Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ইরানের কবিতা || Sankar Brahma

ইরানের কবিতা || Sankar Brahma

ইরানের কবিতা

ইরানের কবি ফোরুগ ফারখজাদের কবিতা

আধুনিক ধারার ইরানের কবি ফোরুগ ফারখজাদকে বিংশ শতাব্দীর নারী কবিদের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়।
কবি ফারখজাদের জন্ম হয় ১৯৩৫ সালে তেহরানে। বাবা ছিলেন তার , মোহাম্মদ বাঘের ফারখজাদ। তিনি পেশায় ছিলেন সেনা বাহিনীর কর্নেল। তার মায়ের নাম তুরান ভাজিরি-তেবার।
এই দম্পতির সাতটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান হলেন ফোরগ। স্কুলে সে নবম শ্রেণী অব্দি পড়াশোনা করে ছেড়ে দেয় পড়াশুনা। ছবি আঁকা ও সেলাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করে তারপর। ষোল বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায় বিখ্যাত ‘রম্যরস- রচনা’ রচয়িতা পারভিজ শাপুরের সাথে।
এক বছর পর কবি ফারখজাদের একটি পুত্র সন্তান হয়,তার নাম রাখা হয় ‘কায়মার’।
যাকে নিয়ে কবি রচনা করেন তার ‘আ পোয়েম ফর ইউ’ শিরোনামে একটি কবিতাটি।
বছর দু’য়েক পর, ১৯৫৪ সালে এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। কি কারণে, তা জানা যায়নি। কবি শিশুপুত্র সন্তান ‘কায়মার’কে, স্বামীর তত্ত্বাবধানে রেখে দিয়ে তেহরান ফিরে যান।
এবং সেখানে গিয়ে পুরো দমে কবিতা চর্চায় সম্পূর্ণ রূপে আত্মনিয়োগ করেন।
১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘দ্য ক্যাপটিভ’।
তাঁর কবির কবিতায় নারীবাদী প্রভাব বলিষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাই তাঁর কবিতায় নারীবাদী প্রভাব থাকার ফলে, তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে নানাবিধ সামাজিক নিষেধাজ্ঞা ও নেতিবাচক সমালোচনার।
১৯৫৮ সালে কবি ইউরোপ ভ্রমণে যান, সেখানে নয় মাস অবস্থানের কালে তার সাথে পরিচয় হয় লেখক ও চিত্র নির্মাতা ইব্রাহিম গোলেস্থানের, যিনি কবি ফারখজাদকে তার সহজাত প্রবণতাকে , স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করেন।
স্বদেশে ফিরে কবি প্রকাশ করেন ‘দ্য ওয়াল’ ও ‘দ্য রেবেলিওন’ নামে দু’টি কাব্যগ্রন্থ।
এ সময় কবি, চলচ্চিত্র নির্মাণের কলা-কৌশলের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরবর্তী কালে তিনি তাব্রিজ অল সফর করতে যান। সেখানে গিয়ে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষদের দিন-যাপন দেখে তাঁর মন কেঁদে ওঠে। তা নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র।
১৯৬২ সালে তার সেই নির্মিত ‘দ্য হাউস ইন ব্ল্যাক’ নামক এই চলচিত্রটি অর্জন করে একাধিক আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি সূচক সম্মান।
এই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় ‘হোসেইন মানসোরি’ নামে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত এক দম্পতির পুত্র সন্তানের সাথে তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে। পরবর্তী কালে সেই বালক ‘মানসোরি’-কে দত্তক হিসাবে নিয়ে, কবি তেহরান ফিরে আসেন।
এবং তাঁর মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন।
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘অ্যানাদার বার্থ’ নামে তার একটি দীর্ঘ কবিতা যা আধুনিক ধারার কাব্য-শিল্পের সৌধে, যুক্ত করেছে একটি নতুন ভাবনার পালক।
১৯৬৭ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালনার সময়, দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে কবির মৃত্যু হয়।
তার অন্যতম একটি বিখ্যাত কবিতা ‘লেট আস বিলিভ ইন দ্য বিগিনিং অব দি কোল্ড সিজন’ প্রকাশিত হয় কবির মৃত্যুর পর।
প্রকরণের দিক থেকে এ কবিতাটিকে ফার্সি সাহিত্যের আধুনিক কাব্যকলায় অত্যান্ত উচ্চ মানের সৃজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর বছর দশেক ফারখজাদের কবিতার প্রকাশ ও প্রচারকে নিষেধাজ্ঞা জারী করে দিয়ে তাঁর প্রতিভা রুদ্ধ করে রাখা হয়।
এখানে কবি ফোরুগ ফারখজাদের পাঁচটি কবিতার ভাষান্তর উপস্থাপন করা হলো।
এই কবিতাগুলো ফার্সি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মরিয়াম দিলমাঘানি। সেখান থেকে ভাষান্তর করেছেন লেখক মঈনুস সুলতান।

১).
পাপ
———-

নিমজ্জিত হয়েছিলাম পাপে – যা আনন্দে ছিলো মধুরম
বাহুতে জড়িয়ে আগুনের সাপ – সাড়া দেই আমি মৃদু ডাকে
শিহরণ ছড়ানো আলিঙ্গনে তার উষ্ণতা ছিলো অপরিসীম
পরশে জাগিয়েছিলো হরষিত ঊর্মি আমার শরীরের বাঁকে।

সে লগন ছিলো গাঢ় অন্ধকার –
নির্জন কুঠুরিতে তাকিয়েছিলাম –
চোখ দু’টি ছিলো তার রহস্যময়
অধৈর্য্য হৃৎপিণ্ড আমার কাঁপছিল প্রত্যাশার শীতে
চাহিদার কুসুমিত ইন্ধনে জেগেছিলে যুগল প্রণয়।
তার পাশে– খুব কাছাকাছি বসেছিলাম আমি
চুল ছিলো আমার এলোমেলো– বস্ত্রাদি অবিন্যস্ত
তার ঠোঁট আমার অধরে খুঁজেছিল অন্তর্যামী
বাসনার সুরায় শরীর হয়েছিলো আমার ব্যতিব্যস্ত।
কানে কানে শুনিয়েছি তাকে ভালোবাসার অমর গাথা
তোমাকে চাই যে আমি– হে প্রিয় আমার নিখিল প্রাণ
জড়াতে চাই আমার শীত শিহরিত দেহে পরশের কাঁথা
তীব্র সংবেদনে তোমাকে দেহমনে করি যে ধ্যান।

গাঢ় বাসনা তোমার চোখে জ্বেলেছিল অনিকেত শিখা
পেয়ালায় নৃত্য করেছিল মদিরা– লোহিতে বর্ণালী
শয্যায় স্পর্শ শিহরে আমার দেহে জ্বলেছিল নীহারিকা
দখিনা হওয়ায় কেঁপেছিলো সহিষ্ণু আত্মার পুষ্পাঞ্জলি।
কম্পমান আমি– দু’পা আমার পড়েছে
পাপের স্ফুর্তিতে ভরপুর পাঁকে
ভাবতেও পারছি না– কে আমাকে গড়েছে
নির্জন কুঠুরিতে জোড়া হাত প্রেমের চিত্র আঁকে।

২).
ইরানি নারীদের প্রতি আহ্বান
—————————————-

ইরানি নারী –
শুধু তুমিই থেকে গেছো
অপমানিত জীবনের শিকলে আবদ্ধ
তোমাকে ঘিরে থাকে নিষ্ঠুরতা ও দুর্ভাগ্য সারাক্ষণ
ছুটে বেড়াবে প্রান্তরে–
সুবাতাসের দুয়ার তোমার বদ্ধ
হও একরোখা– শক্ত হাতে ছিন্ন করো এ বন্ধন।

ভরসা করো না অঙ্গীকারের মধুচন্দ্রিমায়
জুলুমে করো না কদাপি মাথা নত
ঘৃণা, বেদনা ও ক্রোধের হাতিয়ারে সাজিয়ে
নিজেকে করো সমুন্নত।
তোমার সহজাত আলিঙ্গনে উষ্ণ বক্ষ
যা লালন করে অহংকারী উদ্ধত পুরুষকে
তোমার আনন্দিত হাসির ধ্বনি
তার হৃদয়ে ছড়ায় উষ্ণতার সঞ্জীবনী।

পুরুষ– যে আদতে তোমারই সৃজন
তোমার ওপরে তার প্রভুত্ব সত্যি লজ্জাকর
নারী– সক্রিয় হও, নাও উদ্যোগ
পৃথিবী তোমার প্রতীক্ষা করছে
তোমার সুরলহরীতে ভরাতে চায় তার প্রহর।

হামেশা জর্জরিত হওয়া দুর্ভাগ্য ও দাসত্বের প্রহারে
তার চেয়ে তোমার জন্য সুখকর হবে
ঘুমিয়ে থাকা কবরের অন্ধকারে।
কোথায় সে অহংকারী পুরুষ–
বিচরণ করার দিন শেষ হয়েছে তার প্রভুত্বের রাজ্যপাটে
বলো তাকে–দাঁড়াতে নতমস্তকে তোমার কুটিরের চৌকাঠে।

কোথায় সে পুরুষ সিংহ
বলো তাকে তৈরি হতে
কারণ জেগেছে নারীরা রণসাজে
প্রস্তুত হচ্ছে তারা অরুণিম প্রভাতে
সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত তাদের শব্দরাজি
তারা আর কখনও ঝরাবে না অশ্রু
দুর্বলতার শিশিরে সাজাবে না পুষ্পসাজি।

৩).
উপহার
————-

আমি কথা বলছি গভীর রাতের অন্ধকার থেকে
এ অন্ধকার গভীর.. গভীরতর
আঁধার হাতড়িয়ে যাই আলোরিক্ততার নকশা এঁকে।
যদি আসো আমার গৃহে হে সখা
নিয়ে আসবে একটি বাতি
আর একটি জানালা
যার ভেতর দিয়ে আমি দেখতে পারি
শহরের সুখী সরণীতে মানুষের পথচলা।

৪).
তরঙ্গ
————–

আমার কাছে তুমি যেন এক তরঙ্গ
ভেসে বেড়াও– বহতা স্রোতে খুঁজে নাও সঙ্গ
এখানে তুমি কখনও নও– ওখানেও নও
তোমাকে খুঁজে পাই না আমি আকাশ-জলধি কোথাও।
যখন আসো– সজোরে ধরো হাত
তোমার দিকে টানো–ছলকায় বুকের প্রপাত
তারপর ত্রস্তপদে ছুটে পালাও
মারাত্মক প্লেগের মতো তোমার পরশ
চারদিকে ছড়িয়ে যাও
ভিন্ন এক ভুবনে ঘোরো-ফেরো
এখানে তোমার টিকিটিও যায় না দেখা ফের
কখনও পাই না হদিস তোমার নির্দিষ্ট গন্তব্যের।

চোখের আলোয় তোমাকে করি অবলোকন
কখনও কাছ থেকে– কখনও দাঁড়িয়ে দূরে
বিদ্রোহী ঢেউ এক তুমি
দূরের বাদ্য বাজে তোমার অন্তর্গত সুরে
স্থিতি হতে পারো না কোনো বাহানায়
কেবলই উড়ে বেড়াও তুমি চিরায়ত ডানায়।

অধৈর্য্য তুমি– সদা অশান্ত– তোমার চাহিদা প্রবল
যে প্রান্তরে নেই পথরেখা
সে চরাচরে তুমি ভ্রাম্যমাণ
আমি নিশ্চিত হৃদয়ের গহীনে তুমি অচল
তোমার অনুশোচনা জন্মভূমিকে ঘিরে হয় ঘূর্ণায়মান।

ভেসে বেড়াও দিবস ও নিশি
হ্যাঁ, সত্যিই তুমি শাসনমুক্ত এক রাশ ঊর্মিমালা
সময় কোথায় শিকড় ছড়ানোর
যা থেকে গজাবে পত্রালিতে ভরপুর ডালাপালা।
কিন্তু কোনো এক নিশিরাতে
তোমাকে পাওয়ার শিহরণে বেহুঁশ
আমি পরে নেবো– সুদূর সমুদ্র সৈকতের
তৃষ্ণায় তৈরি এক মুখোশ
জন্মভূমি থেকে বহুদূরে
জনহীন দ্বীপের বালুকাময় উদ্যানে
তোমার নাগাল পাবো আমি একদিন
যাত্রার প্রস্তুতি নেবো সে ভুবনের সন্ধানে।
হয়তো মৃত্যু হবে পাখিটির
বিষণ্ন বোধ করি আমি
গাঢ় বেদনা পুঞ্জীভূত হয় আমার মনে
অন্তরাত্মা ছেয়ে যায়
বেদনার নীলাভ দংশনে।

৫).
ঘরের বাইরে গিয়ে আমি
————————————

রাত্রির আঁধার-নিঝুম খোলে ঘঁষি
আমার হিম-শীতল আঙুল
ঠাণ্ডা হওয়ায় ওড়ে আমার খোলা চুল
দৃষ্টিসীমায় প্রতিটি বাতি আচ্ছন্ন অন্ধকারে
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এদিকে আসার প্রতিটি সড়ক
দাঁড় করানো হয়েছে প্রহরী প্রতিটি দ্বারে।

কেউ আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে না উদিত সূর্যের সাথে
কপোতের জলসায় ডেকে নেবে না কেউ উজ্জ্বল প্রভাতে।
জাগ্রত রাখো মনে উড্ডীয়নের বাসনা
হয়তো মৃত্যু হবে পাখিটির
কীটদষ্ট হবে তার শুভ্র ডানা।

———————————————————-

* কবিতা ও কবির জীবনী বিষয়ক প্রাসঙ্গিক তথ্য ইন্টার-নেটের পোয়েম হান্টার ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *