Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আশুমনির পিতৃপরিচয় || Samarpita Raha

আশুমনির পিতৃপরিচয় || Samarpita Raha

পুরুলিয়া কলেজে লেকচারার হিসেবে আশুতোষ বেশ কয়েক বছর আছেন। অবিবাহিত তাই, কলেজে পড়িয়ে বাড়িতে হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হয়। বাবা সেই ছোট্ট বেলায় মারা গেছেন।মা বাড়ি ঘর একমাত্র ছেলের জন্য আগলাচ্ছেন।মা পুরুলিয়াতে এসে থাকতেন তাহলে আশুতোষের অসুবিধা হতো না। ওখানকার আদিবাসী ফুলমনি কাজ করে দিত।আর বাবুর কাছে পড়াশোনা করত। পড়ালেখা করতে চায়। কিন্তু অভাবের সংসারে মেয়েরা পড়াশোনা করলে চলবে! চুপিচুপি পড়াশোনা করত। একদিন ঝড় বৃষ্টি এমন হচ্ছিল, থামবার লক্ষণ নেয়। আশুতোষ জিজ্ঞেস করে ফুলমনি তুই বাড়ি যাবি কি করে? বাড়িতে সবাই চিন্তা করবে যে!
ফুলমনি বলে সে একা। একদিন ঘরে না ফিরলে কেউ ভাববে না মাষ্টারবাবু। আপনি একটু থাকতে দেবেন!
আশুতোষ ভাবে কেউ যদি জানতে পারে একটি মেয়ে রাত কাটিয়েছে মাষ্টারবাবুর বাসায়।তাহলে প্রেস্টিজে গামাক্সিন পড়ে
যাবে। মেয়েটি ঝড় মাথায় বাড়ি চলে যায়।তারপর দুদিন আসে নি কাজ করতে। আশুতোষ ভাবে মেয়েটির কোন অসুখ করেনি তো।এরপর আশুতোষ নিজে খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন।ফুলমনির জ্বরে বেহুঁশ অবস্থা।তারপর নিজে থেকে আয়া দিয়ে সেবা করে সুস্থ করেন। এখন ফুলমনি গল্পের বই পড়তে শিখে গেছে ।
শরীর থাকলে সকলের অসুখ হয়। আশুতোষের ও ভীষণ জ্বর। রক্ত পরীক্ষা করে জানা গেছে
ম্যালেরিয়া । কলেজে যাওয়া বন্ধ। ওদিকে মায়ের শরীর ও ভালনা। ফুলমনি দিনরাত সেবা করে আশুতোষের। আশুতোষ শিক্ষা ভুলে গিয়ে ফুলমনির এরকম সেবা পেয়ে অচেতন মনে ভালোবেসে ফেলে। ফুলমনিরও তিন কূলে কেউ নেই।কেমন ভালোবেসে ফেলে মাষ্টার বাবুকে। সেদিন শিক্ষিত ও অশিক্ষিতর তকমা সড়িয়ে ফুলমনিকে আশুতোষ অনেকটা আদর করে ফেলে।
তারপর মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কোলকাতাতে ফিরে বাবার বিশাল সম্পত্তি আগলাতে গিয়ে কলেজে ইস্তফা দেন। ফুলমনির সাথে ছয় মাস বাদে দেখা করতে গিয়ে শোনে ফুলমনি চলে গেছে । কোথায় গেছে কেউ জানে না।
এরপর আশুতোষ কোলকাতা কলেজে পড়াতে শুরু করেন।
বহু বছর অতিবাহিত।
ফুলমনির সরল চাহনি কথা মনে পড়ে। ফুলমনির পর আশুতোষ আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে স্পর্শ করে নি।

এ জীবন বিচিত্র।আজ কলেজে হঠাৎ ফুলমনিকে দেখে আশুতোষ। নিজের অবচেতন মনে আশুতোষ ভাবে ফুলমনিকে কেন সব সময় চোখে পড়ে। কলেজ টপার মেয়েটা কাছে এসে বলে স্যার আপনি আগে পুরুলিয়া কলেজে পড়াতেন। আশুতোষ গলার শব্দে চমকে ওঠে বলে তুমি অবিকল এক পরিচিতার মতো। তোমার নাম কি ?
আশুমনি স্যার।
এবার আশুতোষ বলে অবিকল ফুলমনি তুমি?
মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে বলে জানেন স্যার ফুলমনি আমার মায়ের নাম।
অনেক ছাত্র ছাত্রীরা এগিয়ে এসে বলে স্যার ও কলেজ টপার ।সত্যি ও ফুলের মতো সুন্দর।ও সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের সেরা ছাত্রী।
তারপর করিডোরে আবার দেখা ,ওই খিলখিলিয়ে হাসি। আশুতোষ জিজ্ঞেস করে ফুলমনি কেমন আছে? একবার নিয়ে যাবে মার কাছে।

আশুতোষ গেছে ফুলমনির বাড়িতে।গিয়ে দেখে আশুতোষের যৌবনকালের ছবি দেওয়ালে টাঙানো। ফুলমনি বলে মাষ্টার বাবু
একজন অবিবাহিত মেয়ে সন্তান প্রসব করলে তাকে নষ্ট মেয়ে বলে।
তোমাকে তো অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। তোমার ঠিকানা কারর জানা ছিল না!হ্যাঁ আমার জমিজমা সব বেচে দিয়ে কোলকাতাতে আসি।ভাড়া বাড়িটা ফুলমনি কিনে নিয়েছে। বাড়িওয়ালা আশুমনিকে পড়িয়েছেন।ও কিন্তু বাবার মতো পড়াশোনা করতে ভালবাসে। আশুতোষ বলে ওর বাবা কি আমি!!
ফুলমনি বলে আর তো কোনো পুরুষের সংস্পর্শে আসে নি ফুলমনি।সত্যি এ জীবন বিচিত্র।
আশুমনি আজ তার বাবার ও মায়ের ছবি গোপনে মোবাইলে ক্লিক করেছে। অতীত কাটে আশুমনির বাবার ছবিতে । বর্তমান ও কাটুক গোপনে তোলা মা ও বাবার ছবিতে।
বেশ কিছুদিন পর আশুমনি
বাবা-মায়ের বিবাহ দেয়।
আশুতোষের শেষ জীবন ভালো কাটছে।বৌয়ের রান্না ও মেয়ের শাসন কার না ভালো লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress