আলবের কাম্যু
আলবের কাম্যু ছিলেন একজন ফরাসী দার্শনিক, লেখক এবং সাংবাদিক। ১৯৫৭সালে ৪৪ বছর বয়সে, নোবেল ইতিহাসের দ্বিতীয়-কনিষ্ঠতম প্রাপক হিসেবে, তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর কাজগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – দি স্ট্রেঞ্জার (The Stranger) , দি প্লেগ (The Plague) , দি মিথ অফ সিসিফাস (The Myth of Sisyphus) , দি ফল (The Fall), দি রেবেল (The Rebel), দি আউটসাইডার (The Outsider) প্রভৃতি।
আলবের কাম্যু ১৯১৩ সালের ৭ই নভেম্বর ফরাসী অধিকৃত আলজেরিয়ার (বর্তমান ড্রিয়ান) মন্ডোভিতে এক শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা, ক্যাথারিন হেলেন কাম্যু জাতিতে ছিলেন একজন ফরাসী; যদিও পৈতৃক সূত্রে তিনি স্প্যানিশ-বালেয়ারিক। তাঁর বাবা, লুসিয়েন কাম্যু, ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষিজীবী; ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্নের যুদ্ধে তিনি মারা যান। কাম্যু তাঁর বাবাকে কোনোদিনও দেখেননি। তাঁর ছোটবেলায় কাম্যু, তাঁর মা এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনরা অনেক ন্যুনতম উপকরণ ছাড়াই আলজিয়ারের বেলকোর্ট অঞ্চলে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তিনি আলজেরিয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের ফরাসি ছিলেন; আলজেরিয়া ১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ফরাসিদের দখলে ছিল।
তাঁর নাগরিকত্ব ছিল ফ্রান্সের।
তাঁর ঠাকুরদাদা এবং তাঁর প্রজন্মের অনেকেই উনিশ শতকের প্রথম দশকের সময় ভালোভাবে জীবন কাটাবার জন্য আলজেরিয়াতে চলে আসেন। তাই তাঁকে বলা হত পাইড-নোয়া, ‘কালো পায়ের পাতা’ – এটা একটা ইতর শব্দ যা দ্বারা সেইসকল ফরাসিদের বোঝানো হত যারা আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিল – আর তাঁর পরিচয় এবং দরিদ্র অবস্থা তাঁর পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তৎসত্ত্বেও, কাম্যু ছিলেন একজন ফরাসি নাগরিক, আলজেরিয়ার আরব বা বর্বর অধিবাসীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা যাদের আইনগত অবস্থানটাই নীচু ছিল।ছোটবেলায়, কাম্যুর ফুটবল এবং সাঁতারের প্রতি অনুরাগ ছিল।
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা যখন ফ্রান্স দখন করেছিল তিনি তখন প্যারিসে ছিলেন। কাম্যু পালাবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু শেষে তিনি ফ্রেঞ্চ রেসিস্ট্যান্স দলে যোগদান করেন এবং সেখানে কোঁবা (Combat “লড়াই”) নামে একটি বেআইনি সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ-পরবর্তীকালে, তিনি একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি হয়ে ওঠেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তিনি ভাষণ দিতে থাকেন। তিনি দু’বার বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন এবং তাঁর একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও ছিল। কাম্যু সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বামপন্থীদের একটা অংশের সাথে যুক্ত ছিলেন যারা সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধীতা করত। কাম্যু ছিলেন একজন নীতিবাদী এবং তিনি কিছুটা ট্রেড ইউনিয়ন ভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদের দিকে ঝুঁকেছিলেন। ইউরোপের সংহতিকরণের পক্ষে থাকা অনেক সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছলেন। আলজেরিয় যুদ্ধের সময় (১৯৫৪ – ১৯৬২), তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন; আলজেরিয়ার বহুসংস্কৃতি ও বহুত্ববাদের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন যা বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং বেশিরভাগ দলই কাম্যুর এই বক্তব্য মেনে নেয়নি।
দার্শনিকতার দিক থেকে কাম্যুর চিন্তাভাবনা অ্যাবসার্ডিজম নামক দর্শনের উত্থানের অবদান রেখেছিল যা ছিল নৈরাষ্ট্রবাদী (নিহিলিজম্) দর্শনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এক আন্দোলন। তাঁকে একজন অস্তিত্ববাদী হিসেবেও গণ্য করা হয়, যদিও তিনি নিজে সারাজীবন ধরে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জঁ-পল সার্ত্র, অগাস্টিন, কার্ল মার্ক্স, ম্যাক্স স্টার্নার, ফ্রেডেরিক নিটশে, ফিওডোর দস্তয়েভস্কি, ফ্রান্স কাফকা, সোরেন কিয়ের্কেগার্ড, সিমোন ওয়েল, জ্যঁ গ্রেনিয়ের, আর্থার শোপেনহাওয়ার প্রমুখদের তিনি ভাবশিষ্য ছিলেন।
তাঁর শিক্ষক লুই জার্মেইনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাম্যু ১৯২৪ সালে বৃত্তি লাভ করেন এবং আলজিয়ার্সের কাছে একটি প্রথিতযশা লাইসিয়ামে (উচ্চশিক্ষার স্কুল) পড়াশুনো শুরু করেন। ১৯৩০ সালে তাঁর যক্ষ্মারোগ ধরা পড়ে।রোগটি সংক্রামক হওয়ার কারণে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন এবং তাঁর কাকা গুস্তাভ আকল্টের কাছে তিনি বাস করেন। কাকা পেশায় ছিলেন একজন কসাই। তরুণ আলবের কাম্যুকে তিনি প্রভাবিত করেছিলেন। এই সময় কাম্যু তাঁর দর্শনের শিক্ষক জ্যঁ গ্রেনিয়ারের সংস্রবে এসে দর্শনের দিকে আকৃষ্ট হন। তিনি প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এবং ফ্রেডারিক নিটশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই সময় তিনি পড়াশুনোর জন্য কেবলমাত্র কিছু সময় ব্যয় করতে পারতেন। অর্থ রোজগারের জন্য, তিনি নানা ধরনের পেশা অবলম্বন করেন; ব্যক্তিগত শিক্ষক, গাড়ির সরঞ্জামের করণিক, এবং আবহাওয়া সংস্থার সহকারী হিসেবেও তিনি কাজ করেছিলেন।
১৯৩৩ সালে কাম্যু আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৩৬ সালে তাঁর লাইসেন্স ডি ফিলোসফি (বি.এ) ডিগ্রী লাভ করেন; প্লোটিনাসের ওপর তত্ত্ব রচনা করে। খ্রীষ্টান দার্শনিকদের প্রতি কাম্যুর একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু নিটশে এবং আর্থার শোপেনহাওয়ারের প্রভাবে তিনি নৈরাশ্যবাদ এবং নাস্তিকতার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি স্তাঁদাল, হেরম্যান মেলভিল, ফিওডোর দস্তয়েভস্কি, এবং ফ্রান্ৎস কাফকা প্রভৃতি ঔপন্যাসিক-দার্শনিকের লেখা পাঠ করেন। ১৯৩৩ সালে, সিমোন হাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন যিনি কাম্যুর এক বন্ধুর সঙ্গী ছিলেন। পরে সিমোন কাম্যুর প্রথম স্ত্রী হন।
১৯২৮ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত কাম্যু রেসিং ইউনিভার্সেটেয়ার ডি’আলজেরের গোলরক্ষক ছিলেন। খেলার টিম-স্পিরিট, ভ্রাতৃত্ববোধ, এবং উদ্দেশ্যগত ঐক্যবোধ কাম্যুকে অত্যন্ত নাড়া দিয়েছিল। খেলার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গভীর আবেগ এবং সাহসিকতার সাথে খেলার জন্য তিনি প্রায়ই প্রশংসিত হতেন। সতেরো বছর বয়সে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁর ফুটবলের প্রতি সমস্ত আশাই অন্তর্হিত হয়। কাম্যু ফুটবল, মানব-অস্তিত্ব, নৈতিকতা এবং ব্যক্তিগত পরিচয়ের মধ্যে সমান্তরাল সম্পর্ক এঁকেছেন। তাঁর কাছে, ফুটবলের সরল নৈতিকতা এবং গীর্জা ও রাষ্ট্রের মত কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরোপিত জটিল নৈতিকতার মধ্যে একটা বিরোধ বর্তমান।
১৯৩৪ সালে কুড়ি বছর বয়সে কাম্যু সিমোন হাইয়ের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হন। সিমোন মরফিনে আসক্ত ছিলেন। ঋতুকালীন বেদনা প্রশমনের জন্য সিমোন এই ড্রাগ ব্যবহার করতেন। কাকা গুস্তাভ এই সম্পর্ক মেনে না নিলেও আসক্তি থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করার জন্য কাম্যু হাইকে বিয়ে করেন। এরপরেই তিনি আবিষ্কার করেন সিমোন ইতিমধ্যেই তাঁর ডাক্তারের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ এবং এর ফলে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। কাম্যু সারাজীবন ধরে একজন নারীলোলুপ ছিলেন।
১৯৩৫ সালের প্রথম দিকেই কাম্যু ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। যদিও তিনি মার্ক্সবাদী ছিলেন না, তবুও তিনি একে “আলজেরিয়ার ‘অধিবাসী’দের সাথে ইউরোপিয়দের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের” একটা পথ হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমরা সাম্যবাদকে একটা স্প্রিংবোর্ড এবং নান্দনিকবাদ হিসেবে দেখতে পারি যা গভীরতর আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি প্রস্তুত করতে পারে।” পরের বছর কাম্যু উক্ত পার্টি ত্যাগ করেন। ১৯৩৬ সালে স্বাধীনতাকামী আলজেরিয় কমিউনিস্ট পার্টি (পি.সি.এ) প্রতিষ্ঠা হয়, এবং কাম্যু তাঁর পরামর্শদাতা গ্রেনিয়ারের কথায় সেই পার্টিতে যোগদান করেন। পিসিএতে কাম্যুর মুখ্য ভূমিকা ছিল থিয়েটার ডু ট্রাভাইল (শ্রমিকদের থিয়েটার) পরিচালনা করা। কাম্যু পার্টি ডু পিউপল আলজেরিয়ান (আলজেরিয়ান পিপলস পার্টি (পিপিএ)) পার্টির সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন; এই পার্টি ছিল একটা মধ্যপন্থী ঔপনিবেশিক ও জাতীয়তাদী-বিরোধী দল। যুদ্ধমধ্যবর্তীকালীন, উদ্বেগ যতই বাড়তে লাগল, স্ট্যালিনপন্থী পিসিএ এবং পিপিএ তাদের যোগসূত্র ছিন্ন করে। পার্টির কথামতো না চলার জন্য কাম্যুকে পিসিএ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এইসকল ঘটনাগুলোর ফলে মানুষের মর্যাদাবোধ সম্বন্ধে কাম্যুর ধারণাগুলো আরো পরিশীলিত হয়। আমলাতন্ত্রের ওপর কাম্যুর অবিশ্বাস বেড়েই চলে। কারণ আমলাতন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল বিচার নয়, দক্ষতা। তবে তিনি তাঁর থিয়েটারে কাজ বজায় রেখে যান এবং তাঁর দলের নতুন নামকরণ করেন থিয়েটার ডি ল’ইক্যুইপ (“দলের থিয়েটার”)। তাঁর পরবর্তীকালের লেখা উপন্যাসের অবলম্বনেই তিনি তাঁর কিছু নাটক রচনা করেন।
১৯৩৮ সালে কাম্যু বামপন্থী সংবাদপত্র আলজের রিপাবলিকেইনের (পাস্ক্যাল পিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত) হয়ে কাজ করেন। কারণ তাঁর প্রভূত পরিমাণে ফ্যাসিবিরোধী মনোভাব ছিল, এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের উত্থান তাঁকে চিন্তিত করেছিল। এইসময়, কাম্যু কর্তৃত্বপূর্ণ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন, কারণ তিনি ফরাসি শাসকদের দ্বারা আরব এবং বর্বরদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের সাক্ষী ছিলেন। আলজের রিপাবলিকেইনকে ১৯৪০ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং কাম্যু প্যারিসে পালিয়ে গিয়ে প্যারিস-সয়রের প্রধান সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন। প্যারিসে এসে তিনি অলীক এবং অর্থশূন্যতা নিয়ে তাঁর কাজের ‘প্রথম চক্র’ প্রায় শেষ করেন – উপন্যাস ল’ইট্রেঞ্জার (দি আউটসাইডার (ইউকে), অথবা দি স্ট্রেঞ্জার (ইউএস)), লে মিথ ডি সিসিফি (দি মিথ অফ সিসিফাস) নামক দার্শনিক প্রবন্ধ এবং নাটক দি ক্যালিগুলা। প্রতিটি চক্রেই একটি উপন্যাস, একটি প্রবন্ধ ও একটি নাটক রয়েছে।
কাম্যুর প্যারিসে যাওয়ার পরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ায় ফ্রান্সের ক্ষতি হতে শুরু হল। কাম্যু সৈন্যবিভাগে স্বেচ্ছায় যোগদানের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত থাকায় তাঁকে বাতিল করা হয়। জার্মান সৈন্যবাহিনী প্যারিসের দিকে এগোতে থাকলে কাম্যু প্যারিস ত্যাগ করেন। প্যারিস-সয়রের চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় এবং শেষমেশ লিওঁতে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৯৪০ সালের ৩রা ডিসেম্বর তিনি পিয়ানোবাদক এবং গণিতবিদ ফ্রান্সিন ফ’রের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। কাম্যু ও ফ’রে এরপর আলজেরিয়ায় (ওরান) ফিরে যান এবং সেখানকার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। যক্ষ্মারোগের কারণে, ডাক্তারি পরামর্শে তাঁকে আবার ফ্রান্সের আল্পসে ফিরে যেতে হয়। সেখানে তিনি তাঁর লেখালিখি শুরু করেন এবং তাঁর কাজের দ্বিতীয় চক্র শুরু হয়। এই কাজগুলো ছিল বিদ্রোহ সংক্রান্ত – একটা উপন্যাস লা পেস্টে (দি প্লেগ) এবং একটি নাটক লা মালেটেন্ডু (দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং)। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর পূর্বেকার কাজের জন্যই পরিচিত ছিলেন। এরপর তিনি প্যারিসে চলে যান এবং জ্যঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে তাঁর পরিচিত এবং বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়। এছাড়া তিনি সিমোন ডি বোভেয়ার, আঁদ্রে ব্রেটনসহ অন্যান্যদের নিয়ে গঠিত বুদ্ধিজীবী মহলেও অংশ নেন। এদের মধ্যে ছিলেন মারিয়া কাসারেস, যাঁর সাথে পরে কাম্যুর প্রণয়সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ফ্রেঞ্চ অকুপেশনের সময়ে (ফ্রান্স দখল) জার্মানদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গুপ্ত প্রতিরোধ আন্দোলনে কাম্যু সক্রিয় ভূমিকা নেন। প্যারিসে এসে তিনি নিষিদ্ধ সংবাদপত্র কোঁবার সাংবাদিক হন এবং সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ফ্রান্স মুক্ত হবার পরেও তিনি এই পত্রিকার জন্য লেখালিখি করতেন। কোঁবার নিবন্ধ লেখার জন্য কাম্যু ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার থেকে বাঁচতে তিনি জাল পরিচয় পত্র ব্যবহার করতেন। এইসময়ে তিনি চারটে লেটার’স্ অউন এমি এলেমান্ড (লেটারস্ টু আ জার্মান ফ্রেন্ড) লিখেছিলেন যাতে তিনি এই প্রতিরোধের কী প্রয়োজন আছে তা ব্যাখ্যা করেছিলেন।
যুদ্ধের পরে কাম্যু ফ’রের সঙ্গে প্যারিসে বাস করতে লাগলেন; ১৯৪৫ সালে জ্যঁ এবং ক্যাথারিন নামে তাঁদের দুটি যমজ কন্যা হয়। কাম্যু এইসময় একজন খ্যাতনামা লেখক হয়ে ওঠেন। তাঁর খ্যাতির মুখ্য কারণ ছিল প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। দুটি পৃথক ভ্রমণে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেন। তিনি আরো একবার আলজেরিয়াতে ভ্রমণ করেন; কিন্তু সেখানকার অত্যাচারী ঔপনিবেশিক নীতি দেখে তিনি হতাশ হন; তিনি এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে বহুবার সোচ্চার হয়েছিলেন। এই সময় প্রবন্ধ ল’হোম্মি রিভোল্টি (দি রেবেল) লেখার মধ্যে দিয়ে তাঁর সাহিত্যকর্মের দ্বিতীয় চক্র সম্পূর্ণ হয়। এই বইয়ে কাম্যু সর্বগ্রাসী সাম্যবাদকে আক্রমণ করেন এবং স্বাধীনতাপন্থী সমাজতন্ত্র ও ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদের পক্ষে সোচ্চার হন। কমিউনিজমকে বাতিল করার জন্য তিনি তাঁর অনেক ফরাসি সহকর্মী ও সমসাময়িকদের বিরাগভাজন হন এবং এই বইটির কারণে তাঁর সার্ত্রের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ হয়। আলজেরিয় যুদ্ধের সময় থেকে মার্ক্সবাদী বামপন্থীদের সাথে তাঁর সম্পর্কের আরো অবনতি হয়।
কাম্যু বিভিন্ন প্রান্তিক সংস্থার ইউরোপীয় সংহতির জোরালো সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কমিটি ফ্রান্সিস পোর লা ফেডেরেশন ইউরোপিন্নে – (সিএফএফই (ফ্রেঞ্চ কমিটি ফর দি ইউরোপিয়ান ফেডেরেশন)) – প্রতিষ্ঠা করেন এবং ঘোষণা করেন ইউরোপ “একমাত্র তখনই অর্থনৈতিক উন্নতি, গণতন্ত্র এবং শান্তির পথে এগোবে যখন এর রাষ্ট্রগুলো একটা যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠবে।” ১৯৪৭-৪৮ সালে তিনি গ্রুপস্ ডি লিজ্যঁ ইন্টারন্যাশেনেল (জি.এল.আই) প্রতিষ্ঠা করেন যেটি ছিল একটি বৈপ্লবিক ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক আন্দোলন। আঁদ্রে ব্রেটনের নেতিবাচকতা এবং শূন্যতাবাদকে পরিত্যাগ করে পরাবাস্তবতা এবং অস্তিত্ববাদের ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রকাশ করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল। কাম্যু হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত হানার বিরুদ্ধে এবং স্পেনে ফ্রাঙ্কোর শাসনব্যবস্থার সর্বগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
কাম্যু অনেকগুলো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, বিশেষত স্পেনদেশীয় অভিনেত্রী মারিয়া কাসারেসের সঙ্গে তাঁর অনিয়মিত সম্পর্ক ছিল যা শেষমেশ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। এই অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রচুর চিঠিপত্রের আদানপ্রদান হয়েছিল। ফ’রে এই সম্পর্ককে হাল্কাভাবে নিতে পারেননি। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং ১৯৫০এর দশকের প্রথমদিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। কাম্যু এই ঘটনায় অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন; তিনি জনসমক্ষ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন এবং কিছু সময়ের জন্য তিনি সামান্য অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
১৯৫৭ সালে কাম্যু খবর পান যে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করতে চলেছেন। এটা তাঁর কাছে একটা বড়ো ধাক্কার মত ছিল। তিনি মনে করেছিলেন আঁদ্রে ম্যালরক্স এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের অধিকারী হবেন। ৪৪ বছর বয়সে তিনি দ্বিতীয়-সর্বকনিষ্ঠ প্রাপক হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন; এক্ষেত্রে ৪২ বছর বয়সী প্রাপক রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের পরেই ছিলেন তিনি। এরপরেই তিনি তাঁর আত্মজীবনী লে প্রিমিয়ার হোম্মে (দি ফার্স্ট ম্যান) নামক তাঁর আত্মজীবনী লিখতে শুরু করেন এবং এইভাবে তিনি “নৈতিক শিক্ষা” নিয়ে পরীক্ষার করতে উদ্যোগী হন। তিনি আরো একবার থিয়েটারের দিকে ঘুরে দাঁড়ান। নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ডেমনস্-এর নাট্যরূপায়ণ এবং পরিচালনা করেন। নাটকটি ১৯৫৯ সালের জানুয়ারীতে প্যারিসের আন্তোইন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয় এবং সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।
এই সময়কালে তিনি দার্শনিক সিমোন ওয়েলের সাহিত্যকর্মগুলোকে তাঁর মৃত্যু-পরবর্তীকালে প্রকাশ করেন; এস্পোর (হোপ) নামক ধারাবাহিক হিসাবে সেই লেখাসমূহ এডিশনস গালিমার্ড প্রকাশ করে। ওয়েলের কাজ কাম্যুর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং কাম্যু মনে করতেন ওয়েলসের লেখা শূন্যতাবাদের যোগ্য প্রত্যুত্তর। কাম্যু তাঁকে “আমাদের সময়ের একমাত্র মহান ব্যক্তিত্ব” বলে বর্ণনা করেছেন।
ফ্রান্সের ভিল্লেব্লেভিন শহরে কাম্যুর স্মৃতিসৌধের ওপর ব্রোঞ্জের প্লেট। ফরাসী থেকে অনুদিত, যাতে লেখা আছে: “ইয়োন্নে বিভাগের সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে, লেখক আলবের কাম্যুর শ্রদ্ধাস্বরূপ, যাঁর দেহাবশেষ ভিল্লেব্লেভিনের টাউন হলে ৪ঠা থেকে ৫ই জানুয়ারী, ১৯৬০এর রাত্রিতে সংরক্ষিত রাখা হল”
ভিল্লেব্লেভিনে নির্মিত কাম্যুর সমাধিস্তম্ভের একটি আলোকচিত্র।
ভিল্লেব্লেভিনে কাম্যুর সমাধিস্তম্ভ, যেখানে তিনি
১৯৬০ সালের ৪ঠা জানুয়ারী, ৪৬ বছর বয়সে ভিল্লেব্লেভিন নামক ছোট শহরের লে গ্রাঁদ ফসার্ডে সেন্সের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি ১৯৬০ সালে পরিবারের সাথে তাঁর লোরমারিন, ভ’ক্লুজের বাড়িতে ইংরেজি নববর্ষের ছুটি কাটিয়েছিলেন; সেখানে তাঁর এডিশন গালিমার্ডের প্রকাশক মাইকেল গালিমার্ড, গালিমার্ডের স্ত্রী জানাইন এবং তাদের কন্যাও ছিল। কাম্যুর স্ত্রী এবং মেয়েরা ২রা জানুয়ারী ট্রেনে করে প্যারিসে ফিরে যায়, কিন্তু কাম্যু গালিমার্ডের বিলাসবহুল ফাসেল ভেগা এইচ.কে ৫০০তে ফিরবেন বলে ঠিক করেন। রুট ন্যাশানাল ৫ (বর্তমান আর.এন ৬) এর দীর্ঘ সোজা রাস্তায় চলার পথে গাড়িটি একটি গাছে ধাক্কা মারে। কাম্যু তৎক্ষণাত মারা যান। তিনি আরোহীর আসনে বসেছিলেন এবং সিট বেল্ট পরেননি। গালিমার্ড কয়েকদিন বাদে মারা যান। যদিও তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা অক্ষত ছিলেন। অনেকে মনে করেন, কেজিবির গুপ্তচর বাহিনীই কাম্যুকে হত্যা করে, কারণ তিনি সোভিয়েত অত্যাচারের প্রবল সমালোচক ছিলেন।
গাড়ির ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে লে প্রিমিয়ারে হোম্মে (দি ফার্স্ট ম্যান) এর ১৪৪ পাতার হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি উদ্ধার হয়। কাম্যু মনে করতেন তাঁর আলজেরিয়ার ছোটবেলার দিনগুলো নিয়ে রচিত এই অসমাপ্ত উপন্যাসটিই হবে তাঁর সবচেয়ে সেরা সাহিত্যকর্ম। কাম্যু যেখানে বাস করতেন, ফ্রান্সের সেই ভ’ক্লুজেই লোরমারিন সেমেটারিতে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। তাঁর বন্ধু সার্ত্রে একটি শংসাপত্র পাঠ করেন, কাম্যুর বীরত্বপূর্ণ “একরোখা মানবতাবাদের” জন্য তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উইলিয়াম ফকনার তাঁর শোকগাথায় লিখেছিলেন, ‘যখন তাঁর জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গেল, তার আগেই তিনি দ্বারের এপাশ থেকে লিখে গেছিলেন – প্রতিটি শিল্পীই যাঁরা সারাজীবন ধরে সেই একই পূর্বজ্ঞান এবং মৃত্যুঘৃণা বয়ে নিয়ে চলে তাঁদের সকলের থেকেই এই লেখা আশা করা যায় – আমি এখানে ছিলাম।”
কাম্যু সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পরে স্টকহোমের লুসিয়াকে মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন।
কাম্যু সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির তিনদিন পরে ১৯৫৭ সালের ১৩ই ডিসেম্বর স্টকহোমের লুসিয়াকে মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন।
কাম্যুর ১৯৩৬ সালে তিনজন বন্ধুর সাথে প্রথম একটি নাটক প্রকাশ করেন যার নাম ছিল রিভোল্ট ডান্স লে আস্তুরিয়ে (রিভোল্ট ইন দ্য আস্তুরিয়াস)। এর বিষয়বস্তু ছিল ১৯৩৪ সালে স্পেনীয় খনিশ্রমিকদের বিদ্রোহ যা তৎকালীন স্পেন সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করে যার ফলে ১৫০০ থেকে ২০০০ জন শ্রমিক মারা যান। ১৯৩৭ সালের মে মাসে তিনি তাঁর প্রথম বইটি লেখেন ল’এনভারস এট ল’এন্ড্রয়েট (বিটয়েক্সট অ্যান্ড বিটুইন, দি রং সাইড অ্যান্ড দি রাইট সাইড নামেও অনুদিত হয়েছিল)। দুটি বইই এডমণ্ড শার্লট নামে একটি ছোট প্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ করেছিল।
কাম্যু তাঁর রচনাগুলোকে তিনটে চক্রে ভাগ করেন। প্রতিটি চক্রে একটি উপন্যাস, একটি প্রবন্ধ এবং একটি নাটক রয়েছে। প্রথমটি হল অলীক চক্র যার মধ্যে ছিল ল’এট্রেঞ্জার, লে মিথে ডি সিসিফি এবং ক্যালিগুলা। দ্বিতীয়টি রচিত হয়েছিল বিদ্রোহ নিয়ে যার মধ্যে ছিল লে পেস্তে (দি প্লেগ), ল’হোম্মে রিভোল্টে (দি রেবেল), এবং লেস জাস্টেস (দি জাস্ট অ্যাসাসিনস্)। তৃতীয়টি ছিল প্রেমসংক্রান্ত; এর মধ্যে ছিল নেমেসিস। প্রতিটা চক্রই ছিল এক-একটি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা যার মধ্যে পৌত্তলিক বিশ্বাস এবং বাইবেলের প্রসঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রথম চক্রের বইগুলো ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে রচিত হয়েছিল, কিন্তু এর বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়েছিল তার আগেই, অন্তত ১৯৩৬ সালের মধ্যে। এই চক্রের দ্বারা কাম্যু মানব পরিস্থিতির ওপর একটা প্রশ্ন রেখে যেতে চেয়েছেন, বিশ্বকে একটা অলীক স্থান বলে তিনি আলোচনা করেছেন, এবং সর্বগ্রাসীতার ফলাফলের সম্বন্ধে মানবজাতিকে তিনি সতর্ক করে যেতে চেয়েছেন।
১৯৪২ সালের শেষ মাসগুলোতে তিনি যখন আলজেরিয়ায় ছিলেন তখন তাঁর সাহিত্যকর্মের দ্বিতীয় চক্র শুরু হয়; সেসময় জার্মানরা উত্তর আফ্রিকায় পৌঁছেছিল। দ্বিতীয় চক্রে কাম্যু একজন বৈপ্লবিক মানবতাবাদী হিসেবে প্রমিথিউসকে দেখিয়েছিলেন এবং এইভাবে তিনি বিপ্লব আর বিদ্রোহের মধ্যে তফাৎ বুঝিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধরণের বিদ্রোহের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেছেন, এর অধ্যাত্মবিদ্যা, রাজনীতির সঙ্গে এর সম্পর্ক, এবং আধুনিকতা, ঐতিহাসিকতা এবং নিরীশ্বরবাদীতার নিরীখে একে যাচাই করেছেন।
নোবেল পুরস্কার লাভের পর, তাঁর মধ্যপন্থী মতাদর্শগুলোকে একত্রিত করে, সেগুলোকে ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করলেন অ্যাকট্যুলেস III : ক্রোনিক আলজেরিয়েনে ১৯৩৯ – ১৯৫৮ (আলজেরিয়ান ক্রনিকল্স)। তারপর তাঁর মানসিক ভার অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় তিনি আলজেরিয় যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনলেন। তিনি এরপর থিয়েটার এবং তৃতীয় চক্রের দিকে মনোনিবেশ করলেন; এই তৃতীয় চক্র ছিল প্রেমসংক্রান্ত এবং দেবী নেমেসিসকে নিয়ে রচিত।
কাম্যুর দুটি সাহিত্যকর্ম মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। প্রথমটির নাম লা মার্ট হেউরেউস (আ হ্যাপি ডেথ) (১৯৭০) যার প্রধান চরিত্র ছিল প্যাট্রিস মেরসল্ট, যার সাথে দ্য স্ট্রেঞ্জারের মেউরসল্টের তুলনা করা যেতে পারে। দুটি বইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। দ্বিতীয়টির নাম লা প্রিমিয়ের হোম্মে (দি ফার্স্ট পার্সন) (১৯৯৫) – একটি অসমাপ্ত উপন্যাস যা কাম্যু লেখার কালেই মারা যান। এটা ছিল তাঁর আলজেরিয়ার ছোটবেলাকার দিনগুলো নিয়ে রচিত একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস এবং ১৯৯৪ সালে এর প্রকাশের সাথে সাথে ঔপনিবেশিকতার প্রতি কাম্যুর ঔদাসীন্যের দাবী নিয়ে একটি ব্যাপক পুনর্বিবেচনা শুরু হয়।
জ্যঁর এবং চক্র অনুসারে কাম্যুর সাহিত্যকর্ম, ম্যাথিউ শার্পের মতানুযায়ী সে’বছর পৌত্তলিক বিশ্বাস বাইবেল প্রসঙ্গ উপন্যাস নাটক
১৯৩৭-৪২ সিসিফাস বিচ্ছিন্নতা, নির্বাসন অপরিচিত (The Stranger) ক্যালিগুলা,
দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং (লে মালেনটেন্ডু)
১৯৪৩-৫২ প্রমেথিউস বিদ্রোহ দি প্লেগ (লা পেস্টে) দি স্টেজ অফ সিজ (ল’এটাট ডি সিজ)
দ্য জাস্ট (লেস জাস্টেস)
১৯৫২-৫৮ অপরাধ, পতন; নির্বাসন এবং রাজত্ব। জন দি ব্যাপটিস্ট, খ্রিস্ট।
দি ফল (লা চ্যুট) পজেজড (দস্তয়েভস্কি) পুনর্নিমাণ। ফকনারের রিক্যুয়েম ফর আ নান
১৯৫৮– নেমেসিস রাজত্ব দি ফার্স্ট ম্যান (লে প্রিমিয়ের হোম্মে)।
আলবের কাম্যুর কাজগুলোর মধ্যে –
উপন্যাস
১). আ হ্যাপি ডেথ (লা মর্ট হেউরেউস) (১৯৩৬-৩৮এ লিখিত, ১৯৭১সালে প্রকাশিত)
২). দি স্ট্রেঞ্জার (ল’এট্রেঞ্জার, দি আউটসাইডার হিসেবেও অনুদিত। “ল’এট্রেঞ্জারের বিকল্প অর্থ হল বিদেশী) (১৯৪২)
৩). দি প্লেগ (লা পেস্টে) (১৯৪৭)
৪). দি ফল (লা চ্যুট) (১৯৫৬)
দি ফার্স্ট ম্যান (লে প্রিমিয়ার হোম্মে) (অসমাপ্ত, ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত)।
ছোটগল্প
১). এক্সাইল অ্যান্ড দি কিংডম (ল’এক্সিল এট লে রয়মে) (সংকলন, ১৯৫৭), নিম্নলিখিত ছোটগল্পগুলো এর মধ্যে আছেঃ
“দি অ্যাডালটারাস ওম্যান” (লা ফেম্মে অ্যাডালটিয়ার)
“দি রেনেগেড অর অ্যা কনফিউজড স্পিরিট” (লে রেনিগাট ওয়ু আন এস্প্রিট কনফুস)
“দি সাইলেন্ট মেন” (লেস ম্যুয়েটস্)
“দি গেস্ট” (ল’হোটে)
“জোনাস, অর দি আর্টিস্ট অ্যাট ওয়ার্ক” (জোনাস, ওয়ু ল’আরটিস্টে আউ ট্রাভাইল)
“দি গ্রোয়িং স্টোন” (লা পিয়ের ক্যুই পৌসসে)।
গবেষণামূলক প্রবন্ধ
১). ক্রিশ্চিয়ান মেটাফিজিক্স অ্যান্ড নিওপ্লেটোনিজম (মেটাফিজিক ক্রেটিয়েন্নে এট নিওপ্লেটোনিসমে) (১৯৩৫) – এই প্রবন্ধ লিখেই কাম্যু ফ্রান্সের উচ্চতর স্কুলে পড়াবার সুযোগ পেয়েছিলেন।
নন-ফিকশন বই
১). বেটুয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন (ল’এনভারস এট ল’এন্ড্রয়েট, দি রং সাইড অ্যান্ড দি রাইট সাইড নামেও অনুদিত) (সংকলন, ১৯৩৭)
২). ন্যুপশিয়ালস (নোসেস) (১৯৩৮)
দি মিথ অফ সিসিফাস (লে মিথ ডি সিসিফি) (১৯৪২)
৩). দি রেবেল (ল’হোম্মে রিভোল্টে) (১৯৫১)
আলজেরিয়ান ক্রনিকল্স্ (ক্রনিক্যুইস আলজেরিয়ানেস্) (১৯৫৮, এর প্রথম ইংরেজি অনুবাদটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে)।
৪). নোটবুকস্ ১৯৩৫ – ১৯৪২ (কার্নেটস্, মাই ১৯৩৫ – ফেব্রিয়ার ১৯৪২) (১৯৬২) সালে।
৫). নোটবুকস ১৯৪২ – ১৯৫১ (কার্নেটস II : জানভিয়ের ১৯৪২ – মার্স ১৯৫১) (১৯৬৫)
৬). আমেরিকান জার্নালস (জার্নক্স ডি ভয়েজ) (১৯৭৮)
৭). নোটবুকস ১৯৫১ – ১৯৫৯ (২০০৮)। কার্নেটস টোম III: মার্স ১৯৫১ – ডিসেম্বর ১৯৫৯ (১৯৮৯) হিসেবে প্রকাশিত
৮). করেসপণ্ডেস (১৯৪৪ – ১৯৫৯)। কাম্যুর কন্যা ক্যাথারিন কাম্যুর ভূমিকাসহ আলবের কাম্যু এবং মারিয়া কাসারেসের মধ্যেকার বার্তালাপ (২০১৭)।
নাটক
১). ক্যালিগুলা (১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত, ১৯৩৮ সালে রচিত)
২). দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং (লে মালেন্টেন্ডু) (১৯৪৪)
৩). দি স্টেট অফ সিজ (ল’এটাট ডি সিজ্) (১৯৪৮)
৪). দি জাস্ট অ্যাসাসিনস (লেস জাস্টেস) (১৯৪৯)
৫). রিক্যুয়েম ফর আ নান (রিক্যুয়েম পোর উনে নোন, একই নামে রচিত উইলিয়াম ফকনারের উপন্যাস অবলম্বনে রচিত) (১৯৫৬)
৬). দি পজেজড্ (লেস পজিডিস, ফিওডোর দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ডেমনস্ অবলম্বনে রচিত)।
প্রবন্ধ
১). দি ক্রাইসিস অফ ম্যান (কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ভাষণ) (২৮শে মার্চ, ১৯৪৬)
২). নাইদার ভিক্টিমস্ নর এক্সেকিউশনারস্ (কোঁবা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধাবলী) (১৯৪৬)
৩). হোয়াই স্পেন? (ল’এটাট ডি সিজ নাটকটির জন্য লিখিত প্রবন্ধ) (১৯৪৮)
৪). সামার (ল’এটে) (১৯৫৪)
৫). রিফ্লেকশন্স অন দি গিলোটিন (রিফ্লেকশন্স সুর লা গিলোটিন) (বিবর্ধিত প্রবন্ধ, ১৯৫৭)।
৬). ক্রিয়েট ডেঞ্জারাসলি (বাস্তববাদ এবং শৈল্পিক সৃষ্টির ওপর রচিত প্রবন্ধ, সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত ভাষণ) (১৯৫৭)।
কাম্যু একজন নীতিবাদী ছিলেন; তিনি মনে করতেন রাজনীতি নৈতিকতার দ্বারাই পরিচালিত হবে। যদিও নৈতিকতা যে পরিবর্তনশীল তা তিনি অস্বীকার করেননি, তবে চিরাচরিত মার্ক্সীয় মতানুযায়ী যে বলা হয় ইতিহাসই নৈতিকতাকে নির্ধারণ করে তা তিনি নাকচ করতেন।
কাম্যু স্বৈরাচারী কমিউনিজমেরও কঠোর সমালোচক ছিলেন, বিশেষত সোভিয়েত শাসনকে তিনি সর্বগ্রাসী বলে মনে করতেন। সোভিয়েত ক্ষমাপ্রার্থীদের এবং তাদের “পূর্ণ দাসত্বকে স্বাধীনতা আখ্যা দেওয়াকে” তিনি ভর্ৎসনা করেন।স্বাধীনতাপন্থী সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে তিনি বলতেন, সোভিয়েত রাশিয়া যেমন সমাজতান্ত্রিক নয়, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্বাধীন নয়। সোভিয়েত রাশিয়ার একজন কড়া সমালোচক হওয়ায় বামপন্থী রাজনীতির অনেকের সাথেই বিবাদ বাধে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর বন্ধু জ্যঁ পল সার্ত্রের বিবাদ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে জার্মান হানাদাররা দখল করতে এলে তিনি ফ্রেঞ্চ রেজিস্ট্যান্সে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন; এখানে কাম্যু রেজিস্ট্যান্সের পত্রিকা কোঁবার জন্য লেখেন এবং এই পত্রিকা তিনি সম্পাদনাও করেন। জার্মান দখলদারদের সাথে ফরাসীদের সহযোগিতার ঘটনায় কাম্যু লেখেনঃ “ এখন সাহসই হল একমাত্র নৈতিক মূল্যবোধ; যারা জনগণের নামে ভাষণ দেবার ভান করে সেইসকল পুতুল এবং বাচালদের বিচারের জন্য এই মূল্যবোধকে ব্যবহার করতে হবে।” ফ্রান্সের মুক্তির পর, কাম্যু লিখেছিলেন, “এই দেশ একজন ট্যালিরান্ডকে চায় না, চায় একজন সেইন্ট-জাস্টকে।” যুদ্ধপরবর্তী রক্তাক্ত বিচারসভার বাস্তবতা তাঁর মনকে শীঘ্রই বদলে দিলঃ কাম্যু জনসমক্ষেই তাঁর কথা ফিরিয়ে নেন এবং এরপর থেকে আজীবন তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা করে গেছেন।
কাম্যু ১৯৫০এর দশকে নৈরাষ্ট্রবাদীতার দিকে ঝুঁকেছিলেন, সেসময়ে এইরকম একটা হাওয়া উঠেছিল এবং কাম্যু মনে করতেন যে সোভিয়েত মডেল নীতিগতভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। কাম্যু যে কোন প্রকার শোষণ, কর্তৃত্ব এবং বৈভব, মনিবগিরি, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীয়করণের চূড়ান্ত বিরোধী ছিলেন। দর্শনের অধ্যাপক ডেভিড শেরম্যান কাম্যুকে একজন ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদী বলে মনে করতেন। গ্রিম নিকোলসন কাম্যুকে একজন অস্তিত্ববাদী নৈরাষ্ট্রবাদী বলে মনে করতেন।
১৯৪৮ সালে নৈরাষ্ট্রবাদী আঁদ্রে প্রুধোঁ তাঁকে সার্কেল ডি এটুডিয়ানস্ আনার্কিস্টেসের (“অ্যানার্কিস্ট স্টুডেন্ট সার্কেল”) সভায় নৈরাষ্ট্রবাদী চিন্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে প্রথম পরিচিত করান। কাম্যু বিভিন্ন ধরণের নৈরাষ্ট্রবাদী প্রকাশনী সংস্থার জন্য লিখেছিলেন, এর মধ্যে ছিল লে লিবারটেয়ার, লা রেভল্যুশন প্রোলেটারিয়েন্নে এবং সলিদারিদাদ ওবরেরা (“ওয়ার্কারস্ সলিডারিটি”), ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদী সংগঠনের একটি শাখা কনফেডারেশন নাশিনল ডেল ট্রাবাজো (সিএনটি) (“ন্যাশানাল কনফেডারেশন অফ লেবার”)।
কাম্যু আলজেরিয় যুদ্ধের সময় (১৯৫৪ – ৬২) নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেন। যদিও তিনি ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্টের (এফএলএন) হিংসার বিপক্ষে ছিলেন, তিনি ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের অবিচার এবং নিষ্ঠুরতার ঘটনার সম্পর্কেও অবহিত ছিলেন। তিনি পিয়ের মেন্ডেসের ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্ট পার্টির (পিএসইউ) এবং সংকটের সময় তাদের মোকাবিলার পথের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল – মেন্ডেস মীমাংসা করবার পক্ষপাতী ছিলেন। কাম্যু তাঁর মতানুসারী আলজেরিয় বিদ্রোহী আজিজ কেসাউসের সমর্থক ছিলেন। কাম্যু আলজেরিয়ার দুই যুযুধান দলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনবার জন্য সেদেশে ভ্রমণ করেন, কিন্তু সব ক’টি দলই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।নোবেল পুরস্কার গ্রহণ চলাকালীন বক্তৃতায় তিনি আলজেরিয় জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে কথা বলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। যখন তাঁর মা এবং বিচারের মধ্যে দ্বিধায় তাঁকে পড়তে হয়, তাঁর উত্তর ছিলঃ “আলজিয়ার্সের ট্রামপথে লোকেরা বোমা ফেলে রাখছে। ট্রামরাস্তা দিয়ে যাঁদের যেতে হচ্ছে, তার মধ্যে আমার মাও থাকতে পারে। যদি এটা বিচার হয়, তবে আমি আমার মা’কেই বেছে নেব।” ডেভিড শেরম্যানের মতানুযায়ী, কাম্যু সন্ত্রাসবাদ এবং নির্বিচার সহিংসতার মধ্যেকার ভুল বৈপরীত্য সম্বন্ধে আলোকপাত করে বলেন, এই ভ্রম কখনোও কোন পরিস্থিতিতেই সুবিচারের পথ প্রশস্ত করতে পারে না। যদিও তাঁর এই বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপিত করা হয়ঃ “আমি চিরকালই সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছি, এবং আমি অবশ্যই আলজিয়ার্সের রাস্তায় যে সন্ত্রাস অন্ধভাবে ঘটে চলে এবং যা আমার মা এবং পরিবারকেও আঘাত করতে পারে, তার নিন্দা করি। আমি সুবিচারে বিশ্বাসী, কিন্তু আমি আমার মা’কে সেই সুবিচারের হাত থেকে রক্ষা করবো। কাম্যুর সমালোচকরা তাঁর এই ভুলভাবে উপস্থাপিত করা বক্তব্যকে তাঁর ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিক্রিয়ার ফল বলে দাগিয়ে দিয়েছেন।
আলজেরিয়ায় ফরাসী পিতামাতার সন্তান হিসেবে জন্মানোয়, কাম্যু ফ্রান্সের এবং আরব ও বর্বরদের মধ্যেকার প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবিদ্বেষের সাথে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তিনি ধনী সম্প্রদায়ের অংশ ছিলেন না। তিনি ছোটবেলায় খুবই দারিদ্রের মধ্যে বাস করতেন, কিন্তু তিনি ফ্রান্সের নাগরিক ছিলেন বলে কিছু নাগরিক অধিকার ভোগ করতেন যেগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব এবং বর্বররা পেত না।
কাম্যু “নব্য ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতির” স্বপক্ষে স্বর জোরালো করেন। এই শব্দবন্ধটিকে তিনি ব্যবহার করতেন আলজেরিয়ার মানুষের বহু-জাতিগত পরিচয়কে গ্রহণ করার দৃষ্টি নিয়ে; তিনি “ল্যাটিনি”র বিপক্ষে ছিলেন – একটি ফ্যাসিবাদী এবং সেমিটিক-বিরোধী ধারণা যেটি পাইড-নয়রদের (আলজেরিয়ায় বসবাসকারী ফরাসী অথবা ইউরোপীয়) মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। কাম্যুর মতে, ভূমধ্যসাগরের আশেপাশে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে উক্ত ধারণাটা হেলেনীয় মানবতাবাদের মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে। “নব্য ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতি”র ওপর তাঁর ১৯৩৮ এর বক্তব্য ছিল সেসময়ে তাঁর বক্তব্যগুলোর মধ্যে সবথেকে সু-সংবদ্ধ। কাম্যু আলজেরিয়দের পূর্ণ ফরাসী নাগরিকত্বের দানের জন্য ব্লুম-ভায়োলেট প্রস্তাবকেও সমর্থন করেন যে প্রস্তাবটি মৌলিক সমতাবাদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। ১৯৩৯ সালে কাবিলাই উচ্চভূমিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাপনের ভয়ঙ্কর দুরবস্থাকে নিয়ে আলজের রিপাবলিকেইনে কয়েকটি মর্মভেদী নিবন্ধমালা রচনা করেন। তিনি জরুরী বিষয় হিসেবে অর্থনৈতিক, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার আনার পক্ষপাতী ছিলেন।
ফরাসী অত্যাচারের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহের পর ১৯৪৫-য়ে ঘটা সেটিফ ও গুয়েলমা হত্যাকাণ্ডের সময় গুটিকয়েক মূল ভূখণ্ডের সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি উক্ত অঞ্চলটি দেখতে যান। সে জায়গার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কয়েকটি প্রতিবেদন লেখেন এবং আলজেরিয় জনগণের দাবীর প্রতি ছাড়ের জন্য এবং ফরাসী সংস্কারের জন্য তিনি তাঁর বক্তব্য পেশ করেন।
১৯৫৪ সালে আলজেরিয় যুদ্ধ শুরু হলে কাম্যু একটি নৈতিক দ্বন্দ্বে পড়েন। তিনি নিজেও পাইড-নয়রস হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর নিজের মা-বাবারও একই পরিচয় ছিল। তাই তিনি উক্ত বিদ্রোহের বিরুদ্ধে ফরাসী সরকারের কার্যকলাপকে সমর্থন করেন। তিনি এটাই প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন, আলজেরিয়ার বিদ্রোহ “নব্য আরব সাম্রাজ্যবাদের”-ই অখণ্ড রূপ, এবং এটি “ইউরোপকে ঘিরে ফেলবার জন্য” ও “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করবার জন্য” রাশিয়ার তৈরি করা “পাশ্চাত্য-বিরোধী” আক্রমণ। যদিও তিনি বৃহত্তর আলজেরীয় স্বয়ংশাসন অথবা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষেই সওয়াল করেছেন, কিন্তু তিনি কখনোই পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য বলেননি। তিনি মনে করতেন পাইড-নয়রস্ এবং আরবরা একই সাথে বাস করতে পারে। যুদ্ধ চলাকালীন, তিনি একটি অসামরিক শান্তিচুক্তির জন্য বলেছিলেন যাতে সাধারণ নাগরিকরা অব্যাহতি পায়। কিন্তু দুপক্ষই তাকে নস্যাৎ করে; কারণ তারা একে একটা বোকামি বলেই মনে করত। পর্দার ওপারে, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আলজেরিয়দের জন্য তিনি কাজ শুরু করলেন। তাঁর কর্মকাণ্ড বামপন্থীদের মধ্যে সমূহ সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়, কারণ তাদের কাছে ঔপনিবেশিকতা মোটেই গ্রহণীয় ছিল না। তাদের চোখে, কাম্যু আর শোষিতদের রক্ষা কর্তা রইলেন না।
কাম্যু একবার বলেছিলেন, আলজেরিয়ার সমস্যা “তাঁর ক্ষতি করেছে ঠিক ততটাই যতটা অন্যান্যরা তাদের ফুসফুসের বেদনা অনুভব করতে পারে।”
তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা-বিস্ফোরণের চূড়ান্ত সমালোচক ছিলেন। ১৯৫০এর দশকে তিনি মানব অধিকারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ইউনেস্কোর কাজ থেকে পদত্যাগ করেন; কারণ সেসময় জেনারেল ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে থাকা স্পেনকে জাতিপুঞ্জের সদস্য করা হয়। কাম্যু শান্তিবাদী ছিলেন এবং সমগ্র পৃথিবীর সর্বত্র তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং লীগ এগেইন্সট ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা আর্থার কোয়েস্টলারের সাথে একটি প্রবন্ধ লেখেন যার নাম ছিল রেফ্লেক্সন্স্ সুর লা পেইন ক্যাপিটেল; বইটির প্রকাশক ছিলেন ক্যালমান লেভি।
অস্তিত্ববাদ
যদিও কাম্যুর সাথে সবচেয়ে বেশি সংযোগ রয়েছে অলীকতার, কিন্তু তিনি একজন অস্তিত্ববাদী হিসেবেও যথারীতি পরিচিত ছিলেন, যদিও তিনি নানা সময়েই এই অভিধাটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কাম্যু নিজে বলেছিলেন তাঁর দার্শনিকতার উৎস প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক নিৎশে এবং সতেরো শতকের নীতিবাদীদের দর্শন, যেখানে অস্তিত্ববাদ শুরু হচ্ছে উনিশ এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে কিয়ার্কেগার্ড, কার্ল জ্যাস্পারস এবং হিডেগারের মত দার্শনিকদের হাত ধরে। তিনি এও বলেছিলেন, মিথ অফ সিসিফাস নামে তাঁর লেখাটি অস্তিত্ববাদের নানা দিক সম্পর্কে একটি সমালোচনা। কাম্যু অস্তিত্ববাদকে দর্শন অভিধা দিতে নারাজ, কিন্তু তাঁর সমালোচনা মূলত কেন্দ্রীভূত রয়েছে সার্ত্রেয় অস্তিত্ববাদ এবং ধর্মীয় অস্তিত্ববাদের ক্ষুদ্রতর ব্যাপ্তিতে। তিনি মনে করতেন, মার্ক্স এবং সার্ত্রে ইতিহাসকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন তা মানব মুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর বিশ্বাসের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে পারে না। ডেভিড শেরম্যান এবং অন্যান্যরা মনে করেন, সার্ত্রে এবং কাম্যুর মধ্যেকার বিরোধের পেছনে কাম্যুর অস্তিত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করারও ভূমিকা রয়েছে। ডেভিড সিম্পসন আরো বলেন, যে তাঁর মানবতাবোধ এবং মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে তাঁর বিশ্বাস তাঁকে অস্তিত্ববাদী মতবাদ থেকে আলাদা করে দেয়, যে অস্তিত্ববাদী মতবাদ অনুযায়ী সত্ত্বার আগে অস্তিত্ব রয়েছে।
অন্যদিকে, কাম্যু অস্তিত্ববাদী প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে তাঁর বেশিরভাগ দর্শনকেই গড়ে তুলেছেন। জীবনের অলীকতা, এর অবশ্যম্ভাবী সমাপ্তি (মৃত্যু) তাঁর বিভিন্ন কাজে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। তাঁর বিশ্বাস এটাই ছিল যে অলীকতাকেই একজন মানুষ গ্রহণ করতে পারে যে অলীকতার অর্থ – জীবন অর্থশূন্য, অথবা যদি এর অর্থ থাকে তাহলেও মানুষের ক্ষমতা নেই তার অর্থ বুঝবে। তাঁর খ্রিস্টান বিরোধীতা, ব্যষ্টির নৈতিক মুক্তির জন্য তাঁর অঙ্গীকার এবং দায়িত্ব – কেবলমাত্র এই ক’টি বিষয়েই তাঁর সাথে অন্যান্য অস্তিত্ববাদী লেখকদের মিল পাওয়া যায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, কাম্যু অস্তিত্ববাদের অন্যতম একটা মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন – আত্মহত্যার সমস্যা। তিনি লিখেছিলেন, “এখানে একটাই সত্যিকারের গুরুতর দার্শনিক প্রশ্ন রয়েছে এবং তা হল আত্মহত্যা।” কাম্যু আত্মহত্যার প্রশ্নের উত্থানকে জীবনের অলীকতার স্বাভাবিক সমাধান হিসেবে দেখেছেন।
অলীকবাদ
অনেক অস্তিত্ববাদী লেখকরাই অলীকতাকে তাঁদের রচনায় উল্লেখ করেছেন, এটা আসলে কী এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ – এই বিষয়ে তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিয়ার্কেগার্ড ব্যাখ্যা করেন যে ধর্মীয় সত্যের অলীকতা আমাদের ঈশ্বরের কাছে যুক্তিসম্মতভাবে পৌঁছোতে বাধা দেয়।সার্ত্রে একক ব্যক্তির অভিজ্ঞতার অলীকতার কথা বলেছিলেন। অলীকতা সম্বন্ধে কাম্যুর চিন্তাভাবনা তাঁর প্রথম বইয়ের চক্র এবং সাহিত্যিক প্রবন্ধ থেকেই শুরু হয় – দি মিথ অফ সিসিফাস, (লে মিথে ডি সিসিফি), এই বিষয়ের ওপর তাঁর একটা বড়ো কাজ। ১৯৪২ সালে তিনি ল’এন্ট্রেঞ্জার নামে এক গল্প প্রকাশ করেন যাতে একজন মানুষের অলীক জীবন সম্বন্ধে দেখানো হয়েছিল। তিনি রোম সম্রাট ক্যালিগুলাকে নিয়েও নাটক রচনা করেন এবং এখানেও তিনি অলীক যুক্তি অবলম্বন করেছিলেন; নাটকটি ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত মঞ্চস্থ হয়নি। তাঁর প্রথম পর্বের চিন্তাভাবনা তাঁর প্রথম প্রবন্ধ সংকলন, ল’এনভার্স এট ল’এন্ড্রয়েট (বিটোয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন) নামে ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়। অলীক বিষয়বস্তুগুলো তাঁর দ্বিতীয় পর্বের প্রবন্ধ সংকলন, নোসেস (ন্যুপশিয়ালস্) (১৯৩৮) এবং বিটোয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন নামে আরো পরিশীলিত হয়ে প্রকাশিত হয়। এইসকল প্রবন্ধগুলোতে, কাম্যু অলীকতা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছিলেন। অলীক ধারণার বিভিন্ন দিক দি প্লেগে পাওয়া যায়।
কাম্যু সার্ত্রের অলীকতার সংজ্ঞা অনুসরণ করেছেনঃ “অলীক হল সেটাই যা অর্থহীন। এইভাবে মানুষের অস্তিত্বটাই আসলে অর্থহীন, কারণ তার আকস্মিকতার পেছনে কোন বাহ্যিক যুক্তি নেই।” অলীকতার উদ্ভব হয় তখনই যখন নির্বোধ দুনিয়ায় বাসকারী মানুষ বুঝতে পারে যে মানবিক মূল্যবোধগুলোর প্রকৃতপক্ষে কোন দৃঢ় ভিত্তি নেই; অথবা কাম্যু যেমনটা নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন যে অলীকতা হল “মানুষের প্রয়োজন এবং বিশ্বের অযৌক্তিক নীরবতার মধ্যেকার সংঘাতের” ফল। যদিও কাম্যুর মতে অলীকতা একেবারেই অপরিত্যাজ্য, কিন্তু তিনি কখনোই নৈরাষ্ট্রের দিকে ঝোঁকেননি। কিন্তু অলীকতার উপলব্ধির ফলে তাঁর প্রশ্নঃ কেন একজন তবে বেঁচে থাকে? মানবিক মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতা পরিত্যাগের কারণ হিসেবে আত্মহত্যা বেছে নেওয়াকে কাম্যু নাকচ করেছেন। বরং তিনি বলেছেন আমরা অলীকতাকে জীবনের অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করি এবং এর সাথেই বেঁচে থাকতে চাই।
১৯৪৩ সালের জুলাই থেকে ১৯৪৪ সালের জুলাই পর্যন্ত একজন অনামী জার্মান বন্ধুকে লেখা চারটে চিঠির সংকলন থেকে অলীকতার প্রতি কাম্যুর পরিবর্তন বোঝা যায়। প্রথমটি ১৯৪৩ সালে রেভিউ লিবর হিসেবে প্রকাশ পায়, দ্বিতীয়টির নাম ছিল কাহিয়ারস ডি লিবারেশন (১৯৪৪) এবং তৃতীয়টি লিবার্টেস সংবাদপত্রে ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয়। চারটি চিঠি লেটারস এ আন অ্যামি অ্যালেমান্ড (লেটারস টু আ জার্মান ফ্রেন্ড) নামে ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত হয় এবং রেজিস্ট্যান্স, রেবেলিয়ন এবং ডেথ মানে সংকলনে স্থান পায়।
কাম্যু নিজেকে “অলীকতার দার্শনিক” হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করায় অনুশোচনা করেছিলেন। লে মিথ ডে সিসিফি প্রকাশ করার কিছুদিন পরেই তিনি অলীকতার প্রতি কম আগ্রহ দেখাতে থাকেন। তাঁর ধারণাগুলোকে পার্থক্য করতে পণ্ডিতরা “কাম্যুর অলীকতা” বলতে অলীকতার বৈপরীত্য কথাটির উল্লেখ করেন।
বিদ্রোহ
যেকোন ধরণরর অত্যাচার, অবিচার অথবা মানবিক পরিস্থিতির যেকোন অসম্মানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘটলে সেই বিদ্রোহের স্বপক্ষে স্পষ্ট ভাষায় বলবার জন্য কাম্যু সুপরিচিত ছিলেন। যদিও বিদ্রোহের সীমা নির্ধারণের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। ল’হোম্মে রিভোল্টি (দি রেবেল) বইটিতে এই বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনাগুলোর বিশদ পরিচয় পাওয়া যায়। সেখানে তিনি অলীকতার ওপর রচনা নির্মাণ করেছেন (দি মিথ অফ সিসিফাস) কিন্তু আরো অনেকদূর এগিয়েছেন। সূচনাতেই তিনি বিদ্রোহের অধ্যাত্মবিদ্যা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে “আমি বিদ্রোহ করি, কারণ আমাদের অস্তিত্ব আছে” যার দ্বারা তিনি সাধারণ মানব অবস্থার স্বীকৃতিকে বোঝাতে চেয়েছেন। কাম্যু বিপ্লব এবং বিদ্রোহের মধ্যে একটা পার্থক্যের রেখা টেনেছেন এবং লক্ষ্য করেছেন যে ইতিহাস আমাদের এটাই দেখিয়েছে বিদ্রোহীদের দ্বারা সংঘটিত বিপ্লব চিরকালই একটা অত্যাচারী রাজত্বের জন্ম দিয়েছে; তাই তিনি বিপ্লবের সাথে নীতিকে যুক্ত করার গুরুত্ব দিয়েছেন। কাম্যু একটা জটিল প্রশ্নের উত্থাপন করেছেনঃ একটা নীরব বিশ্বে মানুষের পক্ষে কি নৈতিক পথে এবং অর্থপূর্ণভাবে কাজ করা সম্ভব? তাঁর মতে এর উত্তর হল হ্যাঁ, কারণ অলীকতার অভিজ্ঞতা এবং এর সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতার ফলে নীতিবোধ তৈরি হয় এবং তা আমাদের কাজের সীমারেখা টেনে দেয়। কাম্যু বিদ্রোহের আধুনিক রূপকে দুটো ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমটি হল একটা অধ্যাত্মবিজ্ঞানমূলক বিদ্রোহ যা হল “এমন একটা আন্দোলন যার দ্বারা মানুষ তাঁর নিজের অবস্থা এবং সমগ্র সৃষ্টির বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করতে থাকে।” আর দ্বিতীয় রূপটি হল ঐতিহাসিক বিদ্রোহ যে বিদ্রোহের দ্বারা অধ্যাত্মমূলক বিদ্রোহের বিমূর্ত শক্তিকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হয় এবং এর মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে, বিদ্রোহী অবশ্যই সমগ্র বিশ্বের পাপ এবং প্রতিটা বিদ্রোহের মধ্যে ঘটে চলা জটিল পাপের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখে এবং কোন অবিচারমূলক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে না।
উত্তরাধিকার
কাম্যুর উপন্যাস এবং দার্শনিক প্রবন্ধগুলো এখনও যথেষ্ট প্রভাব বজায় রেখেছে। কাম্যুর মৃত্যুর পরে, তাঁর প্রতি আগ্রহ থেকে জন্ম নেয় (এবং হ্রাস পেতে থাকে) নব্য বাম। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কমিউনিজম সম্পর্কে তাঁর বলে যাওয়া বিকল্প পথের প্রতি আগ্রহ নতুন করে বাড়তে শুরু করে। মানবতাবাদ সম্বন্ধে তাঁর সমালোচনা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতা, মতবিনিময় এবং অসামরিক অধিকারের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য তাঁকে আজও স্মরণ করা হয়।
যদিও কাম্যুর সঙ্গে সোভিয়েত-বিরোধী কমিউনিজমের যোগ করা হয়, যেখান থেকে ট্রেড-ইউনিয়নপন্থী নৈরাষ্ট্রবাদের প্রসঙ্গও এসে পড়ে, কিছু নব্য-উদারবাদীরা তাঁকে তাঁদের রাজনীতির সাথে যুক্ত করেন; যেমন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজি তাঁর মৃতাবশেষকে প্যান্থেয়নে সরিয়ে আনবার কথা বলেছিলেন যার ফলে অনেক বামপন্থীরাই রুষ্ট হন।