আরো একটা ভালোবাসার দিন
মহুয়া বহুদিন ধরেই রাজীবকে বলতে চেয়েছিল সে ভালোবাসে রাজীবকে। যখনই কথা প্রসঙ্গে মহুয়া কিছু বলতে গেছে রাজীবের কথা তার ব্যবহার মহুয়ার সামনে বাঁধার প্রাচীর তৈরী করেছে। সে অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই বলে উঠতে পারেনি। তার আত্মসন্মান তাকে বাঁধা দিয়েছে। কিছু কিছু সময় মহুয়ার ও মনে হয়েছে রাজীব ও হয়তো তাঁকে কিছু বলতে চায়!! আবার পর মুহূর্তেই সে ভেবেছে সবটাই হয়তো তার মনের ভুল।
-রাজীব মহুয়া দুজনেই খুব ভালো বন্ধু!! একে অপরের সব কথা দুজন দুজনকে না বলে থাকতে পারতো না। দুজনেই পড়া লেখাতে ও খুব ভালো। সারাদিন কলেজে দুজন একসাথে। বন্ধুরা ওদের খুব ক্ষেপাতো লাভবার্ড বলে, তাতে মহুয়া একটু কপট রাগ দেখালেও মনে মনে তাঁর বেশ ভালোই লাগতো। কিন্তু রাজীব ভীষন নিরূত্তাপ। কোনো কথাতেই তার যেন কিছুই আসে যায় না।
দেখতে দেখতে কলেজের ২টো বছর কি ভাবে পাড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি মহুয়া। ফাইনাল ইয়ার সামনে তারপর সবাই যে যার মতো নিজের নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে কেউ বা হায়ার স্টাডিসের জন্য তৈরী হবে। কলেজের কমোন রুমে বসে এই সবই ভাবছিল মহুয়া!!! হঠাৎ সবাই হৈচৈ করতে করতে ঢুকলো একসাথে, রাজীব ও ছিল সেখানে, তিতলি বলে একজন মহুয়ার সামনে এসে বলল দারুন একটা সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য …. সিরিয়াসলি রে ¡ কেউ ভাবতেই পারিনি আমরা।
তিতলি এসে মহুয়াকে এভাবে কথাটা বলায় মহুয়া রাজীবের দিকে তাকায়, রাজীব ও হাসে ওর দিকে তাকিয়ে!!! মহুয়া এবার যেন একটু লজ্জাই পেল…. বলল সড় তোরা যেতে দে আমায়।
এবার বিতান বলে উঠলো তুই কি করে মহুয়া? এমন ভাবে লজ্জা পেলি যেন মনে হলো তোকে কেউ প্রেম নিবেদন করতে এসেছে।
এবার মহুয়া একটু অবাক হয়ে হল—– তিতলি বলে উঠলো আরে জানিস ইমন আর মিথিলা এতদিন ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল। জানিস ওরা ওদের প্রেমের কথা কাউকে জানতে দেয়নি শুধু ওদের বাড়িতেই জানিয়েছে, কারো বাড়িতেই কোনো চাপ নেই। চাকরি পেলেই ওরা বিয়ে করবে!! ফোনে কথাটা না শুনতে পেলে আমরা কিছুই জানতে পারতাম না।
ওওও খুব ভালো খবর, কিন্তু এবার সত্যি আমাকে একটু যেতে হবে। কাজ আছে একটা।
কি এমন কাজ তোর? কোই আমাকে বলিসনি তো? রাজীব বলে উঠলো।
সব কাজই তোকে বলে করবো!! এমন কোনো কথা তো আমি তোকে দিনি রাজীব। বলে মহুয়া বেড়িয়ে গেল। সবাই একটু অবাক হলো, রাজীব ও ! কেউ কখনো মহুয়াকে এভাবে কথা বলতে শোনেনি।
তারপর থেকে বেশকিছু দিন মহুয়া কলেজে যায়নি। বন্ধুরা ফোন করলে বলেছে সে লেখাপড়া নিয়ে একটু ব্যস্ত!!! রাজীব ও ফোন করে ওর বাড়িতে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ও সেদিন বাড়ি থাকবে না এটা ওটা বলে এড়িয়ে গেছে। বন্ধুরা রাজীবকে বলল কিরে? তোর বেস্ট ফ্রেন্ডকে তো আজকাল ওনলাইনেও খুব একটা দেখা যায় না!!! খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করছে, এবার তো টপ করবে বলে মনে হচ্ছে। তিতলি বলল ও পড়াশোনায় এমনিতেই খুব ভালো। রাজীব চুপ করে রইলো তেমন কিছু বলল না।
সেদিন সকালে উঠেই মহুয়া ওর ফোন থেকে ফেসবুকে ওন হলো, অসংখ্য সমস্ত পোস্ট প্রেমিক প্রেমিকাদের। সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে মহুয়া ঠিক করলো সে রাজীবকে আজকে তার মনের কথাটা বলেই দেবে। তারপর যা হয় হবে।
তাড়াতাড়ি উঠে সে কলেজের জন্য তৈরী হলো। আর যাওয়ার সময় একটা কার্ড আর একটা গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে গেল, সে রাজীবকে কার্ড আর গোলাপ ফুল দিয়ে বলবে যে সে রাজীবকে ভালোবাসে।
ক্লাসের পর সে একজনকে জিজ্ঞাসা করল রাজীব কোথায় রে?
রাজীব দা? ওকে তো কমন রুমের দিকে যেতে দেখলাম।
মহুয়া ছুটে গেল কমন রুমের দিকে। ঢুকতে যাবে এমন সময় রাজীবের গলার স্বর শুনে সে থেমে গেল, রাজীব তিমিরকে বলছিল: এসব ভালোবাসা টাসা বাজে কথা, মেয়েরা ছেলেদের ফাঁসায় নিজেদের হাত খরচ আর টাইম পাসের জন্য। সে এসবে বিশ্বাস করে না। বাইরে থেকে কথাগুলো শুনে মহুয়া ভিতরে গিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলো না। সে মনে মনে ভাবলো যে মানুষের এমন কদর্য ভাবনা মেয়েদের প্রতি তাঁকে প্রেম নিবেদন করতে যাওয়াটা তার ভালোবাসার অপমান। আর তাছাড়া তাঁকে তার মনের কথা জানালে সে হয়তো বুঝবেও না।
সে কিছু শব্দ না করে সেখান থেকে চলে গেল।
কিগো মহুয়া দি পেলে রাজীবদাকে ?
হ্যাঁ কথা হয়ে গেছে, আমি যাই।
বিকাশ কমন রূমে গিয়ে বসেছে, এমন সময় রাজীব বলে উঠলো মহুয়াটা কতদিন হয়ে গেছে কলেজে আসছে না ফোনে ও ভালো করে কথা বলে না। কি যে হয়েছে কে জানে?
মহুয়া দি? কি বলছো রাজীব দা!! এইমাত্র আমার কাছে জানতে চাইলো তুমি কোথায়? আমি বললাম কমন রুমে!!
বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হওয়াতে বলল: তোমার সাথে দেখা হয়েছে, কথা ও হয়েছে।
আমার সাথে? অবাক হয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় মহুয়ার খোঁজে। কিন্তু ততক্ষণে মহুয়া চলে গেছে।
তারপর বহুবার ফোন করাতে ও ফোনটা ধরেনি মহুয়া। কলেজে দেখা হলে ও আর সে ভাবে কখনো কথা বলনি।
আজ আরও একটা প্রেমের দিন। কিন্তু বদলে গেছে অনেক কিছু। মহুয়া আজ অন্য কারো ঘরনী। অন্যকারো ভালোবাসা। কিন্তু মহুয়ার সেদিন সেই গোলাপটা আজ শুকিয়ে ডাইরির পাতার সেই ভাঁজেই থেকে গেছে। মহুয়ার নিজের ও হয়তো আজ সেকথা মনে নেই।