Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ইন্দ্রাণীর খাতা || Shamsur Rahman

ইন্দ্রাণীর খাতা || Shamsur Rahman

(নরেশ গুহ বন্ধু বরেষু)

একে একে অতিথিরা বিদায় নিলেন। অকস্মাৎ
মঞ্চ থেকে সব আলো নিভে গেলে, নাটকের কুশীলব আর
দর্শক প্রস্থান করলে যে স্তব্ধতা নামে
যবনিকা পতনের পর, সেরকম
স্তব্ধতা আমার ঘরে প্রতিষ্ঠিত রাত বারোটায়।
শেয়ালের মুখের রোঁয়ার মতো কিছু
চোখে মুখে লাগে
এবং শিশিরভেজা ঘাসের কিরীচ স্পর্শ করে
অনিদ্রাকে। অবসাদ নাভিমূলে পদ্ম-রচনার অছিলায়
আমাকে চকিতে ঠেলে দ্যায় অন্তহীন, কানা গলির ভেতর।

কিশের আঁশটে গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে,
খাবারের প্লেটগুলি আগেই সরানো হয়ে গেছে
কিচেনে। খানিক বাদে
সেডাকশান খেয়ে গৃহিণী গেলেন শুতে,
একা বসে থাকি বারান্দায়। হঠাৎ কে নাড়ে করা
এত রাতে? ঝুঁকে দেখি একটি তরুণী
দরজায় একাকিনী, সাততাড়াতাড়ি
তাকে এনে বসালাম পাশের চেয়ারে। দেখে চেনা
মনে হলো, অথচ সঠিক
কোথায় দেখেছি তাকে এর আগে, মনে পড়ছে না।

অগাধ সৌন্দর্যে তার লেপ্টে আছে অতীতের আভা
তন্বী গাছে ডুক্‌রে-ওঠা কোজাগবী পূর্ণিমার মতো।
ক্যাসেট প্লেয়ারে
দরবারি কানাড়া গুমরে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে, আমি
অপলক চেয়ে থাকি তার দিকে, পেটরোগা মানুষ যেমন
তাকায় থালায় রাখা জ্বলজ্বলে সুখাদ্যের প্রতি।
‘ভীষণ অবাক হয়ে গেছেন, তাই না? মধ্যরাতে
কে যেন সেতারে টোকা দিল। যদি বলতাম তাকে
বিস্ময়ের ঝালর কাঁপেনি
মনের ভেতরে এতটুকু, তবে ভুল বলা হতো।

‘ইন্দ্রাণীকে মনে নেই? এই প্রশ্ন আমার দৃষ্টিকে এ রাতের
অতিথির শরীরের অপরূপ রত্নদ্বীপ থেকে
চকিতে সরিয়ে আনে। কী করে ভুলব তাকে, মানে
ইন্দ্রাণীকে? তিপ্পানোর সাহিত্য মেলায়, মনে পড়ে,
গোধূলি বেলায় স্মিত হেসে
ইন্দ্রাণী একটি খাতা, সুখ-স্বপ্নের মতো আশ্চর্য সোনালি,
দিয়েছিল একজন বিশুদ্ধ কবিকে। আমি শুধু
দূর থেকে কাঙালের ধরনে দেখেছি সে অর্পণ। তারপর
হেঁটে চলে গেছি একা, বড় একা খোয়াইয়ের তীরে
ভাসাতে আমার হৃদয়ের কীটদষ্ট কিছু ফুল।

এতকাল পরে ফের কী ভেবে ইন্দাণী
আজ ব্রহ্মচারিণীর ধরনে এসেছে এ শহরে সঙ্গে নিয়ে বীরভূমের
একরাশ শিমুল,পলাশ? প্রত্যাশায়
রক্তে বাজে সরোদের বোল,
আমি তাকে রুদ্রাক্ষের মালা খুলে নিতে
মিনতি জানাই, অথচ সে নিরাসক্ত কণ্ঠস্বরে তুলে নিয়ে
তিপ্পনোর রেশ বলে, ‘আনিনি সোনালি খাতা, শুধু
আপনাকে দেখতে এসেছি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *