Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।


নাম : আশাপূর্ণা দেবী (Ashapurna Devi)
জন্ম : ৮ জানুয়ারি ১৯০৯, কলকাতায় মাতুলালয়ে
পিতামাতা : হরেন্দ্র নাথ গুপ্ত (বাবা) , সরলাদেবী (মা)
দাম্পত্য সঙ্গী : কালিদাস গুপ্ত
পেশা : লেখিকা ও ঔপন্যাসিক
উল্লেযোগ্য রচনাবলী : প্রথম প্রতিশ্রুতি ’ , সুবর্ণলতা ’ , ‘ বকুলকথা ’ , ‘ অগ্নিপরীক্ষা ’ , ‘ সাগর শুকায়ে যায় ’ , ‘ শশী বাবুর সংসার ’ , ‘ সােনার হরিন ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার : জ্ঞানপীঠ পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমী ফেলোশিপ
মৃত্যু : ১৩ জুলাই ১৯৯৫


আশাপূর্ণা দেবী (৮ জানুয়ারি ১৯০৯ – ১৩ জুলাই ১৯৯৫) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং শিশুসাহিত্যিক। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তার রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তার জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন। তার প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তার একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। দেড় হাজার ছোটোগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার সহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার। ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপে ভূষিত করেন।

আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম হয় ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি (বাংলা ২৪ পৌষ, ১৩১৫) শুক্রবার সকালে উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে। পিতার নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত এবং মাতা সরলাসুন্দরী দেবী । হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন কমর্শিয়াল আর্টিস্ট ; সেযুগের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকাগুলিতে ছবিও আঁকতেন। তার রাজভক্তি ও রক্ষণশীলতার বিপরীতে অবস্থান করতেন মা সরলাসুন্দরী দেবী। সাহিত্যপাঠই ছিল তার জীবনের একমাত্র ‘পরমার্থ’। রাজনৈতিক আদর্শে ছিলেন কট্টর ব্রিটিশ-বিদ্বেষী স্বদেশী।

গুপ্ত-পরিবারের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার বেগমপুরে। যদিও আশাপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গে এই অঞ্চলটির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। তার ছোটোবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতাতেই, ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর পাঁচ পুত্রের একান্নবর্তী সংসারে। পরে হরেন্দ্রনাথ যখন তার আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড) নিজস্ব বাসভবনে উঠে আসেন আশাপূর্ণার বয়স তখন সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু বাল্যের ওই কয়েকটি বছর তার মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। পরবর্তীকালে সাহিত্যেও নানা ভাবে এঁকেছিলেন ‘দেহে ও মনে অসম্ভব শক্তিমতী’ তার সেই ঠাকুরমার ছবি।

প্রথাগত শিক্ষার সৌভাগ্য আশাপূর্ণার হয়নি ঠাকুরমার কঠোর অনুশাসনে। পরবর্তীজীবনে এক স্মৃতিচারণায় এই প্রসঙ্গে আশাপূর্ণা বলেছিলেন, “…ইস্কুলে পড়লেই যে মেয়েরা… বাচাল হয়ে উঠবে, এ তথ্য আর কেউ না জানুক আমাদের ঠাকুমা ভালোভাবেই জানতেন, এবং তাঁর মাতৃভক্ত পুত্রদের পক্ষে ওই জানার বিরুদ্ধে কিছু করার শক্তি ছিল না।” তবে এই প্রতিকূল পরিবেশেও মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে দাদাদের পড়া শুনে শুনে শিখে গিয়েছিলেন পড়তে। বর্ণপরিচয় আয়ত্ত করেছিলেন বিপরীত দিক থেকে। মা সরলাসুন্দরী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। সেই সাহিত্যপ্রীতি তিনি তার কন্যাদের মধ্যেও সঞ্চারিত করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। সাধনা, প্রবাসী, ভারতবর্ষ, সবুজপত্র, বঙ্গদর্শন, বসুমতী, সাহিত্য, বালক, শিশুসাথী, সন্দেশ প্রভৃতি ১৬-১৭টি পত্রিকা এবং দৈনিক পত্রিকা হিতবাদী তো বাড়িতে আসতই, তাছাড়াও সরলাসুন্দরী ছিলেন স্বনামধন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, জ্ঞানপ্রকাশ লাইব্রেরি ও চৈতন্য লাইব্রেরির সদস্য। বাড়িতে সেযুগের সকল প্রসিদ্ধ গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। এই অণুকূল পরিবেশে মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই পাঠ্য ও অপাঠ্য নির্বিশেষে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করে দেন আশাপূর্ণা। পরবর্তী কালে এই বাল্যকাল সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “হিসেব মতো আমার ছেলেবেলাটা কেটেছে, সংসার ঊর্ধ্বের একটি স্বর্গীয় জগতে। বই পড়াই ছিল দৈনিক জীবনের আসল কাজ।”

ছেলেবেলার দিনগুলি সম্পর্কে আশাপূর্ণা বলেছেন, “…খুব ডাকাবুকো ছিলাম। ছেলেবেলায় ঘুড়ি ওড়াতাম, মারবেল খেলতাম। ক্যারাম খেলতাম দাদাদের সঙ্গে।” আবার পিতামাতার সবচেয়ে বাধ্য মেয়ে হওয়ার জন্য তাদের সবচেয়ে প্রিয়পাত্রীও হয়ে উঠেছিলেন। সেদিনের নির্মীয়মান কলকাতা মহানগরী ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। আর প্রিয় ছিলেন দিদি রত্নমালা ও বোন সম্পূর্ণা। তারা তিনজনে ছিলেন, আশাপূর্ণার ভাষায়, “…একটি অখণ্ড ট্রিলজির অংশ। এক মলাটে তিনখানি গ্রন্থ।” আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড) নতুন বাড়িতে উঠে আসার কিছুদিনের মধ্যে এই অখণ্ড আনন্দে বিচ্ছেদের সুর বাজে। বিয়ে হয়ে যায় দিদি রত্নমালার। সেই নিঃসঙ্গতা দূর করতে একদিন আশাপূর্ণা ও সম্পূর্ণা করে ফেলেন এক দুঃসাহসিক কাজ। দুই বোনের সাক্ষরে চিঠি পাঠান রবীন্দ্রনাথকে। আবদার, “নিজের হাতে আমাদের নাম লিখে একটি উত্তর দেবেন।” কাঙ্ক্ষিত সেই উত্তর আসতেও দেরি হয়নি। আর এর পরেই বহির্বিশ্বে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘স্যাঁতস্যাঁতে বাংলাদেশের বিদ্রোহিনী নারী’র।

১৯২৪ সালে, মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস গুপ্তের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

কথা – সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও আশাপূর্ণা দেবীর প্রথমআবির্ভাব ঘটেছিল কবি হিসেবে । তার প্রথম কবিতা ‘ বাইরের ডাক ১৯২২ খ্রীঃ শিশুসাথী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । গৃহবধু এবং মা হিসেবে সংসারে তার যে কর্মক্ষেত্র , সাহিত্য রচনা কোনদিনতার গৃহকর্মের প্রতিবন্ধকবাঁধা হয়ে ওঠেনি । আশ্চর্য ছিল তার প্রতিভা । সাহিত্য সৃষ্টির জন্য বিশেষ কোন পরিবেশ বা সময়ের প্রয়ােজন হতাে না । সংসারের কাজের অবসরেই তিনি সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সাহিত্য ভান্ডার ।

১৯৪৪ খ্রি ৪ আশাপূর্ণার প্রথম উপন্যাস প্রেম ও প্রয়ােজন । প্রকাশিত হয় মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীপুরুষের চাওয়া পাওয়া , মানসিক দ্বন্দ্ব – সংঘাত , প্রেম – বিরহ সেইসঙ্গে সমসাময়িক সামাজিক পটভূমি , প্রয়ােজন – অপ্রয়ােজন — এই ছিল আশাপূর্ণার সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ।

অন্তপুরে থেকেই মেয়েদের বহির্মুখী জীবন তিনি আশ্চর্য দক্ষতায় চিত্রায়িত করেছেন । আধুনিক সমাজের যথাযথ ভূমিকা নিয়েই তার । সাহিত্যে উপস্থিত হয়েছে । আধুনিক মেয়েদের কথা তিনি বলেছেন , তাদের চাহিদা ও ত্যাগের সব খবরই তিনি রাখতেন । তবুআধুনিকতার বিলাসিতা তার সাহিত্যে কখনাে প্রশ্রয় পায়নি । যা কিছু রুচিহীন , বিকৃততার প্রতিষ্ঠার অবজ্ঞা ও ব্যঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে । তবে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা কখনাে বিসর্জন দেননি ।

সর্বস্তরের নারীসমাজের আশাআকাঙ্খ দুঃখবেদনার কথা তিনি । অকপটে সহজ সরল ভাষায় ও ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন ।

পুরুষদের মনের দ্বন্দ্ব – সংঘাতও তিনি যথাযথরূপে প্রকাশ করতে পেরেছেন । আশাপূর্ণার সাহিত্যসৃষ্টির সার্থকতা এখানেই ।

অসংখ্য গল্প ও উপন্যাস সারা জীবনে তিনি লিখেছেন । কোন লেখাতার অনাদৃত হয়নি । তার লেখা বাঙালী মেয়েদের উজ্জীবিত করেছে ।

আশাপূর্ণার সার্থক ত্রয়ী উপন্যাস প্রথম প্রতিশ্রুতি , সুবর্ণলতা , বকুলকথা । প্রথম প্রতিশ্রুতির জন্য ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাহিত্যসম্মান জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ।

দীর্ঘ জীবনের সত্তর বছর বয়সেও অক্লেশে ও মনের আনন্দে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা বের করতেন এবং লেখার প্রকাশকদের তিনি কোনদিনও ফিরিয়ে দিতেননা । তিনি যেসকল উপন্যাস রচনা করে গেছেন তার সংখ্যা প্রায় দুশােটি । এছাড়া ছােট গল্প সংকলন ও ছােটদের নিয়ে লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ প্রায় সত্তর খানার । মত প্রকাশ করেছেন ।

তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল — প্রথম প্রতিশ্রুতি ’ , সুবর্ণলতা ’ , ‘ বকুলকথা ’ , ‘ অগ্নিপরীক্ষা ’ , ‘ সাগর শুকায়ে যায় ’ , ‘ শশী বাবুর সংসার ’ , ‘ সােনার হরিন ইত্যাদি । তার শেষ প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘ আর এক আশাপূর্ণা ’ ।

বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় যাটটিরও বেশি গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে । সাহিত্য সাধনার জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার , সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি – লিট উপাধি অর্জন করেছেন ।

বাংলা সাহিত্যে আশাপূর্ণা দেবীর অবদান অনেক । তাই আজও তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।

• ১৯৭৬ – পদ্মশ্রী
• ১৯৮৩ – সাম্মানিক ডক্টরেট (জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
• ১৯৮৭ – সাম্মানিক ডক্টরেট (রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)
• ১৯৮৮ – সাম্মানিক ডক্টরেট (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়)
• ১৯৯০ – সাম্মানিক ডক্টরেট (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
• ১৯৯৪ – সাহিত্য আকাদেমী

১৯৯৫ খ্রি : ১৩ ই জুলাই এই অসাধারণ প্রতিভা সম্পূর্ণ লেখিকার জীবনাবসান ঘটে ।

Source : wikipedia

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *