যেমন ওই গ্রামটা, ওরকম কোনও জায়গায় ক্যাম্প করলে পায়ের নীচে এত ঠাণ্ডা হত না!
আমি জনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বললেন, এখানে ক্যাম্প করলে তুষার-ভালুকের কাছাকাছি থাকা যাবে। বরফের ওপর দিয়ে সোজা এখানে ওরা চলে আসতে পারে।