Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

২.
এ কী? দেখেছ? সর্বনাশ করেছে। ঘুম থেকে সেদিন উঠেই চেঁচিয়ে উঠলেন সুধীনবাবু। তার পরেই ডাকলেন, দেবেন, দেবেন।
দেবেন নেই। যথারীতি! মেজ বৌ তক্ষুনি ওপরে এলো। ছেলের খাবারের তাগাদা দিতে। চিৎকার শুনে ঘরে ঢুকে বলল, কী হলো বাবা?
ইঁদুর।
কোথায়?
এই দ্যাখো না, তোমার মায়ের লেপটা কেটে কী করেছে।
লেপটা কোথায় ছিল?
সুধীনবাবুর রাগ হলো। ভাবলেন, বলেন যে, লেপ কোথায় থাকে তা তো তোমাদেরই জানার কথা মা। এ ঘরটা তো আবর্জনার স্তূপ হয়ে আছে। কখনো তো চোখ মেলেও দ্যাখো না। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিলেন।
পরের বাড়ির মেয়ে। ছেলের বৌ। রাগ করেন তাদের ওপরে, সে অধিকার কোথায়? রাগ করার লোক, ঝগড়া করার লোক তো চলে গেছে।
সুধীনবাবু বললেন, তোমার মায়ের খাটের মাথার কাছেই ভাঁজ করা ছিল। দেখেছ, কেটে তুলোগুলোকে কী করেছে। তোমার মায়ের বড় প্রিয় লেপ ছিল ওটা। সে বলত, বড় ওম ধরে। সেই যেবার আমরা শীতকালে উটীতে গেছিলাম সেইবার এই লেপটা সঙ্গে নিয়ে গেছিল তোমার মা। সঙ্গে সেবার ছোটনও গেছিল। মনে আছে। ওঃ সেবারে কী শীত। তখন কতই বা বয়স আমাদের। তোমার মার সে কী আনন্দ উটী দেখে।
মেজ বৌ মনে মনে বলল, কী কুক্ষণে এই ঘরে ঢুকলাম। এখন বৃদ্ধের মধুচন্দ্রিমার গল্প শুনতে হবে।
এমন সময় দেবেন এলো।
সুধীনবাবু বললেন, দেবেন, তুই আমার কাছে মার খেয়ে মরে যাবি।
ফেলুন, মেরেই ফেলুন। দেবেন বলল। এই চাকরি আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমি মরে গিয়েই বাঁচি।
সুধীনবাবু বললেন, তুই ইঁদুর মারবি কি মারবি না? দেখেছিস, হতভাগা ইডিয়ট, দেখেছিস কী করেছে।
মেজ বৌ বলল, বাবা ইঁদুরের কী দোষ। এ তো ইঁদুরের ধর্ম।
ধর্ম মানে? প্রায় চটেই উঠেছিলেন সুধীনবাবু।
মেজ বৌ বলল, ধর্ম মানে; না কাটলে যে ইঁদুর মারা যায়।
মানে, ইঁদুরের দাঁত থাকে এমন যে সব সময় সেটা জিনিসপত্র কেটে কেটে ঘষে ঘষে ছোট না করলে সেই দাঁত ইঁদুরের মগজ ফুটো করে দেয়। দেখেন না, ইঁদুর কাগজ কাটে, লেপ কাটে, তোশক কাটে, যা পায় তাই-ই কাটে, কিন্তু সেগুলো কিছুই খায় না। না কাটলে যে ইঁদুর বাঁচতেই পারে না।
তা তো জানতাম না। সুধীনবাবু বললেন।
মেজ বৌ মনে মনে বলে, অনেক কিছুই জানেন না আপনি।
দেবেন বলল, দেখেছেন, মায়ের লেপটাকে কী করেছে ব্যাটারা। এমন বিষ দেব যে মানুষ পর্যন্ত মরে যাবে। দেখাচ্ছি মজা।
সুধীনবাবু বললেন, দয়া করে দেখাও।
বড় বৌমা ঘরে ঢুকল। মেজ বৌ বাবাকে কী জ্ঞান দিচ্ছে দেখার জন্যে। চান্স পেলেই একা একা বাবার কাছে ঘুসুর ঘুসুর করে। মায়ের যত গয়না ছিল সবই তো হাত করেছে মেজই! বড় কিছুই পায়নি! তবে আনন্দ এইটুকুই যে ছোট কিছু চায়ওনি এবং তাকে কিছু দেওয়াও হয়নি। তার স্বামী বড়লোক তাকে দেবেনই বা কেন?
বড় বৌমা বলল, বাবা।
বলো। সুধীনবাবু বললেন।
আজ রাজার জন্মদিন।
তাই নাকি? তা এত দেরি করে বললে, রাজাকেও তো দেখলাম না সকাল থেকে।
ও দেরি করে উঠেছিল। তাই সকালে আসতে পারেনি আপনার কাছে। স্কুল থেকে ফিরেই আসবে।
মেজ বৌ বলল, সে কী দিদি, আমারও তো মনেই ছিল না।
বড় বৌ মনে মনে বলল, কত যেন মনে করে রাখো তুমি।
তারপর বলল, রাজার কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে খেতে বলব আর রাজার পিসি আর পিসেকে। ওর মামা-মাসিদের।
সুধীনবাবু বললেন, দীপু আর শিখাকে বলছ না?
মানে, ও বলছিল, জায়গা কম; লোক বেশি হলে…।
সুধীনবাবু বললেন, জায়গা যত কমই হোক, দীপু-শিখার জায়গার অকুলান হবে না এ-বাড়িতে। অন্তত হওয়া উচিত নয় বলেই মনে হয়।
বড় বৌ বুঝল যে সুধীনবাবু ভীষণ চটেছেন।
বললেন, ওরা তো ভালো খায়, ভালো থাকে। ওরা কি সাধারণ ব্যাপারে আসবে? তারপর পার্টি-ফার্টি তো লেগেই আছে! ককটেল। তাই ভাবছিলাম…।
সুধীনবাবু অনেক বছর পরে বড় বৌয়ের চোখে লাল চোখে তাকালেন। বললেন, কী ভাবছিলে?
এমন সময় নিচ থেকে দীপুর কম্পানির উর্দিপরা ড্রাইভার সুন্দর রাপিং পেপারে মোড়া একটা এয়ার রাইফেল, এক বাঙ্ চকোলেট আর লাল গোলাপ ফুল নিয়ে এলো। সঙ্গে শিখার ছোট্ট চিঠি।

রাজাবাবু,
আজ তোমার জন্মদিন। তোমাকে অনেক অনেক আদর পাঠাচ্ছি তোমার ছোট কাকু, মিষ্টি ও ছোট কাকিমা। আমি যখন ও-বাড়িতে ছিলাম তখন তুমি পাশের বাড়ির রুনুর এয়ার রাইফেলটা একদিন চেয়ে পাওনি বলে খুব দুঃখ করেছিলে। আমার মনে আছে। তোমার ছোট কাকু তাই তোমার জন্যে একটা এয়ার রাইফেল পাঠালেন! মিষ্টি ফুল পাঠাল। আর আমি অনেক আদর। তোমার জন্যে পায়েস রেঁধেছি। বিকেলে আমরা সক্কলে তোমার কাছে যাব, পায়েস নিয়ে।
—ইতি ছোট কাকিমা

চিঠিটা পড়ে বড় বৌমার মুখ কালো হয়ে গেল।
সুধীনবাবু বললেন, কে লিখেছে?
শিখা।
কী লিখেছে? দেখি?
বড় বৌ চিঠিটা এগিয়ে দিল।
চিঠিটা পড়ে সুধীনবাবু বড় বৌমাকে ফিরিয়ে দিলেন।
বড় বৌ বলল, আমি যাই শিখাকে ফোন করি গিয়ে।
সুধীনবাবু কিছু বললেন না।
দেবেন ইঁদুরে-কাটা তুলো-টুলোগুলো পরিষ্কার করছিল। বাইরের রাস্তার বকুলগাছে কাক ডাকতে লাগল। হঠাৎ বকুলের গন্ধ এলো নাকে এক ঝলক। নীহারিকা এই গন্ধ ভারি ভালোবাসত।
পাশের বাড়িতে রাজেশ্বরী দত্তর গাওয়া ‘এ পরবাসে রবে কে’ গানের রেকর্ড বাজছিল।
সুধীনবাবুর মনটা উদাস হয়ে গেল। নীহারিকার বড় প্রিয় গান ছিল এটি। সত্যিই পরবাস! শুধুই স্বার্থকোলাহল; শুধুই বিবাদ।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress